সংবাদপত্র নয় সাংবাদিকেরও স্বাধীনতা চাই

সংবাদপত্র নয় সাংবাদিকেরও স্বাধীনতা চাই

প্রতিদিনই কোন কোন ঘটনা ঘটছে। সেটি ভাল কিংবা খারাপ দুটোই হতে পারে। এ গুলোর মধ্যে সাধারণ মানুষের জানার ইচ্ছে আছে ব্যতিক্রমধর্মী ঘনটাগুলো পরের দিনের পত্রিকায় সংবাদ হিসেবে ছাপা হয়। ছাপা হওয়ার পর কেউ কেউ অপমান বোধ করতে পারেন , কার ও মাশুল দিতে হয়, কারও বা আরো বড় ধরনের ক্ষতি হয়। মূলত এ ক্ষতির জন্য সংবাদপত্র দায়ী নয় ঘটনার নায়কই দায়ী। কিন্তু এ দায়ভার “উদোর পিন্ডি ভুদোর ঘাড়ে ”চাপানোর মতো সাংবাদিক কিংবা সংবাদপত্রকে দোষ দেয়া হয়। এজন্য বিভিন্নভাবে সাংবাদিকদের হয়রানীসহ সংবাদপত্রের কন্ঠ রোধ করা হয়। সংবাদপত্রের উপর সেন্সরশীপ আরোপ করে প্রকাশনার পথ বন্ধ করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বর্তমান বিশ্বের সর্বোত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে মনে করা হয়। সেদেশের সংবিধানের প্রধান সংশোধনীতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। “ঈড়হমৎবংং ংযধষষ সধশব হড় ষধি ধনৎরফমরহম ঃযব ভৎববফড়স ড়ভ ংঢ়ববপয ড়ৎ ড়ভ ঃযব ঢ়ৎবংং” অর্থাৎ স্বাধীন মত প্রকাশে কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করে কংগ্রেস কোন আইন প্রণয়ন করতে পারবে না। ”

সেন্সরশীপ আরোপ করা অথবা জবাবাদিহীতার ব্যবস্থা করা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এই ব্যপারে প্রধান বিচারক বাাু কল্যাণ বিশ্বাস করেন যে, যদি কোন রিপোর্টার বা সম্পাদককে সতর্ক থাকতে হয় যে, তার কাজ আইনের আদালতে বিচার করা হতে পারে। তাহলে তিনি সৃষ্টিশীল ও অনুসন্ধিৎসু কর্মে নিরুৎসাহিত হয়ে পরেন এবং তখন দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পূর্বশর্ত আর থাকবেনা।গণমাধ্যমের স্বাধিনতা প্রসঙ্গে সাধারণ ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৯ ধারায় বলা হয়েছে ঃ কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই প্রত্যেকের স্বাধীন মতামত সংরক্ষনের অধিকার আছে। প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার থাকবে। মৌখিক ভাবে লিখে কিংবা ছাপিয়ে শিল্পের দ্বারা পছন্দমত যে কোন মাধ্যমে তা প্রকাশের অধিকার স্বীকৃত। তবে এক্ষেত্রে অন্যের অধিকারের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অপরের অধিকার ও খ্যাতি যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ব্যাপারে হালস্মারীস লস অব ইংল্যান্ড ১৮ ভল্যুয়মের চতুর্থ সংস্করনের ১৬৯৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “প্রত্যেকের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার আছে এবং কর্তৃপক্ষীয় কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই ও সীমা চৌহদ্দি বিবেচনা না করেই মতামত ব্যক্ত, তথ্য ও আদর্শ স্বধীনভাবে প্রকাশের অধিকার ও স্বীকৃত। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমার লাইসেন্স সম্পর্কিত বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে প্রতিহত করা যাবে না।
দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বধীনতা সীমিত। এখানে সরকারী নীতি ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করা হয়। অফিসিয়াল সিক্রেসী অ্যাক্ট এর নামে জনগণকে তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে সম্পূর্নভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমিত মাত্রায় থাকলেও সাংবাদিকের স্বাাধীনতা আরো বেশী সীমিত। একজন সাংবাদিক প্রথমত রাষ্ট্রীয় প্রশাসন দ্বিতীয়ত সাংবাদপত্রের মালিক তৃতীয়ত সন্ত্রাসী ও সংবাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত লোকেদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। ফলে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন খুবই কাষ্টকর। গ্রেট বৃটেনের হাউস অব কমন্স নিশ্চয়তা দিয়েছে যে প্রত্যেকটি স্বাধীন ব্যাক্তিরই অধিকার আছে যাতে করে জনগণের সামনে সে মত প্রকাশ করতে পারে।
বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক সংবাদ পরিবেশনের সুযোগ না থাকলে দেশের প্রকৃত ঘটনা কোন প্রত্রিকায় প্রকাশ পাবে না। সত্য যতই কঠিন হোক না কেন তা প্রকাশ পাওয়াই উত্তম। তাই আমাদের দেশে সংবাদপত্রের পুর্ণ স্বাধীনতা দেয়া উচিৎ। সংবাদপত্রের স্বধীনতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের স্বধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় সংবাদপত্র সাধারণ পাঠকদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। 



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.