শিক্ষাগুরু সাত্তার স্যারকে জানাই সালাম



শিক্ষাগুরু সাত্তার স্যারকে জানাই সালাম
শিক্ষাগুরু সাত্তার স্যারকে জানাই সালাম

অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিনে শিক্ষাগুরু সাত্তার স্যারকে সালাম জানাই। কোন কাজের প্রতি প্রবল আগ্রহ অদম্য ইচ্ছা থাকলে যে কেউ সফল হতে পারেন। আর এর সাথে যদি অধ্যবসায় যোগ হয় তাহলে পঙ্গুর পর্বতারোহণের মতই তা হয় বিস্ময়কর। এধরণের একনিষ্ঠ ব্যক্তিগন আর্থ -সামাজিক -রাজনৈতিক কিংবা শিক্ষকতা -চিকিৎসা - সমাজসেবা , যে কোন পেশায় সাফল্য লাভ করেন। শিক্ষকতা পেশায় এমন একজন সফল ব্যক্তি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু মোঃ আঃ আব্দুস সাত্তার মাস্টার।তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বারের এলাহাবাদের আলী আক্কাস মোল্লার দ্বিতীয় ছেলে তিনি শুধু ক্লাসে দায়িত্ব পালন করেই ক্ষান্ত থাকতেন না। সবসময় তার স্নেহভাজন ছাত্রদের খোঁজ-খবর নিতেন।তিনি ১৯৩৫ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম আলী আক্কাস মোল্লা এক জন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এলাহাবাদ গ্রাম পার্শ্ববর্তী এলাকায় তার মত জ্ঞানী ঈমানদার ব্যক্তি ছিল দুর্লভ। তার পিতা অর্থ্যাৎ মাস্টার সাহেবের দাদা জয়েন উদ্দিন মিয়াজিও ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ। তিনি অত্র এলাকায় ইসলামের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। জনাব সাত্তারের বড় ভাই মরহুম আলী আশ্রাফ মাস্টার দীর্ঘ   দিন শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সেবামূলক কাজেও অংশ নিতেন। কলকাতা থেকে ডাকযোগে পত্রিকা এনে সাধারণ মানুষকে পত্রিকা পড়ে শোনাতেন।জনাব সাত্তার এলাহাবাদ পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। তখন ৪র্থ শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হতো। কুমিল্লা জেলা স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জীবনের প্রথম সার্টিফিকেট পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বুড়িচং উপজেলার আবিদপর হাই স্কুলে ৫ম ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেন। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে একটি বোর্ড পরীক্ষা হতো। সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কুমিল্লা শহরস্থা হোচ্ছামিয়া হাই স্কুলে ৭ম ৮ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করেন। অতঃপর ১৯৪৯ সালে ছোটনা হাই স্কুলে ( দেবিদ্বার) ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তখন পিতার অসুখ হওয়ায় বাড়িতে চলে আসেন। পরবর্তীতে মরিচা বিদ্যালয়ে গিয়ে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। কিন্তু এখানেও বিশী দিন পড়া সম্ভব হয়নি। তারপর তিনি গঙ্গামন্ডল রাজ উনস্টিটিউটে ১০ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। টেস্ট পরীক্ষা দেয়ার পর ফ্যামিলি থেকে নির্দেশ আসলো আর লেখাপড়া করতে হবেনা বাড়িতে এসে সংসারের হাল ধরতে হবে। পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই তিনি কৃষি কাজে মনযোগ দিতে বাধ্য হলেন। ছোটকালে মা মারা যাওয়ার পর সৎ মায়ের নিকটেই তিনি মানুষ হয়েছেন। বড় ভাই সহযোগিতা করলেও মেট্রিক পরীক্ষার ফরম ফিলাপ না করানোর  কারণে তিনি সে বছর পরীক্ষা দিতে পারেননি। ফলে সাময়িক শিক্ষা বিরতি ঘটে।জনাব সাত্তার বলেন তখন আমার মনের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমি জানতাম মেট্রিক পাশ করতে না পারলে আমি আমার লক্ষে পৌঁছতে পারব না। তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকা রওয়ানা হলাম। ইচ্ছে ছিল ঢাকায় গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবো।।কিন্তু দাউদকান্দি ফেরিঘাট যাওয়ার পর বাবার অবাধ্য হওয়া ঠিক হবেনা ভেবে তিনি ফিরে এলেন। এসময় কয়েক বছর তিনি কৃষি কাজে মনযোগ দেন। পারিবারিক কারণে বেকার অবস্থায়ই ১৯৫৬ সালে দেবিদ্বারের তুলাগাঁও নোয়াপাড়ার মাওলানা আঃ সালামের কন্যা রাফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। দুবছর পর কারিগরি জ্ঞানের জন্য ছোটনা হাই স্কুলে অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা জরিপ শিক্ষা কেন্দ্র থেকে মাসের ট্রেনিং লাভ করে কৃতিত্তের সাথে ভুমি জরিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হয়। ক্ষমতায় আসেন ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। তিনি ক্ষমতায় এসে দেশবাসিকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে লাগলেন দেশবাসীর পাশাপাশি নতুন কও সে্বপ্ন দেখলেন সাত্তার। তিনি বাড়ি থেকে চলে গেলেন ঢাকার কাইঞ্চন। সেখানে বিভিন্ন মসজিদে ঈমামতি করেন। এসময় মাত্র টাকা দিয়ে স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ি কিনে এনেছিলেন। যা তিনি এখনও স্মরণ করে পুলকিত হন। ১৯৬৩ সালে তিনি এলাহাবাদ জুনিয়র হাই  স্কুলে মৌলবী পদে যোগদান করেন।৩ বছর জুনিয়র মৌলবী হিসেবে কাজ করার পর ১৯৬৬ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে মেট্রুকুলেশন পাশ করেন। এবছরই তিনি কুমিল্লার প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিউট থেকে পিটিআই পাশ করেন। তারপর তিনি কুমিল্লার বুড়িচং থানার শিকারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এবছর রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তারপর তিনি উনঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় , খয়রাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় সর্বশেষ হোসেনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে ১৯৯২ সালে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি এখন নিজ বাড়িতে অবসর জীবন যাপন করছেন। তার ছেলে ছেলে বউদের মধ্যে জন মাস্টার ডিগ্রি পাশ। জনাব সাত্তারের প্রথম ছেলে লিয়াকত আলী দেবিদ্বারের এলাহাবাদ হাই স্কুলে বিএসসি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন,তার স্ত্রী নাজমা আক্তার সাবেক শিক্ষিকা। দ্বিতীয় ছেলে সফিকুল ইসলাম কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজের গনিতের প্রভাষক , তার স্ত্রী বাইড়া স্কুল এন্ড কলেজের পদার্থ বিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক, ৩য় ছেলে মনিরুল ইসলাম ব্রাহ্মনপাড়া ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক , তার স্ত্রী তাছলিমা আক্তার একই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ৪র্থ ছেলে মমিনুল ইসলাম মোল্লা  সামছুল হক কলেজের ( হায়দরাবাদ ,মুরাদনগর) পৌরনীতি প্রভাষক এবং বিশিষ্ট সাংবাদিকতার  স্ত্রী তাহমিনা ইয়াসমিন বাখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা।  ৫ম ছেলে আমিনুল ইসলাম সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্সে একাউন্টেন্ট হিসেবে কর্মরত ,তার স্ত্রী রোজিনা আক্তার  গৃহীনী একমাত্র মেয়ে লুৎফা আক্তার বিবাহিত। বহু প্রতিকুলতা পেড়িয়ে তিনি ব্যক্তি জীবনে সাফল্য লাভ করেছেন। ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদফুল মিয় চেয়ারম্যানআঃ মতিন মাস্টার , সফিকুল ইসলাম (দুয়ারিয়া) রামপুরে হানিফ মাস্টার তাকে বিভিন্ন সময় অনুপ্রেরণা  দিয়েছেন। তার বহু  ছাত্র -ছাত্রী আজ প্রতিষ্ঠিত। এদের মধ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি আঃ হান্নানঅধ্যক্ষ মতিউর রহমানসাংবাদিক জসিম উদ্দীন অসিম  অন্যতম তার স্নেহভাজন ছাত্ররা বলেন- “স্যার আমাদেরকে  মারতেন কম বুঝাতেন বেশীএকবার না পারলে ১০ বার বুঝিয়ে দিতেন। কখনও রাগ করতেন না।তাই স্যারকে আমরা অন্যান্য সারেরে চেয়ে বেশী পছন্দ করতাম এবং এখনও শ্রদ্ধা করি।
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, প্রভাষক সাংবাদিক, কুমিল্লা ,





শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.