বিভাগ-মুক্তিযুদ্ধ,মিডিয়া
মুক্তিযুদ্ধে প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি বিদেশী রেডিওর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। এগুলোর মধ্যে বিবিসির অন্যতম। ১ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তান সরকার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। এসময় ৫টি প্রদেশের গভর্ণরকে সামরিক শাসক হিসাবে নিয়োগের ফরমান জারির খবর ২ মার্চ গ্রিনিচ মান সময় মধ্যরাত দেড়টা থেকে পৌনে দুইটা এবং বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে পৌনে আটায় প্রচারিত হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেতারা তা শুনে বিক্ষোভ প্রকাশ করে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করে বিবিসি। তখন মার্ক টালি নামক একজন বৃটিশ সাংবাদিক বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর কয়েকটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। বিবিসি রেডিওর পাশাপাশি বিবিসি টেলিভিশন বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করে। এ টিভিতে কাজ করতেন বিশ্ববিখ্যাত সাংবাদিক সাইমন ড্রিং। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি হোটেলে লুকিয়ে থেকে সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীকে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার সংবাদ পৌঁছে দেন। তার বাড়ি ছিল ইংল্যান্ডে নরফোকে। বিবিসিতে প্রচারিত যুদ্ধকালীন সংবাদ যাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের কানে না পৌঁছে সেজন্য ইয়াহিয়া সরকার ফ্রিকোয়েন্সিতে হস্তক্ষেপ করেছিল বলে জানা যায়। সেজন্য পাকিস্তানে বিবিসি হিজিবিজি শোনা যেত। বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে এ সমস্যাটা বেশী হতো। সেজন্য পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ বুঝতে পারেতোনা পূর্ব পাকিস্তানে কী হচ্ছে। ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে পেছনের দিকে গেলে দেখা যায়, বিবিসি থেকে বাংলা অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয় ১১ অক্টোবর ১৯৪১। প্রথমদিকে এ অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো মাত্র ১৫ মিনিট। বিবিসি বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠান এফ,এম, মিডিয়াম ওয়েভ, ও শর্টওয়েভে সমগ্র বিশ্বে সমপ্রচারিত হয় লন্ডনের বুশ হাউজের সদরর দপ্তর হতে। বর্তমানে রেডিও ছাড়াও, ইন্টারনেট রেডিও, ইন্টারনেট, এবং ভিডিও এবং মোবইলের মাধ্যমে বিবিসি বাংলা সম্প্রচারিত হচ্ছে। ঢাকায় এফএফ ১০০, চট্টগ্রাম ও রংপুরে এফএম ১০৫.৪, রাজশাহী ও সিলেটে এফএম ১০৫ , কুমিল্লায় এফএম ১০১.০২ মিটার ব্যান্ডে অনুষ্টান শোনা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা৩০ মিনিটে প্রভাতী, ৭.৩০ মিনিটে প্রত্যুষা, সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে প্রবাহ এবং ১০.৩০ মিনিটে পরিক্রমা প্রচারিত হয়। খবরের পাশাপাশি প্রতিদিন প্রত্যুষায় ঢাকার সংবাদপত্র প্রচারিত হয়। এছাড়া শনিবার মাঠে ময়দানে, ফোন ইন প্রেগাম, রবিবার ইতিহাসের সাক্ষী, সোমবার প্রীতিভাজনেষু, মঙ্গলবার বিজ্ঞানের আসর, বুধবার সাক্ষাৎকার, বৃহস্পতিবার ফিচার, ও শুক্রবারে সাপ্তাহিক গান-গল্প অনুষ্ঠানে শ্রেতাদের পছন্দের গান শোনানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধে প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি বিদেশী রেডিওর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। এগুলোর মধ্যে বিবিসির অন্যতম। ১ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তান সরকার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। এসময় ৫টি প্রদেশের গভর্ণরকে সামরিক শাসক হিসাবে নিয়োগের ফরমান জারির খবর ২ মার্চ গ্রিনিচ মান সময় মধ্যরাত দেড়টা থেকে পৌনে দুইটা এবং বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে পৌনে আটায় প্রচারিত হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেতারা তা শুনে বিক্ষোভ প্রকাশ করে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করে বিবিসি। তখন মার্ক টালি নামক একজন বৃটিশ সাংবাদিক বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর কয়েকটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। বিবিসি রেডিওর পাশাপাশি বিবিসি টেলিভিশন বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করে। এ টিভিতে কাজ করতেন বিশ্ববিখ্যাত সাংবাদিক সাইমন ড্রিং। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি হোটেলে লুকিয়ে থেকে সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীকে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার সংবাদ পৌঁছে দেন। তার বাড়ি ছিল ইংল্যান্ডে নরফোকে। বিবিসিতে প্রচারিত যুদ্ধকালীন সংবাদ যাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের কানে না পৌঁছে সেজন্য ইয়াহিয়া সরকার ফ্রিকোয়েন্সিতে হস্তক্ষেপ করেছিল বলে জানা যায়। সেজন্য পাকিস্তানে বিবিসি হিজিবিজি শোনা যেত। বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে এ সমস্যাটা বেশী হতো। সেজন্য পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ বুঝতে পারেতোনা পূর্ব পাকিস্তানে কী হচ্ছে। ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে পেছনের দিকে গেলে দেখা যায়, বিবিসি থেকে বাংলা অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয় ১১ অক্টোবর ১৯৪১। প্রথমদিকে এ অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো মাত্র ১৫ মিনিট। বিবিসি বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠান এফ,এম, মিডিয়াম ওয়েভ, ও শর্টওয়েভে সমগ্র বিশ্বে সমপ্রচারিত হয় লন্ডনের বুশ হাউজের সদরর দপ্তর হতে। বর্তমানে রেডিও ছাড়াও, ইন্টারনেট রেডিও, ইন্টারনেট, এবং ভিডিও এবং মোবইলের মাধ্যমে বিবিসি বাংলা সম্প্রচারিত হচ্ছে। ঢাকায় এফএফ ১০০, চট্টগ্রাম ও রংপুরে এফএম ১০৫.৪, রাজশাহী ও সিলেটে এফএম ১০৫ , কুমিল্লায় এফএম ১০১.০২ মিটার ব্যান্ডে অনুষ্টান শোনা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা৩০ মিনিটে প্রভাতী, ৭.৩০ মিনিটে প্রত্যুষা, সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে প্রবাহ এবং ১০.৩০ মিনিটে পরিক্রমা প্রচারিত হয়। খবরের পাশাপাশি প্রতিদিন প্রত্যুষায় ঢাকার সংবাদপত্র প্রচারিত হয়। এছাড়া শনিবার মাঠে ময়দানে, ফোন ইন প্রেগাম, রবিবার ইতিহাসের সাক্ষী, সোমবার প্রীতিভাজনেষু, মঙ্গলবার বিজ্ঞানের আসর, বুধবার সাক্ষাৎকার, বৃহস্পতিবার ফিচার, ও শুক্রবারে সাপ্তাহিক গান-গল্প অনুষ্ঠানে শ্রেতাদের পছন্দের গান শোনানো হয়।
বিবিসি প্রসঙ্গে বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মুসা বলেন, তখনকার দিনের একমাত্র সংবাদমাধ্যম
হংকং ভিত্তিক কেব্ল এন্ড ওয়ারল্যাসের
মাধ্যমে খবর পাঠানো হতো। এভাবে হংকং না হয় সিঙ্গাপুরের টেলিরুট হয়ে নিজস্ব পত্রিকা কিংবা রেডিওতে খবর পাঠানো হতো। তিনি ৭১ সালে ঢাকা থেকে বিবিসর সংবাদ পাঠাতেন। তবে তিনি এপ্রিল মাসে ঢাকা ত্যাগ করেন। তখন তিনি ছিলেন খন্ডকালীন রিপোর্টার বা স্ট্রিংগার। তিনি লন্ডন চলে যাওয়ার পর খবর পাঠাতেন সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন। ১২ ডিসেম্বর তাকে আল বদরবাহিনী তার ঢাকার বাসা থেকে উঠিয়ে নেয়। পরে আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এসময় লন্ডনে বাংলা সংবাদগুলোর দায়িত্বে ছিলেন বাংগালী সাংবাদিক সিরাজুর রহমান। একাত্তরের রণাঙ্গন ও কলকাতা থেকে পাঠানো সংবাদগুলো তারা বিশ্লেষণ করতেন। তখনও বাংলা বিভাগ নামে আলাদা বিভাগ চালু হয়নি। তারা সবাই ছিলেন ইস্টার্ণ বিভাগের কর্মী। সিরাজুর রহমানকে সহযোগীত করতেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ শাসমসুল হক, ও নূরুল হক। বিবিসির বাংলা সংবাদগুলো কয়েকজন ব্রিটিশ সাংবাদিকের সংস্পর্শে প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো। তাদের মধ্যে মার্ক টালি ও উইলিয়াম ক্রলির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মার্ক টালি এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন। তার সাথে এসেছিলেন জন এন্থনী । তিনি মূলত করাচীতে কাজ করতেন। এসময় ইয়াহিয়া খান প্রমাণ করতে বলতেন -সব কুছ কবজামে হায় অর্থাৎ সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু এন্থনীর রিপোর্টটি বিবিসি ইস্টার্ন ও ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে বিশেষভাবে প্রচারিত হওয়ায় ইয়াহিয়ার সকল অপপ্রচার ভেস্তে গিয়ে তার মুখে চুনকালি পড়লো।
৮০ বছর বয়সী কুমিল্লার দেবিদ্বারের
সাত্তার মাস্টার জানান, যুদ্ধকালীন সময় রণাঙ্গনের খবরাখবর পাওয়া বেশ কঠিন ছিল। তখন বিবিসিই ছিল অন্যতম গনমাধ্যম। সারাদেশেই বিবিসির শ্রোতা ছিল ; তবে পাবনার ঈশ্বর্দীর রুপপুরে বেশি ছিল। শ্রেতাদের কারণে একসময় যায়গাটির নাম পাল্টে হয়ে যায় বিবিসি বাজার। আর এ ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন এক চা দোকানদার । তার নাম ছিল কাশেম মোল্লা। তিনি তার দোকানে রেডিও বাজাতেন আর সে সংবাদ শোনা এবং পর্যলোচনার জন্য আশেপাশের চার পাঁচ গ্রামের লোকজন একত্রিত হতো। একসময় রাজাকারদের মাধ্যমে সে সংবাদ পৌঁছে যায় পাক আর্মির কাছে। পরদিন বিবিসি অনুষ্টান শুরু হওয়া মাত্রই পাক আর্মি এসে হাজির। একজন সৈনিক গর্জে উঠে- মাদার চোত, তুম এদার আও। তোমরা দোকানমে রেডিও বাজতা হায়। শালা তুমকা খতম করদে গা, তুম রেডিও নিকালে। ” হানাদারদের নির্যাতনে তার একটি পা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পরবর্তীতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হতো। বিবিসি সংবাদের প্রতি আন্তরিকতার খবর স্বাধীনতার পর পৌঁছে যায় বিবিসি সাংবাদিকদের কাছে। ফলে ১৯৯২ সালে বিবিসির ৫০ বছর উপলক্ষে কাশেম মোল্লার সাথে দেখা করতে আসেন তৎকালীন ইস্টার্ন সার্ভিস সেকশনের প্রধান ব্যারি লাংরিজ, বাংলা বিবাগের সিরাজুল ইসলাম, প্রযোজক ও প্রজেক্টর দীপন্কর ঘোষ ও আতাউস সামাদ। কিন্তু সেই রেডিওটি । অভাবের তাড়নায় অনেক আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তা আর সংরক্ষণ করা যায়নি। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন-মায়ানমারের উথান্ট উ। ভারতে আশ্রয় নেয়া ১ কোটি বাঙ্গালী শরণার্থীর জন্য তিনি বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানান। ২ মে সে সংবাদ বিবিসিতে প্রচারিত হওয়ায় বিশ্ববাসীর টনক নড়ে। তাই মুক্তিযুদ্ধে
বিবিসির অবদান অবিস্মরণীয়। তবে এসময় অন্যান্য বেতার কেন্দ্রের মধ্যে ভয়েস অব অমেরিকা, কলকাতা বেতার এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক,সাংবাদিক ও সভাপতি কনফিডেন্টস লিসেনার্স ক্লাব,কুমিল্লা।
Email maminmollah@yahoo.com
Email maminmollah@yahoo.com