এলাহাবাদের
গর্বঃ সততার
মূর্ত প্রতীক এ.কে ফরিদ
অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা
বিভাগের সাবেক পরিচালক মোস্তফা এক ফরিদের বাড়ি দেবিদ্ধারের এলাহাবাদ গ্রামে। একে ফরিদ এলাহাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে গঙ্গামন্ডল রাজ ইনস্টিটিউট থেকেএসএসসি, নারায়নগঞ্জেয় তোলারাম কলেজ থেকে এইচ এস সি এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।
তিনি ছাত্র জীবনেই নারায়নগঞ্জ পাটকলে চাকুরী করতেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে স্বল্পকালীন মেয়াদে দেবিদ্বার এসএ সরকারি কলেজে অধ্যাপনা, বনানীস্থ একটি হাই স্কুলে শিক্ষকতা, সোনালী ব্যাংকে চাকুরী করেন। পরবর্তীতে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে চাকুরী নেন। | এসময় তিনি দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে একের পর এক প্রমোশন পেয়ে জয়েন্ট ডাইরেক্টর পদে আসীন হন। এ পদে ৮ বছর চাকুরী করার পর পরিচালক পদে প্রমোশন পান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পরিচালক পদে কর্মর্কত ছিলেন । ২ বছর পর তিনি চাকুরী থেকে অবসর নিতেন। জনাব মোস্তফা একে ফরিদ ছিলেন সততার মূর্ত প্রতীক। তিনি যথাসময়ে যথা নিয়মে তার দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি শুক্রবারেও কাজ করতেন ।
জনশ্রুতি
রয়েছে একবার তাঁর দায়িত্বে পরিকল্পনা বিভাগে ১০ কোটি টাকার কাজ হয়। কাজ শেষে ১০ লক্ষ টাকা অবশিষ্ট থাকে। প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট হিসাব পেশ কালে প্রতিবেদন দাখিল কৱেন। এ কাজে কয়েকবার প্রতিবেদন পেশ করার পরও বস সন্তুষ্ট হননি। ব্যাপারটি রহস্যজনক মনে হওয়ায় আরেকজন অফিসারের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন- আপনি কোন দেশে বাস করেন ? আপনার মত বোকা দেশে কেউ আছে নাকি ? ১০ লক্ষ টাকা ব্যালেন্স রেখেছেন কেন ? স্যারকে কিছু দিয়ে বাকিটা আপনি নিয়ে নেন। তাহলেইতো সহজে হিসেব মিলে যায়। মোস্তফা একে ফরিদ তাতে রাজী হননি। ঘুষ দুর্নীতির কাছে কখনও মাথা নত করেননি। ফলে চাকুরী জীবনের দীর্ঘ ৩০টি বছর তিনি ভাড়া বাসায় অবস্থান
করেন। ভাড়া বেড়ে কোকিল
পাখীর মতো এক যায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতেন। প্রজাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেও ভাড়া বাসায় থাকতেন কেন ? প্রশ্নপলে তার দ্বিতীয় ও মেয়ে মাহমুদ হোসনে আরিফা বলেন, কোর্য়াটার পেতে হলে ঘুষ দিতে হয় তাই তিনি কোয়ার্টার বা সরকারি বাসা পাননি।
কোম্পানীগও বদিউল আলম কলেজ গণিত বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি একদিন তার বাসায় গিয়ে দেখি তিনি হোগলা পাতার বিছানায় বসে ভাত খাছেন । খাওয়া শেষে ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কিনা ? প্রশ্ন করলে বলেন, আমাদের মতো ছাপোষা কর্মকর্তাদের বাড়ি কেনার পয়সা কোথায় ? এছাড়া আমার স্থায়ী বাড়িতে এলাহাবাদে, সেখানে আমার পিতা মাতা ঘুমিয়ে আছেন।
|
মোস্তফা একে ফরিদের ৩ ভাই। তারা। হচ্ছেন মোস্তফা ফেরদৌস-উজ্জামান, মোস্তফা সফিক সোহরাওয়ার্দী ও আবু মোহাম্মদ ইকবাল। জনাব মোস্তফা তার চাকুরী জীবনে কাউকে চাকুরী দিতে পারেননি। তার ভাই চাকুরীর তদবিরের জন্য গেলে তিনি বলেন- তোমার যোগ্যতায় চাকুরী পেতে সক্ষম হলে চাকুরী কর। নইলে বাড়িতে গিয়ে কৃষি কাজ কর। আমার সুপারিশে চাকুরী হলে তুমি | যত বছর চাকুরী করবে তত বছর আমার কবরে পাপ জমা হতে থাকবে।
একে ফরিদের জীবনের শেষ দিনগুলো বহু কষ্টে অতিবাহিত হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত গলার সমস্যায় ভুগছিলেন। ডাক্তাররা লন্ডন অথবা ভারতের ক্যান্সার হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিলেও আর্থিক - কারণে নেয়া সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে তার সহকর্মীরা আর্থিক সাহায্য করতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
তার স্ত্রী পরশমনি উম্মে ফাতিমা (গৃহিনী) বলেন- আমরা সারা জীবন কষ্টে দিনাতিপাত করলেও আমার স্বামীর সততায় আমি সন্তষ্ট। তার ছেলে শেখ আবদুল্লাহ-আল-নুর জিডি পাইলট। হিসেবে বিমান বাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। ৩ কন্যার মধ্যে বড় কন্যা তাছলিমা দিনা মোস্তফা (ইংরেজীতে অনার্স, অধ্যয়নরত), ২য় কন্যা মাহমুদা হোসনে আরিফা (বাংলা সম্মানে) অধ্যয়নরত। তার ছেলে আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের ঢাকায় কোন জমি/বাড়ি নেই। বাবা কোন ব্যাংক ব্যালেন্স রেখে যাননি, তারপরও আমাদের কোন আফসোস নেই আমরা বাবার আদর্শ নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। জনাব মোস্তফা ১৫টি কোরআনিয়া মাদ্রাসার (মসিজিদের মক্তব) হুজুরের মাসিক বেতন প্রদান করতেন। অর্থ ও পরিকল্পনা
মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা এক ফরিদের জীবনাবসান হয়েছে। ২৩
জুলাই ২০০৬ তিনি ঢাকা বক্ষব্যাধি
হাসপাতালে নেয়ার পথে ইন্তেকাল করেন।
(নিউজ
আর্কাইভস থেকেঃ সাপ্তাহিক আমোদ,10/08/2006
#মমিনুল
ইসলাম মোল্লা)
