100% in the context of ADP implementation শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে

 
চলতি অর্থবছরে এডিপির মোট আকার ছিল ৮৬ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২৮ শতাংশ। এডিপি বরাদ্দের মধ্য থেকে প্রথম ছয় মাসে ৫৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচ করেছে ২৩ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ থেকে ২৪ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে এ ঋণসহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতার কারণে ৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর ফলে সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
মেট্রোরেলের কাজ শুরু করতে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ বাবদ ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু বছরের ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তারা পুরোপুরি অর্থ খরচ করতে পারবে না। খরচ করতে না পারার আশঙ্কায় মেট্রোরেল থেকে ১৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে মন্ত্রণালয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, পদ্মা সেতুর কাজের জন্য এডিপিতে ভারতের অনুদানসহ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও আন্তর্জাতিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেতুর দরপত্রে অংশগ্রহণ করছে না। তাই সেতুর কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত চলে যাবে। ইআরডি সূত্রে জানা যায়, মূল এডিপি থেকে যে ৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা ফেরত গেছে, তাতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, বিদ্যুত্ বিভাগ, পরিবহন ও শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাত থেকে সবচেয়ে বেশি কাটছাঁট করা হয়।
কিছু কিছু খাত থেকে এডিপির বরাদ্দ কেটে অন্যান্য খাতে তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিল্প, যোগাযোগ, কৃষিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পানিসম্পদ খাতে আরো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে ৫ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে এডিপির বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আলোচনা করেন। জানা গেছে, সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ সবচেয়ে বেশি ফেরত গেছে পরিবহন খাত থেকে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কিছু সমস্যার কথা চিহ্নিত করা হয়েছে এরই মধ্যে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, সময়ভিত্তিক বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা না করা, নির্মাণ ক্ষেত্রে রেট শিডিউলের বারবার পরিবর্তন, স্থাপনার অসম্পূর্ণ ডিজাইন প্রণয়ন, ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিলম্ব, যোগ্য প্রকল্প পরিচালক, নিয়োগ না দেয়া, ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালকের পরিবর্তন, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে অর্থ পেতে সমস্যা অন্যতম। প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় সমস্যা হলো ভূমি অধিগ্রহণ। অধিগ্রহণ করার পর কাজ শুরু করতে গেলেই শোনা যায় সেখানে মাজার বা কবর ছিল। তই প্রকল্প শুরু করার আগেই তা ভেবে দেখতে হবে। সম্পদপ্রাপ্তি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতার বিষয়গুলো বিবেচনা না করেই অনেক সময় প্রতি বছর এডিপিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অপর্যাপ্ত বরাদ্দের কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মেয়াদকাল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রণালয়ে। আর্থিক অগ্রগতির ভিত্তিতে ৫৫টি মন্ত্রণালয়কে চারটি ছকে ভাগ করা হয় বৈঠকে। চারটি আলাদা ছকের মাধ্যমে ব্যাখ্যাসহ অগ্রগতির চিত্র সভায় উপস্থাপন করা হয়। প্রথম ছকে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে, যার এডিপি অগ্রগতি ২০ শতাংশের উপরে। দ্বিতীয় ছকে রয়েছে ১৩টি মন্ত্রণালয়, যার এডিপি বাস্তবায়নের হার ১৫-২০ শতাংশ। তৃতীয় ছকে রয়েছে তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এখানে অগ্রগতি ১৫ শতাংশ এবং চতুর্থ ছকে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অগ্রগতি ১০ শতাংশের নিচে। ডিসেম্বর পর্যন্ত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এডিপিভুক্ত ১৫টি প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতির হার ৩৫ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হচ্ছে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি এবং অপর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের হার খুবই কম। কিন্তু সেই উদ্যোগ বাস্তবে দেখা যায় না, এবার বরং অবনতি হয়েছে। সাধারণত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দরপত্র আহ্বান, ঠিকাদার চূড়ান্ত করা, কার্যাদেশ দেয়া এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এ সময়ে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় পূর্তকাজে অগ্রগতি হয় না। তাই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এডিপির বাস্তবায়ন খুব বেশি হয় না। ৪৩ বছরের মধ্যে মাত্র চারবার এডিপি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে।
এডিপি বরাদ্দের শেষ চার মাসে তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা হয়। বিশেষ করে সংশোধিত এডিপির যে সময়টুকু হাতে বরাদ্দ থাকে, সে সময় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকরা কাজ করার ক্ষেত্রে যেন একটু নড়েচড়ে বসেন। প্রতি বছরই নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বছরের প্রথম থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে মনোযোগী হবে সরকার, কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না।

লেখক: কলেজ শিক্ষকমমিনুল ইসলাম মোল্লা ০১/০৫/২০১৫



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.