মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগরের কৃতি সন্তানদের অবদান
ছিল অসামান্য। এখানে
সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীর বিক্রম ও
বীর প্রতীক খেতাাবধারী মুক্তিযোদ্ধাও
রয়েছেন।
![]() |
| ছবিঃ সংগৃহীত |
এ
নিবন্ধে কয়েকজন বীর সেনা সম্পর্কে
আলোচনা করা হলো:
আ:
মালেক,বীর বিক্রম: তাঁর
বাড়ি মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে। তাঁর
বাবার নাম মো: ইছহাক। ১৯৭১
সালে তিনি ইপিআর এর
নিয়মিত সেনিক হিসেবে রাজশাহী
এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ উইংএ কর্মরত ছিলেন। সেখান
থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
করেন। পাকিস্তানি
সৈন্য রাজশাহীর গোদাগাড়িতে প্রবেশ করলে ২
এপ্রিলের মধ্যে মালেকের বাহিনী
গোদাগাড়িতে পৌঁছেন। তারা
কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে
মোকাবেলা করেন। ৬
এপ্রিল পর্যন্ত তাদের উপর বিমান
আক্রমণ অব্যহত থাকে।
একসময় কোর্ট স্টেশনের কাছে
তুমুল যুদ্ধ শুরু হলে
সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শহীদ
যান। সেখানেই
তাকে দাফন করা হয়।
আবদুল
মান্নান,বীর বিক্রম:শহীদ
আবদুল মান্নানের জন্ম মুরাদনগর উপজেলার
সিদ্ধেশ্বরী গ্রামে। তাঁর
বাবার নাম আলতাফ আলী
এবং মায়ের নাম জোলেখা
বেগম। আবদুল
মান্নান চাকরি করতেন পাকিস্তান
সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১
সালের মার্চে ছুটিতে বাড়িতে
ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ
শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন
যুদ্ধে। কুমিল্লা
জেলার চৌদ্দগ্রামে হাজতখোলা গ্রামের যুদ্ধ ছিল তার
জীবনের শেষ যুদ্ধ।
। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের
হাতে ছিল একটি এলএমজি,
২/৩টি সিএমজি ও
কিছু স্থানীয় অস্ত্র। তা
নিয়েই তারা পাকিস্তানী সৈনিকদের
মোকাবেলা করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা
জয় লাভ করলেও ও
মুক্তিযোদ্ধা মান্নান শহীদ হয়েছিলেন।
আবু
মুসলিম, বীর প্রতীক :আবু
মুসলিমের জন্ম মুরাদনগর উপজেলার
জারেরা গ্রামে। তাঁর
বাবার নাম তালেব আলী
সরদার এবং মায়ের নাম
পেশকারের নেছা। আবু
মুসলিম ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী
ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ
শুরু হলে এপ্রিল মাসের
শেষে ভারতে যান।
মে মাসে আসামের গোয়াহাটিতে
প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে যোগ
দেন১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে
আবু মুসলিমসহ ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা
সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানা আাক্রমন করেন। তাদের
সঙ্গে হাতিয়ার হিসেবে ছিল ২/৩টি এলএমজি, ও
কয়েকটি স্টেনগান। গভীর
রাতে তারা থানা আক্রমনের
সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু
থানায় প্রবেশের সাথে সাথে পাহাড়ারত
৩জন পুলিশ তাদের গুলি
করলে গুলির আওয়াজে থানায়
থাকা পাকিস্তানী সেনা, ইপিআর, ও
পুলিশ সদস্যরা জেগে উলে উভয়পক্ষের
মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনীর
সদস্যরা হতাহত হয়ে পলায়ন
করার সময় ৩ জন
আটক হয়।
মোহাম্মদ
আবু তাহের,বীর প্রতীক:
মো. আবু তাহেরের জন্ম
কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার
পিরকাসিমপুর গ্রামে। বাবার
নাম আশরাফ আলী ভূঁইয়া
এবং মায়ের নাম জোবেদা
খাতুন। মো.
আবু তাহের ইপিআরে চাকরি
করতেন। ১৯৭১
সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর
সেক্টরে। মুক্তিযুদ্ধ
শুরু হলে ২৮ মার্চ
বিদ্রোহ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন
মুক্তিযুদ্ধে। তাঁর
জীবনের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ছিল ছাতকের
যুদ্ধ। তখন
ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল ৩১ পাঞ্জাব
রেজিমেন্ট, ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স,
ইপিসিএফ রাজাকার। পাকিস্তানী
৩টি হেলিকপ্টার মুক্তিযোদ্ধাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা
পশ্চাদপসারনে বাধ্য হন।
তবে আবু তাহের সেদিন
বীরের মত লড়ে যান। তিনি
১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
মনসুর
আলী, বীর প্রতীক: মনসুর
আলীর পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লা
জেলার মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জুর গ্রামে। বাবার
নাম কেরামত আলী ফকির,
মা সূর্যবান বেগম। স্ত্রী
মনোয়ারা বেগম।১৯৭১
সাওে তিনি ৩য় ইস্ট
বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন।
কুড়িগ্রামের রৌমারির কোদালকাটির যুদ্ধ তার জীবনের
উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ। ৪
আগস্ট পাকিস্তানীদের একটি বিরাট সেন্য
বাহিনী কোদালকাটি আক্রমন করে।
কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু
হটে শংকর -মাধবপুর গ্রামের
পূর্বপ্রান্তে সমবেত হন।
এমসয় মনসুর আলী যাদুরচর
থেকে তার দল নিয়ে
কোদালকাটিতে যান। ফায়ার
সার্পোর্ট দিয়ে পশ্চাদপসারনে সহায়তা
করেন। ২০০৫
সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। কুমিল্লার
মুরাদনগরের বীরযোদ্ধাদের পাশপাশি আমরা দেশের সকল
বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
করছি।
