কবরের আজাব থেকে বেঁচে থাকার উপায়!

পরকালীন জীবনে যাত্রার প্রথম স্টেশন হচ্ছে কবর। সবাই কবরের মধ্য দিয়ে পরকালীন জীবন শুরু করবেন। এ স্টেশন যে সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পারবে পরবর্তী স্টেশনগুলোও সে মোটামুটি ভালোভাবে অতিক্রম করতে পারবে। কবরের জীবন যাতে শান্তিময় হতে পারে সে জন্য আমাদের আত্মনিয়োগ করতে হবে।পরকালীন জীবনে যাত্রার প্রথম স্টেশন হচ্ছে কবর। সবাই কবরের মধ্য দিয়ে পরকালীন জীবন শুরু করবেন। এ স্টেশন যে সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পারবে পরবর্তী স্টেশনগুলোও সে মোটামুটি ভালোভাবে অতিক্রম করতে পারবে। কবরের জীবন যাতে শান্তিময় হতে পারে সে জন্য আমাদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। মৃত্যুর পর থেকে কেয়ামত সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত মৃতব্যক্তির জীবনে যে সময় অতিবাহিত হয় তাকে বারজাখের জীবন বলা হয়। বারজাখ শব্দের আভিধানিক অর্থ পর্দা বা আড়াল। যেহেতু এ সময় দুনিয়া এবং আখেরাতের মধ্যে একটি পর্দা বা আড়াল বিশেষ এ জন্যই তাকে বারজাখ বলা হয়। কবরের কঠিন আজাবের সময় আল্লাহ ব্যতীত, কারও কোনো সাহায্য কাজে আসবে না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না। যাদের তোমরা মনে করেছ যে নিশ্চয় তারা তোমাদের মধ্যে [আল্লাহর] অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে তা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে [আল আনাম ৩৪]। আমাদের কেউ মারা গেলে জানাজা দেয়ার পর আমরা দাফন শেষে ফিরে আসতে শুরু করি। এমন সময় মৃতব্যক্তির দেহে আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয়। বুখারি শরিফের ঈমান অধ্যায়ে কবরের আজাব অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মানুষ যখন দাফন শেষে চলে আসে, কবরের মৃতব্যক্তি তাদের সেন্ডেল বা জুতার আওয়াজ শুনতে পায়।’ তখনই মুনকার ও নাকির নামক দুই ফেরেশতা চলে আসেন। কবরের জীবনকে দুনিয়ার কোনো বিষয়ের সঙ্গে তুলনা করা চলে না, তবে এটি অনেকটা আদালতে অপেক্ষমাণ ফরিয়াদির মতো। বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগে আসামি বা ফরিয়াদি সাধারণত প্রয়োজনীয় নথিপত্র পূর্ণ করা ও তল্লাশি সম্পন্ন করাসহ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। তারপর সে আদালত কক্ষে গ্রেফতার অবস্থায় বিচারকার্য শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। প্রতিটি আদম সন্তান, সে কাফের হোক, ঈমানদার হোক, কিংবা মুনাফেক হোক- সবাইকেই কবরে তিনটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। প্রশ্নগুলো হচ্ছে : মার রাব্বুকা? তোমার রব কে? ২. ওয়ামা দিনুকা? তোমার ধর্ম কি? ও রাসূল [সা.]-এর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে। শুধু আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে এবং কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী নেক আমল করে ধর্মীয় জীবন যথাযথভাবে পালন করে দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে যারা আল্লাহর অনুগত থাকবেন, শুধু তারাই এ প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারবেন। সঠিক জবাব দিতে পারলে সফলকাম হবেন। তারপর কেয়ামত পর্যন্ত জান্নাতের সুগন্ধি পাওয়া যাবে। যারা প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারবে না তারা দুরবস্থায় পতিত হবেন। বিশেষ করে কাফের, মুশরেক, মুনাফেক বা নামকাওয়াস্তে মুসলমান, গাফেল লোকেরা বলবে লা আদরি, লা আদরি, হায় আমি কিছু জানি না, আমি কিছু জানি না। তখন তার কবর সংকুচিত করে দেয়া হবে। অন্যদিকে পুণ্যবান ব্যক্তি আরাম-আয়েশে থাকবেন। মৃতের লাশ চৌকাঠে রেখে কবরস্থানে নেয়ার জন্য মানুষ যখন তাদের কাঁধে বহন করে তখন সে পুণ্যবান হলে বলে আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চল। আর যদি সে পুণ্যবান না হয় তাহলে পরিবার-পরিজনকে বলে হায় আমার ধ্বংস, তোমরা আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? আবদুল্লাহ ইবনে উমর [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল [সা.] বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, তখন সকাল-বিকাল তার স্থানটি দেখানো হয়। যদি সে জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তবে জাহান্নামবাসীদের মধ্যে। অতঃপর তাকে বলা হয় এটা তোমার স্থান, কিয়ামত পর্যন্ত [বুখারি ও মুসলিম]। মালাকাল মাউত জান কবজের পর পুণ্যবান আত্মাকে ইল্লিনে এবং পাপী আত্মাকে সিজ্জিনে নিয়ে যাওয়া হয়। কবরে যারা ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না তাদের ফেরেশতারা হাতুড়ি দিয়ে এমনভাবে মাথায় আঘাত করবে যার ফলে মাথাটি ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। দ্বিতীয় আঘাতের আগেই আবার মাথাটি পূর্ণরূপ পাবে, আবার তাকে আঘাত করা হবে। মৃতব্যক্তিটি তখন মউতকে ডাকবে কিন্তু তার আর দ্বিতীয়বার মরণ হবে না। এভাবে আঘাতের পর আঘাত চলতে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। কবরের আজাব এবং নিয়ামতের বিস্তারিত ধরন-ধারণা কী, কিভাবে মৃতব্যক্তির মধ্যে রূহ ফিরে আসে ইত্যাদির ক্ষেত্রে সহি হাদিসে যতটুকু পাওয়া যায় তা-ই আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। মানুষের দেহ থেকে আত্মা কিভাবে বেরিয়ে যাবে, কবরে আবার কিভাবে ফিরে আসবে, হজরত ইসরাফিল [আ.]-এর শিঙার আওয়াজ কানে গেলে আবার কিভাবে তারা যে যেখানে শায়িত ছিল সেখান থেকে উঠে দাঁড়াবে তা আমাদের অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হবে। রাসূল [সা.] আমাদের কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য্য আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করতে বলেছেন। তাই আমাদের উচিত রাসূলের সঠিক তরিকা অনুযায়ী কবরের আজাব থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। মমিনুল ইসলাম মোল্লা সৌজন্যে : দৈনিক যুগান্তরপ্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ০১:০৫  আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ২১:০৯


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.