দূর্বলতার বেড়াজালে ‘উপজেলা’র অস্তিত্বই সংকটাপন্ন - মমিনুল ইসলাম মোল্লা
প্রকাশ- ১৭/১২/২০১০
জেনারেল এরশাদ তাঁর অবৈধ মতাকে প্রলম্বিত করার মোম হাতিয়ার হিসেবে ১৯৮২ সালে উপজেলা পরিষদ চালু করেন। পরে ১৯৯১ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হলেও ১৯৯৮ সালে আবার চালু করা হয়। তারপর কয়েকবার উপজেলা পরিষদ নিয়ে খুবই দূর্বল আইন প্রণীত হয়। ফলে পরিবর্তমান সময় ও জনগণের প্রকৃত চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার প্রতি খেয়াল না রেখে এবং গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে স্বশাসিত, স্বাবলম্বী উপজেলা সরকার ব্যবস্থা চালু না করে একে একটি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করে এখনো বহাল রাখা হয়েছে। এ জন্য কেউ কেউ একে ‘মকাল ফল’ বলেও আখ্যায়িত করছেন।
২০০৯ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তীকালে উপজেলা পরিষদের মতা খর্ব করার অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ অসন্তুষ্ট হয়। তাই তারা আন্দোলনমুখী হয়। সম্প্রতি তারা ১০ দফা দাবী পূরণ না হলে অমরণ অনশন করার হুমকি দেয়। তাদের দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে এমপিদের জন্য রাখা উপদেষ্টার পদ দ্রুত বিলুপ্ত করা । উপজেলা আইনের অসঙ্গতিপূর্ণ অংশ বাতিল, বিভিন্ন কমিটিতে ইউএনওর সভাপতির পদ বাতিল, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণের সিদ্ধান্ত বাতিল ইত্যাদি। সরকার উপজেলা পরিষদের মতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কার্পণ্য করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সূচীত অশুভ ধারায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে খুবই সচেতন বলে মনে হয়!
প্রত্যেক উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য একটি করে খুবই দামী গাড়ীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রথম পর্বে কতগুলো গাড়ী আনা হয়। দ্বিতীয় পর্বে ২১১টি গাড়ী আনা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ীর দাম প্রায় ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, উপজেলা পরিষদের আয় কত? এর হিসেব না করেই কোটি কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে কার স্বার্থে? এতে কি জনসাধারণের কোনও উন্নয়ন হবে? চেয়ারম্যান সাহেব কি গাড়ীতে চড়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনসাধারণের খোঁজ খবর নিতে পারবেন? উপজেলা সদর থেকে প্রতিটি গ্রামে গাড়ী নিয়ে যাওয়া যায় এমন কয়টি উপজেলা রয়েছে? তাহলে এত দামী গাড়ী দেয়া হচ্ছে কার স্বার্থে? যদি উপজেলা পরিষদের নিজস্ব আয় দিয়ে গাড়ী কেনার নিয়ম করা হতো তাইলে হয়তো কোনও কোনও চেয়ারম্যান বাই সাইকেলও কিনতে পারতেন না। ১৯৯৮ সালের আইন অনুযায়ী পরিষদের আয়ের উৎস ছিল, হাট-বাজার, হস্তান্তরিত জলমহাল, ও ফেরীঘাট ইজারা, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানার উপর ধার্যকৃত কর; নাটক, থিয়েটার, সিনেমা ও যাত্রার উপর কর; রাস্তা আলোকিতকরণের উপর কর, মেলা, প্রদর্শনী ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের উপর কর। ইউপি কর্তৃক আদায়কৃত কর বহির্ভূত ব্যবসা, বৃত্তি, ও পেশার উপর ধার্যকৃত কর, জমি বেচা-কেনার রেজিস্ট্রেশনের ফিসের ১% এবং আদায়কৃত ভুমি উন্নয়ন করের ২% এবং সরকার কর্র্তৃক নির্ধারিত কর, রেইট, টোল, ও ফিস। গবেষণায় প্রকাশ, উপজেলা পরিষদ এসব উৎস থেকে অর্থ আদায় করে নিজেদের বেতন-ভাতা, চা-নাস্তা খরচ ইত্যাদি বহন করাই সম্ভব হবে না; তাছাড়া, এসব উৎস থেকে উপজেলার জন্য কর আদায়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা, কেননা এই প্রতিষ্ঠানদ্বয়ও এসব উৎস থেকে কর আদায় করে থাকে। তাইলে, প্রশ্ন হচ্ছে, উপজেলার সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ কিভাবে পরিচালিত হবে? সেবা ও উন্নয়ন কাজ না থাকলে জনগণ উপজেলা পরিষদই চাইবে কেন? কাজ ও অর্থ থাকলেই তো উপজেলা পরিষদের প্রয়োজন থাকবে; অবৈধ মতা প্রলম্বিত করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে তো উপজেলা পরিষদের আর কোনও প্রয়োজন নেই, কেননা এখন তো অবৈধ শাসক মতায় নেই।
তবে উপজেলাকে কার্যকর করতে হলে আগে উপজেলা আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হলে একটি সমন্বিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আগে ঠিক করতে হবে; আগে স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ইউনিট ঠিক করতে হবে; কারণ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ইউনিটের মাধ্যমে যেসব কাজ করা সম্ভব নয় সেসব কাজ মধ্যবর্তী ইউনিটকে দিতে হবে। সেজন্য মধ্যবর্তী ইউনিট হিসেবে উপজেলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তাও বিবেচনায় নিতে হবে। প্রয়োজন থাকলে এর মতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে; আর প্রয়োজন না থাকলে উপজেলাকে বিলুপ্ত করে দিতে হবে। উপজেলায় করারোপ ও আদায় উৎসাহিত এবং আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক উপজেলার ১০০% সিস্টেম কস্ট (যেমন, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্যদের সম্মাানি ভাতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, যানবাহন ক্রয়, মেরামত, সংরণ ও জ্বালানী, টেলিফোন বিল, বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, প্রতিদিনকার আবশ্যকীয় খরচ ইত্যাদি) ও বেশীরভাগ উন্নয়ন ও সেবামূলক কস্ট অবশ্যই নিজস্ব আয় থেকে ব্যয় করার বিধান সংযোজন করতে হবে।্ বর্তমানে চেয়ারম্যানদের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের বেতন সাড়ে সাত হাজার টাকা প্রদানের কথা রয়েছে। আবার দঃখজনক হলেও সত্য অধিকাংশ চেয়ারম্যান ঢাকায় অবস্থান করেন। তাদের চাকুরি পূর্ণকালীন না হওয়ায় তারা এলাকায় না থেকেও পার পেয়ে যাচ্ছেন! দূরে অবস্থান করায় জনগণ তাদেরকে কাছে পাননা। তাই উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদকে পূর্ণকালীন করা প্রয়োজন। চেয়ারম্যানদের অপসারণের ব্যাপারে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল ২০১০ নামে বিলটি পেশ করা হয়েছে। এ বিলের ১৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, যুক্তি সঙ্গত কারণ ছাড়া ৩টি সভায় অনুপস্থিত থাকলে, রাষ্ট্র পরিপন্থী বা নৈতিক স্খলনের কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হলে, অসদাচারণ, দুর্নীতি, মতার অপব্যবহার সংক্রান্ত কারণে দোষী সাব্যস্ত হলে, উপজেলার সম্পত্তি আত্মসাৎ করলে, সরকার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে পারবে। এ আইনটির ব্যাপারে চেয়ারম্যানদের ঘোর আপত্তি রয়েছে। তবে অপসারণের নিয়মটি নতুন নয়। এটি আগেও ছিল বলে জানা যায়।
সবশেষে বলা যায়, অবৈধ মতায় সৃষ্ট উপজেলা ব্যবস্থার প্রচুর দূর্বলতা দিন দিন জনগণের সামনে উন্মোচিত হতে থাকায় এর অস্তিত্বই সংকটাপন্ন; তাছাড়া স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট (বিভাগ অথবা জেলা) এবং সর্বনিম্ন ইউনিট (ইউনিয়ন, পৌরসভা ও নগর কর্পোরেশন) একসঙ্গে কার্যকর হলে মধ্যবর্তী ইউনিট হিসেবে উপজেলার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু থাকবে তা নিয়ে অনেকের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আর আরও বড় বিষয় হল, জনগণ সর্বোচ্চ ইউনিট, মধ্যবর্তী ইউনিট ও সর্বনিম্ন ইউনিটের জন্য কর দিতে রাজী হবার আলামত একেবারেই দৃশ্যমান নয়। তাই উপজেলাকে একটি সমন্বিত গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের অংশ হিসেবে রাখতে হলে, আগে স্থানীয় সরকারের একটি সমন্বিত স্তরগত নকশা গ্রহণ করা খুবই জরুরী। এই স্তরগত নকশা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনের নিরিখে উপজেলা হয়তো থাকবে, হয়তো থাকবে না। ঠিক যেমন মোহ ভংগের মধ্যদিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বনির্ভর গ্রাম সরকার, পল্লী পরিষদ, গ্রাম সভা, গ্রাম পরিষদ, গ্রাম সরকার, ওয়ার্ড সভার বিলুপ্তি ঘটেছে। তাই তো বলি, আর বিলম্ব নয়, যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সরকার গবেষক ও সিডিএলজি’র নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব প্রণীত ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’টি পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হোক।
লেখক: প্রভাষক, সাংবাদিক ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের জন্য ক্যাম্পেনার, এলাহাবাদ ইউনিয়ন, চট্রগ্রাম বিভাগ,
২০০৯ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তীকালে উপজেলা পরিষদের মতা খর্ব করার অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ অসন্তুষ্ট হয়। তাই তারা আন্দোলনমুখী হয়। সম্প্রতি তারা ১০ দফা দাবী পূরণ না হলে অমরণ অনশন করার হুমকি দেয়। তাদের দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে এমপিদের জন্য রাখা উপদেষ্টার পদ দ্রুত বিলুপ্ত করা । উপজেলা আইনের অসঙ্গতিপূর্ণ অংশ বাতিল, বিভিন্ন কমিটিতে ইউএনওর সভাপতির পদ বাতিল, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণের সিদ্ধান্ত বাতিল ইত্যাদি। সরকার উপজেলা পরিষদের মতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কার্পণ্য করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সূচীত অশুভ ধারায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে খুবই সচেতন বলে মনে হয়!
প্রত্যেক উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য একটি করে খুবই দামী গাড়ীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রথম পর্বে কতগুলো গাড়ী আনা হয়। দ্বিতীয় পর্বে ২১১টি গাড়ী আনা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ীর দাম প্রায় ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, উপজেলা পরিষদের আয় কত? এর হিসেব না করেই কোটি কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে কার স্বার্থে? এতে কি জনসাধারণের কোনও উন্নয়ন হবে? চেয়ারম্যান সাহেব কি গাড়ীতে চড়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনসাধারণের খোঁজ খবর নিতে পারবেন? উপজেলা সদর থেকে প্রতিটি গ্রামে গাড়ী নিয়ে যাওয়া যায় এমন কয়টি উপজেলা রয়েছে? তাহলে এত দামী গাড়ী দেয়া হচ্ছে কার স্বার্থে? যদি উপজেলা পরিষদের নিজস্ব আয় দিয়ে গাড়ী কেনার নিয়ম করা হতো তাইলে হয়তো কোনও কোনও চেয়ারম্যান বাই সাইকেলও কিনতে পারতেন না। ১৯৯৮ সালের আইন অনুযায়ী পরিষদের আয়ের উৎস ছিল, হাট-বাজার, হস্তান্তরিত জলমহাল, ও ফেরীঘাট ইজারা, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানার উপর ধার্যকৃত কর; নাটক, থিয়েটার, সিনেমা ও যাত্রার উপর কর; রাস্তা আলোকিতকরণের উপর কর, মেলা, প্রদর্শনী ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের উপর কর। ইউপি কর্তৃক আদায়কৃত কর বহির্ভূত ব্যবসা, বৃত্তি, ও পেশার উপর ধার্যকৃত কর, জমি বেচা-কেনার রেজিস্ট্রেশনের ফিসের ১% এবং আদায়কৃত ভুমি উন্নয়ন করের ২% এবং সরকার কর্র্তৃক নির্ধারিত কর, রেইট, টোল, ও ফিস। গবেষণায় প্রকাশ, উপজেলা পরিষদ এসব উৎস থেকে অর্থ আদায় করে নিজেদের বেতন-ভাতা, চা-নাস্তা খরচ ইত্যাদি বহন করাই সম্ভব হবে না; তাছাড়া, এসব উৎস থেকে উপজেলার জন্য কর আদায়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা, কেননা এই প্রতিষ্ঠানদ্বয়ও এসব উৎস থেকে কর আদায় করে থাকে। তাইলে, প্রশ্ন হচ্ছে, উপজেলার সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ কিভাবে পরিচালিত হবে? সেবা ও উন্নয়ন কাজ না থাকলে জনগণ উপজেলা পরিষদই চাইবে কেন? কাজ ও অর্থ থাকলেই তো উপজেলা পরিষদের প্রয়োজন থাকবে; অবৈধ মতা প্রলম্বিত করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে তো উপজেলা পরিষদের আর কোনও প্রয়োজন নেই, কেননা এখন তো অবৈধ শাসক মতায় নেই।
তবে উপজেলাকে কার্যকর করতে হলে আগে উপজেলা আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হলে একটি সমন্বিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আগে ঠিক করতে হবে; আগে স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ইউনিট ঠিক করতে হবে; কারণ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ইউনিটের মাধ্যমে যেসব কাজ করা সম্ভব নয় সেসব কাজ মধ্যবর্তী ইউনিটকে দিতে হবে। সেজন্য মধ্যবর্তী ইউনিট হিসেবে উপজেলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তাও বিবেচনায় নিতে হবে। প্রয়োজন থাকলে এর মতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে; আর প্রয়োজন না থাকলে উপজেলাকে বিলুপ্ত করে দিতে হবে। উপজেলায় করারোপ ও আদায় উৎসাহিত এবং আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক উপজেলার ১০০% সিস্টেম কস্ট (যেমন, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্যদের সম্মাানি ভাতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, যানবাহন ক্রয়, মেরামত, সংরণ ও জ্বালানী, টেলিফোন বিল, বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, প্রতিদিনকার আবশ্যকীয় খরচ ইত্যাদি) ও বেশীরভাগ উন্নয়ন ও সেবামূলক কস্ট অবশ্যই নিজস্ব আয় থেকে ব্যয় করার বিধান সংযোজন করতে হবে।্ বর্তমানে চেয়ারম্যানদের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের বেতন সাড়ে সাত হাজার টাকা প্রদানের কথা রয়েছে। আবার দঃখজনক হলেও সত্য অধিকাংশ চেয়ারম্যান ঢাকায় অবস্থান করেন। তাদের চাকুরি পূর্ণকালীন না হওয়ায় তারা এলাকায় না থেকেও পার পেয়ে যাচ্ছেন! দূরে অবস্থান করায় জনগণ তাদেরকে কাছে পাননা। তাই উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদকে পূর্ণকালীন করা প্রয়োজন। চেয়ারম্যানদের অপসারণের ব্যাপারে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল ২০১০ নামে বিলটি পেশ করা হয়েছে। এ বিলের ১৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, যুক্তি সঙ্গত কারণ ছাড়া ৩টি সভায় অনুপস্থিত থাকলে, রাষ্ট্র পরিপন্থী বা নৈতিক স্খলনের কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হলে, অসদাচারণ, দুর্নীতি, মতার অপব্যবহার সংক্রান্ত কারণে দোষী সাব্যস্ত হলে, উপজেলার সম্পত্তি আত্মসাৎ করলে, সরকার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে পারবে। এ আইনটির ব্যাপারে চেয়ারম্যানদের ঘোর আপত্তি রয়েছে। তবে অপসারণের নিয়মটি নতুন নয়। এটি আগেও ছিল বলে জানা যায়।
সবশেষে বলা যায়, অবৈধ মতায় সৃষ্ট উপজেলা ব্যবস্থার প্রচুর দূর্বলতা দিন দিন জনগণের সামনে উন্মোচিত হতে থাকায় এর অস্তিত্বই সংকটাপন্ন; তাছাড়া স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট (বিভাগ অথবা জেলা) এবং সর্বনিম্ন ইউনিট (ইউনিয়ন, পৌরসভা ও নগর কর্পোরেশন) একসঙ্গে কার্যকর হলে মধ্যবর্তী ইউনিট হিসেবে উপজেলার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু থাকবে তা নিয়ে অনেকের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আর আরও বড় বিষয় হল, জনগণ সর্বোচ্চ ইউনিট, মধ্যবর্তী ইউনিট ও সর্বনিম্ন ইউনিটের জন্য কর দিতে রাজী হবার আলামত একেবারেই দৃশ্যমান নয়। তাই উপজেলাকে একটি সমন্বিত গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের অংশ হিসেবে রাখতে হলে, আগে স্থানীয় সরকারের একটি সমন্বিত স্তরগত নকশা গ্রহণ করা খুবই জরুরী। এই স্তরগত নকশা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনের নিরিখে উপজেলা হয়তো থাকবে, হয়তো থাকবে না। ঠিক যেমন মোহ ভংগের মধ্যদিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বনির্ভর গ্রাম সরকার, পল্লী পরিষদ, গ্রাম সভা, গ্রাম পরিষদ, গ্রাম সরকার, ওয়ার্ড সভার বিলুপ্তি ঘটেছে। তাই তো বলি, আর বিলম্ব নয়, যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সরকার গবেষক ও সিডিএলজি’র নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব প্রণীত ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’টি পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হোক।
লেখক: প্রভাষক, সাংবাদিক ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের জন্য ক্যাম্পেনার, এলাহাবাদ ইউনিয়ন, চট্রগ্রাম বিভাগ,