শিক্ষাই শক্তিঃ বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষার প্রসার
![]() |
| শিক্ষাই শক্তিঃ বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষার প্রসার |
১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক দিবস । সরকারি হিসাবে প্রথম থেকে নবম শ্রেণীতে এবার মোট শিক্ষার্থী ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন। তাদের জন্য ছাপানো হচ্ছে সর্বমোট ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৪ কপি বই। মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করা হচ্ছে। বুধবার শেষখবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের সর্বত্র সব বিষয়ের বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।যদিও বই মুদ্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, বই মুদ্রণ কাজ শেষ। সব স্থানে বই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।এবার বিভিন্ন স্তরের মধ্যে প্রাথমিকে ১১ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৪, মাদ্রাসার ইবতেদায়ির এক কোটি ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার ৪২০ কপি, দাখিল ও ভোকেশনালের তিন কোটি আট লাখ ৬০ হাজার ৯৩৫ কপি, মাধ্যমিকের ১৪ কোটি ৮৫ লাখ ৫৫ হাজার ২৬২ কপি এবং এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের ২১ লাখ ১২ হাজার ১৫৫ কপি বই বিতরণ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন-”শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে শিক্ষাার্থীরা খালি হাতে আসবে আর নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক তৈরি ও বিতরণের সাথে জড়িত। একজন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্য এক্ষেত্রে মিলিতভাবে কাজ করেন। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ৪টি শাখা আছে। এগুলো হচ্ছে ঃ১. শিক্ষাক্রম ২. পাঠ্যপুস্তক উৎপাদন ও বিতরণ ৩. অর্থ ও প্রাথমিক শিক্ষা । এছাড়া শিক্ষাক্রম শাখায় রয়েছে- প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, কারিগরি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা , শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ণ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রধান কার্যাবলী হচ্ছেঃ প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শ্রেণির শিক্ষাক্রমও পাঠ্যসূচি প্রনয়ণ, পাঠ্যপুস্তকের পান্ডুলিপি প্রস্তুত , পাঠ্যপুস্তক শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসুচির কার্যকারিতা যাচাইকরন, এবং পাঠ্য পুস্তক প্রকাশ, বিতরণ ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা। সঠিক সময়ে চাহিদা অনুযায়ী বই ছাপানো এবং সরবরাহ করা পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্ব।একটি দেশের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও বর্তমানে বসবাসকারী মানুষের জীবনধারা পাঠক্রমে ফুটে উঠে। একজন ছাত্রের বয়স ও মেধার উপর ভিত্তি করে কোন শ্রেণিতে কী শিখবে তা নির্ধারণ করে পাঠক্রম। একটি সফল পাঠক্রমের উপর শিক্ষার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। বর্তমানে মাদ্রাসাগুলোর পাঠক্রম তৈরি করছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড , সরকারচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর পাঠক্রম নির্ধারণ করে জাতীয় শিক্ষাক্রমও পাঠক্রম বোর্ড (এনসিটিবি) আবার এনজিওচালিত স্কুলগুলোর পাঠক্রম তৈরি করে স্ব স্ব এনজিও , আর কিন্ডারগার্টেনগুলোর কোন একক পাঠক্রম নেই। কারণে/অকারণে আমাদের দেশে পাঠক্রমে পরিবর্তন আসে। আগে প্রথম শ্রেণিতে শব্দানুক্রমিক বাক্যের ব্যবহার ছিল। এখন তা পরিবর্তন করে বাক্যানুক্রমিক করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ সময় দেখা যায় সরকার পরিবর্তন হলেই বাংলা ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের কিছু পাতা পাল্টে যায়, বল্লেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাধ্যমিক শেণির ইতহাস বইয়েও কাঁচি চালানো হয়। পুরনোটা কেটে নতুন করে লেখা হয়। আবার আগের সরকার এলে আগেরটা রাখা হয়।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর পাঠ্য পুস্তক তৈরির উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ”পুর্ববঙ্গ স্কুল টেক্ট কমিটি” গঠিত হয়। ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট বিশাল কমিটির প্রধান ছিলেন জনশিক্ষা পরিচালক। তাদের কাজ ছিল ১ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সকল পাঠ্য পুস্তকের অনুমোদন দেয়া। কিন্তু এ কমিটি ভাল ভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়নি। সময়ের প্রয়েজনে ১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাঠ্যপুস্তক আইন পাশ করা হয়। সে আইন অনুযায়ী স্কুল টেক্টবুক বোর্ড” নামে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। ১৯৫৪ সালে ”পূর্ববঙ্গ স্কুল টেক্ট বুক কমিটি”গঠনের পর পরর্বীতে তার রুপরেখা পুনর্বিন্যাস করা হয়। বিশেষ করে ১৯৫৬, ১৯৬১, ১৯৬৩ সালে এ কমিটিকে পুনর্গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রধান কাজ ছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শেণির শিক্ষার্থীদের সকল বিষয়ের বই প্রস্তুত ও বিতরণ। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত স্কুল পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির সকল বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক সংশোধন , পরিমার্জন, ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের দায়িত্ত দেয়া হয়। ১৯৮১ সালে থেকে প্রতি বছর সারা দেশে চাহিদা অনুযায়ী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু হয়। জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনিসেফের সহায়তায় এটি এখনও পরিচালিত হচ্ছে।
পাঠ্যপুস্তক যেমন সময়মত ছাপানো দরকার তেমনি দেশীয় প্রকাশকদের ও সুযোগ দেয়া উচিত।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা 13
02 2020
:
