মৃত্যুর পর কবরের পূর্ব পর্যন্ত : ওয়ারিশদের করনীয়


প্রতিদিন আল্লাহর রহমতে বহু শিশু জন্ম হয়, একই নিয়মে বহু লোক মৃত্যুমুখে পতিত হয় কেউ হঠাৎ মারা যায় আবার কেউ কেউ রোগ ভূগে মৃত্যুবরণ করে মৃত্যুর সময় প্রিয়জনরা পাশে থাকেন তখন তারা মুমূর্ষ ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত থাকেন আবু সাঈদ আবু হোরায়রা (রাঃ )থেকে বর্ণিত তারা বলেন, রাসুল (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের সামনেলা ইলাহা ইল্লাল্লাহপাঠ কর তবে এব্যাপারে বেশি চাপাচাপি করা যাবে না মুমিনের মৃত্যু সহজভাবে হয় আল্লাহ বলেন-শপথ তাদের যারা আত্মার বাাঁধন খুলে দেয় মৃদুভাবে, শপথ তাদের যারা সন্তরণ করে , দ্রুতগতিতে ( আন নাজিয়াত ,) মারা যাওয়ার পর চাদর দিয়ে সমস্ত দেহ ঢেকে দেয়া সুন্নত
রাসুল (সাঃ) এন্তেকাল করার পর হিবরা নামক চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দেয়া হয়। এসময় মৃতকে কেবলামুখি করা যায়। ইবনুল কাইয়ুম তারকিতাবুর রুহপুস্তকে বলেন, মৃত্যুর সময় মানুষ মৃত্যুর ফেরেস্তাকে দেখতে পায়। তার কথা শুনতে পায়, এবং তার সঙ্গে কথাও বলে। তবে ফেরেস্তার সাথে কথা বলা, শোনা বা অনুভূতি প্রকাশ করা আমাদের মত স্বাভাবিক নয়। এটি মৃতের সম্মুখে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারে না। মৃত্যুর পর ফেরেস্তারা অত্মা নিয়ে যায়। যখন তোমাদের কারো মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেস্তারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয় ( আল আনাম-৬১) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-ফেস্তোগণ এবং রুহ আল্লাহতায়ালার দিকে উর্ধগামী হয় এমন একদিনে , যার পরিমান পঞ্চাশ হাজার বছর
কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার আত্মীয়-স্বজনকে খবর দেয়া যেতে পারে। তবে অতি প্রচার শরিয়তসম্মত নয্ অনেক সময় আমাদের সমাজে দেখা যায় কেউ মারা যাওয়ার সাথে সাথে মাইক ভাড়া করে শোক সংবাদ প্রচার করা শুরু হয়। জনাজার নামাজ দাফন পর্যন্ত মাইকে প্রচার চলতে থাকে। এভাবে প্রচার করা যাবে না। হুযায়ফা (রাঃ )বলেন, রাসুল (সাঃ) মৃত্যু সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করতেন
মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আবু বকর (রাঃ )রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে তাঁর ইন্তিকালের পর চুম্বন করেন। ( সহিহ বুখারি) মৃত ব্যক্তিকে কোন প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না। রাসুল সাঃ বলেন, মৃতের হাড়ভাঙ্গা জীবিতদের হাড়ভাঙ্গার মতই (পাপকার্য)-আবু দাউদ। মৃতকে গালি দেয়াই নিষেধ। রাসুল সাঃ বলেছেন- তোমরা মৃত ব্যক্তিদের গালি দিবেন না। তারা তো তাদের পূর্বকৃত কর্মফলের নিকট পৌঁছে গেছে , অন্য যায়গায় বলা হয়েছেএতে তোমরা জীবিতদের কষ্ট দেবে। কারও প্রিয়জন মারা গেলে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। কষ্টের প্রকাশ বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে করে থাকেন
বিশেষ করে মহিলারা বিলাপ করে কাঁদতে দেখা যায়, কেউ কেউ বুক চাপড়ে বিলাপ করে থাকেন। নবি করিম (সাঃ) বলেন- নিয়াহাহ্ ( বিলাপ) করার কারণে মৃত ব্যক্তিকে কবরে আজাব দেয়া হয়( বুখারি) তাই নিরবে অশ্রু বিসর্জন করা যেতে পারে ওমর (রাঃ) বিলাপের জন্য লাঠিপেটা করতেন এছাড়া পাথর পারতেন, এমনকি মাটি ছুড়ে মারতেন বলে জানা যায়। তবে মনে মনে শোক প্রকাশ করা যায়। রাসুল (সাঃ) এর পুত্র ইব্রাহিমের ইন্তেকালের পর তিনি বলেছেন- চক্ষু অশ্রু বিসর্জন করছে , অন্তর ব্যাথিত হচ্ছে, তবুও প্রভূর অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কথা বলব না- হে ইব্রাহিম তোমার বিরহে আমরা ব্যাথিত ( বোকারি) কেউ মারা গেলে তাদের আত্মীয় স্বজন খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে আসেন। সাধারণত সবাই আসার পর জানাযা দেয়া হয়। এসময় মৃতের পরিবারের পক্ষে রান্না-বান্না করা সম্ভব হয় না
এসময় বাড়ির লোকেরা কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী মৃতের পরিবার তাদের আত্মীয়-স্বজনের জন্য রান্না-বান্নার ব্যবস্থা করতে পারেন। জাফর নামক এক সাহাবী শহীদ হওয়ার পর নবিজী বল্লেন, জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি কর। কারণ তাদের নিকট এমন এক বিপদ এসেছে যা তাদেরকে অভিভূত কিংকর্তব্যবিমুঢ় করে ফেলেছে ( আবু দাউদ)
তারা আপনাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন রুহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দান করা হয়েছে ( ইশরা-৮৫) কেউ মারা গেলে তার আত্মা শান্ত হয়ে যায়। বিশর ইবনু হাকাম রহঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বলেন, আবু তালহা (রাঃ) এর এক পুত্র অসুস্থ হয়ে মারা গেলে তখন তিনি বাড়ির বাইরে ছিলেন। তার স্ত্রী ছেলেটিকে দাফনের প্রস্তুতি নিলেন। এমন সময় তালহা (রাঃ) এসে ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে তার স্ত্রী বল্ল- তার আত্মা শান্ত হয়েছে এবং আশা করি সে এখন আরাম পাচ্ছে (বোখারি)
আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায় কোন বিখ্যাত ব্যক্তি মারা গেলে কারণে/অকারণে দাফন করতে বিলম্ব করা হয়। এটি উচিৎ নয়। নবিজী বলেন- তোমরা তাড়াতাড়ি মৃত ব্যক্তির দাফন কার্য সম্পন্ন করো। মৃতের ওয়ারিশদের উচিৎ মৃতের সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করা। এসম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, (আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত ঋণ পরিশোধ অবধি মুমিনের আত্মা ঝুলানো অবস্থায় থাকে। ( অর্থাৎ তার জান্নাতে অথবা জাহান্নামে যাওয়ার ফায়সালা হয় না ( তিরমিজি) তবে ঋণের দায়িত্ব কেউ নিলে তার জানযার নামাজ পড়ানো যেতে পারে
মুসলিম শরিফে বর্ণিতআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির রুহ যখন বের হয়ে যায় তখন দুজন ফেরেস্তা তা নিয়ে উপরে উঠে। সময় আসমানবাসী বলেন, যমীন থেকে পবিত্র আত্মা এসেছে। আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন। তখন আল্লাহ বলবেন- একে শেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যাও) মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনে অহেতুক বিলম্ব করা উচিত নয়। যদি যানাজা সৎ হয় তবে তাকে তার সুফল পেতে সাহায্য করতে হবে। আর জানাযা যদি তা নয় তবে তাকে বিদায় দিয়ে নিজেদের হালকা হওয়া উচিত
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,   maminmollah@yahoo.com



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.