হালাল পথে উপার্জনে দারিদ্র্যবিমোচন


হালাল পথে উপার্জনে দারিদ্র্যবিমোচন
হালাল পথে উপার্জনে দারিদ্র্যবিমোচন


মানুষ যখন অন্ন, বস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে না পারে তখন তা সমাজে দরিদ্র নামে পরিচিত হয়। জীবন ধারণের জন্য উপার্জনে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তিকে উপার্জন করতে হবে। অর্থ উপার্জন ছাড়া পৃথিবীতে বসবাস করা সম্ভব নয়। মুসলমানদের অলসভাবে বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই সালাত শেষে উপার্জনের জন্য বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে চাহিদা যত বেশি তার মধ্যে দারিদ্র্যের ব্যাপারে হতাশা তত বেশি। তবে সাহাবায়ে কেরাম বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন না। কোনো রকমে দিন কাটানো এবং আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা মোটেও ভোজনবিলাসী ছিলেন না। আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান দারিমি (রহ.) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে পরিবারের লোকদের কাছে খেজুর আছে তারা ক্ষুধার্ত হতে পারে না।’ (মুসলিম)। অর্থাৎ তারা কোনো রকমে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারলেই সন্তুষ্ট থাকতেন। বোখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, সুলায়মান ইবনে হারব (রহ.) মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আমি এমন অবস্থায় ছিলাম যখন রাসুল (সা.) এর মিম্বর ও আয়েশা (রা.) এর হুজরার মধ্যবর্তী স্থানে বেহুঁশ অবস্থায় পড়ে থাকতাম। আগন্তুক আসত এবং তার স্বীয় পা আমার গর্দানে রাখত। মনে হতো আমি যেন পাগল। অথচ আমার কিঞ্চিতও পাগলামি ছিল না। একমাত্র ক্ষুধার যন্ত্রণায় এমনটি হতো।’ ক্ষুধার পরিমাণ ও যন্ত্রণা কত বেশি হলে এরকম অবস্থা হতে পারে তা আমাদের ভেবে দেখা দরকার। এ অবস্থায়ও তারা সবসময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। অন্যদিকে আমাদের কেউ সামান্য দারিদ্র্যে পতিত হলে আমরা অনেকটা নিরাশ হয়ে পড়ি। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২৬.২০ শতাংশ। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১১.৯০ শতাংশ। আমাদের চেষ্টা ও আল্লাহ সুবহানা তায়ালার অনুগ্রহে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে সমৃদ্ধি আসতে পারে, আর এভাবেই দারিদ্র্য দূর হতে পারে। 
দারিদ্র্য মোচনের জন্য ব্যক্তি পর্যায়েই পরিশ্রম করতে হবে। আল্লাহ প্রদত্ত জমিন আমাদের আয়ের প্রধান উৎস। এখন যদিও অধিকাংশ লোক ব্যবসা ও শিল্পের ওপর নির্ভরশীল প্রাচীনকালে প্রায় সবাই ছিলেন কৃষিনির্ভর। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন। কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো।’ কেউ ক্ষুধার্ত হলে তাকে আহার দেয়া আমাদের কর্তব্য। একটি লোক নিজস্বভাবে আহারের ব্যবস্থা করতে অক্ষম হলেই সে আহার চায়। আবু মুসা শারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বন্দিকে মুক্ত করো, ক্ষুধার্তকে আহার দান করো এবং রোগীর সেবা করো। (বোখারি)। সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। এটি মানুষের হাতে নয়। কেউ যদি অতিরিক্ত অর্থ বৈধ পথে উপার্জন করেন তাহলে তাতে তার কোনো কৃতিত্ব নেই। আবার ব্যবসা বা অন্য কোনো পেশায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য কারও ওপর দোষ চাপানো যাবে না। কেউ সামান্য চেষ্টাতেই সফল হতে পারে, আবার কেউবা সারা দিন পরিশ্রম করেও দুই বেলা অন্ন
 জোগাতে পারে না। এসবই আল্লাহর ইচ্ছা। কারণ রিজিকের চাবি আল্লাহর হাতে। 
দানের মাধ্যমে কিছু কিছু লোকের দারিদ্র্য বিমোচন করা যায়। এক্ষত্রে তাকওয়াবান লোকেরাই বেশি হকদার। নবীজির আমলে ‘আসহাবে সুফফা’ নামে একটি দল ছিল তারা সব সময় নবীজির খেদমতে প্রস্তুত থাকত। তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো পেশা ছিল না। তাদের দানের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘বিশেষ করে এমন সব গরিব লোক সাহায্য লাভের অধিকারী, যারা আল্লাহর কাজে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থ উপার্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারে না এবং তাদের আত্ম মর্যাদাবোধ দেখে অজ্ঞ লোকেরা তাদের সচ্ছল মনে করে।
 তাদের সাহায্যার্থে তোমরা যা  কিছু অর্থ ব্যয় করবে তা আল্লাহর দৃষ্টির অগোচরে থাকবে না।’ (বাকারা : ২৭৩)।
ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী দারিদ্র্য বিমোচনের উপায় হচ্ছে
Ñ ১. তাকওয়া অবলম্বন করা ২. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ৩. তওবা করা ৪. আল্লাহর ওপর ভরসা করা ৫. যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত করা ৬. করজে হাসানা প্রদান করা ৭. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা ৮. দান করা ৯. আল্লাহর জন্য হিজরত করা ১১. হজ ও ওমরা করা ১২. দ্বীনি এলম শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা। অতি দরিদ্র মানুষকে পাপের পথে পরিচালিত করে। তাই নবী (সা.) আমাদের দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করতে বলেছেন। এ ব্যাপারে বোখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলতেন, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি অলসতা, অতিশয় বার্ধক্য, দারিদ্র্য ও কবরের আজাব  থেকে।’ কোনো গুপ্তধন প্রাপ্তি বা লটারিতে বিজয়ী হয়ে হঠাৎ করে ধনী হয়ে যাওয়ার বিধান ইসলামে বর্ণিত হয়নি। এছাড়া শরিয়তবিরোধী কোনো উপায়ে দারিদ্র্যবিমোচন করা যাবে না। তাকওয়ার পথে থেকেই দারিদ্র্য দূর করতে হবে। তাকওয়া সম্পর্কে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) একবার উবাই ইবনে কাব (রা.) কে বললেন, তাকওয়া সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। জবাবে তিনি বললেন, আপনি কি কখনও কণ্টকাকীর্ণ পথ দিয়ে চলেছেন? ওমর (রা.) বললেন, কাপড়চোপড় গুটিয়ে অত্যন্ত সাবধানে চলেছি। কাব (রা.) বললেন, ওটাই তো তাকওয়া। সুতরাং হারাম উপায়ে নয় কষ্ট হলেও হালাল পথে অর্থ উপার্জন করে দারিদ্র্য বিমোচন  করতে হবে। 




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.