সন্তান প্রতিপালনে বাবা-মায়ের ভূমিকা


বিভাগ-অতিথি,ধর্ম
ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারিক জীবনে সন্তান লালন-পালনে বাবা-মায়ের দায়িত্ব অপরিসীম। মাতা-পিতার কারণেই শিশু ইহজগতের মুখ দেখতে পেরেছে। সন্তান জন্মের পরই মা সর্বপ্রথম তাঁর প্রাণপ্রিয় শিশুটিকে মাতৃদুগ্ধপানে আগলে রাখেন। মমতাময়ী মায়ের কারণেই সন্তানের পৃথিবীর আলো দেখার সৌভাগ্য হয় তাঁর উষ্ণক্রোড়ে থেকে বাল্য অবস্থায় অসহায় শিশুটি নিরাপদে বেড়ে ওঠে

সন্তান গর্ভধারণ, প্রসব বেদনার কষ্ট এবং দুধপান করানো প্রভৃতি মা একাই বহন করে থাকেন। অতঃপর বাবা লালন-পালনের বেলায় মায়ের সঙ্গে অংশীদার হয়ে থাকেন। এর বাহ্যিক বিনিময়স্বরূপ আল্লাহ তাআলা সন্তানের প্রতি তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদয় সদ্ব্যবহারকে ফরজে আইন করে ঘোষণা দিয়েছেন। মায়ের সন্তান গর্ভধারণ, প্রসব বুকের দুধদানের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে পবিত্র কোরআনে সন্তানকে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার জন্য আদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে কষ্টের সঙ্গে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে তার দুধ ছাড়াতে লাগে ত্রিশ মাস।’ (সূরা আল-আহকাফ, আয়াত-১৫)
ছেলেমেয়েরা মানুষ হওয়াই বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিদান। তাই পিতা-মাতার দায়িত্ব হচ্ছে তাদের লালন-পালন করা, তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি অবশ্যই ধর্মীয় শিক্ষাদান ইসলামের আলোকে নৈতিক চরিত্র গঠন অপরিহার্য। পারিবারিক পরিবেশে শিশুরা বড় হতে থাকবে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধও তাদের হূদয়ে জাগ্রত হবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হয় তখন তাদের নামাজের প্রশিক্ষণ দাও।হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘সুন্দর নৈতিক চরিত্র শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে উত্তম কিছুই পিতা-মাতা সন্তানদের দান করতে পারে না।’ (তিরমিজি)
মুসলিম সমাজে পরিবার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদান প্রতিপালন করে এবং আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করে। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার হলো একটি শিশুর জীবন গড়ার প্রাথমিক পাঠশালা প্রধান পাঠাগার। পাঠশালার ওপর শিশুর জীবনের ভিত রচিত হয়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাসের মধ্য দিয়েই শিশুরা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার গুণাগুণের পরিচয় লাভ করতে শুরু করে। জন্য পরিবারের প্রধান দুজন সদস্য বাবা-মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। সন্তান পিতা-মাতার অতিশয় প্রিয়জন। তারা বাবা-মায়ের প্রতি অনুগত বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শিশুরা খুবই অনুকরণপ্রিয়; তারা যা শোনে, যা দেখে, তা- বলে করে। তাদের সামনে অশোভনীয় কিছু বলা বা করা মোটেই সমীচীন নয়। তাদের স্নেহ, আদর সুন্দর আচরণ শেখানো জরুরি। এতে তারা আদব-কায়দা ভালো কথা বলতে শিখবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যে ছোটকে স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়কে শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
(
বুখারি, তিরমিজি)
বাবা-মা শিশুকে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্ব্বীকার করে জীবন সংগ্রাম-যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়েও বড় করেন, মানুষ করে গড়ে তোলেন, কিন্তু তাঁরা সন্তানের কাছ থেকে কোনো রকম প্রতিদান আশা করেন না। তবে সন্তানকে আদর্শবান করার জন্য একজন বাবা হিসেবে যে যেই ধর্মে বিশ্বাস করেন, সেই ধর্মীয় বিধান নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সন্তানদের সুশিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের স্নেহ করবে এবং তাদের শিষ্টাচার শিক্ষাদান করবে। সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান-খয়রাতের চেয়েও উত্তম।শিশুদের উত্তম উপযোগী শিক্ষাদানের জন্য নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞানদান কর। কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’ (মুসলিম)
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী মানব সন্তানকে সুস্থ, সবল সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সব বাবা-মায়ের নৈতিক দায়িত্ব কর্তব্য। অকালে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে শিশুদের সঠিক যত্ন, পরিচর্যা সুচিকিৎসা করা দরকার। মায়ের গর্ভ থেকে জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছর বয়স শিশুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সময়টিতে শিশুরা নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। অপুষ্টিজনিত কারণে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে শিশু মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। শিশুরা যেসব রোগে আক্রান্ত হয়, সেগুলো প্রতিরোধ করতে হলে টিকা দানের কোনো বিকল্প নেই। একটু সচেতন হয়ে সময়মতো টিকা দিয়ে কোমলমতি শিশুদের জীবনকে বেশ কয়েকটি প্রাণসংহারী সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করা যায়। বিষয়টি উপলব্ধি করে বাবা-মা সব অভিভাবকের উচিত, তাঁদের শিশুদের জন্মের পর থেকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব টিকা দিয়ে নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান করা।
সন্তান প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তেমনি সন্তানের কাছে তার পিতা-মাতা আশীর্বাদস্বরূপ। শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সন্তান যতই বয়োবৃদ্ধ হোক না কেন বাবা-মায়ের কাছে তারা সর্বদা শিশুর মতো। আজন্ম সন্তান পিতা-মাতার কাছে স্নেহ, আদর আর দয়া-মায়াতেই লালিত-পালিত হয়। পিতা-মাতা কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না, বরং শত দুঃখ-কষ্ট পেলেও সন্তানের জন্য শুভকামনা করেন এবং দোয়া করে থাকেন। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসা যতই আত্মিক হোক না কেন, জনক-জননী হিসেবে সন্তানের অধিকার তাদের প্রতি মাতা-পিতার কর্তব্য পালনে যথেষ্ট দায়দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাবা-মা অভিভাবকেরা আন্তরিক ভালোবাসা স্নেহের পরশে সন্তানদের সুন্দর জীবন গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সন্তান লালন-পালনে বাবা-মায়ের অধিকার সচেতন এবং দায়িত্ব কর্তব্য পালনে যথাযথ সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দিন।
. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.) dr.munimkhan@yahoo.com
সূত্রঃ ইন্টারনেট




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.