দেবীদ্বারে সাংবাদিক নির্যাতন দিবস আজ

দেবীদ্বারে সাংবাদিক নির্যাতন দিবস আজ

      আজ ‘১৩এপ্রিল দেবীদ্বারে সাংবাদিক নির্যাতন দিবস’। ২০০৬ সালের এই দিনে মূন্সী বাহিনী ও তার বেতন ভোগী সাংবাদিকরা দেবীদ্বার প্রেসক্লাব কর্তৃক আয়োজিত ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংবাদিক নির্যাতন বিরোধী সেমিনার’এ হামলা চালায়। 

       ২০০৬ সালের ১৩এপ্রিল দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে এবং বিসিডিজেসি’র সহযোগীতায় দেবীদ্বার প্রেসক্লাব চত্তরে আয়োজিত “জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংবাদিক নির্যাতন বিরোধী সেমিনার” একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডার পন্ডকরে দিয়েছিল। কুমিল্লা-৪ নির্বাচনী (দেবীদ্বার) এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনীয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীর নির্দেশে ওই হামলাচালানো হয়। সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সেমিনারের মাইক, মাইক্রোফোন, চেয়ার টেবিল ভাংচুর এবং লুটপাটেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, তারা সেমিনারে আমন্ত্রীত অতিথি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসস)’র প্রধান সম্পাদক গাজিউল হাসান খান, দৈনিক আমাদের সয়ম’র সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বিডি নিউজ ও সাপ্তাহিক‘৭১’র সম্পাদক রাশেদ চৌধূরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক’র সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার সৈয়দ আখতার ইউছুফ, ইকোনিমিকস রিপোর্টার্স ফোরাম’র সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের নগর সম্পাদক জাকারিয়া কাজল, ঢাকাস্থ বৃহত্তর কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নয়াদিগন্তের শিফট ইনচার্জ মোঃ একরামুল্লাহিল কাফি, ফোরামের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদারসহ ৭সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা এবং শতাধিক সাংবাদিকসহ উপস্থিত সূধীদের লাঞ্ছিত করে ও হুমকীর মুখে সভাস্থল থেকে বের করে দেয়। দেবীদ্বারের সাংবাদিকরা ২০০৭সাল থেকে ১৩এপ্রিলকে ‘দেবীদ্বর সাংবাদিক নির্যাতন দিবস’ হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। এ উপলক্ষে দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাব’র উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিট’র গোল টেবিল কক্ষে আজ (শুক্রববার) সকাল ১০টায় ‘সাংবাদিক হত্যার-নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকা ও গণমাধ্যম কর্মীদের ঐক্য’ শীর্ষক সেমিনার’র আয়োজন করা হয়েছে।

        সম্মানীত ==উপস্থিত ==, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে হারে সাংবাদিকরা হত্যা-নির্যাতন, হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। বাংলাদেশও তার অংশিদারিত্বে শীর্ষ দেশ গুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের অভয়ারণ্যখ্যাত দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ন্যায় দেবীদ্বার’র জনপদও গড়ে উঠে। এখানে সাংবাদিক হত্যা না হলেও এখানকার সাংাদিকরা বরাবরই অবহেলিত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, হামলা-মামলায় জর্জরিত। কখনো রাজনৈতিক রোষানলে, কখনো সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ-জবরদখলকারী, বখাটে- মাস্তান- মাদকচক্র ও নানা অঘটনের হোতা- ‘অপশক্তি’র রোষানলে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সারা দেশের ন্যায় এ অঞ্চলের সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০০৪ইং থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সত্য প্রকাশে এবং নির্যাতিত সাংবাদিকদের পক্ষে কথা বলার অপরাধে সাবেক বিএনপি দলীয় এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আসান মূন্সী ও তার সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত ৪৩টিস ঘটনায় স্থানীয়, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের প্রায় শতাধিক সাংবাদিক, সাংবাদিক নেতা ও সম্পাদক হামলা-মামলা-নির্যাতন, হুমকী- লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় দেশব্যাপীই নয় আন্তর্জাতিক ভাবে আলোচনা ও প্রতিবাদের ঝর উঠেছিল। 
        ২০০১সালের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা-মামলা-নির্যাতন, চাঁদাবাজী-লুটপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, অনিয়ম-দূর্নীতি, মন্দির-মূর্তী ভাংচুরসহ মানবতা বিরোধী অনৈতিক কর্মকান্ডের সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ পত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার কারনেই সাংবাদিকরা ছিলেন কুমিল্লা-৪(দেবীদ্বার) নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনীয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীর চক্ষুশূল। বর্তমান সরকারের আমলেও সাংবাদিকরা টেন্ডারবাজী, স্বার্থদ্বন্দে সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার ছবি তোলা এবং সংবাদ প্রকাশের অপরাধে সাংবাদিকরা লাঞ্ছিত ও হুমকীর শিকার হচ্ছেন। সাংবাদিকদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক ভাবে যেমন কোন সংগঠন তৈরী হয়নি তেমনই আমাদের দেশেও তেমন কোন সংগঠন তৈরী হয়নি।          
           বাংলাদেশে এখন আর কারোরই সাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, সড়ক দূর্ঘটনা, রাজনৈতিক হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে সংঘটিত হত্যাকান্ডে নিহত সাধারন মানুষের লাশের মিছিলে সংখ্যালঘু খ্যাত সাংবাদিক পরিবারের সদস্য হত্যার ঘটনাও বেড়ে চলেছে। বিশ্বের যেসব দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়না সে সব দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এর মূল কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং রাজনৈতিক আধীপত্য রক্ষা। দলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডার, মাস্তান, ভাড়াটে কিলার, ঠিকাদার, কালোবাজারী, অসাধু ব্যবসায়ী, দূর্নীতিবাজদের রক্ষা, সুবিধাভোগী পুলিশ বাহিনীর দূর্বল তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়ায় দির্ঘসূত্রীতা অন্যতম কারন। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গত দেড়যুগে ৩৯সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হলেও একটি ঘটনারও সঠিক বিচার হয়নি। অনেক হত্যাকান্ডের বিচারকার্য এমনকি তদন্তকাজ, চার্জশীট প্রদান কার্যক্রম ঝুলে আছে। কিছু মামলা বছরের পর বছর তদন্তের নামে কালক্ষেপন করে দীর্ঘ সময় নিয়েও তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি পুলিশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, মূল অপরাধীদের পাশ কাটিয়ে চার্জশীট প্রদান, দূর্বল অভিযোগ উত্থাপন এবং চার্জশীট ভূক্ত আসামীদের গ্রেফতার না করার অভিযোগ আছে। এমনকি প্রভাবশালী খুনিদের পক্ষ নিয়ে নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের ভয় ভীতি প্রদর্শনেরও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নি¤œ আদালতের দীর্ঘসূত্রীতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
         আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার বাহিরে থাকলে সাংবাদিকদের জন্য মায়াকান্নায় উৎলে উঠেন, আর ক্ষমতায় গেলে জনস্বার্থে সত্য কথা বলার অপরাধে সাংবাদিকরা হয়ে যান প্রতিপক্ষ, ক্ষমতাসীনদের চরম শত্রæ। আমাদের দেশের আইনশৃংখলা ও বিচার ব্যবস্থা বরাবরই প্রভাবশালী, ধনিক গোষ্ঠী, অসাধু ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিক, মাসুলবাহিনী, সন্ত্রাসী, কালোবাজারীদের পক্ষে। কারন তাদের শক্তি রাষ্ট্রযন্ত্রের চেয়েও অধিক, তাদের অর্থ আছে, তাদের উপরে হাত আছে, তাদের সন্ত্রাসী ও কিলার বাহিনী আছে। সাধারন মানুষের ওসব নেই, তাই তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া সাভাবিক।    
       সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ, জাতির বিবেক, গণতন্ত্রের চোখ। জাতির দূর্দিনে যারা দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেন। জীবন বাজি রেখে সমাজের অনিয়ম, দূর্নীতি, সন্ত্রাসসহ মানব কল্যাণ বিরোধী কর্মকান্ড, উচ্ছাস অগ্রগতি ,সমস্যা সম্ভাবনা তুলে ধরেন, জাতির দূর্দিনে রাষ্ট্রকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেন অথচ তারাই রাষ্ট্র এবং সরকারের কাছে নিগৃহীত অবহেলিত, দূর্নীতিবাজ ও গণ-শত্রæদের চক্ষুশূল। 
       সমাজ প্রশাসন রাষ্ট্রের নিকট ন্যায় বিচার বঞ্চিত অসহায় নির্যাতিত জণগোষ্ঠীর শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দ্বারস্থ হন। আর সাংবাদিকরা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন সুবিধা বঞ্চিত ওইসব মানুষের সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, অনিয়ম দূর্নীতি সাফল্য আর ব্যর্থতার কথা। কিন্তু সেই সাংবাদিকরা যখন হামলা-মামলা-নির্যাতন এবং খুনের শিকার হন তখন সাধারণ মানুষ যাবেন কোথায় ? সাংবাদিকরা সংখ্যালঘু সত্য, কিন্তু তাদের হত্যা করে গনতন্ত্রের চোখ উপড়ে ফেলা যাবে না, জাতির বিবেক ধ্বংস কিংবা মেধা শূণ্য করা যাবেনা। সাংবাদিকের রক্তস্ফুলিঙ্গ থেকে জন্ম নেয়া সাংবাদিকরা এগিয়ে যাবে। তারা জাতির ভালো-মন্দ, শাসক এবং বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন, যারা সব সময়ই ঝুকি নিয়ে দেশ জাতি ও বিশ্ববাসীর কল্যানে কাজ করে থাকেন অথচ বাস্তবতা এটাই যে সব সময় শাসক গোষ্ঠীর কালো থাবা সাংবাদিকদের নিত্য সঙ্গী। 
            গত দেড় যুগে খুন হওয়া ৩৯ সাংবাদিকের মধ্যে বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের শাসনামলের ৩বছর ১মাসে ১৪সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকাতেই খুন হয়েছেন ১০সাংবাদিক। এছাড়া সড়ক ও জনপদ খুন করেছে আরো ৫ সাংবাদিক, পেশগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত হয়েছেন ৩৪০সাংবাদিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক নিউ এইজ’র সম্পাদক নুরুল কবিরসহ ১৬৯সাংবাদিককে হত্যার হুমকী দেয়া হয়েছে। বিগত ‘বিএনপি-জামাত’ জোট সরকারের আমলে খুন হয়েছে ১০সাংবাদিক।   

       




      ২০০১সালের প্রথম দিকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর জুলুম অত্যাচার নির্যাতন, মন্দির ভাংচুরের ঘটনা আড়াল করতে সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীর নির্দেশে তারই অনুগত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রভাষক বিমল কুমার দত্ত, প্রভাষক শিমুল সাহা, সূনীল মাষ্টারের নেতৃত্বে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্ঠান ঐক্যপরিষদ গঠন করেন এবং ওই ঐক্যপরিষদের মাধ্যমে নিজ গোত্রের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা-নির্যাতন-চাঁদাবাজী মন্দির ও মূর্তী ভাংচুরের ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যা বানোয়াট উদ্দেশ্য প্রনোদীত আখ্যা দিয়ে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করিয়েছিলেন। 
          স্থানীয়, পর্যায়ে যে কোন অনুষ্ঠানে মূন্সীর উপস্থিতি থাকলে ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভাষা শহীদ দিবসেও শহীদবেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণে শ্রদ্ধা জানাতে পারতেন না সাংবাদিকরা। মূন্সী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর রোষানলে থেকেও দেবীদ্বার তথা কুমিল্লা উত্তরাঞ্চলের সাংবাদিকরা মাথা উঁচু করে নিষ্ঠা, সততা, সাহসীকতার সাথে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে যথাযথ দায়ীত্ব পালন করেছে। তবে প্রতি মূহুর্তেই মূন্সী বাহিনীর হামলা- মামলা, নির্যাতন আতঙ্ক তাড়া করেছে সাংবাদিকদের।  
          ২০০৪ সালের ১৭সেপ্টেম্বর সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এএফএম ফখরুল ইসলাম মূন্সী, আওয়ামীলীগ নেতা তরুণ শিল্পপতি রোশন আলী মাষ্টার গোমতী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত অসহায় বণ্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে এসে মঞ্জু বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হন। বিএনপি উপজেলা সভাপতি আবদুস সালাম ভূইঁয়া, সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ভুলু পাঠানের নেতৃত্বে সাজু চেয়ারম্যান, আখতার, যুবদল উপজেলা সভাপতি জসীম উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, ছাত্রদল উপজেলা সভাপতি মিজানুর রহমান, পৌর ছাত্রদল সভাপতি মনির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, আনিছুর রহমান খান, ফিরোজ আহমেদ, পৌরসভার কর্মচারি সালাউদ্দিন, বিপুল, আলমগীর, খোদাইচকের সন্ত্রাসী চিকনা কাইয়ুম, রিক্সা জসীম, নুরুজ্জামান সহ ৩০/৩৫ জন সশস্ত্র ক্যাডার হকিষ্টিক দিয়ে রোশন আলী মাষ্টারের হাত-পা ভেঙ্গে তার সাথে থাকা ত্রানের দু’লক্ষ টাকা, মোবাইল সেট, এবং ত্রান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। এসময় শ্রমিক নেতা মমতাজ উদ্দিন সহ ১০নেতা কর্মীকে পিটিয়ে যখম করাই নয়, মমতাজ উদ্দিনকে বেধরক পিটিয়ে আর দেবীদ্বার না আসার ছেড়ে দেয়। ওই সময় হামলার ছবি তুলতে যাওয়া ক্যাডাররা প্রথম আলো পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি ও দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশারকে বাঁধা দান এবং সমকাল ও রুপসীবাংলার জেলা ফটো সাংবাদিক বাহার রায়হানকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে তার হাতে থাকা ভিডিও ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে । 
         ২০০৫ সালের জুলাই মাসে হিন্দু অধ্যুষিত রসুলপুর গ্রামে অব্যাহত চুরি ডাকাতি নারী নির্যাতন আতঙ্কে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলো গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে থাকলে মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানালে পুলিশ রসূলপুরে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে। পুলিশের সারাষি অভিযানে ডাকাত দলের গডফাদার রসুলপুর ইউনিয়ন বি এনপি সভাপতি ইদ্রিস ডিলার ও তার ছেলে সহ বেশ কজন নেতাকর্মী আটক হলে মঞ্জু মুন্সী ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। ওই সালের ২৪জুলাই রসুলপুর ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন বিষয়ক এক সমাবেশে সাবেক সংসদ মঞ্জু মুন্সী সাংবাদিকদের অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন এবং ওই এলাকায় সাংবাদিকদের নিষিদ্ধই নয়, সাংবাদিকদের পেলেই হাত পা ভেঙ্গে বেধে রাখার নির্দেশ দেন দলীয় নেতা কর্মীদের। 
            ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ উপজেলার কুরুইন গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিককে প্রধান অতিথি করায় ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ গুড়িয়ে দেয় সাবেক সাংসদ মঞ্জুর ভাই আতিকুজ্জামান বাবুর নেতৃত্বে গঠিত সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী। মুন্সীর নির্দেশ ছিল তার দলের বাহিরে কেউ কোন অনুষ্ঠান সভা সমাবেশ করতে পারবেনা। তাই ওই দিন মফিজ উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা নিষ্দ্ধি করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইউএনও রেজাউল মাকসুদ জাহেদীর পাশাপাশি বিশেষ অতিথি সাংবাদিক রাখায় ওই অনুষ্ঠানও পন্ড করে দেয়, উদীচীর ৫৩নেতা কর্মী সমর্থকসহ আয়োজকরা প্রতিবাদস্বরূপ কুমিল্লার ময়নামতি কোটবাড়ীস্থ শালবন বিহারে ওই অনুষ্ঠান পালন করেন। 
        ২০০৬ সালের ১৯ জানুয়ারী দৈনিক প্রথমআলোতে সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ‘দেবীদ্বারের ঐতিহ্যবাহী পোনরা পৌষ সংক্রান্তী মেলায় দলীয় তহবিলসহ বিভিন্ন খাতে চাঁদা প্রদান, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী, বখাটেদের দৌরাত্ম এবং অতিরিক্ত টোল আদায়ে মেলাটি ধ্বংশের পথে’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করায়, সাবেক সাংসদ মঞ্জু মূন্সী’র নির্দেশে উল্টু সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার’র বিরোদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করেন, এক বছর পর তিনি ওই মামলা থেকে বেকসুন খালাস পান। দেবীদ্বারে পল্লী বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং ও লো-ভোল্ডেজ থাকায়, গড়ে উঠে “বিদ্যুতের দাবী বাস্তবায়ন কমিটি”। ওই কমিটি একই সালের ৩সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ শেষে প্রায় ৫শতাধীক জনতা ইঞ্জিনীয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীকে তার নিজ বাড়ি গুনাইঘর গ্রামে স্মারক লিপি দিতে গেলে, সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি একেএম মিজানুর রহমান কাউছার’কে মূন্সী অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে নিজেই ধাওয়া করেন, একপর্যায়ে মূন্সীর নির্দেশে তার শসস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডাররা ধাওয়া করে একটি বাড়িতে আটক রেখে অমানষিক নির্যাতন চালিয়ে থানা পুলিশে সোপার্দ করে। স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে হামলা ভাংচুরের অভিযোগ এনে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী মনসুর আহমেদকে বাদী করে সাংবাদিক একেএম মিজানুর রহমান কাউছার সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০ জনকে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায়  একটি মামলা দায়ের পূর্বক কোর্ট হাজতে চালান করে। 
২০০৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একেএম মিজানুর রহমান কাউছার জামিনে মুক্ত হলেও ৪ বছর ৮মাস ২দিন পর ২০১১সালের ৫এপ্রিল মামলা থেকে সাংবাদিক একেএম মিজানুর রহমান কাউছার’কে বেকসুর খালাস প্রদানের রায় দেন। একই সাথে মামলাটিও নিষ্পত্তি করেন। 
        এসকল  মিথ্যা মামলা ও সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৪জানুয়ারী কুমিল্লার সাংবাদিকরা কান্দিরপাড় পূবালী চত্তরে এবং ধর্মসাগরের পাড় প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করে। মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ২৯জানুয়ারী স্থানীয় সিপিবির মিছিলে হামলা, ২৫ জানুয়ারী দৈনিক প্রথম আলোতে এবং ৩০জানুয়ারী দৈনিকে কুমিল্লার কাগজ’ এবং সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় সম্পাদকীয় প্রকাশ;ও পর দেশব্যাপী সাংবাদিক ও সুধী মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ২৯এপ্রিল হাইকোর্টের সামনে রোশন আলী মাস্টারের নেতৃত্বে দেবীদ্বার বাসীর মানববন্ধন, রাজনীতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিবাদ শুরু হয়।
      সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় মুন্সী দেশব্যাপী আলোচিত হয়ে উঠেন। তার প্রতিবাদে ২২এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের আলোচনা সভা, ২৪এপ্রিল হাইকোর্টে সুশীল সমাজের মানব বন্ধন, ২মে জাতীয় প্রেসক্লাবে গোল টেবিল বৈঠক, ৩মে ফ্রিডম ডে উপলক্ষে সকালে জাতীয় পেসক্লাবে গোল টেবিল বৈঠক, দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানব বন্ধন এবং সন্ধায় জাতীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান হয়। ওই সকল অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত  ছিলেন এবং প্রবীন সাংবাদিক নির্মল সেন সাংবাদিকদের বিভেদ ভুলে ঐক্যের ডাক দিয়ে একতাবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান 
        এতো কিছুর পরও দেবীদ্বার উপজেলার সংবাদকর্মীদের লেখনী থেমে থাকেনি, থেমে থাকবেনা। সেই ভয়ালদিনে আমাদের পাশে থেকে দলমত নির্বিশেষে দেশও দেশের বাহিরের সাংবাদিক, ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সুশীল সমাজ প্রতিবাদ করেছিলেন, আমাদের সাহস যোগীয়েছিলেন, সেদিন আমাদের পাশে যারা দাড়িয়েছিলেন তাদের প্রতি আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে কৃতজ্ঞতা জানাই।  
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, ১৩/


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.