জৈষ্ঠ প্রভাষক পদে কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রসঙ্গে

 প্রভাষকদের পদোন্নতির রূপরেখা প্রণয়নে ফের সভা বৃহস্পতিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ অক্টোবর, ২০২১

বেসরকারি স্কুল কলেজের নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে বিভিন্ন কলেজে কর্মরত প্রভাষকদের অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজের প্রভাষকদের চাকরির আট বছর পুর্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হলেও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের প্রভাষকদের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রভাষকদের পদোন্নতির মূল্যায়ন কিভাবে হবে সে লক্ষ্যে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সভা আগামী বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে বিষয়টি জানিয়ে সভার নোটিশ জারি করা হয়েছে। 


মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেসরকারি কলেজ প্রভাষকদের পদোন্নতিতে সার্বিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতিকে দেওয়া হচ্ছে। মোট ৯টি সূচকে প্রভাষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হবে। নয়টি সূচকে প্রভাষকদের মূল্যায়নের পর অধ্যক্ষ তা গভর্নিং বডির সভায় উপস্থাপন করবেন। গভর্নিং বডির অনুমোদন পাওয়ার পর প্রভাষকরা অনলাইনে আঞ্চলিক পরিচালক বরাবর পদোন্নতির আবেদন করবেন। এভাবেই প্রভাষকদের পদোন্নতির রূপরেখার খসড়া করা হয়েছে। সভা করে কমিটি তা চূড়ান্ত দেবে।



শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও প্রভাষকদের পদোন্নতির রূপরেখা তৈরি কমিটির আহ্বায়ক ফৌজিয়া জাফরীন নিশ্চিত করে সোমবার সন্ধ্যায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পদোন্নতিতে মূল্যায়নের বেসরকারি প্রভাষকদের গভর্নিং বডির অনুমোদন নিতে হবে। এ দায়িত্ব গভর্নিং বডিকেই দিতে হবে। তারা বেসরকারি প্রভাষক, তাদের বিষয়টি অনুমোদন আমরা (মন্ত্রণালয়) দেবে না। 


আগামী বৃহস্পতিবার কমিটির চতুর্থ সভায় পদোন্নতির খসড়া চূড়ান্ত হবে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। সভায় সদস্যদের মতামতের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে। 


মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নোটিশে বলা হয়েছে, আট বছর সন্তোষজন চাকরির পুর্তিতে উচ্চমাধ্যমিক কলেজের  প্রভাষকদের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও ডিগ্রি কলেজের প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া রূপরেখা প্রণয়ন চূড়ান্ত করার জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর সকাল অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফৌজিয়া জাফরীন। এদিন সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। 



সম্প্রতি জারি হওয়া বেসরকারি স্কুল-কলেজের নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে বিভিন্ন কলেজে কর্মরত প্রভাষকদের অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়। চাকরির আট বছর পুর্তিতে ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজের প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হলেও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের প্রভাষকদের চাকরির আট বছর পুর্তিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মূল্যায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ একটি কমিটি গঠন করবে। সেই কমিটির সূচকগুলো মূল্যায়ন করে পদোন্নতি দেওয়া হবে। পদোন্নতির খসড়ায় সে কমিটি কিভাবে হবে, কে কে থাকবেন তাও উল্লেখ করা হয়েছে।


নতুন নীতিমালায় প্রভাষকদের পদোন্নতিতে ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুসারে, এমপিও প্রাপ্তির জ্যেষ্ঠতায় ১৫ নম্বর, পরীক্ষার ফলে ১৫ নম্বর, ক্লাসে উপস্থিতি ২০ নম্বর, নেতিবাচক রেকর্ডে না থাকলে ২০ নম্বর, বিভাগীয় মামলা না থাকলে ৫ নম্বর, সৃজনশীল দৃষ্টান্তে ১০ নম্বর, ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়ার দক্ষতায় ১০ নম্বর, এমফিল-পিএইচডিতে ৫ নম্বর, গবেষণা কর্ম ও স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ থাকলে ১০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বরে মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রভাষকদের পদোন্নতির সুযোগ রেখে রূপরেখার খসড়া করা হয়েছে।


পদোন্নতির খসড়া রূপরেখায় বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে আগের বছরের জন্য ৯টি সূচকে ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন করবেন। একই সঙ্গে ৫০ শতাংশ প্রভাষকদের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে গভর্নিং বডির সভায় ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করবে। কমিটির সভাপতি হবে গভর্নিং বডির সভাপতি বা তার প্রতিনিধি। এ কমিটির সদস্য হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষক প্রতিনিধি। আর কমিটির সদস্য সচিব হবেন অধ্যক্ষ। এ কমিটি সর্বশেষ ৮ বছরের সূচক মূল্যায়ন করে পদোন্নতির জন্য প্রভাষকদের সুপারিশ করে তা গভর্নিং কমিটির সভায় পেশ করবেন। গভর্নিং বডি সভায় পদোন্নতির সুপারিশ অনুমোদন করে প্রভাষকদের পদোন্নতির আবেদন অনলাইনে আঞ্চলিক কার্যালয়ে দাখিল করবেন।


প্রভাষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে নম্বর বণ্টন করা হচ্ছে সেখানেও গভর্নিং বডির কর্তৃত্ব থাকছে। অনুকরণীয় সৃজনশীল দৃষ্টান্তের ১০ নম্বর পেতেও প্রভাষকদের গভর্নিং বডির অনুমোদন লাগবে। আর এমফিল-পিএইচডি করতে ও গবেষণার জন্য প্রচলিতভাবেই প্রভাষকদের গভর্নিং বডির অনুমোদন লাগে। এমফিল-পিএইচডির জন্য নির্ধারিত ৫ নম্বর, গবেষণার ১০ নম্বরেও গভর্নিং বডির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ থাকছেই।

খসড়া রূপরেখায়, পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতায় ১৫ নম্বর, পরীক্ষার ফলে ১৫ নম্বর, ক্লাসে উপস্থিতি ২০ নম্বর, নেতিবাচক রেকর্ডে না থাকলে ২০ নম্বর, বিভাগীয় মামলা না থাকলে ৫ নম্বর পাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ১ দিন অনুপস্থিতির জন্য উপস্থিতির ১ নম্বর করে কাটা যাবে বলে উল্লেখ আছে। জ্যেষ্ঠতার ১৫ নম্বরের ক্ষেত্রে খসড়ায়  বলা হয়েছে, এমপিওভুক্তির ৮ বছরে প্রভাষকরা ৮ নম্বর পাবেন। এরপর প্রতি এক বছরে জ্যেষ্ঠতার জন্য প্রভাষকদের ঝুলিতে ১ নম্বর করে যুক্ত হবে।


নীতিমালা অনুসারে শিক্ষাজীবনে ভালো ফলের জন্য প্রভাষকরা ভালো নম্বর পাবেন। এক্ষেত্রে রূপরেখায় খসড়ায় এসএসসিতে ৩ নম্বর, এইচএসসিতে ৩ নম্বর, ডিগ্রিপাসের জন্য ৬ নম্বর, অনার্সের জন্য ৯ নম্বর ও মাস্টার্সের ফলের জন্য ৩ নম্বর পাবেন প্রভাষকরা।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.