বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও বর্তমানে আমাদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য বিপুল সংখ্যক জনগণের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় হাইব্রিড ধান ও অন্যান্য ফসলের দিকে কৃষকগণ ঝুঁকছে। তবে বর্তমান খাদ্য সমস্যা সমাধানে ভুট্টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। তাই শ্লোগান উঠেছে ‘ভুট্টা চাষে দুঃখ নাশে’।
বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। কয়েকবছর ধরে প্রদর্শনী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ কৃষকদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন তারা নিজেদের উদ্যোগেই অন্য ফসল চাষ না করে অর্থকরী খাদ্যশস্য হিসেবে চাষ করছে ভুট্টা।
খাদ্যশস্য হিসেবে ভুট্টার চাহিদা বেশি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন– মেক্সিকো, চিলি, মধ্য আমেরিকা এবং পূর্ব ও দক্ষিণ আমেরিকার লোকদের প্রধান খাদ্য ভুট্টা। আমাদের দেশে ভাতের পরই ভুট্টা স্থান করে নিচ্ছে। বর্তমানে জনসাধারণ ভুট্টার আটা সরাসরি অথবা গমের আটার সাথে মিশিয়ে খাচ্ছে। এছাড়া ভুট্টার মোচা আগুনে পুড়িয়ে বা লবণ পানিতে সিদ্ধ করে কেউ কেউ খাচ্ছেন।
তবে গমের আটার সাথে মিশিয়ে খেলেই ভালো পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। দু’ভাগ ভুট্টার আটার সাথে এক ভাগ গমের আটা মিশিয়ে তাতে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে গরম পানিতে মিশিয়ে কাই বা খামির তৈরি করে গমের রুটির মতো রুটি তৈরি করা যায়। তেল বা ঘি দিয়ে দু’ভাগে ভ্ট্টুার আটা এবং এক ভাগ গমের ময়দা একত্রে মিশিয়ে উন্নত মানের পরোটা তৈরি করা যায়।
এছাড়া ভুট্টার খই জনপ্রিয় খাবার। ভুট্টাগুলো ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে উত্তপ্ত কড়াইয়ে ভেজে সামান্য খাবার তেল মিশিয়ে এই খই তৈরি করা যায়। খৈ থেকে মোয়াও বানানো যায়। সুস্বাদু মোয়া তৈরি করতে হলে সে খৈ-এর সাথে সামান্য আখের গুড় ও পানি মিশিয়ে আলাদা পাত্রে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে মোয়া বানানো যায়। এছাড়া খইগুলো গুড়ো করে নাড়– এবং ঢেঁকিতে আধা ভাঙা করে প্রয়োজন মত দুধ, চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে চালের মত একই নিয়মে ক্ষীর ও পায়েশ রান্না করে মেহমানদারী করা যায়।
বাংলাদেশে আবাদী জমির পরিমাণ কম। তাই একজন কৃষক একটি ফসল চাষ করলে অন্যটি চাষ করতে পারেন না। এজন্য অনেকে ভুট্টা চাষ করতে উৎসাহী নয়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ লাভজনক।
ভুট্টায় ভাতের চেয়ে অধিকতর প্রোটিন ও ভিটামিন থাকে। রবি ও খারিফ উভয় মৌসুমে ভুট্টা চাষ করা যায়। পানি ভাসে না এরূপ জমিতে ভুট্টার ফলন বেশি হয়। এ সময় প্যাসিফিক-১১ বর্ণালী অথবা মোহর জাতের ভুট্টার ফসল বেশি পাওয়া যায়। এ ধরনের ভুট্টার ফলন প্রতি একরে প্রায় ২টন। এগুলো প্রায় ৪ মাসে উৎপাদন হয়। ১-৩০ অক্টোবরের মাঝে বীজ বপণ করলে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফলন পাওয়া যায়।
এছাড়া খারাপ মৌসুমেও চাষ করা যায়। ১৫ ফেব্র“য়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বীজ বপণ করলে জুন মাসে ফসল ঘরে উঠবে। এছাড়া খরিপ-২ জুলাই-আগস্ট মাসে বপণ করলে ফসল কাটা যাবে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। এ সময় শুভ্রা, সোয়াস-২ অথবা প্যাসিফিক-১১ জাতের ভুট্টা চাষ করা যেতে পারে।
ভুট্টা চাষের জন্য মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য গোবর সার, রুটোম, ইউরিয়া, টিএসপি, এসওপি, জিপসাম, লিবারেল দস্তা, লিবারেল বোরণ দিতে হয। ভুট্টার জমিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে কাটুই পোকা, মাজরা পোকার প্রকোপ দেখা যায়।
ভুট্টা ক্ষেতে সেচ দিলে মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা বীড়া মাটির উপরে উঠে আসে এবং পাখি খায়। বিষটোপ হিসাবে মর্টার ৪৮ ইঞ্চি গম বা ধানের কুড়ার সঙ্গে মিশিয়ে সন্ধ্যাবেলা আক্রান্ত ক্ষেতে চারা গাছের গোড়ায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে কাটুই পোকা মারা যায়। আর মাজরা পোকা থেকে বাঁচার জন্য ফিলিটাপ ৫০ এসপি (কারটাপ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ গ্রাম করে মিশিয়ে ¯েপ্র করলে মাজরা পোকা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আমাদের দেশে খাদ্য হিসেবে ভুট্টার চাহিদা কম। তবে পোল্ট্রিতে চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। অধিক পরিমাণে ভুট্টা চাষ করা গেলে আমাদের অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে বিদেশ থেকে মুরগীর খাদ্য আনতে হবে না।
এছাড়া জ্বালানী হিসেবে ভুট্টার কোনো তুলনা হয় না। একবার জমি চাষ করা গেলে ১০০ মণ জ্বালানী (এক একরে) পাওয়া যায়। ফলে কৃষকদের জ্বালানী কিনতে হয় না।
বর্তমানে চলমান খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় ভুট্টা চাষ একটি আলোকিত পদক্ষেপ। ধানের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করে কৃষক তার অভাব দূর করতে পারে। অন্যদিকে জাতীয় খাদ্য সমস্যার সমাধানেও এটি সহায়ক।মমিনুল ইসলাম মোল্লা।।

বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। কয়েকবছর ধরে প্রদর্শনী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ কৃষকদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন তারা নিজেদের উদ্যোগেই অন্য ফসল চাষ না করে অর্থকরী খাদ্যশস্য হিসেবে চাষ করছে ভুট্টা।
খাদ্যশস্য হিসেবে ভুট্টার চাহিদা বেশি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন– মেক্সিকো, চিলি, মধ্য আমেরিকা এবং পূর্ব ও দক্ষিণ আমেরিকার লোকদের প্রধান খাদ্য ভুট্টা। আমাদের দেশে ভাতের পরই ভুট্টা স্থান করে নিচ্ছে। বর্তমানে জনসাধারণ ভুট্টার আটা সরাসরি অথবা গমের আটার সাথে মিশিয়ে খাচ্ছে। এছাড়া ভুট্টার মোচা আগুনে পুড়িয়ে বা লবণ পানিতে সিদ্ধ করে কেউ কেউ খাচ্ছেন।
তবে গমের আটার সাথে মিশিয়ে খেলেই ভালো পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। দু’ভাগ ভুট্টার আটার সাথে এক ভাগ গমের আটা মিশিয়ে তাতে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে গরম পানিতে মিশিয়ে কাই বা খামির তৈরি করে গমের রুটির মতো রুটি তৈরি করা যায়। তেল বা ঘি দিয়ে দু’ভাগে ভ্ট্টুার আটা এবং এক ভাগ গমের ময়দা একত্রে মিশিয়ে উন্নত মানের পরোটা তৈরি করা যায়।
এছাড়া ভুট্টার খই জনপ্রিয় খাবার। ভুট্টাগুলো ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে উত্তপ্ত কড়াইয়ে ভেজে সামান্য খাবার তেল মিশিয়ে এই খই তৈরি করা যায়। খৈ থেকে মোয়াও বানানো যায়। সুস্বাদু মোয়া তৈরি করতে হলে সে খৈ-এর সাথে সামান্য আখের গুড় ও পানি মিশিয়ে আলাদা পাত্রে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে মোয়া বানানো যায়। এছাড়া খইগুলো গুড়ো করে নাড়– এবং ঢেঁকিতে আধা ভাঙা করে প্রয়োজন মত দুধ, চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে চালের মত একই নিয়মে ক্ষীর ও পায়েশ রান্না করে মেহমানদারী করা যায়।
বাংলাদেশে আবাদী জমির পরিমাণ কম। তাই একজন কৃষক একটি ফসল চাষ করলে অন্যটি চাষ করতে পারেন না। এজন্য অনেকে ভুট্টা চাষ করতে উৎসাহী নয়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ লাভজনক।
ভুট্টায় ভাতের চেয়ে অধিকতর প্রোটিন ও ভিটামিন থাকে। রবি ও খারিফ উভয় মৌসুমে ভুট্টা চাষ করা যায়। পানি ভাসে না এরূপ জমিতে ভুট্টার ফলন বেশি হয়। এ সময় প্যাসিফিক-১১ বর্ণালী অথবা মোহর জাতের ভুট্টার ফসল বেশি পাওয়া যায়। এ ধরনের ভুট্টার ফলন প্রতি একরে প্রায় ২টন। এগুলো প্রায় ৪ মাসে উৎপাদন হয়। ১-৩০ অক্টোবরের মাঝে বীজ বপণ করলে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফলন পাওয়া যায়।
এছাড়া খারাপ মৌসুমেও চাষ করা যায়। ১৫ ফেব্র“য়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বীজ বপণ করলে জুন মাসে ফসল ঘরে উঠবে। এছাড়া খরিপ-২ জুলাই-আগস্ট মাসে বপণ করলে ফসল কাটা যাবে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। এ সময় শুভ্রা, সোয়াস-২ অথবা প্যাসিফিক-১১ জাতের ভুট্টা চাষ করা যেতে পারে।
ভুট্টা চাষের জন্য মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য গোবর সার, রুটোম, ইউরিয়া, টিএসপি, এসওপি, জিপসাম, লিবারেল দস্তা, লিবারেল বোরণ দিতে হয। ভুট্টার জমিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে কাটুই পোকা, মাজরা পোকার প্রকোপ দেখা যায়।
ভুট্টা ক্ষেতে সেচ দিলে মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা বীড়া মাটির উপরে উঠে আসে এবং পাখি খায়। বিষটোপ হিসাবে মর্টার ৪৮ ইঞ্চি গম বা ধানের কুড়ার সঙ্গে মিশিয়ে সন্ধ্যাবেলা আক্রান্ত ক্ষেতে চারা গাছের গোড়ায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে কাটুই পোকা মারা যায়। আর মাজরা পোকা থেকে বাঁচার জন্য ফিলিটাপ ৫০ এসপি (কারটাপ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ গ্রাম করে মিশিয়ে ¯েপ্র করলে মাজরা পোকা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আমাদের দেশে খাদ্য হিসেবে ভুট্টার চাহিদা কম। তবে পোল্ট্রিতে চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। অধিক পরিমাণে ভুট্টা চাষ করা গেলে আমাদের অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে বিদেশ থেকে মুরগীর খাদ্য আনতে হবে না।
এছাড়া জ্বালানী হিসেবে ভুট্টার কোনো তুলনা হয় না। একবার জমি চাষ করা গেলে ১০০ মণ জ্বালানী (এক একরে) পাওয়া যায়। ফলে কৃষকদের জ্বালানী কিনতে হয় না।
বর্তমানে চলমান খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় ভুট্টা চাষ একটি আলোকিত পদক্ষেপ। ধানের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করে কৃষক তার অভাব দূর করতে পারে। অন্যদিকে জাতীয় খাদ্য সমস্যার সমাধানেও এটি সহায়ক।মমিনুল ইসলাম মোল্লা।।