মুক্তিযুদ্ধে মুরাদনগর ,কুমিল্লা
মমিনুল ইসলাম মোল্লা:
তথ্য সংগ্রাহক, মুরাদনগর, কুমিল্লা
উপজেলার নাম (জেলার নাম সহ)ঃ
কুমিল্লা জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা মুরাদনগর। এটি কুমল্লা
জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে
অবস্থিত। এ উপজেলার আয়তন ৩৩৯
বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তরে নবীনগর দক্ষিণে চান্দিনা ও
দেবিদ্ধার পূর্বে দেবিদ্ধার, ব্রাহ্মনপাড়া ও কসবা পশ্চিমে দাউদকান্দি, হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর
উপজেলা। বাংলাদেশের পুরাতন থানাগুলোর মধ্যে মুরাদনগর অন্যতম । ১৮৫৮ সালে এ থানা সৃষ্টি
হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ থানার রয়েছে গৌরবজনক ভূমিকা। যুদ্ধকালীন সময়ে কুমিল্লা ২ নং সেক্টর
কে ফোর্সের আওতাধীন ছিল।
উপজেলায়
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: মুরাদনগর উপজেলায় কয়েকটি প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৮৩৭
সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। কুমিল্লার দ্বিতীয় হাই স্কুল মুরাদনর ডি আর
হাই স্কুল। এটি ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া ১৮৮৫ সালে বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়
এবং ১৯১৪ সালে জাহাাপুর কমলাকান্ত একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া
কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪১ সালে শ্রীকাইল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দেলনে
শ্রীকাইল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া বায়ান্ন পরবর্তী বিভিন্ন আন্দোলনে মুরাদনগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা
বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আমোদ এর ২৭ ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়-১৮ ফেব্রুয়ারী
মঙ্গলবার রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের
অধ্যাপক ডক্টর সামসুজ্জোহার বিদেহী আত্মার সম্মানার্থে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত বলে পূর্ব
পাকিস্তান কলেজ শিক্ষক সংস্থা ও পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক স্কুল সংস্থার নির্দেশে শ্রীকাইল
কলেজ ও মুরাদনগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ দিন ব্যাপী কর্মসূচী পালিত হয়।
২৭
ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯: কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়- সোমবার
নিখিল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান, মুরাদনগরে গণসংযোগ কালে জনতার
উদ্দেশ্য দলীয় প্রার্থী হাজী আবুল হাসেম সাহেবের সমর্থনে ভাষণ দেন।
৭
ডিসেম্বর ৭০: পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কুমিল্লা ৯ (মুরাদনগর)
আসনে নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত প্রার্থী আলহাজ্ব আবুল হাসেম (১,০৯,৯৪৫)
। এছাড়া আব্দুল ওদুদ ,জামাতে ইসলামী (৩৬১৪)
হারুন আর রশীদ, মুসলিম লীগ কাইয়ুম (৪৭১৫) এবং আব্দুল করিম, ন্যাপ (ওয়ালী) (১,৪৬৬) ভোট
পান।
১৭
ডিসেম্বর ৭০: প্রাদেশিক নির্বাচন হয়। কুমিল্লা ১০ মুরাদনগর আসনে আওয়ামীনীগ থেকে পাশ
করেন মো: হাশেম ৪৩০৪৫, মোবারক আলী সরকার (মুসলিম লীগ কাইয়ুম) ২৭৩০, কাজী আ: কাসেম,
মুসলিম লীগ কাউন্সিল ২৩০৯, আবুল ফজল খন্দকার পিডিপি ৩৩৫ ভোট পান।
উপজেলায় পাক বাহিনীর অনুপ্রবেশ ও ক্যাম্প স্থাপন:
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পাক বাহিনী প্রথম ক্যাম্প
স্থাপন করে। কোম্পানীগঞ্জ সহ গোমতী নদীর দক্ষিণ তীরে সরকারি খাদ্য গোডাউনে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের
ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। ব্রিজের উপর মুক্তিযোদ্ধাদের দাঁড় করিয়ে গুলি করে
গোমতী নদীতে লাশ ফেলে দেয়া হতো। এ লাশ ভাসতে ভাসতে চলে যেতো মেঘনা নদীতে। এছাড়া গোমতী
নদী দিয়ে কুমিল্লা ক্যান্টেম্যান্ট থেকে আর্মীরা ছোট ছোট লঞ্চযোগে এসে মুরাদনগরের বিভিন্ন
গ্রামে আক্রমন করতো। জলবেষ্টিত মুরাদনগরের অন্যান্য নদী আর্চি, নৈলা, ও বুড়ি যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার সাথে জড়িত। ১৮ আগষ্ট পাক-
সেনাদের ৩ টি দল মুরাদনগর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে হোমনা যাবার পথে মুক্তিযোদ্ধারা ২টি
নৌকায় এমবুশ করলে নৌকা দুটি ডুবে যায়। এতে একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৯ জন পাকসেনা ও ৫ জন রাজাকার
নিহত হয়। এছাড়া মুরাদগরের উত্তরাংশে অবস্থিত “ অদের খাল ”দিয়ে পাশ্বর্বর্তী থানা কসবা থেকে নৌকাযোগে এসে
গ্রামবাসীদের উপর অতর্কিত আক্রমন চালাত। তাছাড়া মুরাদনগরের আন্দিকোট ইউনিয়নের গাঙ্গেরকোট
গ্রামের রনজিত সাহার বাড়িতে নভেম্বরের প্রথম দিকে পাক বাহিনী ক্যম্প স্থাপন করে। ১৪
ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করে। আত্মসমর্পনের ব্যাপারটি নিশ্চিত হলে কুটি হয়ে কুমিল্লা সিলেট রোডে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার
সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে আক্রমন করে। তখন
২০/২৫ জনের প্লাটুনটির বেশ কয়েকজন মারা যায়। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ৩১ অক্টোবর চাপিতলা ইউনিয়নের চাপিতলা অজিফা খাতুন
উচ্চ বিদ্যালয়ে ১টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন
করেছিল। মুরাদনগর সদরে পাক সেনাদের ক্যাম্প ছিল মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
রাজাকার/
আলবদর/ আল শামস
মুরাদনগরে রাজাকারদের প্রকাশ্য
তৎপরতা কম ছিল। তবে পর্দার আড়ালে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে পাক বাহিনীর কাছে তথ্য
দিত। ২৬ আগষ্ট ৭১ সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়- অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার
(রাজস্ব) ১৭ আগষ্ট রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে সদর উত্তর মহকুমা হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে
মুরাদনগরের বিভিন্ন স্থানে শান্তি কমিটির লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। রাজাকারগন তার
সাথে সাক্ষাৎ করে সরকারকে পূর্ণ সহযোগীতার
আশ্বাস দেন। মুরাদনগরের উল্লেখযোগ্য রাজাকারদের মধ্যে আ: জব্বার (ইউসুফনগর)
মরহুম মাজেদুল ইসলাম ভূইয়া, মরহুম মর্তুজ আলী ভূইয়া, মরহুম আব্দুল হালিম (চাপিতলা)
অন্যতম। মুক্তিযোদ্ধারা জানান, যুদ্ধের শুরুতেই উপজেলা পর্যায়ে শান্তি কমিটি গঠন করা
হয়। তারা সার্বক্ষণিকভাবে পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো। পর্যায়ক্রমে
তারা মুরাদনগরের প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের কমিটি গঠন করে। যুদ্ধের প্রথম দিকে পাকসেনারা
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কুমিল্লা সিলেট রোডে মুরাদনগরের বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিত।
ক্রমেই তারা ঘন ঘন এলাকায় আসাতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে
যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যপারে তথ্য দেযা ছাড়াও তাদের সন্ধানে বের হতো । তাদেরকে না পেলে তাদের
পরিবারের উপর নির্যাতন চালাতো। কোম্পানীগঞ্জে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন ছাড়াও উপজেলার
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন স্থানে সেনাবাহিনী মিলিশিয়া ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের সাহস ও
সহযোগিতায় রাজাকাররা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ট্রেনিং করতে যাওয়া তরুণদের পরিবারের লোকদের
উপর নির্যাতন চালাতে থাকে। ইউনিয়নগুলোতে রাজাকার কমান্ডাররা তাদের দলবলসহ বাড়িতে গিয়ে
প্রথমে লুটপাট করতো। তারপর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিত এবং গরু ছাগল নিয়ে আসতো। বিশেষ করে
হিন্দু অধুষিত এলাকাগুলোতে তারা আক্রমন চালায়। ফলে বেশিরভাগ হিন্দু জীবন বাঁচাতে কপর্দকহীনভাবে
শরনার্থী হিসেবে ভারতে গমন করে। প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই মূলত হিন্দু এলাকাগুলো ফাঁকা
হয়ে যায়। বিশেষ করে উচ্চ বংশীয় ধনী হিন্দু পরিবারগুলোতে হামলা চালায়। তাদের নিকট থেকে
চাঁদা আদায় করে এবং লুটপাট অব্যহত রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের
প্রস্তুতিঃ ২৫ মার্চ গণহত্যার পর পরই মুরাদনগরের জনসাধারণ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে
মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মুরাদনগরের বিভিন্ন গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করে। কাশিমপুরের
কুদ্দুস কমান্ডারের বাড়িতে বড় ধরণের ক্যাম্প ছিল। চাপিতলা গ্রামে ক্যাম্প ছিল রহমান
ডাকাতার বাড়ি, জহিরুদ্দিন ফকির বাড়ি, আলীমুদ্দীনের বাড়ি, ও তছনআলী ভূইয়া বাড়ি। এছাড়া
খামারগাও মাদ্রসা, দিগলদী গ্রামের দোতলা বাড়িতে , রামচন্দ্রপুর সরকার বাড়িতে, কৃষ্ঞপুর
খোকন ভুইয়ার বাড়ি, বৃন্দারামপুর বড়বাড়ি, ফোগরারচর হিন্দু বাড়ি, জাহাপুর জমিদার বাড়ি,
চৌহদ্দী ব্যাপারী বাড়ি, কাজিয়াতল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাহাড়পুর মাদ্রাসা, পাঁচপুকুরিয়া
প্রাথমিক বিদ্যালয়, দরানীপাড়া বারেক মাস্টার বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল।
হত্যা:
পাক বাহিনী হিন্দু-মুসলমন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষদের হত্যা করে।
তারা জাঙ্গাল গ্রামের অজ্ঞাতনামা এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। গাঙ্গেরকোট গ্রামের
পাক বাহিনীর ক্যাম্পে অবস্থানকারী সেনারা আন্দিকোট ও ইসলামপুর থেকে ধরে আনা লোকদের
বুড়ি নদীর তীরে এনে হত্যা করে। তারা সবাই ছিল সাধারণ গ্রামবাসী। শহীদদের মধ্যে মনমোহন
দেবনাথ পিতা দারীকা নাথ, মতিলাল দেবনাথ, ও ইন্দ্রজিত সাহার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২০ অক্টোবর চাপিতলা থেকে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে ক্যন্টেমেন্টে হত্যা করা হয়।
তাদের কবর সেখানে রয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন শাহজাহান, বিল্লাল হোসেন ও রাজা
মিয়া । কৈজুরি গ্রামে পাকিস্থানী সেনারা একজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। ১৫ ডিসেম্বর মুরাদনগর
ডিআর হাই স্কুলের ছাত্র রফিক বিজয়োল্লাস করতে করার সময় (নবীপুরের) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা
যায়। দড়ানীপাড়া গ্রামের কয়েকজন যুবক ভোরে ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় তাদেরকে
ধরে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলে বাচ্চু মিঞা, ওহাব আলী ও সামশুল হক সহ ৭ জনকে।
তাদেরকে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে কবর দেয়া হয়। পান্তি বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড
চার্জ করলে পাক সেনারা বাজারে তল্লাশী চালিয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায় ইলিয়টগঞ্জ।
সেখানে তাকে হত্যা করা হয়।
গনহত্যা:
মুরাদনগরের একটি বিখ্যাত বাজার রামচন্দ্রপুর বাজার। এবাজারে পাক সেনার লুটতরাজ করে।
রামচন্দ্রপুর বাজারের পূর্ব পাশে উত্তর ও দক্ষিন বাখরাবাদ গ্রাম। এখানে ২৪ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ
আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনী গিয়ে লুটতরাজ, হত্যা ও নারী নির্যাতন করে। ১০০টি ঘরে
লুটতরাজ করে। নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে। ফিরে আসার সময় তারা ২০ জন
যুবককে গাড়িতে করে দেবিদ্ধার নিয়ে আসে। দেবিদ্ধার নিউমার্কেটে এনে তাদেরকে দিয়ে কবর
খুড়ে ব্রাশ ফায়ার করে সবাইকে হত্যা করে। তবে ১ টি ছেলে প্রাণে বেঁচে যায়।
অগ্নিসংযোগ
ও লুন্ঠন:
পাকবাহিনী জানঘরের মুক্তিযোদ্ধা
চারু মিয়ার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। চাপিতলায় ২ শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। কামাল্লা
বাজারের দক্ষিণের হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। মুরাদনগর সদরের কৃষ্ণনাথের
বাড়িতে আগুন লাগায়। কোম্পানীগঞ্জ নিকটে নগরপাড়ের রায় বাড়িতে, রায়তলার গনি সুবেদার বাড়ি,
পালাসুতার মতিন কমান্ডারের বাড়িতে পাক সেনারা অগ্নিসংযোগ করে।
পাকবাহিনীর
নির্যাতন কেন্দ্র: কোম্পানীগঞ্জের গোমতী নদীর দক্ষিণ পাশে ভিংলাবাড়ি গ্রামে পাক বাহিনীর
টর্চার সেল ছিল। এছাড়া চাপিতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ
গ্রামবাসীকে নির্যাতন করা হতো।
বধ্যভূমি
ও গন কবর: উপজেলায় সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড ঘটে চাপিতলা ও রামচন্দ্রপুরের নিকটবর্তী
বাখরাবাদ গ্রামে। তবে তাদেরকে একত্রে কবর দেয়া হয়নি। অধিকাংশ শহীদদেরকে তাদের পারিবারিক
কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তবে খামারগ্রামে ৩জন মুক্তিযোদ্ধার কবর একসাথে রয়েছে। এর
মধ্যে ২ টি পাকা কবর। এরা হচ্ছেন বলিঘরের আবুল বাশার ও পুস্কুনীরপাড়ের রমিজ উদ্দিন।
এছাড়া দরানীপাড়া ৬ জনকে পাশাপশি বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের
সংগঠক: যুদ্ধকালীন সময়ে মুরাদনগর থানা কমান্ডার ছিলেন কামরুল হাছান ( বাবুটিপাড়া)। সহকারী কমান্ডার গিয়াস
উদ্দীন, (সিদ্ধেশ্বরী ), প্লাটুন কমান্ডার
রওশন আলী । সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশারফ । তৎকালীন এম এন এ আলাহাজ্ব আবুল হাশেম
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন।
উপজেলায়
স্বাধীনতা বিরোধী দল বা সংগঠন: জামায়াতে ইসলামী:
মুসলীম লীগ কাইযুম,মুসলীম লীগ কাউন্সিল।
পাক
বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধঃ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রণীত “মুক্তিযুদ্ধেও ইতিহাস” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয় ৭ও৮ নভেম্বর চাপিতলার যুদ্ধ সংগঠিত হয়। কোম্পানীগঞ্জ থেকে ৩
মাইল দূরে চাপিতলা গ্রাম। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী
কোম্পানীগঞ্জ থেকে নবীনগর যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইট বিছিয়ে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে নিচ্ছিল।
মুক্তিবাহিনী এ কাজে বাঁধা দেয়ার পরিকল্পনা করে। আর এ পরিকল্পনা করেন ক্যাপ্টেন হায়দার।
ভারতের মেলাঘর ক্যাম্পের অনুমোদন সাপেক্ষে মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হাছান ১ কম্পানী যোদ্ধা
নিয়ে তাদেরকে বাঁধা দেয়ার চিন্তা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক চাপিতলায় ১ ব্যাটেলিয়ন সৈন্য আরশি নদীর উত্তরে তীরে অবস্থান নেয়। এ সময়
পাকবাহিনীর ক্যাম্প ছিল চাপিতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প
ছিল খামারগ্রাম মাদ্রাসায়। ৭ও৮ নভেম্বর,যুদ্ধ হয়। এত ৪৮ জন গ্রামবাসী ও ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা
সহ ৫১ জন শহীদ হন। এছাড়া ২১ জন নারী নির্যাতিত হয়, অগ্নিসংযোগ
করা হয় ২০৬ টি বাড়িতে।
মুক্তিযুদ্ধে
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও পরিচয় :
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ন অবদানের
জন্য মুরাদনগর এর ৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত
হন। তারা হলেন বীর বিক্রম আব্দুল মালেক
(কড়ইবাড়ী), বীর বিক্রম আব্দুল মান্নান, (সিদ্বেশ্বরী), এছাড়া আবু মুসলিম বীর প্রতীক (জারেরা), মোহাম্মদ আবু তাহের বীর প্রতীক, ( পীর
কাশেমপুর), মনসুর আলী,বীর প্রতীক, (গুঞ্জর), এছাড়া আরো বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত লাভ করেছেন। তারা হচ্ছেন:
১নং শ্রীকাইল
ক্রমিক নং
নাম পিতা
গ্রাম শহীদ
হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ মোহাম্মদ হোসেন মিঞা মৃত:
মহব্বত আলী শ্রীকাইল
২ শহীদ সিপাহী আলাউদ্দীন আব্দুল
গফুর শ্রীকাইল
৩ শহীদ সিপাহী মিজানুর রহমান মৃত: আলী আফজাল ভূইয়া কালা
পাইলা
৪ শহীদ সিপাহী মফিজুল ইসলাম গোলাম
কিবরিয়া ভুতাইল
ক্রমিক নং
নাম
২ নং আকবপুর
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ মো: আবুল বাশার পরচান মিয়া আকবপুর
২ শহীদ সিপাহী মদন মিয়া নায়েব
আলী গাজীপুর
৩ শহীদ সিপাহী ফিরোজ মিয়া মন্তাজ
মিয়া গাজীপুর
৪ শহীদ নায়েক সামছুল হক মৌলভী
আয়েজ উদ্দিন গাজীপুর
৫ শহীদ সিপাহী আব্দুল মান্নান ইউনুছ আলী পীর
কাশিমপুর
৬ শহীদ সিপাহী আব্দুল কাহার আ:
কাদের গাজীপুর
৭ শহীদ ল্যান্স নায়েক আ: হান্নান জিন্নাত আলী মুন্সী গাজীপুর
৮ শহীদ নায়েক আ: মালেক ইসহাক
আলী কড়ইবাড়ি
৯ শহীদ নায়েক আ: রহমান মৃত:
গোলজার আলী কাশিমপুর
১০ শহীদ নায়েক সামছুল হক মৃত:
হায়দার আলী রাজাবাড়ী
ক্রমিক নং
নাম
৩ নং আন্দিকোট
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ বৃন্দাবস ভৌমিক রাজকৃষ্ণ
ভৌমিক আন্দিকোট
২ মনমোহন দেবনাথ দারীকা
দেবনাথ আন্দিকোট
৩ রমনী সরকার অজ্ঞাত আন্দিকোট
৪ মতিলাল দেবনাথ নিবারন
দেবনাথ আন্দিকোট
৫ মনমোহন সাহা আরাহসাহা আন্দিকোট
৬ ইন্দ্রজিত সাহা মনমোহন আন্দিকোট
৭ শহীদ আবু মুসলিম তালেব
আলী জারেরা
৮ শহীদ শুলতান আহম্মদ কলুমুদ্দীন আন্দিকোট
৯ শহীদ আব্দুল মান্নান সুন্দর
আলী জলপা
১০ শহীদ নায়েক মোহতাব উদ্দীন মুন্সি
সামছুদ্দীন গাঙ্গেরকোট
১১ শহীদ সিপাহী ইদ্রিস আকবর
আলী গাঙ্গেরকোট
১২ শহীদ সুলতান আহম্মদ রমিজ
উদ্দীন গাঙ্গেরকোট
ক্রমিক নং
নাম
৪নং পুর্বধইর পূর্ব
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরন
১ শহীদ সিপাহী সৈয়দ ফুল মিয়া মৃত: চারু মিয়া জানঘর
২ শহীদ আ: রহিম অজ্ঞাত কুরবানপুর
ক্রমিক নং
নাম
৫নং পুর্বধইর পশ্চিম
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
ক্রমিক নং
নাম ৬নং বাঙ্গরা পূর্ব
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
ক্রমিক নং
নাম ৭নং বাঙ্গরা পশ্চিম
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ ফজলুল হক আ:
মান্নাফ কাগাতুয়া
২ শহীদ সিপাহী আ: মালেক মো:
আবু আহাদ দুর্গাপুর দিঘিরপাড়
৩ শহীদ সিপাহী আ: রহিম মৃত:
মুন্সী নওয়াব আলী কাগাতুয়া
ক্রমিক নং
নাম ৮নং চাপিতলা
পতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ শাহজাহান মৃত:
ছায়েদ আলী রাজা চাপিতলা
২ শহীদ বিল্লাল হোসেন রওশন
আলী রাজা চাপিতলা
৩ শহীদ রাজা মিয়া আজগত রাজা চাপিতলা
৪ শহীদ রমিজ উদ্দিন মোছলেহউদ্দিন পুষ্কুনীরপাড়
ক্রমিক নং
নাম ৯নং কামাল্লা
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ আব্দুল ওদুদ জিন্নত
আলী বেপারী কামারচর
২ শহীদ হাবিলদার আবু তাহের নায়েব
আলী কামাল্লা
ক্রমিক নং
নাম ১০নং যাত্রাপুর
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
ক্রমিক নং
নাম ১১নং রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ ল্যান্স নায়েক আ: জলিল আয়েন উদ্দীন ব্যাপারী হারপাকনা
ক্রমিক নং
নাম ১২নং রামচন্দ্রপুর উত্তর
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ নায়েক কাজী ফরহাদ হোসেন কাজী ওয়াজেদ আলী ব্রাহ্মন
চাপিতলা
ক্রমিক নং
নাম ১৩নং মুরাদনগর
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ অজ্ঞাত নবীপুর
২ শহীদ শাহজালাল এলাহী
বক্র মুরাদনগর
৩ শহীদ ফজলুল কবির উদ্দিন মৃদ:
জব্বার খান পশ্চিম সোনাউল্লাহ
৪ শহীদ সুবেদার মোল্লা মতিউর রহমান সামির উদ্দন ইউসুফনগর
৫ শহীদ মাহবুব শাহ জামাল ড:
বকশত আলী মুরাদরগর
ক্রমিক নং
নাম ১৪নং নবীপূর পূর্ব
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ মনসুর আলী বীরপ্রতীক কেরামত
আলী গুঞ্জর
২ শহীদ রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাত নবীপুর পশ্চিম
৩ শহীদ নায়েব আলী আক্রম
আলী বাখরাবাদ
ক্রমিক নং
নাম ১৫নং নবীপূর পশ্চিম
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১২ শহীদ সিপাহী মো: আব্দুছ সামাদ হাফিজ উদ্দীন বেপারী শিবানীপুর
ক্রমিক নং
নাম ১৬নং ধামঘর
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ আ: মান্নান আলতাব
আলী সিদ্বেশরী
২ শহীদ বাচ্চু মিয়া মৃত:
আলতাফ আলী সিদ্বেশরী
৩ শহীদ মমতাজ উদ্দীন আফছার
উদ্দীন সরকার ধামঘর
৪
৫ শহীদ সিপাহী তমিজ উদ্দীন
শহীদ মিন্নত আলী
আজগর আলী
আলতব আলী নোয়াখলা
সিদ্বেশরী
ক্রমিক নং
নাম ১৭নং জাহাপুর
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
ক্রমিক নং
নাম ১৮নং ছালিয়াকান্দি
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
ক্রমিক নং
নাম ১৯নং দারোরা
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ রফিকুল ইসলাম সুরুজ
মিয়া সরকার
২ শহীদ সিপাহী আ: সোবাহান আফসার
উদ্দীন মুন্সি কাজিয়াতল
ক্রমিক নং
নাম ২০নং পাহাড়পুর
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১
২ শহীদ আয়েব আলী শিকদার
শহীদ কুদ্দুস সরকার ইদ্রিস মিয়া শিকদার
গোলাম হোসেন পাহাড়পুর
উড়িশ্বর
ক্রমিক নং
নাম
২১নং বাবুটিয়া পাড়া
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ বাচ্চু মিয়া মোসকত
আলী দরানী পাড়া ফজরের নামাজের প্রস্তুতি কালে
২ শহীদ আব্দুল খালেক মোহর
আলী দরানী পাড়া সেনাবাহিনীর
৩ শহীদ তোরাব আলী নোয়াব
আলী দরানী পাড়া নিকট ধরা পড়ে,
৪ শহীদ মো:মাজিদ নোয়াব
আলী দরানী পাড়া গুলি করে ৮
৫ শহীদ ওহাব আলী আশরাফ
আলী দরানী পাড়া জনকে হত্যা করা হয়।
৬ শহীদ কারী মুহাম্মদ ইব্রাহীম বাহার মাহমুদ দরানী
পড়া সমাধি নিজ নিজ
৭ শহীদ সামসুল হক মহব্বত
আলী দরানী পাড়া পারিবারিক
৮ শহীদ নায়েক শাওকত আলী আমিন
উদ্দীন দরানী পাড়া কবরস্থানে।
ক্রমিক নং
নাম ২২নং টনকী
পিতা
গ্রাম
শহীদ হওয়ার বিবরণ
১ শহীদ শাহজাহান আলী অজ্ঞাত বৈলাবাড়ি
২ শহীদ বিল্লাল হোসেন রওশন
আলী বৈলাবাড়ি
রাস্তার নাম
১ / শহীদ জলিল সরকার রোড- চাপিতলা-মহেশপুর
বাজার । তিনি চাপিতলার যুদ্ধে শহীদ হন।
২/ শহীদ রমিজ উদ্দিন সড়ক। পুষ্কুনীরপাড়
-টনকী। তিনি ও চাপিতলার যুদ্ধে শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিল
-মুরাদনগর:
মো: হারুনুর রশিদ ০১৮১৩-৬৭৬৫২৯।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা:
তথ্য সংগ্রাহক মুরাদনগর, কুমিল্লা
প্রভাষক সামছুল হক কলেজ
হায়দরাবাদ, মুরদনগর, কুমিল্লা-০১৭১১-৭১৩২৫৭