কুমিল্লা বোর্ডে সেরা কুমিল্লা জেলা স্কুল
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক
শিক্ষাবোর্ডে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ৯০ দশমিক ৪১ ভাগ। বোর্ডে শীর্ষ
স্থানে রয়েছে কুমিল্লা জেলা স্কুল। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ
২৮ হাজার ৬৪২ জন। পাশ করেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০৭ জন। এরমধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭
হাজার ৮৫৫ জন। জিপিএ প্রাপ্তিসহ ছয়টি সূচকে বোর্ডে প্রথম হয়েছে কুমিল্লা জেলা
স্কুল। এ স্কুল থেকে এবার ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাশ করেছে। জিপিএ ৫
পেয়েছে ৩৩২ জন।
১৭৫
বছর পূর্বের স্কুল, কুমিল্লা জেলা স্কুল । ২০১২ সালে এটি কুমিল্লা বোর্ডের সেরা
স্কুলের মর্যাদা লাভ করে। এছাড়া ২০০৯ সালে ও ২০১১ সালে এ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা
এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করে। জেএসসি পরীক্ষায়ও এ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা
কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। সারা দেশের ১০টি সেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এর
অবস্থান অন্যতম।
বর্তমানে
কুমিল্লা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন রাশেদা আক্তার। এ
বিদ্যালয়টি কুমিল্লা শহরের কান্দিরপারে অবস্থিত। এর পূর্বে শহীদ কবির
উদ্দিন সড়ক, পশ্চিমে ঐতিহাসিক ধর্মসাগর, উত্তরে কুমিল্লা জেলা স্টেডিয়াম, এবং
দক্ষিণে কুমিল্লা নগর মিলনায়তন অবস্থিত।
১৮৩৭
সালে এইচ জি লেজিস্টার নামে একজন ইংরেজ শিক্ষক স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই
ছিলেন এ বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক। ১৮৩৭ সালের ৩০ জুন এটি স্বীকৃতি লাভ
করে। বৃটিশ শাসনামলেই এটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। ইংরেজি, সাহিত্য ও
বিজ্ঞান শিক্ষার এটি আদর্শ কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। ১৮৫০ সালে এ বিদ্যালয়ে
পরিকাঠামোগত পারবর্তন আনা হয়।
২০১০ সালের জেএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যালয় থেকে ২৭ জন ছাত্র মেধা বৃত্তি লাভ করে।
এছাড়া সাধারণ বৃত্তি লাভ করে ৫১ জন ছাত্র। ২০১১ সালের পরীক্ষায়ও কুমিল্লা
বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বৃত্তি লাভ করে। এছাড়া ২০১০ সালের এসএসসি
পরীক্ষায় জিপিএ -৫ পায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২২৮ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা
বিভাগ থেকে ২৩ জন। এছাড়া এ গ্রেড পায় মোট ২৫ জন এবং এ মাইনাস লাভ করে ৩১ জন
ছাত্র। ২০১২ সালে এসএসসিতে জিপিএ - ৫ পায় ৩১৭ জন, এ গ্রেড পায় ৬৪ জন।
২০১১
সালে জেএসসিতে এ প্লাস পায় ২২১ জন এ গ্রেড লাভ করে ১৩৯ জন এবং এমাইনাস পায় ১৪
জন। মোট পাশ করে ৩৭৬ জন। বিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষা সামগ্রী রয়েছে।
মূল ভবনে জমি রয়েছে ৫.৬৯ শতক। বিল্ডিং রয়েছে ৬ টি। এর মধ্যে ৩টি দোতলা বিল্ডিং।
এগুলো সরকারি খরচে তৈরি করা হয়েছে। বিল্ডিংগুলোতে মোট কক্ষ রয়েছে ৪৪ টি। এর
মধ্যে ক্লাশ রুম ২৩ টি, অফিস কক্ষ ২টি, শিক্ষক কক্ষ ৬টি, লাইব্রেরি ১টি, এবং
ল্যবরেটরি রয়েছে ৫টি কক্ষে। এ ছাড়া শিক্ষা উপকরণের মধ্যে রয়েছে: ব্ল্যাক বোডর্
২০টি, হোয়াইট বোর্ড ১৫টি, ডুপ্লিকেটিং মেশিন ৫০টি, টেলিভিশন ১টি, রেফ্রিজারেটর
১টি, ক্লিপ চার্ট ১টি, । এছাড়া খেলার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে-বাস্কেটবল ৩টি, ভলিবল
২টি, ক্রিকেটবল ১টি, ফুটবলসেট ২টি, এবং ব্যাডমিন্টন সেট ২টি।
এ বিদ্যালয়ে সুদক্ষ শিক্ষক মন্ডলী রযেছে। বর্তমানে এখানে ৫০ জন শিক্ষক রয়েছেন।
তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ মোট ১৭ জনই মহিলা। শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
৪৮ জন। এখানে প্রধান শিক্ষক ১ জন, সহকারী প্রধান শিক্ষক ২ জন, সহকারী শিক্ষক
(সামাজিক বিজ্ঞান) ২৮ জন, সহকারী শিক্ষক (বায়োলজি) ৩ জন, সহকারী শিক্ষক ( বিএসসি)
৮ জন, সহকারী শিক্ষক (ধর্ম) ৪ জন, সহকারী শিক্ষক (কৃষি) ৩ জন, সহকারী শিক্ষক
(ক্রীড়া) ২ জন, সহকারী শিক্ষক (ড্রয়িং) ২ জন।
এছাড়া
৩য় শ্রেণির ২টি এবং ৪র্থ শ্রেণির ১টি পদ খালি আছে। এ বিদ্যালয়ে ভর্তির সময়
ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। শুধুমাত্র মেধাবী শিক্ষর্থীরাই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হয়ে এখানে লেখাপড়ার সুযোগ পায়। এ প্রতিষ্ঠানে ৫ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি
পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৩৮৩ জন, ৭ম-৩৪১ জন,
৮ম-৩৫৭ জন, ৯ম-৩৬৪জন এবং ১০ম শেণিতে ৩৬০ জনসহ মোট ১৪০০ জন ছাত্র লেখা পড়া করে। ।
প্রথমে একটি শিফ্ট চালু থাকলেও বর্তমানে দুটি শিফ্ট চালু রয়েছে। স্কুলের
ছাত্রদের সুবিধার্থে দুটি ছাত্রাবাস ও মুসলমান ছাত্রদের জন্য নামাজ ঘরের ব্যবস্থা
রয়েছে। এখানে চালু আছে বিএনসিসি, স্কাউটিং, এথলেটিক্স, ক্রিকেট, ফুটবল, বিতর্ক,
সাংস্কৃতিক, অনুষ্ঠান, বার্ষিক, সাময়িকী, গনিত, ভাষা প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান মেলা,
ও বার্ষিক শিক্ষা সফর ইত্যাদি।
স্কুলের
পূর্ব-দক্ষিণ অংশে জুড়ে রয়েছে বিশাল উদ্যান এবং পূর্ব উত্তর কোণে ভাষা শহীদদের
প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি শহীদ মিনার।
এ
বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ’৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহণ করে কয়েকজন শহীদ হয়েছে। এছাড়া অনেকেই বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে ফিরে
এসেছে।
এ
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা বর্তমানে দেশে ও বিদেশে স্ব স্ব পেশায় কৃতিত্বের
স্বাক্ষর রাখছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, জেএসসি ও এসএসসিতে শতভাগ জিপিএ-৫
লাভ করার লক্ষে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছেন।