কালো টাকা তৈরির পথ বন্ধ করা দরকার
বলতে দ্বিধা
নেই
কালো
টাকা
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি
অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এটি
সাধারণত অনৈতিক
উপায়ে
বা
দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত
অপ্রদর্শিত টাকা।
কালো
টাকার
মধ্যে
করবহির্ভূত টাকা
বাদেও
রয়েছে
দুর্নীতি, ঘুষ,
কালোবাজারি, চোরাকারবারি, মাদক
বা
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত
অর্থ।
এ
ধরনের
টাকার
উত্স
জাতীয়
রাজস্ব
বোর্ডের (এনবিআর)
অজানা।
![]() |
| কালো টাকা তৈরির পথ বন্ধ করা দরকার |
আমাদের
দেশে
কালো
টাকার
সঙ্গে
কারা
জড়িত?
প্রস্তাবিত বাজেটেও রয়েছে
কালো
টাকা
সাদা
করার
সুযোগ।
২০১২-১৩ আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রদত্ত করের
সঙ্গে
১০
শতাংশ
হারে
জরিমানা দিয়ে
অপ্রদর্শিত অর্থ
বৈধ
করার
সুযোগ
বহাল
রাখা
হয়।
অর্থ
মন্ত্রণালয়ের এক
জরিপে
দেখা
গেছে,
জাতীয়
প্রবৃদ্ধির ৪৬
থেকে
৫১
শতাংশই
কালো
টাকা।
এ
হিসাবে
মোট
কালো
টাকার
পরিমাণ
৩
লাখ
১০
হাজার
৯৯৮
কোটি
থেকে
৬
লাখ
২৯
হাজার
৯৯৬
কোটি
টাকা।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে
বেসরকারি গবেষণা
প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর
পলিসি
ডায়ালগের (সিপিডি)
এক
সংবাদ
সম্মেলনে কালো
টাকা
ও
বেনামি
সম্পদ
মূলধারায় আনার
পরামর্শ দেয়া
হয়।
বাজেটে
কালো
টাকা
সাদা
করার
সুযোগ
সম্পূর্ণরূপে বিলোপ
করার
দাবি
জানান
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়া মানি
লন্ডারিং প্রতিরোধে এবং
পাচারকৃত অর্থ
দেশে
ফিরিয়ে
আনতে
সরকারকে আরো
সক্রিয়
ভূমিকা
পালন
করতে
বলেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
ইফতেখারুজ্জামান সম্প্রতি এক
বিবৃতিতে এ
দাবি
করেন।
এনবিআরের চেয়ারম্যান সম্প্রতি বলেছেন,
অপ্রদর্শিত অর্থ
সাদা
করার
সুযোগ
দেয়া
নতুন
কিছু
নয়।
এনবিআরের ১৯
ধারার
বিধান
মেনে
যেকোনো
ব্যক্তি এ
সুযোগ
নিতে
পারেন।
এক্ষেত্রে এনবিআর
আইনি
কাঠামোর মধ্যে
থেকেই
কাজ
করবে।
শুধু
বাংলাদেশেই নয়,
ভারতেও
কালো
টাকার
প্রভাব
লক্ষ
করা
যায়।
বিদেশের ট্যাক্স হেভেনগুলোয় ভারতীয়দের প্রায়
৫০০
বিলিয়ন
বা
৫০
হাজার
কোটি
ডলার
জমা
আছে।
যারা
ট্যাক্স ফাঁকি
দিয়ে
বিদেশের ব্যাংকে টাকা
জমা
রেখেছেন— এমন
সন্দেহভাজনদের তালিকা
তৈরি
করে
সে
দেশের
সরকার
সুপ্রিম কোর্টের হাতে
তুলে
দেয়।
প্রথম
তালিকায় ৬২৭
জন
ধনকুবেরের নাম
রয়েছে।
২০১১
সালে
ফরাসি
সরকার
দিল্লির হাতে
প্রায়
৭০০
ভারতীয়
নাগরিকের নামের
তালিকা
তুলে
দিয়েছিল; জেনেভার এইচএসবিসি ব্যাংকে যাদের
অ্যাকাউন্ট ছিল।
ভারত
থেকে
যেসব
দেশে
কালো
টাকা
যাচ্ছে,
সেসব
দেশের
মধ্যে
মরিশাস,
সুইজারল্যান্ড, লিচেনস্টিন বা
ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড অন্যতম। অর্থনীতিবিদদের ধারণা,
ভারতের
অর্থনেতিক বৈষম্যের মূল
কারণ
এ
কালো
টাকা।
ইউএনডিপির এক
প্রতিবেদনমতে, বিশ্বের উন্নয়নশীল বিশ্বে
সবচেয়ে
বেশি
অর্থ
পাচার
হওয়া
দেশের
মধ্যে
বাংলাদেশের স্থান
দ্বিতীয়। প্রথম
স্থানে
রয়েছে
আইভরিকোস্ট। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২
সাল
পর্যন্ত সুইস
ব্যাংকে তা
৩
হাজার
১৬২
কোটি
টাকায়
উন্নীত
হয়েছে।
যা
পাচারকৃত মোট
অর্থের
১
দশমিক
৫
শতাংশ।
অন্য
এক
রিপোর্টে জানা
যায়,
স্বাধীনতার পর
গত
চার
দশকে
২
লাখ
কোটিরও
অধিক
অর্থ
পাচার
হয়েছে।
এ
অর্থ
বিশ্বের উন্নত
দেশগুলোর হাই-সিকিউরিটি ব্যাংকগুলোয় জমা রয়েছে। এছাড়া
বাকি
টাকা
বাড়ি-গাড়ি, শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ করা
হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে,
বৈধ
ও
অবৈধ
দুভাবেই দেশের
টাকা
বিদেশে
যেতে
পারে।
সেটি
পুরোপুরি ঠেকানো
সম্ভব
না
হলেও
এ
টাকার
কর
আদায়
করে
রাজস্ব
বাড়ানো
যেতে
পারে।
তবে
কেউ
কেউ
বলছেন
ভিন্ন
কথা।
তাদের
মতে,
কর
আদায়
করে
ছেড়ে
দেয়া
মানে
তাদের
কাজের
বৈধতা
দেয়া।
এটা
অবিচার। এটি
পুরনো
ও
নতুন
উভয়
পাচারকারীদের আরো
উত্সাহিত করবে।
আগে
পাচারকৃত অর্থ
কৌশলে
ফিরিয়ে
আনতে
হবে।
নতুন
পথ
বন্ধ
করতে
হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে,
অতীতে
যতবার
কালো
টাকা
বিনিয়োগের সুযোগ
দেয়া
হয়েছে,
তাতে
তেমন
সাড়া
পাওয়া
যায়নি।
কালো
টাকা
কোথায়
যায়,
এ
ব্যাপারে কোনো
প্রশ্ন
উঠলেই
আমাদের
সামনে
সুইস
ব্যাংকের চিত্র
ফুটে
ওঠে।
কেউ
কেউ
শখ
করে
সুইস
ব্যাংকে টাকা
রাখলেও
মালয়েশিয়া কিংবা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীর অভাব
নেই।
এক
হিসাবে
দেখা
যায়,
শুধু
মালয়েশিয়ায়ই ২
হাজার
৯২৩
জন
বাংলাদেশী সেকেন্ড হোম
প্রকল্পে বিনিয়োগ পূর্বক
আনুমানিক ৫
হাজার
কোটি
টাকা
পাচার
করেছেন। ব্যাংকের মাধ্যমে আইন
মেনে
এ
টাকা
পাঠানো
হয়নি।
এ
টাকা
হুন্ডি
বা
অন্য
চ্যানেলে পাচার
করা
হয়েছে।
যা
মানি
লন্ডারিং আইনে
অপরাধ।
বর্তমান বাজেটে
গাড়ি-বাড়ি সবকিছুই করের
আওতায়
আসছে।
আমাদের
দেশের
বহু
প্রতিষ্ঠানের গাড়ি
আছে।
এগুলোকে বাজেটে
আয়করের
আওতায়
আনা
হতে
পারে।
এনবিআরের মাধ্যমে সংগৃহীত বাড়ির
ওপরও
ট্যাক্স বসানো
হয়েছে।
বর্তমানে ব্যক্তিগত গাড়ির
ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ও
নবায়নে
সিসিভেদে অগ্রিম
আয়কর
দেয়ার
ব্যবস্থা রয়েছে।
অধিকাংশ বছরই
কালো
টাকা
সাদা
করার
সুযোগ
দেয়া
হয়।
সুযোগ
পেলে
তারা
অল্প
কিছু
টাকা
কর
দিয়ে
পাকপবিত্র হয়ে
যান।
তখন
সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলেন,
কালো
টাকা
সাদা
হলে
তা
জাতীয়
অর্থনীতিতে বিশেষ
ভূমিকা
রাখবে।
ভাবটা
এমন
যে,
বাংলাদেশের অর্থনীতির সাফল্য
কালো
টাকার
ওপর
নির্ভরশীল। যারা কালো
টাকা
উপার্জন করেন,
তাদের
বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া
প্রয়োজন। তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
না
দিলে
কালো
টাকার
পরিমাণ
আরো
বাড়তে
থাকবে।
ফলে
বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো
ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কালো
টাকা
সাদা
করার
পরিবর্তে এগুলো
বাজেয়াপ্ত করে
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা
দেয়ার
ব্যবস্থা করা
যেতে
পারে।
এতে
আমাদের
অর্থনীতি আরো
শক্তিশালী হবে।
বারবার
কালো
টাকা
সাদা
করার
সুযোগ
দেয়ায়
মানুষের মাঝে
নেতিবাচক ধারণা
এসেছে।
যারা
নিয়মিত
কর
দিতেন,
তারাও
এখন
আগ্রহ
হারিয়ে
ফেলছেন।মমিনুল ইসলাম মোল্লা
| ২০১৫-০৬-১৪ ইং
লেখক:
কলেজ
শিক্ষকmaminmollah@yahoo.com
