মুরাদনগরের বৃহত্তম ইউনিয়ন ঃ কলেজখ্যাত শ্রীকাইল
শ্রীকাইল কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত মুরাদনগর উপজেলার একটি আদর্শ ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের লোকজন খুবই শান্তিপ্রিয়। বিভিন্ন ধর্ম পেশা ও সংস্কৃতির মানুষ এখানে মিেিলমিশে বসবাস করে। এ ইউনিয়নে অনেক কৃতি সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছেন। যারা বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী প্রষ্ঠিানে কর্মরত রয়েছেন। তাদেও মধ্যে শ্রীকাইল গ্রামের কুতি সন্তান এডভোকেট কামিনী কুমার দত্ত , ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র দত্ত, সোনাকান্দা গ্রামের পীর অঅব্দুর রহমান হানাফী অন্যতম।

অবস্থানঃ কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্য্যালয় থেকে মুরাদনগর উপজেলা কার্য্যালেয়ের দুরত্ব ৩৮ কিলোমিটার এবং মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে ২৪ কিলোমিটার উত্তর দিকে ১ নং শ্রীকাইল ইউনিয়ন পরিষদ অবস্থিত। এটি আয়তনে মুরাদনগরের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো -২০০১ অনুযায়ী মুরাদনগর উপজেলার মধ্যে আয়তনে শ্রীকাইল প্রথম অবস্থানে আছে। এর আয়তন ৭৬০১ একর। যথাক্রমে ২য় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অঅকবপুর( ৬৩১৬) এবং ধামগড় ( ৫৯১১) । শ্রীকাইলের উত্তরে- আন্দিকুট ইউনিয়ন- দক্ষিণে রয়েছে রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন- পূর্বে- আকবপুর ইউনিয়ন এ ইউনিয়নে গ্রাম রয়েছে ২৪টি। এর মধ্যে ভাংগানগর, ভূতাইল, চন্দনাইল, পেন্নই,কালিসীমা, পিপড়িয়া, রোয়াচালা, চুলুরিয়া, সল্পা, সাহেদাগোপ, শ্রীকাইল, চারিপাড়া, মোহাম্মদপুর অন্যতম।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ ্এখানে কলেজ-১টি, কামেল মাদ্রাসা-১টি, উচ্চ বিদ্যালয়- ৪ টি, প্রাথমিক-১৬টি, এতিমখানা-৫টি, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা-৩টি। মসজিদ- ৭০টি , মন্দির-৩টি ১২।যাতায়াতঃ এ ইউনিয়নের মুরাদনগর, নবীনগর ও বান্ছারামপুর উপজেলা সমূহের সহিত সীমানা থাকায় সকল দিক হতেই যাতায়তের সু ব্যাস্থা রয়েছে।
ইতিহাসঃ ব্রিটিশ শাসনামলের আনুমানিক ১৯৪৩ সালে প্রথম থোরলা (মুরাদনগর) মহকুমার অধীনে বর্তমান শ্রীকাইল কে কেন্দ্র করে ২৯ টি গ্রাম নিয়ে শ্রীকাইল ইউনিয়ন গঠিত হয়। ঐ সময়ে ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান কে গ্রাম প্রেসিডেন্ট বলা হত। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান শাসনামলে গ্রাম প্রেসিডেন্ট এর পদকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদবী ঘোষণা করা হয়। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রী শ্রী বদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির নাম থেকে , শ্রীকাইল ইউনিয়নের নাম করন করা হয়।
হাট/বাজারের নামঃ শ্রীকাইল বাজার, রোয়াচালা বাজার, হাটখোলা বাজার ,শাহগদা বাজার, সাহেদাগোপ বাজার, সোনাকান্দা বাজার , পিপড়িয়া কান্দা বাজার , ও চন্দনাইল বাজার
চেয়ারম্যানবৃন্দ ঃ- ইউপি চেয়ারম্যান - মোঃ নজরুল ইসলাম । বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাবেক চেয়ারম্যানগণ হচ্ছেন জনাব চন্দ্র কুমার ডাক্তার, জনাব কালা মিয়া সাহেব, জনাব মহববত আলী, জনাব কাপ্তান মিয়া, জনাব চান মিয়া, জনাব কাপ্তান মিয়া, জনাব আব্দু মিয়া, জনাব হাবিবুর রহমান। জনাব আব্দু মিয়া জনাব মোঃ বাকিছ মিয়া।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে শ্রীকাইল ইউনিয়নের ১ম গ্রাম রোয়াচলা, ৮১৩০ জন, ২য় চন্দ্রনাইল-২৮৮৫ জন, এবং ৩য় সোনাকান্দা-২৭৫০জন ( আদম শুমারী ২০১১)। এছাড়া পুরো ইউনিয়নে রয়েছে ৪৮০৩১ জন লোক।
কৃতি সন্তানঃ
এডভোকেট কামিনী কুমার দত্ত ঃ তিনি ১৮৭৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কৃষ্ঞ কুমার দত্ত। তিনি বিএল পাশ কওে মুন্সেফ হন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনজীবি। কুমি।রঅ অভয় আশ্রম প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পূর্বে তিনি প্রাদেশিক অঅইন পরিষদেও কংগ্রেস দলীয় সদস্য ছিলেণ। তিনি কুমিল্লা শহওে স্ত্রীর নামে “ মৃনালিনী ছাত্রীনিবাস” তৈরি করেন। তার গ্রামের বাড়ির জমিগুলো তার ভাইয়েওে প্রতিষ্ঠিত শ্রীকাইলমে কলেজে দান করেন। তিনি পাকিস্তানের অঅইনসভায় আইন মন্ত্রী ছিলেন। এই মহা মনিষী ১৯৫৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র দত্তঃ কামিনী কুমার দত্তের ছোট ভাই নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৮৪ সালে।তিনি অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় কর্মজীবি ছাত্র হিসেবেই কলকাতা থেকে ডাক্তারী পাশ করেন। তিনি বেঙ্গল কমিউনিটি কোং ” না কলকাতায় একটি ৗষধ কোম্পানী প্রতিষ্ঠিা করেন। তিনি নবশাক্ত” পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। রাজনৈতিক ক্খেত্রে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি শ্রীকাইলে তঃকালীন দশ লক্ষ টাকা ব্যায়ে দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি দেহত্যাগ করেন।
আব্দুর রহমান হানাফীঃ বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ সোনাকান্দা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অধব্দুর রহমান হানফিী। তিনি ১৯০০ সালে জন্ম গস্খহণ করেন। কারী, হাফেজী শিক্ষা ছাড়াও তিনি ১৯২৩ সালে ঢাকা হাম্মাদিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করেন। ১৯২৪ সালে তিনি খামারগাও গ্রামে এশটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪০ সালে সোনাকান্দা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে ফোর টাইটেল( কামিল) মাদ্রসায় উল্টীর্ণ হয়েছে। তিনি ১৯৬৪ সালের ১৮ মে ইন্তেকাল করেন। তার প্রতিষ্ঠিত দারুল হুদা দরবার শরীফে প্রতি বছর ১৫ ফাল্গুন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক ভক্ত অংশগ্রহণ করেন।
শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড” ঃ এপ্রিল ২০ -২০১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “ শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড” উদ্ভোধন করেন। যদিও এ ফিল্ডটি পাশর্^বর্তী ইউনিয়ন আকবপুরের মোখলেশপুওে অবস্থিত। গ্যাস উত্তোলন শুরুর দিনে ২৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হয়। এটি দেশের ২৫ তম গ্যাম ক্ষেত্র। এতে ২৫৬ বিলিয়ন গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে জানা যায়।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মোঃ মোরশেদ মোল্লা, মোঃ হাসান ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধা বীর বীক্রম শাহজাহান সিদ্দিকী সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। শ্রীকাইল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ১৯৫২ সালের ভাষা অঅন্দোলন , ১৯৬৯ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখে।
শ্রীকাইল স্কুল ও কলেজঃ বাণী পিঠ” নামে ১৯৪১ সালে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র দত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। ১৯৩৯ সালে তিনি নিজ গ্রাম শীকাইলে তার পিতার নামে ”কৃষ্ঞ কুমার উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিা করেন শ্রীকাইল কলেজ। ১৯৪৯ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হয়। কলেজের মূল ভবনটি ৩ তলা। এছাড়া রয়েছে ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল, শিক্ষকদের কোয়ার্টার ,প্রিন্সিপালের বাসভবন,খেলার মাঠ, অডিটরিয়াম, পুকুর ব্যাংক, পোস্ট অফিস ইত্যাদি। এছাড়া একটি কম্পিউটার ল্যাব ও একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে। এপাঠাগারে কিছু দুর্লভ বইসহ প্রায় ৬ হাজার বই রয়েছে। মাত্র ৫২ জন ছাত্র নিয়ে একলেজটি যাত্রা শুরু করে। প্রথম বর্ষে কোন ছাত্রী ছিলনা । ডিগ্রি পরীক্ষায় ১৯৯৯ সালে আঃ জব্বার বিএসএস পরীক্ষায় ১ম শ্রেনীতে ৯ম স্থান, ১৯৯৪ সালে কাজী মোঃওয়াজেদ উল্লাহ প্রথম শ্রেণীতে ৭ম স্থান লাভ করে কলেজের গৌরব বৃদ্ধি করে। তবে এ পথের পথিকৃত হচ্ছেন অরূন দত্ত। তিনি ১৯৪৫ সালে অবিভক্ত বাংলায় (আসামসহ) এইচএসসি পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এখানে ৩২ জন সুযোগ্য শিক্ষক আছেন।২০ এপ্রিল ২০১৭ কুমিল্লার ১০টি সহ দেশের মোট ২৮৫টি বেসরকারি কলেজকে শিক্ষা মন্ত্রনালয় সরকারি করার জন্য চুড়ান্ত করেছে।
সোনাকান্দা মাদ্রাসাঃ কুমিল্লা জেলার অন্যতম মাদ্রাসা। ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি ১৯৪৪ সালে ওল্ডস্কীম সিলেবাস চালু করে। ১৯৫৫ সালে ওল্ডস্কীম জুনিয়র তথা দাখিল মঞ্জুরী প্রাপ্ত হয়। এর পর ১৯৫৮ সালে আলিম, ১৯৬০ সালে ফাযিল এবং ১৯৬৪ সালে কামিল ক্লাশ খোলা হয়। মাদ্রাসাটিতে এতিম খানা ও লিল্লাবোর্ডি চালু অঅছে। এ মাদ্রাসার বহু ছাত্র-শিক্ষক দেশ-বিদেশে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসাওে কাজ করছে।
বরদেশ্বরী কালী মন্দির ঃ তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের প্রসিদ্ধ বরদাখাত পরগনার বিখ্যাত জমিদার আগাসাদেকের জমিদারী স্টেটের অন্তভূক্ত ছিল শ্রীকাইল। গ্রামটি এক সময় হিন্দু প্রধান ছিল। এই গ্রামে নির্মিত হয়েছিল শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালী মন্দির। এ এলাকাটির অতি প্রাচীন নাম ছিল শ্রী কালীকাপুর। শ্রী কালীকাপুর থেকেই ক্রমে এই গ্রামের নামকরণ হয় শ্রীকাইল। ঢাকার নবাব স্বপ্নযোগে নির্দেশ পেয়ে এই মন্দিরটি স্থাপন করেছিলেন বলে জনশ্র“তি রয়েছে।বর্তমানে মন্দিরের ভেতরে ছোট একটি পাথরের মূর্তি শোভা পাচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত কয়েকবার মন্দিরের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি হয়েছে। শ্রীকাইল কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শ্যামপ্রাসাদ ভট্টাচার্য্য, ভূতাইলের কবি আবদুস সাত্তার সরকার, সাহেদা গোপের শাহজাহান সওদাগরের মতো অনেকেই মনে করেন এটি একটি পুরাকীর্তি। প্রতি বছর মাঘ মাসের আমাবশ্যা তিথিতে এখানে মেলা বসে।