গ্যাসবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে
পারে
কুমিল্লায়
আমাদের দেশের অতি মূল্যবান সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস। এ গ্যাস বর্তমানে বিভিন্ন কাজে ব্যয় হচ্ছে। এ ব্যয়কে অনেকে অপচয় বলেও আখ্যায়িত করেছেন। অবশ্য একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। যারা বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় আছেন তারা বলছেন, অন্য কোনো খাতে নয় আবাসিক ক্ষেত্রেই গ্যাসের সংযোগ দেয়া উচিত। অন্য পক্ষ বলছে, আবাসিক নয় শুধু শিল্প খাতেই গ্যাস সংযোগ দেয়া উচিত। বর্তমানে কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র চলছে কয়লার মাধ্যমে। বড়পুকুরিয়া থেকে উত্তোলিত কয়লা প্রতি টন ৮৪ ডলার মূল্যে কেনা হচ্ছে। গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে খরচ কম পড়বে। কয়লা ছাড়াও তেল-গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। উত্সভেদে তুলনামূলক ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য দাঁড়ায় সৌরবিদ্যুতে ১৮-২৫ টাকা, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৬-১৮, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬-৮ এবং গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রে ৫ টাকা। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ১১টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। কুমিল্লায় প্রাপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে অনায়াসে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র হতে পারে।
কুমিল্লার গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে
বাখরাবাদ সবচেয়ে
পুরনো।
১৯৬৯
সালে
তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার
শেলওয়ে
কোম্পানিকে এ
ব্যাপারে দায়িত্ব দিলে
গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার হয়।
এটি
সরু
ও
লম্বাটে। লম্বায়
৬৯
ও
প্রস্থে ১০
কিলোমিটার। এখানে
মোট
মজুদ
গ্যাসের পরিমাণ
১
দশমিক
০৪৯
ট্রিলিয়ন ঘনফুট
(টিসিএফ)। ১৯৮৪ সালে
বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে
গ্যাস
উত্তোলন শুরু
হয়।
২০০৯
সালের
৩১
অক্টোবর পর্যন্ত এখান
থেকে
মোট
৬৯৬
দশমিক
৫৯৬
বিলিয়ন
ঘনফুট
অর্থাৎ
৬৬
শতাংশ
গ্যাস
উত্তোলন হয়ে
গেছে।
বাখরাবাদের কন্ডেনসেট ও
গ্যাসের অনুপাত
দশমিক
৭০
এবং
পানি
ও
গ্যাসের অনুপাত
১৩
দশমিক
৮৮
বিবিএল/মিলিয়ন ঘনফুট। এখানকার কন্ডেনসেটকে প্রক্রিয়াজাত করে
পেট্রল,
ডিজেল
তৈরি
করা
হয়।
এ
তেল
মেঘনা
পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের মাধ্যমে বাজারজাত করা
হচ্ছে।
বাখরাবাদের দুটি
স্থানে
মোট
আটটি
কূপ
খনন
করা
হয়েছে।
কূপগুলো চালু
হওয়ার
পর
সর্বোচ্চ গ্যাস
উৎপাদন
হয়েছে
১৯৯২
সালে।
তখন
দৈনিক
২১০
মিলিয়ন
ঘনফুট
গ্যাস
উত্তোলন হতো।
বর্তমানে পাঁচটি
কূপ
চালু
আছে,
যা
থেকে
দিনে
৩৫-৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট
গ্যাস
তোলা
হয়।
বাকি
তিনটি
জলাবদ্ধতার কারণে
বন্ধ
রয়েছে।
এখানকার গ্যাস
বাখরাবাদ গ্যাস
সিস্টেম লিমিটেড নামে
সারা
দেশে
সরবরাহ
করা
হচ্ছে।
কুমিল্লার আরেকটি
বিখ্যাত গ্যাসক্ষেত্র মুরাদনগরের বাঙ্গরা। আন্তর্জাতিক ঠিকাদার অপারেটর কোম্পানি ‘তাল্লো
বাংলাদেশ লিমিটেড’ বাঙ্গরা গ্যাস
ফিল্ডে
কাজ
করছে।
এটির
৯নং
ব্লকে
গ্যাস
অনুসন্ধানের জন্য
২০০১
সালে
পেট্রোবাংলার সঙ্গে
চুক্তি
হয়।
২০০৪
সালে
১নং
কূপটি
খননকালে বাঙ্গরা ক্ষেত্রটি আবিষ্কার হয়।
২০০৬
সালের
মে
মাসে
উৎপাদন
কার্যক্রম চালু
করা
হয়।
বর্তমানে ১০০-১২০ মিলিয়ন ঘনফুট
গ্যাস
উত্তোলন হচ্ছে।
কুমিল্লার দেবীদ্বারে একটি
গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে।
এটি
গোপালনগর গ্যাসক্ষেত্র নামে
পরিচিত। জানা
যায়,
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বখ্যাত অয়েল
পিএলসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তাল্লো
বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৯৭
সাল
থেকে
বাংলাদেশের ৯নং
ব্লক
থেকে
(কুমিল্লা অঞ্চলের) তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও
উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে
যাচ্ছে। গোপালনগর গ্যাস
ফিল্ড
থেকে
উত্তোলিত প্রায়
৪০-৬০ মিলিয়ন ঘনফুট
গ্যাস
বাঙ্গরা গ্যাস
ফিল্ডের নামে
কিছুদিন উত্তোলিত হয়।
তবে
বর্তমানে এর
উত্তোলন ও
সরবরাহ
কার্যক্রম বন্ধ।
কুমিল্লার আরেকটি
বিখ্যাত গ্যাস
ফিল্ড
হচ্ছে
শ্রীকাইল গ্যাস
ফিল্ড।
২০০৫
সালে
বাপেক্স শ্রীকাইলে একটি
কূপ
খনন
করে।
খননের
পর
সেখান
থেকে
গ্যাস
উঠতে
থাকে।
মাঝে
মধ্যেই
গ্যাসের সঙ্গে
পানি
আসতে
থাকে।
ফলে
কূপটি
বন্ধ
করে
দেয়া
হয়।
২০১২
সালের
মে
মাসে
উপজেলার মোখলেসপুরে শ্রীকাইল কূপ-২ খননের কাজ
শুরু
হয়।
১০
জুলাই
প্রাথমিক কাজ
শেষ
হয়।
১৩
জুলাই
প্রথমবারের মতো
আগুন
দেয়া
হয়।
এ
সময়
দেখা
যায়,
প্রতিদিন দ্বিতীয় স্তর
থেকে
১৮
মিলিয়ন
ঘনফুট
গ্যাস
উঠছে।
ভূগর্ভের ৩
হাজার
১০০
মিটার
গভীরে
খননের
মাধ্যমে দেখা
যায়,
এখান
থেকে
প্রতিদিন ২৫
মিলিয়ন
ঘনফুট
গ্যাস
উত্তোলন সম্ভব।
এ
স্তর
থেকে
প্রতিদিন ১
কোটি
৭০
লাখ
ঘনফুট
গ্যাস
উত্তোলন করা
যাবে।
শ্রীকাইলে গ্যাস
অনুসন্ধান করছে
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আশা
প্রকাশ
করেন,
এখান
থেকে
বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস
উত্তোলন করা
যাবে।
এ
ক্ষেত্রের গ্যাস
শিল্প,
সার
ও
বিদ্যুৎ খাতে
ব্যবহার করা
যাবে।
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ
কম।
তাই
বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ
খাতকে
প্রাধান্য দেয়া
উচিত।
আর
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বাড়াতে
হলে
এর
উৎপাদন
ও
সরবরাহ
বাড়াতে
হবে।
সরকার
ক্ষমতায় আসার
পর
গ্যাস
সরবরাহ
বৃদ্ধির জন্য
বাপেক্সের মাধ্যমে নতুন
কূপ
খনন
ও
পুরনো
কূপ
সংস্কারের উদ্যোগ
নিলে
এত
দিনে
আরো
৩০০
মিলিয়ন
ঘনফুট
বাড়তি
গ্যাস
পাওয়া
যেত।
এর
মাধ্যমে ১০টি
কূপ
থেকে
উত্তোলিত গ্যাসের মাধ্যমে ১
হাজার
৫০০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া
যেত।
তবে
বাপেক্সকে দায়িত্ব না
দিয়ে
দ্রুত
গ্যাস
অনুসন্ধানের অজুহাতে বিদেশীদের সুযোগ
দিয়ে
ফার্স্ট ট্র্যাক প্রোগ্রাম হাতে
নেয়া
হয়।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রোগ্রামটি ২০০৯
সালের
অক্টোবরে শুরু
হয়ে
২০১২
সালের
ডিসেম্বরে শেষ
হওয়ার
কথা
ছিল।
অথচ
টেন্ডার-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে
আড়াই
বছরে
কাজই
শুরু
করা
যায়নি।
২০১২
সালের
২৬
এপ্রিল
তাড়াহুড়া করে
২০
মাসে
কাজ
সম্পন্ন করার
টার্গেট দিয়ে
রাশিয়ার কোম্পানি ‘গ্যাজপ্রমকে’ দায়িত্ব দেয়া
হয়।
তাদের
কাজের
অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়
বলে
জানা
যায়।
কুমিল্লায় প্রাপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ
নেয়া
হলে
চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের সরবরাহ
আগের
তুলনায়
বাড়ানো
যেত।
সরকার
এ
ব্যাপারে দ্রুত
পদক্ষেপ নেবে
বলেই
আশা
করি।
লেখক:মমিনুল ইসলাম মোল্লা, প্রভাষকmaminmollah@yahoo.com