মমিনুল ইসলাম মোল্লা | প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০১৪
জয়-পরাজয় অথবা সফলতা-ব্যর্থতার
মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জীবন অতিবাহিত করছি। শুধু মুসলমানই নয়, সব মানুষের জন্য এ
নিয়ম সমভাবে প্রযোজ্য। জীবনের কোনো ক্ষেত্রে সফল হলে আমরা যেমন খুশিতে আÍহারা হয়ে যাই, তেমনি বিফল হলে বেদনায় নীল হয়ে যাই।
কিন্তু আল্লাহতায়ালার প্রতি যদি আমাদের পুরোপুরি বিশ্বাস থাকত তাহলে জীবনের কঠিন
মুহূর্তেও আমরা অবিচল থাকতে পারতাম। আসলে ভালোমন্দ সবই আল্লাহপাকের কাছ থেকে আসে।
এ বিষয়টি আমাদের মেনে নেয়া একান্ত কর্তব্য। সূরা আত্ব ত্বালাকে (আয়াত-৩) আল্লাহ
বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। তাকদির শব্দটি
কাদারু থেকে এসেছে। এর অর্থ নির্ধারণ করা, পরিমাণ, পরিমিত ও ব্যবস্থাপনা। সাধারণ
অর্থে তাকদির মানে নিয়তি, ভাগ্য, ললাট ইত্যাদি। যাবতীয় বিষয় ভালোমন্দ, উপকার-অপকার
ইত্যাদি আগে থেকে নির্ধারিত হওয়াকে তাকদির বলে। হজরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- সবকিছুই আল্লাহ নির্ধারিত কদর অনুযায়ী ঘটে। এমনকি
বুদ্ধির দুর্বলতা এবং প্রবলতাও। (মুসলিম)। তাকদির লেখা হয়েছে আসমান-জমিন সৃষ্টির
৫০ হাজার বছর আগে। (মুসলিম)। তাকদিরের চারটি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে
জ্ঞান। প্রতিটি মুসলমান বিশ্বাস করে আল্লাহর জ্ঞান অপরিসীম। পৃথিবীর শুরু থেকে
কেয়ামত পর্যন্ত কী হবে, কী হবে না, তা লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন। আল্লাহ যা
ইচ্ছা করেন তাই হয়। তার ইচ্ছার বাইরেও কিছু হয় না আবার বিরুদ্ধেও কিছু হয় না।
আল্লাহ আমাদের যেমন সৃষ্টি করেছেন আমাদের সব কথা, কাজও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। কেউ
কেউ মনে করেন কোনো কাজের জন্য চেষ্টা করা, রোগ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া
তাকদিরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রকৃতপক্ষে তদবির ও তাকদিরের অংশ। হাদিসে বর্ণিত আছে,
একবার এক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা যে ঝাড়ফুঁক করিয়ে থাকি,
চিকিৎসায় ওষুধ দিয়ে থাকি অথবা আত্মরক্ষার জন্য যে উপায় অবলম্বন করে থাকি তা কি
তাকদিরের কোনো কিছুকে রদ করতে পারে? উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের এসব চেষ্টাও
তাকদিরের অন্তর্গত (তিরমিজি)।
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করার জন্য আমাদের বলা হয়েছে। সূরা মুজাম্মিল আয়াত-১০-এ বলা হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ
ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি জানেন কে অসুস্থ হবে, কে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধানে
দেশে-বিদেশে যাবে। কে আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত হবে। আমরা দুনিয়া ও আখেরাত দুই
জায়গায়ই ভালো থাকতে চাই। রাসূল (সা.) বলেছেন, আদম সন্তানের সুখ নির্ভর করে তার
প্রাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার ওপর। মানুষকে মেনে চলতে হবে, যা তার ভাগ্যে আছে, তার
ভাগ্যে আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন। তাই বান্দাকে অবশ্যই তার ভাগ্যের ওপর সন্তুষ্ট
থাকতে হবে।
বিপদে পড়লে একমাত্র আল্লাহর কাছে
সাহায্য চাইতে হবে। তিরমিজি শরিফে আছে, বিপদে পড়লে আমাদের উচিত পাপ স্বীকার করে
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু আমাদের কেউ মারা গেলে আমরা বলি, ‘হে আল্লাহ,
তুমি এটা কী করলা? আমি কি এত বেশি পাপ করে ফেলেছি যে আমাকে এমন শাস্তি দিলা? অনেকে
তো এর চেয়েও বেশি পাপ করে থাকে, কই তাদের তো কিছু হয় না?’ এ ধরনের কথা বলা নিষেধ।
আল্লাহর কোনো কাজের সমালোচনা করা যাবে না। তবে আল্লাহ আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার
করুন সেজন্য আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা, কারণ একমাত্র দোয়াতে আল্লাহ ভাগ্য
পরিবর্তন করেন। আল্লাহ আমাদের যে বিপদ-আপদ দিয়ে থাকেন, তাতেও কল্যাণ রয়েছে।
বিপদগ্রস্ত লোকটি যদি খারাপ কাজ করতে থাকে সে যেন তা থেকে বিরত হয় এবং আল্লাহর পথে
ফিরে আসে। মানুষটি যে অন্যায় করছে, পাপ কাজ করছে, তার প্রতিফল হিসেবে বিপদও
দুঃখ-কষ্ট দিয়ে পৃথিবীতেই তার অপরাধের শাস্তি দিয়ে দেয়া ও এ সময় মানুষটি ধৈর্য ধরে
কিনা তার পরীক্ষাও বিপদ-আপদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্র্ণিত
সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কি ভাগ্যলিপির ওপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দেব? তখন
নবীজি বলেন, তোমরা আমল করতে থাকবে। কেননা প্রত্যেকের জন্য সহজ করে দেয়া হবে যে
উদ্দেশে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (বোখারি, মুসলিম)। তাই ভাগ্যকে বিশ্বাস করেই
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে আমাদের চলতে হবে।
maminmollah@yahoo.com