কুমিল্লার প্রথম মহিলা সাংবাদিক শামসুন্নাহার রাব্বীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা//মমিন মোল্লা

 মমিনুল ইসলাম মোল্লা :


বিশিষ্ট মহিলা সাংবাদিক মহীয়সী নারী শামসুন্নাহার রাব্বী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত পরিবার মোগলটুলির আলা সাহেব বাড়িতে ১৯৪৩ সালের ১ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জনাবা শামসুন্নাহারের বাবার নাম গোলাম মহিউদ্দিন হায়দার এবং মায়ের নাম মমতাজ বেগম। ১৯৫৭ সালে সপ্তাহিক আমোদ এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোঃ ফজলে রাব্বির সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার লেখা ” ভালোবাসার পাঁচ দশক ” বইয়ের মুখ বন্ধে তিনি লিখেছেন তার নিজের কথা । ” সুদীর্ঘ তেপ্পান্ন বছর যাবত আমি লেখালেখি জগতে বিচরণ করে আসছি। আমোদ পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকেই সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করি। আমি যে সময় সাংবাদিকতা শুরু করেছি সেই সময়ে অর্থাৎ ষাটের দশকের গোড়া থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত কুমিল্লায় মহিলা সাংবাদিকের কোন অস্তিত্ব ছিলনা। অনেকে লেখিকা সাহিত্যিকা ও মহিলা কবি ছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকতায় মেয়েরা তখনো এগিয়ে আসেনি।


প্রকাশ করেছেন।


তার স্বামী ছিলেন মোঃ ফজলে রাব্বি ।সপ্তাহিক আমোদ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ।এদেশের আঞ্চলিক সংবাদপত্রের এক বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব । সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেছেন ফজলে রাব্বীর আমোদ প্রকাশনা বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর আঞ্চলিক মুখপাত্র হিসেবে স্থান পেয়েছে । ফজলে রাব্বী ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের ত্রিপুরা জেলার মুসলিম লীগ গার্ড বাহিনীর জেলা কমান্ডার ছিলেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের দেশরক্ষা বাহিনীর অফিসার ট্রেনিং স্কুল এ শর্ট কোর্স লাভের পর কমিশন লাভ করেন । তিনি ১৯৫২ সাল পর্যন্ত লেফটেন্যান্ট পদে চাকুরী করেন। ১৯৫২:সালে সামরিক বাহিনী থেকে বিদায় নিয়ে সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘আমোদ’ ১৯৫৫ সালের ৫ মে প্রথম প্রকাশিত হয় প্রথমদিকে একটি ক্রিড়া সাপ্তাহিক হল তিন বছর পর এটি সাধারণ সাপ্তাহিক পত্রিকায় পরিণত হয়। স্বাধীনতা-পূর্ব স্বাধীনতা-উত্তর অনেক নতুন লেখক ও সাংবাদিক সৃষ্টির প্ল্যাটফর্ম ছিল । ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি সকল আঞ্চলিক পত্রিকার মধ্যে ছিল অন্যতম আমোদ ।কুমিল্লা জেলার খবরা-খবর ছাড়াও নোয়াখালী ও সিলেট জেলাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে । বর্তমানে চাঁদপুর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খবর প্রাধান্য পাচ্ছে । পত্রিকাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রকাশ করছে ।পত্রিকাটি নব্বইয়ের দশকের শেষার্ধে অফ সেটে ছাপা হচ্ছে । ১৯৬০-৬১ সালের মার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামলে ছয় সপ্তাহ এবং ১৯৭৫ সালের ১২ সপ্তাহ মোট ১৮ সপ্তাহ আমাদের প্রকাশনা বন্ধ ছিল। বর্তমানে এখনো আহমদ নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। কুমিল্লায় মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর ফজলে রাব্বীর মৃত্যুর পর আমোদ প্রকাশনার দায়িত্ব নেন তার সহধর্মিণী শামসুন্নাহার রাব্বী ও ছেলে বাকীন রাব্বী।
১৯৫৯ সাল থেকে জনাবা শামসুন্নাহারের সাংবাদিকতা জীবন শুরু। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি ” মাসিক ময়নামতি ” নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। আমোদ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ক্রীড়া সাপ্তাহিক। পরে তা সাধারণ সংবাদপত্রে পরিণত হয়। প্রথম সংখ্যাটির মূল্য ছিল এক আনা। । “ভালোবাসার পাঁচ দশক বইয়ের ১৯৫৮সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৫৯ টি লেখা দিয়েছেন । সবগুলো লেখাই আমোদসহ দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ম্যাগাজিন ও স্মারক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১০ সালে প্রকাশিত এ বইটি পাঠকসমাজে খুবই সমাদৃত হয়েছিল।মহীয়সী নারী শামসুন্নাহার রাব্বিকে আমরা ভুলিনি। ১৯৮৪ সালে “ব্যবধান” নামে তার একটি গল্প গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। পবিত্র হজ্ব সম্পাদন এর পর ২০০১ সালে ” মহামিলনের মহা মেলায” নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। অন ১৯৯১ সালে ভ্রমণকাহিনী ভিত্তিক” প্রাচ্য থেকেই প্রতীচ্য” বইটি প্রকাশিত হয়। ১৯৭৯ সালে যমুনা সাহিত্য গোষ্ঠী তাকে “বিদ্যা বিনোদিনী “খেতাবে ভূষিত করে। অন ১৯৯৭ সালে মহিলা সাংবাদিক হিসাবে “অনন্যা শীর্ষ ১০” সম্মাননা পদক লাভ করেন।

অতীত দিনের স্মৃতি কেউ ভোলে না ,কেউ ভোলে। অতীতকে বাদ দিয়ে মানুষ নয়, তেমনি মানুষকে বাদ দিয়েও অতীত নয়। অতীতকে পর্যালোচনা করলে সেকালের চরিত্রগুলো যেমন উঠে আসে , উঠে আসে তাদের স্মৃতি ও কির্তি। শামসুন্নাহার ছিলেন একজন লেখিকা , সংগঠক , সমাজকর্মী, সাংবাদিক, সর্বোপরি একজন মহৎ মানুষ । তিনি জীবন ও সমাজকে নতুন করতে সদা তৎপর ছিলেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে জড়িত হয়েছেন অনেক মহতী উদ্যোগে । আজ যখন সেইসব কাজের মূল্যায়ন হয় তখন শামসুন্নাহার রাব্বি জেগে উঠেন আমাদের হৃদয়ে। তাই শামসুন্নাহার রাব্বিকে ভুলা যায় না, ভুলা যাবে না

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.