স্ত্রীকে হজ করানো স্বামীর কর্তব্য



মমিনুল ইসলাম মোল্লা | প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩
https://www.jugantor.com/old/assets/images/news_images/2013/09/27/thumbnails/islam1_30995.jpg
আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম নারী-পুরুষ সবার জন্য হজ ফরজ। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসূলে করিম (সা.)-এর দরবারে প্রশ্ন করেছি, হে আল্লাহর রাসূল! নারীদের ওপর কি জিহাদ নেই। তিনি জবাব দিলেনÑ হ্যাঁ, নারীদের ওপর জিহাদ আছে, তবে এ জিহাদে কিতাল তথা সশস্ত্র সংগ্রাম নেই। নারীদের জিহাদ হচ্ছে হজ ও উমরা। (আহম্মদ ইবনে মাজা)। নারীরা স্বাভাবিকভাবেই স্বামীদের অধীন। নফল হজ আদায়ের ক্ষেত্রে স্বামীর ইচ্ছার বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু ফরজ হজ আদায়ের ক্ষেত্রে স্বামী বাধা দিতে পারবেন না। তবে প্রয়োজনে পরামর্শ দিতে পারবেন। মহিলারা একাকী হজে যাওয়ার বিধান নেই। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, কোনো পুরুষ যেন বেগানা নারীর সঙ্গে নীরবে অবস্থান না করে। কোনো মহিলা যেন মাহরাম ব্যতীত কোথাও সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী হজে বেরিয়েছে, আর আমাকে অমুক যুদ্ধে যেতে হবে। রাসূল (সা.) বললেন, তুমি ফিরে যাও। তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ কর। (বুখারি ৩০০০৬, মুসলিম ১৩৪১) আবু দাউদ শরিফে বলা হয়েছে (১৭২৬নং) উসমান ইবনে আবু শায়বা Ñআবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মহিলা আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার জন্য একসঙ্গে তিন দিনের অধিক দূরত্বে সফর করা বৈধ নয়। যদি তার সঙ্গে তার পিতা বা তার ভাই বা তার স্বামী বা তার পুত্র বা অন্য কোনো মাহরাম ব্যক্তি না থাকে। ঈমাম আবু হানিফা ও আহমদের মতে, স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া কোনো মহিলা হজ করতে যেতে পারবে না। তবে সফর যদি ৩ রাত ৩ দিন না হয় তাহলে যেতে পারবে বলে ইসলামী চিন্তাবিদগণ মন্তব্য করেন। ইবনে উমর থেকে বর্ণিত তিনি বলেনÑ কোনো মহিলা তিন দিনের দূরত্বে মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ করবে না। মাহরাম কে হবেন সে ব্যাপারেও সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। বংশীয় মাহরমগণ হচ্ছেনÑ ১. পিতা, মাতা, দাদা, দাদি, নানা, নানী বা তদূর্ধ্বে যারা, ২. ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি বা তদনিুের যারা ৩. ভাই, বোন, (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিতৃয়) ৪. ভাতিজা, ভাতিজি, ভাগ্নে, ভাগ্নি, ৫. চাচা, মামা ৬. খালা ও ফুফু। স্বামী বা স্ত্রীর পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, একে অপরের জন্য মাহরাম। স্ত্রীর বোন, ভাইজিও স্বামীর জন্য হারাম। তবে স্ত্রী মারা গেলে বা কোনো কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক জায়েজ রয়েছে।
পুরুষ ও নারীর হজের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। মীকাতে পৌঁছে যদি সম্ভব হয় তাহলে নিয়মানুযায়ী গোসল করে নিতে হবে। কিছুটা সুগন্ধিও ব্যবহার করা যেতে পারে। তখন পুরুষরা দুই টুকরা সাদা কাপড় পড়লেও মহিলারা তাদের পছন্দ মোতাবেক শরিয়তসম্মত যে কোনো কাপড় পরিধান করতে পারেন। তারপর তালবিয়া পড়বেন। আবু দাউদ শরিফে (হাদিস নং ১৭৪৩) বলা হয়েছে, উসমান ইবনে আবু শায়বা হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বলেন, যুলহুলায়ফার শাজারায় আসমা বিনতে উমায়শ মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে প্রসব করলে রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু বকরকে (রা.) নির্দেশ দেন যে, সে (আসমা যেন গোসল করেন এবং ইহরাম বাঁধেন। ইহরাম বাঁধার পর নেকাব ব্যবহার করা হারাম। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মাহরাম নারী নেকাব পড়বে না এবং হাত মোজা পরিধান করবে না’, তবে বিশেষ প্রয়োজনে মুখ ঢেকে রাখা যেতে পারে। এ ব্যাপারে হজরত আয়েশা (রা.) বলেনÑ ‘পুরুষদের দলগুলো আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করত। আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তারা যখন আমাদের পাশাপাশি চলে আসত, আমাদের মহিলারা তাদের মাথা থেকে পর্দার আচ্ছাদন তাদের মুখের ওপর নামিয়ে দিতেন মুখ ঢেকে নিতেন। আর তারা আমাদের অতিক্রম করে গেলে আমরা তা খুলে ফেলতাম।’
পবিত্র কোরআনে সূরা আল হাজের ২৭ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এবং মানুষের মধ্যে হজের জন্য ঘোষণা প্রচার কর, তারা তোমার কাছে আসবে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে। হজের নির্দেশনা শুধু পুরুষের জন্য নয়, স্ত্রীদেরও হজে যেতে হবে। তাদের হজে নিয়ে যাওয়া স্বামীদের কর্তব্য। স্বামী হয় নিজে নিয়ে যাবেন, অথবা মাহরাম পুরুষের মাধ্যমে হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করা অবশ্যই কর্তব্য। স্বামী মারা গেলে তার অবর্তমানে ভাই অথবা তার ছেলে-মেয়েরা হজের ব্যবস্থা না করলে তারা গুনাহগার হবেন। তাই ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে হজ পালনে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। এ বছর যেসব মহিলা হজে যাওয়ার নিয়ত করছেন তারা যেন সঠিকভাবে হজ সমাপন করে দেশে ফিরে আসতে পারেন, আল্লাহ তাদের সে তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রভাষক ও ধর্মীয় গবেষক




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.