সঞ্চয়পত্রের অর্থ উৎপাদনমূলক খাতে বিনিয়োগ করা আবশ্যক

সঞ্চয়পত্রের অর্থ উৎপাদনমূলক খাতে বিনিয়োগ করা আবশ্যক

মমিনুল ইসলাম মোল্লা

জনসাধারণের নিকট থেকে সরকার ঋণ নিতে পারে। এর উত্তম মাধ্যম হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষদের বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য স্থান হলো সঞ্চয়পত্র। এতে রয়েছে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, মহিলা, বিধবা মহিলা, মুক্তিযোদ্ধা,
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবি ইত্যাদি শ্রেণির  লোক। তারা বিপদের দিনে কারও কাছে হাত পাততে পারে না। তাই সঞ্চয়পত্রকে অবলম্বন হিসেবে মনে করে। বাংলাদেশ ব্যাাংকের যে কোন শাখা , বাংলাদেশে পোস্ট অফিস এবং সিডিউল ব্যাংক, থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। এজন্য ন্যশনাল আইডি কার্ড এর ফটোকপি ও ২ কপি ছবি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। নির্দেষ্ট আয়ে সংসার চালানো আনোয়ারা বলেন, স্বামীর চাকুরির বেতন দিয়ে বাসা-ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ চালাই। সঞ্চয়পত্রের লাভ দিয়ে ছেলে মেয়ের পড়া লেখার করচ হয়ে যায়। মূল টাকাটাতো থেকেই গেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি দিন চার-পাঁচশ নারী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলে থাকেন। এক দেড়শ”র মতো নতুন সঞ্চয়পত্র কেনেন।  বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়১৩-১৪ অর্থবছরের সরকার ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে সুদ ব্যয় করেছে ১০৬২ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি সুদব্যায় করেছে পরিবার সঞ্চয়পত্রে। এখাতে সুদব্যায়ের পরিমান ২৪৫৮ কোটি টাকা। ৩ মাস অন্তর সুদবাহী সঞ্চয়পত্রে এ সময়ে সুদ ব্যায় হয়েছে মাত্র ১৩৫১ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সুদ ব্যায় হয়েছে ৭৭৯৫ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে নিট বিক্রি ১১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থ বছরে ১ হাজার ৮০২ কোটি টাকা, ২০১১ -১২ অর্থ বছরে ছিল ৪৭৮ কোটি টাকা । ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের প্রথম ৭ মাসে ( জুলাই- জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১৫ হাজার ৭৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ৬শ ৮২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেশি। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়াতে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে থেরক সুদের হার বাড়ায় সরকার। পরিবার, পেনশনার, ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয় পত্র , ডাকঘর ও ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১ শতাংশ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। 

সঞ্চয়পত্র  কিনলে প্রতি মাসে লাখ প্রতি ১১২১ টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংকগুলো ১০০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে দেয়া হয় ৮০০টাকা (একাউন্ট পরিচালনায় খরচ ট্যাক্স ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে এ টাকা দেয়া হয়। সুদ আসল পরিশোধের পর নিট বিক্রির টাকা সরকারের কোষাগারে থেকে যায়। সেখান থেকে সরকার তার প্রযোজনীয় ব্যায় মেটায়। মার্চ ১৪ থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ার কারনে এখানে বিনিয়োগ বাড়ছে। বর্তমান অর্থ বছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমান লক্ষনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।বর্তমান অর্থ বছরের জুলাই থেকে আগস্ট মাসে আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমান বড়েছে ৬২ শতাংশ ওনিট বিনিয়োগ বেড়েছে ২২৮শতাংশের বেশি। সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,চলতি অর্থ বছরের গত দুই মাসে (জুলাই –আগস্ট ) ৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আর আগের অর্থ বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার। র্অ্থাৎ বিক্রি বেড়েছে দুই হাজার ৪০৩ কোটি টাকার। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকার।বিক্রি বেশি হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় দ্বিগুন বাড়িয়ে ৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়।এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বাজটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।  
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ব্যাংকে সঞ্চয় করেন। এখানে বিভিন্ন ধরণের ব্যাংকে মেয়াদি আমানত বিভিন্ন রকমের। ব্যংকের হিসাব যে কোন সময় ভাঙ্গানো যায়। এদের তারল্য খুব বেশি। অসময়ে ভাঙ্গালে সঞ্চয়ী হিসাবের সুদ পাওয়া যায়। যেখানে যত খুশি তত টাকা আমানত রাখা যায়। হাজার হাজার ব্যাংক শাখা আমানত রাখার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের শ্রেণিবিন্যস্ত করা হয় না। তাই ব্যাংকে আমানতের সাথে সঞ্চয়প্রতর তুলনা করা ঠিক নয়। তবে ব্যাংকে তুলনামূলকবাবে সুদেও হার কম। ব্যাংকগুলোতে প্রচুর নগদ অর্থ ( তারল্য) উদ্বৃত্ত থাকায় আমানতে সুদেও হার কমানো হচ্ছে। এফডিআর এর সুদেও হার ও কমানো হচ্ছে। ব্রংকেলাব কম হয় তাই সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। উদাহরণস্বরূপ ব্যাংকে ফিক্ড ডিপোজিট রাখলে ৯ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। আর পরিবার সঞ্চয় পত্রে পাওয়া যায় ১৩  দশমিক ১৯ শতাংশ। বর্তমানে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে সুদেও হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চংপত্রে সুদ হার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশবিদ্যমান রয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ঝুঁকিহীন। সমাজে সবাই ঝুঁকি নিতে সক্ষম হয় না। নির্ধারিত আয়ের লোক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারি যারা অবসরের ভাতা সম্পূর্ণ সারেন্ডার করেছেন, বেসরকারি চাকুরি কওে যারা অবসওে রয়েছেন, তাদেও প্রধান বরসার স্থল এই সঞ্চয়পত্র। এছাড়া অসহায় মহিলা এবং সমাজের অন্যান্য কর্মহীন অংশ যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কওে সংসার “ খরচ মেটান। তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ ইপদেষ্ট এবি মির্জ্জা অঅজিজুল ইসলাম এবং অর্থনীতির গবেষক জুবায়েদ বখতের মতে, বিনিয়োগে ঝঁকি না থাকায় এবং বেশি লাভের আশায় সহজেই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন। এত ব্যাংক থেকে সরকারের ্ঋণ নেয়ার পরিমান ও কমছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণও ডঃ সালেহ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়লে বাজেট ঘাটতি পূরণে কিছুটা হলেও ব্যাংক নির্ভরতা কমে যায়। তবে অন্যদিকে এক্ষেত্রে ঝঁকি তাকে। সঞ্চয়পত্রে বিনেয়োগের টাকা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের কথা বলেন তিনি। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে গেলে সরকারকে বেশি পরিমানে সুদ পরিশাধ করতে হয়। এসব প্রচার ও অপপ্রচারের কথা শুনে সরক রের কেউ কেউ তখন লেগে যায় সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে নিরুৎসাহিত করতে। সুদেও হার কমানো, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের উর্ধসীমা কাটছাট করা। সঞ্চয়প্রত্রর সংখ্যা হ্রাস ইত্যাদি হয়ে ইঠে সরকারের কর্যক্রম ও পদক্ষেপ। সুদেও হার কমলে সাধারণ সঞ্চয়কারীরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মহল ভাল চোখে দেখেন না। কেউ কেউ এত সুদেও হার কমিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে চান। পরিকল্পনা মন্ত্রী অঅহম মুস্তফা কামাল এনসিসি ব্যাংকের প্রধান ববন ও লোগো উদ্বোধনকালে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশেই সঞ্চয়পতে“ও এমন সিস্টেম নেই।আমাদেও দেশে কিভাবে সঞ্চয়পত“ কিভাবে এল তা আমার জানা নেই ।সঞ্চয়পত“ ও বালিশের নিচে টাকা রাখা একই কথা। তিনি আরও বলেন সঞ্চয়পতে“ সুদেও হার কমবে ।সঞয়পতে“ সুদেও হার কমানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত“ীরও নির্দেশ দিয়েছেন।” সঞ্চয়পত্র আর্থিক খাতে ভারসাম্য রক্ষার উপাদান হিসেবে কাজ করে। যার কারণে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা হ্রাস পায়।সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হওয়ায় সরকারকে ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত অর্থ ঋণ হিসেবে নিতে হয় নি। পুরো অর্থ বছওে মাত্র সাত হাজার ৯৫১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। অথচ এর আগের অর্থ বছওে ১২-১৩ ঋণ নিয়েছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। ১১-১২ অর্থ বছওে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা।  বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্তায়নের অনিম্চয়তার অনেকটাই ভরসার যায়গা সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্র বিক্রির কারেণে সরকারের ঋণের পরিমান বাড়ছে। এ ঋণের টাকা সরকারকে সঠিক যায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে। তা না হলে এ ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এ সঞ্চয়পত্রের উপর নির্দিষ্ট হাওে সুদ দিতে হয়। লেখকঃ,গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের ক্যাম্পেনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক,সহকারী সম্পাদক,দৃষ্টান্ত ডট কম কুমিল্লা।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.