ফিরে দেখা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ফিরে দেখা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মুরাদনগরে দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ

মুরাদনগরে দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ

 

মুরাদনগরে দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ

 বিভাগ : দেশের খবর  প্রকাশের সময় :২০ জানুয়ারি, ২০২১ ৬:১১ : অপরাহ্ণ

মুরাদনগর থেকে মমিন মোল্লা :

কুমিল্লার মুরাদনগরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এফসিএ এর নির্দেশনায় উপজেলা ত্রাণ শাখার অর্থায়নে মুরাদনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে অসহায়, গরীব ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা সদরের ধনীরামপুর খেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সদর ইউপিথর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ আক্তার হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রায় ৪থশ অসহায়, গরীব ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।

বিতরণকালে আরো উপস্থিত ছিলেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন-অর-রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, ইউপি সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম, ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান, ইদ্রিস মিয়া, মহিলা ইউপি সদস্য শাহিনুর আক্তার, ডি.ডি.এস.ওয়াই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামিউল কবির, সাবেক ইউপি সদস্য কবির হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোঃ বিল্লাল হোসেন, মো: সগির হোসেন, সাইদুল সরকার, আবু কালাম সওদাগর, হুমায়ুন সরকার, নুরুল ইসলাম, সারোয়ার হোসেনসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এফসিএ মহোদ্বয়ের নিদের্শনায় প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরও আমাদের এই শীতবস্ত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছি।

শীতবস্ত্র বিতরণ শুধুমাত্র অসহায় মানুষের প্রতি করুণা নয়, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। হৃদয়ের মানবতাবোধকে জাগ্রত করে সমাজের সকল সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য সকলের কাজ করা উচিত”।
দেবিদ্বারের এলাহাবাদের  অবনী ডাক্তার স্মৃতিতে অম্লান

দেবিদ্বারের এলাহাবাদের অবনী ডাক্তার স্মৃতিতে অম্লান

দেবিদ্বারের এলাহাবাদের মুক্তিযোদ্ধা অবনী ডাক্তার স্মৃতিতে অম্লান

 

 

দেবিদ্বারের এলাহাবাদ বাজারের  মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার অবনি মোহন চক্রবর্তী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেছিলেন। তিনি একজন বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। । ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের লক্ষে ভারতের ত্রিপুরা যান। সেখানকার বিশালঘর থানার মুরাবাড়ি ক্যাম্পে গিয়ে ন্যাপ (মোজাফ্‌ফর) পার্টির নেতাদের সাথে দেখা করেন। সেখানে তিনি মতিয়া চৌধুরি ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সঙ্গে তার দেখা হয়।অত:পর ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদেও নির্দেশে তিনি দেশে চলে আসেন। নিজ এরাকাঢয় এসে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেও চিকিৎসা দেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও পরবর্তীতে আকস্মিকভাবে তার ভাতাবন্ধ কওে দেয়া হয়।তার দুই ছেলে নিতাই চক্রবর্তী ও সত্যরঞ্জন চক্রবর্তী এলাহাবাদ ও কাচিসাইর গ্রামে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।তারাও পিতার মতো সুনামের সাথে জনসাধারণের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। এলাহাবাদ গ্রামের আ: গনি বলেন- তিনি রোগীদের অহেতুক হয়রানী করতেন না। রোগীদেও মানসিক সাহস যোগাতেন। অতিরিক্ত টেস্ট দিতেননা।” শুভপুর গ্রামের হোস্নেয়ারা বেগম বলেন -আমি বহুবার অবনীবাবুর কাছে গিয়েছি। দেহের ক্ষতি হয় (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে) এমন কোন ঔষধ তিনি লিখতেন না। অত্যন্ত মনযোগ সহকারে রোগী দেখতেন। রিপ্রেজেন্টিটিভদের কথায় প্রভাবিত হয়ে অতিরিক্ত ঔষধ দিতেন না। রোগীর সাথে ভাল ব্যবহার করতেন।

মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার অবনীমোহন চক্রবর্তী আর নেই। তিনি ৭ নভেম্বর ১০৬ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেছেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা করেছেন।তাঁর বাড়ি ছিল কুমিল্লার দেবিদ্বারের এলাহাবাদের  শুভপুর গ্রামে।  আগের মতো হেঁটে হেঁটে যেতে না পাড়ায় শেষ বয়সে রিক্সাযোগে রোগীদের বাড়িতে গেয়ে চিকিৎসা করেছেন। রোগীদের হাসিমাখা মুখ দেখে তিনি পুলকিত হতেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। সেসময় দেবিদ্বারের শুভপুরে অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মতই দিন কাটতে থাকে বালক অবনীর।  ১৯৪৫ সালে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। তৎকালীন সময়ে মেট্রিক পাশ করেই অনেকে চাকুরি জীবন শুরু করতেন। বাবা অশ্বীনী কুমার চক্রবর্তী তাকে চাকুরি নেয়ার জন্য চাপাচাপি করতে লাগলেন। কিন’ অবনী মোহনের তাতে মন সায় দেয়নি। তিনি দেখলেন চিকিৎসার অভাবে বহু কষ্ট পেয়ে বহু লোক মারা যাচ্ছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট ভাল না হওয়ায় শহরের ডাক্তারগন গ্রামে আসেন না। রাস্তার অভাবে জটিল রোগীদেও দূরে নিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন না। এসব কথা চিন্তিা করে  তিনি গ্রাম ছেড়ে কুমিল্লা শহরে চলে যান। তখন কুমিল্লায় পল্লী চিকিৎসার উপর একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন ডা: প্রমোদ পাল। তখন কুমিল্লা গিয়ে লেখা পড়া করা খুব কষ্টকর ছিল। তারপরও তিনি লেখা-পড়া চালিয়ে যান। দৃঢ় মনেবলের কারণে অবশেষে তিনি সাফল্য লাভ করেন।

 তিনি ইচ্ছে করলে কুমিল্লা শহরে চেম্বার দিতে পারতেন। কেউ কেউ তা করার পরমর্শও দিলেন। কিন’ কারও পরামর্শ তিনি কানে তুল্লেন না। তিনি সোজা চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। পাশ কও গে্রামে আসার পর অনেক লোক তাকে দেখতে এসেছিলেন। তৎকালীন সময়ে এলাহাবাদসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ডাক্তার ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন। হোমিও ডাক্তার ছিলেন মো: আ: জলিল, শ্রী সুরেশ চন্দ্র শিং, ও মো: রোফন আলী ডাক্তার। জনসাধারণ তাকে পেয়ে খব খুশী হন। তিনি জনসাধারণরক বিমুখ করেন নি। সরকারি চাকুরির সুযোগ পেয়ে ও তিনি সেখানে যান নি। নিজের গ্রামে ফিরে এসে এলাহাবাদ বাজারে চেম্বার দেন। তিনি মাত্র পাঁচ টাকা ভিজিটে ঊষা রাণী নামক এক মহিলাকে প্রথম ব্যবস্থাপত্র দেন। তৎকালীন সময়ে আরো বেশি টাকা নেয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি জনগণের আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে বেশি টাকা নেননি।

 বর্তমানে গ্রাম পর্যায়ে প্যাথলজি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তখন জেলা শহর বাদে এক্সরে মেশিনও ছিল না। ডা: অবনী মোহন চক্রবর্তী এলাকাবাসীর সে অভাব দূর করেছেন। তিনি তার ব্যাগে সবসময় রাখতন-স্টেথেস্কোপ, থার্মেমিটার, পিচকারী, ইনজেকশন, স্যালাইন ,গজ, ব্যন্ডেজসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ। তাঁর সম্পরর্ক এলাহাবাদের হারাধন চক্রবর্তী বলেন- অবনী বাবু ‌এলাহাবাদ বাজারে চেম্বার দেয়ার আগে তাদের বাড়িতে ১৫ বছর চিকিৎসা করেছেন। তিনি৭০-৭৫ বছর এলাকার সেবা করেছেন। তাঁর মত ডাক্তার অতীতে কেউ ছিল না বর্তমানেও কেউ নেই, ভবিষ্যতেও কেউ তার মতো সেবা দিতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না।

 তিনি তার কথা রেখেছেন। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বের রোগী দেখেছেন। রোগীরা তার সেবায় সনষ্ট হতেন। রোগী মারা গেলেও আত্মীয় স্বজন বলতেন ডাক্তার মহোদয় অনেক চেষ্টা করেছেন। রোগীর হায়াত নেই।

  প্রতিটি চিকিৎসককে ডাক্তারী শুরু কারার আগে কিছু কিছু বিষয়ে শপথ করতে হয়। ভাল ডাকাক্তারগন সারা জীবন এ শপথনামা মেনে চলেন।  ডাক্তার অবনী মোহন ছিলেন তেমনই একজন ডাক্তউল্লেখযোগ্য কয়েকটি শপথ হচ্ছে: “বিত্তশালী বা বিত্তহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতির বিভিন্নতা, বর্ণ ও ভাষার বৈষম্য, শত্রুতা, বাব ন্ধুত্ব, হল মানুষের বিশেষত্ব। চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে আমি কোন বৈষম্য করবনা। সকল মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখব। মানবতার সম্মান করব। ধর্ম, বর্ণ, এবং জাতীয়তার বৈষম্য ভুলে রোগীর রোগ নিরাময়ের জন্য আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করব। এ চেষ্টা কখনও স্বার্থ দোষে দুষ্ট হবে না। রোগী যে ধর্মেরই হোক তাকে সম্মান দেখানো আমার কর্তব্য। তাকে ভলবেসে তার রোগ নিরাময়ের ভাবনা হবে আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ। “এ শপথনামায় সকল রেজিস্টার্ড চিকিৎসক স্বাক্ষর করলেও  অনেকই পরবর্তীতে শপথ বাক্যগুলো ভুলে গিয়ে নিজের খেয়ালি খুশি মত কাজ করেন। কিন’ অবনী বাবু সারজীবন এ বাক্যগুলো ভুলে যান নি।

  একটি বিখ্যাত ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি সুরেশ চন্দ্র পোদ্দার বলেন- তাঁর সাথে রোগীদের  মমতা, সহমর্মিতা, ও ভালবাসার পরশ বিদ্যমান ছিল। তিনি কখনও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতেন না। মহিলাদের প্রিয় ডাক্তার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার অবনীমোহন  চক্রবর্তী। সকল কথা পুরুষ ডাক্তারের কাছে খুলে বলতে চান না। কিন্তু অবনী ডাক্তারের ব্যাপারটা ছিল ভিন্ন। তিনি মন দিয়ে মহিলাদের কথা শুনে রোগ নির্ণয় করতেন। মহিলা রোগিদের সাথে সংযতভাবে ও ভদ্রতার সাথে বয়স্ক হলে মা কম বয়স্ক হলে বোন মেয়ে নাতনী ইত্যাদি ডেকে কৌশলে (মনস্তাত্তিক সূত্র ব্যবহার করে) সকল কথা জেনে নিতেন। তিনি বলতেন রোগীকে সহজভাবে নিতে না পানরলে তার মনের কথা বুঝতে না পারলে সঠিক রিাগ নির্ণয় সম্ভব নয়। বর্তমানে ডাক্তারগন রোগীকে খসখস করে কতগুলো টেস্ট আর ঔষধের নাম লিখে দেন। কোন্‌ কোন্‌ খাবার বেশি খেতে হবে বা কোন কোন খাবার বর্জণ করতে হবে এব্যাপারে অধিকাংশ ডাক্তার কোন পরামর্শ দেন না। কিন’ অবনী ডাক্তার ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম। তিনি রোগীকে খাদ্য ও চলাফেরার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন। স্বাস্থ্য পরিচর্যার মাধ্যমে যদি রোগ নিরাময় হয় তাহলে তিনি ঔষধ দিতেন না। তাই ৭৫ বছরের চিকিসক জীবন তার স্বার্থকতায় পরিনত হয়। 

 অধিক রাতে কোন রোগী এলেও তিনি কখনও বিরক্ত হতেন না। কাউকে তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন এমন কোন নজির নেই।  রোগীদের সাথে হেঁটে গিয়েছেন বহু গ্রামে। শুভপুর, এলাহাবাদ, শাকতলা, ধামতী, শ্রীপুর, ভাবনীসাইর, হারসার, ফুলতলী, মোহাম্মদপুর, মোহনপুরসহ দেবিদ্বারের বহু যায়গায় তিনি চিকিৎসা করেছেন। এছাড়া বুড়িচং, ব্রাহ্মনপাড়া, চান্দিনাসহ অনেক উপজেলায় তিনি বিচরণ করেছেন। রোগীরা তাকে শ্রদ্ধাভরে “বাবা’ বলে ডাকতো। জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া রোগীরা দীর্ঘ দিন তাকে মনে রাখতো। ২০০১ সালে বিপাড়ার একজন জটিল মাসনসিক রোগী তার স্মরনাপন্ন হলে তিনি তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করে ভাল করেন। এটি তার জীবনের একটি স্মরনীয় ঘটনা। শেষ বয়সেও তিনি রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন। রোগীরা সুস্থ হলে তিনি প্রফুল্ল বোধ করতেন। তিনি মৃত্যুর পূর্বে বলেছিলেন “ঠাকুর যতদিন বাঁচিয়ে রাখেন ততদিন রোগীর সেবা করে যাব। ” তিনি এ পর্যন্ত লক্ষাধিক রোগী দেখেছেন। তিনি দেহত্যাগ করলেও জনগন তাকে তাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে রেখেছেন। কুমিল্লার  ডাক্তারদের ইতিহাসে তাঁর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে

 

লেখক:মমিনুল ইসলাম মোল্লা, শিক্ষক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট ।

 


দেবিদ্বারের শুভপুরের পানঃ হারিয়ে যাওয়া ঐতহ্য

দেবিদ্বারের শুভপুরের পানঃ হারিয়ে যাওয়া ঐতহ্য

দেবিদ্বারের শুভপুরের পানঃ হারিয়ে যাওয়া ঐতহ্য

 

 যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম' মহেশখালীর পান শুধু স্থানীয় চাহিদা নয় পূজা পার্বণেও সবার সেরা মহেশখালী ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর আর রাজশাহীর পান এখন সারা দেশে পানসেবীদের খুবই প্রিয় এছাড়া বাংলা, ভাটিয়াল, চাল ডােগা, ঘাসপান পার্বত্য চট্টগ্রামের সাচি পানের মতাে দেবিদ্বারের এক ধরনের পান একসময় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দূর দুরান্তে চলে যেতাে

কিন্তু কালের বিবর্তনে দেবিদ্বারে পান ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে পান চাষীরা জীবন জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে মূলত: হিন্দুরাই বর্তমানে পান চাষের সাথে জড়িত মুসলমানদের আগমনের বহু পূর্ব থেকেই অঞ্চলের লােকেরা পান চাষের সাথে জড়িত ছিল বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে পিপুল পরিবার ভুক্ত গুল জাতীয় পণ্য পান শুধুমাত্র এশিয়াতেই লক্ষ্য করা যায়একসময় দেবিদ্বারে

পানকে তাম্বুল নামে ডাকত। কেউ কেউ নিশ্বাসকে সুরভিত করতে অথবা ঠোট লাল করার জন্য সখের বশে পান চেখে দেখতেন। অবশ্য পানের মধ্যে। কিছুটা মাদকতার আনন্দও রয়েছে। ঘটক মিজানুর রহমান বলেন, পান বিয়ে অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পান ছাড়া বিয়ের কথাই ঠিকভাবে জমে উঠেনা। তাই বিয়ের মধ্যে কোরমা পোলাও খাওয়ালেও যদি পানগুলো ভাল নাও হয় তাহলে কনে পক্ষের বদনাম? হয়। শুধু বিয়ে নয় রাজনৈতিক মজলিশ, ঘরোয়া আলােচনা এবং সামাজিক জলসাতেও পানের উপস্থিতি একান্ত ভাবে আবশ্যক। দেবিদ্বারের একটি অন্যতম পান প্রধান এলাকা শুভপুর। এই এলাকার প্রায় দেড় থেকে দুইশ

লোক পেশার সাথে জড়িত ছিল। এখন অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন, পান চাষে লাভ কম হওয়ায় বিশিষ্ট পান চাষী রণদা প্রসাদ সিংহ চাকুরি করে সংসার চালাচ্ছেন। এক পরিবারের সকলেই পান চাষের সাথে জড়িত এমন পরিবার শুভপুরে এখনও পাওয়া যাবে। তবে তাদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে

সুখকর চন্দ্র সিংহ, উত্তম চন্দ্র সিংহ  এবং জীবন চন্দ্র সিংহ ভাই  এখনও পৈত্রিক পেশা ধরে  রেখেছেন। অধিকাংশ চাষী দুরবস্থার মধ্যে  থাকলেও কেউ কেউ পান চাষ

করে সুখের নীড় গড়েছেন। ব্যাপারে রাখাল চন্দ্র দে এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে এখনকার চেয়ে আগে পান চাষে বেশি লাভ হতো বলে তিনি মনে করেন। রাখাল চন্দ্র দে এর পাশাপাশি হরিপদ বীর খোকন সিংহ তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণ জমিতে পান চাষ করেন। তবে আগের তুলনায় ওরাও পানের বরজ কমিয়ে দিয়েছেন। কয়েকবছর আগে রাখার চন্দ্র দে এর ৫০০ লাইন পান ছিল। এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক চাষী পেশা ছেড়ে দিলেও সেন্টু পালের বিধবা স্ত্রী এখনও পান চাষ করেই কোন রকমে সংসার চালাচ্ছেন। শুভ পুরের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক পান। চাষী শতিশ সিং (৮২) বলেন, যুগ যুগ ধরে আমরা পান চাষ করে আসছি। তবে বর্তমানে খরচের তুলনায় বিক্রি কম হওয়ায় অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। দেবিদ্বারের মাটি উর্বর অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ যায়গায় পানি উৎপাদন হতে পারে দেবিদ্বারের উপসহকী কষি কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, পান চাষের জন্য  নির্বাচিত জমি সাধারণ জমির চেয়ে একটু উঁচু। মাটির ধরণ শক্ত এবং জলাশয়, পুকুর ইত্যাদির ধারে কাছে হওয়া বাঞ্চনীয়। পান চাষীরা জানান, জমি তৈরীর পর মে জুন মাসে পানের লতা রােপন করা হয়। মাঝখানে দুই ফুট দুরত্ব রেখে চারাগুলি সমান্তরার লাইনে রােপন করা হয় এবং পরে বাঁশের শলা বা খুঁটি পুঁতে তার সাথে পানের লতাগুলি জড়িয়ে দেওয়া হয়। রােদ এবং গরু ছাগলের হাত থেকে বরজ রক্ষা করার জন্য উপরে এবং চারদিকে বাঁশের শলা দিয়ে বেড়া দেয়া হয়। নিয়মিত পানি সেচ দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য যত্ন নেয়ার মাধ্যমে বছর পর পান পাতাটি খাওয়ার উপযুক্ত হয়।

( মমিনুল ইসলাম মোল্লা,নিউজ আর্কাইভস থেকে 30/07/09 সাপ্তাহিক আমোদ, কুমিল্লা।)