নফল নামাজ “ মনগড়া“ নয়


নফল নামাজ “ মনগড়া“ নয়

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : আল্লাহ তাআলা বলেছেন :"আমি আমার বান্দার উপর যা ফরজ করেছি, তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো জিনিসের মাধ্যমে বান্দা আমার সান্নিধ্য লাভ করতে পারেনি। আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে।"(হাদীসে ক্বদসী - বুখারী)
Shobe borat শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে কিয়াম করা তথা নফল নামায পড়া এবং পরের দিন ছিয়াম পালন করার চিরাচরিত নিয়ম। যদিও রাসূল (ﷺ) থেকে এই রাতের নফল নামায এবং দিনের বেলা সওম রাখার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীছ পাওয়া যায়না।
Tahhiatol ozo ওযূ করার পর সর্বদা দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল ওযূ এর নামাজ পড়তে হয়।
Tahhiatul mosgid  মসজিদে প্রবেশ করার পর দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ নফল স্বলাত আদায় করবেন। এই আকাংখিত সদভ্যাসের কারণেই জান্নাতে বেলাল রাঃ এর অগ্রগামী পদশব্দ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বপ্নের মধ্যে শুনেছিলেন। তবে মসজিদে গিয়ে জামা‘আত চলা অবস্থায় পেলে কিংবা এক্বামত হয়ে গেলে সরাসরি জামা‘আতে যোগ দিবে।
Salat rakat ২. স্বলাতের ফরযিয়াত ও রাক‘আত সংখ্যা (فى فرضية الصلوة وعدد ركعاتها) :রাসূল (ﷺ)-এর জন্য ‘অতিরিক্ত’ (نَافِلَةً) ছিল তাহাজ্জুদের স্বলাত (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/৭৯)। সেই সাথে ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে রাত্রির নফল স্বলাত আদায় করতেন। মি‘রাজের রাত্রিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ফরয করা হয়। উক্ত পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত হ’ল- ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা। এছাড়া রয়েছে জুম‘আর ফরয স্বলাত, যা সপ্তাহে একদিন শুক্রবার দুপুরে পড়তে হয়। জুম‘আ পড়লে যোহর পড়তে হয় না। কেননা জুম‘আ হ’ল যোহরের স্থলাভিষিক্ত। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয স্বলাতে দিনে-রাতে মোট ১৭ রাক‘আত ও জুম‘আর দিনে ১৫ রাক‘আত ফরয এবং ১২ অথবা ১০ রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যেমন (১) ফজর : ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ২ রাক‘আত ফরয(২) যোহর : ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত(৩) আছর : ৪ রাক‘আত ফরয(৪) মাগরিব : ৩ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত(৫) এশা : ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত। অতঃপর শেষে এক রাক‘আত বিতর।জুম‘আর স্বলাত ২ রাক‘আত ফরয। তার পূর্বে মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে কমপক্ষে ২ রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ এবং জুম‘আ শেষে ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত। উপরে বর্ণিত সবগুলিই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিয়মিত আমল দ্বারা নির্ধারিত এবং সহিহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত,
 Tahazzod ✔ তাহাজ্জুদ : মূল ধাতু هُجُوْدٌ (হুজূদুন) অর্থ : রাতে ঘুমানো বা ঘুম থেকে উঠা। সেখান থেকে تَهَجُّدٌ (তাহাজ্জুদুন) পারিভাষিক অর্থে রাত্রিতে ঘুম থেকে জেগে ওঠা বা রাত্রি জেগে স্বলাত আদায় করা (আল-মুনজিদ)।উল্লেখ্য যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামে রামাযান, ক্বিয়ামুল লায়েল সবকিছুকে এক কথায় ‘স্বলাতুল লায়েল’ বা ‘রাত্রির নফল স্বলাত’ বলা হয়। রামাযানে রাতের প্রথমাংশে যখন জামা‘আত সহ এই নফল স্বলাতের প্রচলন হয়, তখন প্রতি চার রাক‘আত অন্তর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া হ’ত। সেখান থেকে ‘তারাবীহ’ নামকরণ হয় (ফাৎহুল বারী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব)। এই নামকরণের মধ্যেই তাৎপর্য নিহিত রয়েছে যে, তারাবীহ প্রথম রাতে একাকী অথবা জামা‘আত সহ এবং তাহাজ্জুদ শেষরাতে একাকী পড়তে হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রামাযানের রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দু’টিই পড়েছেন মর্মে সহিহ বা যঈফ সনদে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না’।
 ‘tahazzod আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব? কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? এভাবে তিনি ফজর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আহবান করেন’।
Fozilot  উম্মে হাবীবা  হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন ফরয স্বলাত ছাড়া বার রাকাত নফল স্বলাত আদায় করে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ী বানাবে। অথবা তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ী বানানো হবে। সহীহ মুসলিম-৭২৮। ইমাম তিরমিযি ব্যখ্যা করে বলেন যে, এখানে স্বলাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সুন্নাতে রাওয়াতেব সমূহ।
Gopone গোপনে এমন কিছু নেক আমলও করুন যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেহ জানবে না। যেমন নফল নামাজ, রাতের অন্ধকারে আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করা, গোপনে আল্লাহর কাছে দুআ-প্রার্থনা করা, গোপনে কাউকে দান-সদকা করা ইত্যাদি।
Mohobbot ১৩. তাকওয়ার দ্বারা আল্লাহর মহব্বত লাভ হয়। এ মহব্বত যেমন দুনিয়াতে লাভ হয়, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন: আমি বান্দার উপর যা ফরয করেছি, তার চেয়ে উত্তম জিনিসের মাধ্যমে কোন বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করতে পারেনি। বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, এক সময় আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, তখন আমি তার কর্ণে পরিণত হই, যে কর্ণ দিয়ে সে শ্রবণ করে, তার দৃষ্ট শক্তিতে পরিণত হই, যা দিয়ে  সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দিয়ে সে পাকড়াও করে এবং তার পায়ে পরিণত হই যা দিয়ে সে চলে।[1] সে যদি আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই দেব এবং সে যদি আমার ওসিলায় আশ্রয় প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করব। [বুখারী: ৬৫০২]

Zaeda  সুন্নাতে যায়েদাহ (অতিরিক্ত সওয়াবের আশায় পালন করা) এগুলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আদায় করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। যেমন আসরের আগের চার রাক‘আত। অনুরূপ অতিরিক্ত নামাযের মধ্যে রয়েছে, তাহাজ্জুদ, বা তারাবীহ, চাশত বা ইশরাকের স্বলাত ইত্যাদি মনে রাখতে হবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে স্বলাত পড়েননি বা পড়ার জন্য সহীহ হাদীস দ্বারা তার কোন নির্দেশ আছে বলে প্রমাণিত হয়নি সে নামায পড়া যাবে না।
 Karzogot nofol “মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী (ﷺ)-এর সাথে স্বলাত আদায় করতেন, অতঃপর নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদের সাথে পুনরায় তা আদায় করতেন”। বুখারি: (৫৬৬৮); আবু দাউদ: (৫০৬), মুসনাদে আহমদ: (১৩৯৫৪) ও বায়হাকি: (৪৬৯৭) ইত্যাদি গ্রন্থে রয়েছে তিনি নবী (ﷺ)-এর সাথে এশার স্বলাত আদায় করে নিজ কওমের নিকট এসে তাদের সাথে পুনরায় তা আদায় করতেন। এখানে তার স্বলাত ছিল নফল আর তার মুক্তাদির স্বলাত ছিল ফরয, এ থেকে প্রমাণিত হয় নিয়তে ইমামের অনুসরণ জরুরি নয়, অতএব নাবালক ছেলের স্বলাত যদিও নফল তার পিছনে সাবালকের ইক্তিদা সহিহ।
Azan নবী (ﷺ)-এর বাণী: “যখন স্বলাত উপস্থিত হয়, তখন তোমাদের কেউ যেন আযান দেয়” ফরয ব্যতীত নফলের কোন সম্ভাবনা রাখে না, কারণ নফল স্বলাতে আযান বৈধ নয়। জামাতের সাথে আদায় করার নির্দেশও প্রমাণ করে এ স্বলাত ফরয, নফল নয়, কারণ নবী (ﷺ) থেকে এরূপ নির্দেশ নেই যেখানে তিনি নফল স্বলাত জামাতের সাথে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
Istekhara স্বলাতুল ইস্তেখা-রাহ (صلوة الإسةخارة)আল্লাহর নিকট থেকে কল্যাণ ইঙ্গিত প্রার্থনার জন্য যে নফল স্বলাত আদায় করা হয়, তাকে ‘স্বলাতুল ইস্তেখা-রাহ’ বলা হয়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় কোন্ শুভ কাজটি করা মঙ্গলজনক হবে, সে বিষয়ে আল্লাহর নিকট থেকে ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে এই স্বলাত আদায় করা হয়। কোন দিকে ঝোঁক না রেখে সম্পূর্ণ নিরাবেগ ও খোলা মনে ইস্তেখারার স্বলাত আদায় করবে। অতঃপর যেদিকে মন টানবে, সেভাবেই কাজ করবে। এ জন্য ফরয স্বলাত ব্যতীত ইস্তেখারার নিয়ত সহ দু’রাক‘আত নফল স্বলাত দিনে বা রাতে যেকোন সময়ে পড়া যায়।জাবের  বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে সকল কাজে ‘ইস্তেখা-রাহ’ শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেছেন, তোমদের কেউ যখন কোন কাজের সংকল্প করবে, তখন ফরয ব্যতীত দু’রাক‘আত স্বলাত আদায় করবে। হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, এ কাজটি আমার জন্য উত্তম হবে আমার দ্বীনের জন্য, আমার জীবিকার জন্য ও আমার পরিণাম ফলের জন্য, তাহ’লে ওটা আমার জন্য নির্ধারিত করে দাও এবং সহজ করে দাও। অতঃপর ওতে আমার জন্য বরকত দান কর।
সৎকর্ম হল, যা কিছু ইসলাম করতে বলেছে সেগুলো পালন করা আর যা কিছু নিষেধ করেছে সেগুলো থেকে বিরত থাকা। হতে পারে তা ফরজ, ওয়াজেব, সুন্নাত, মুস্তাহাব বা নফল। আর বর্জনীয় বিষয়গুলো বর্জন করে চলা। হতে পারে তা হারাম, মাকরূহ।
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, কলামিস্ট, সাংবাদিক ও প্রভাষক



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.