ব্যবসায়ে হালাল-হারামের রূপরেখা



আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি করো। আর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমা : -১০) উপরোক্ত আয়াত দুইটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। কোনো কোনো ব্যবসা মৌলিকভাবে হারাম। কুকুর বিক্রি করা সাধারণভাবে হারাম। আবু মাসউদ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন কুকুরের মূল্য, ব্যাভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে।’ (বোখারি) পানি বিক্রির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জাবির বিন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) উদ্বৃত্ত পানি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) পশুকে পাল দেয়া বাবদ বিনিময় নিতে নিষেধ করেছেন। 
ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সূরা বাকারা : ২৭৫) অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, শুধু তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয়, তা বৈধ।’ (সূরা নিসা ২৯) উল্লিখিত আয়াতে (তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না) ‘অন্যায়ভাবেবলতে এখানে এমন সব পদ্ধতির কথা বোঝানো হয়েছে, যা সত্য ন্যায়নীতিবিরোধী এবং নৈতিক শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ। (পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য) বাক্যটি সংযুক্ত করে বলে দেয়া হয়েছে যে, যেসব ক্ষেত্রে ব্যবসার নামে সুদ, জুয়া, ধোঁকা-প্রতারণা ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পদ হস্তগত করা হয়, সেসব পন্থায় সম্পদ অর্জন বৈধ ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তা হারাম বাতিল পন্থা। তেমনি যদি স্বাভাবিক ব্যবসার ক্ষেত্রেও লেনদেনের মধ্যে উভয় পক্ষের আন্তরিক সন্তুষ্টি না থাকে, তবে সেরূপ ক্রয়-বিক্রয়ও বাতিল এবং হারাম। প্রতারণামূলক সব ধরনের ব্যবসা হারাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) নিষিদ্ধ করেছেন কেনাবেচায় পাথর নিক্ষেপ প্রথা আর প্রতারণামূলক যাবতীয় ব্যবসা। (তিরমিজি) 
খাদ্যদ্রব্য বিক্রির সময় ক্রেতার সামনে পরিমাপ করে দেয়া উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খাদ্য ক্রয় করবে, সে যেন মাপ না করা পর্যন্ত তা বিক্রয় না করে।’ 
জীবিকা লাভের অনেক উপায় রয়েছে। এর মধ্যে সততার সঙ্গে ব্যবসা করা একটি উত্তম উপায়। একবার নবী (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন প্রকারের জীবিকা উত্তম? উত্তরে তিনি বলেন, নিজ হাতের কামাই এবং সৎ ব্যবসায়। (বাজজার) বিক্রি করার পর কোনো মালে ত্রুটি লক্ষ করা গেলে বিক্রেতা তা ফেরত নেবেন। তাইবিক্রীত পণ্য ফেরত নেয়া হয় না ধরনের কোনো শর্ত দেয়া উচিত নয়। কোন পণ্যে কত লাভ করা যাবে এরূপ কোনো নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতা বা ভোক্তা যেন জুলুমের শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। শর্ত সাপেক্ষে পণ্য বিক্রি করা ঠিক নয়। আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ঘোষণা করেছেন সালাফ বিক্রয় একসঙ্গে জায়েজ নেই। একই সওদায় দুইটি শর্ত জায়েজ নয়। যাতে কোনো জিম্মাদারি নেই, তাতে কোনো (বৈধ) লাভ নেই। যে জায়গা থেকে মাল ক্রয় করা হলো ঠিক সেখানে বসেই তা বিক্রি করা বৈধ নয়। একবার এক সাহাবি তা করতে গেলে জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) তাকে বাধা দিয়ে বলেন, রাসুল (সা.) ক্রয় করার জায়গায় সওদা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তা ক্রেতা তার বাসায় নিয়ে না যায়। যা তোমার দখলে নেই, তা বিক্রয় বৈধ নয়। প্রতারণা করে বা কৌশল করে কিংবা মজুদদারি করে দাম বাড়ানো উচিত নয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নাজশ বা ধোঁকা দিয়ে দাম বাড়ানোর কর্মকে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। সূরা হুদ আল্লাহ বলেন, ‘...আল্লাহর উপাসনা করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আর মাপে ওজনে কম করো না।
ব্যবসা-বাণিজ্য পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে দয়ার্দ্র, নম্র সদ্ব্যবহারপূর্বক ন্যায্যমূল্য গ্রহণ করা অত্যন্ত নেক কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই মহানুভব মানুষের প্রতি দয়া করেন, যে ক্রয়-বিক্রয়ে এবং নিজের পাওনা আদায়ে নম্রতা সহনশীলতা প্রদর্শন করে।আল্লাহ তায়ালা মদ, মৃতপ্রাণী, রক্ত, প্রতিমা এবং শূকরের মাংস প্রভৃতি হারাম করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রতি মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা মায়েদা : ) 
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরগুলো শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছুই নয়। অতএব এগুলো থেকে বিরত থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা মায়েদা : ৯০) আল্লাহ তায়ালা যেসব দ্রব্য হারাম করেছেন, সেসব দ্রব্যের ব্যবসাও হারাম করেছেন। জাবির ইবনে আবুদল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে মক্কা বিজয়ের বছর এবং মক্কা থাকাবস্থায় বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসুল মদ, মৃতদেহ, শূকর প্রতিমা বেচাকেনাকে হারাম করেছেনমমিনুল ইসলাম মোল্লা

·        ইসলাম আপডেট: ০১:১৭:২৩ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০১৭


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.