মুরাদনগরের শ্রীকাইল বরদেশ্বরী মন্দিরঃ ৫শ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য
- জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল
ৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের প্রসিদ্ধ বরদাখাত
পরগনার বিখ্যাত জমিদার আগাসাদেকের জমিদারী স্টেটের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রাচীন গ্রাম
শ্রীকাইল। বর্তমান মুরাদনগর উপজেলাধীন এই গ্রামটি এক
সময় হিন্দু প্রধান ছিল। এই গ্রামে নির্মিত হয়েছিলো শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী
কালী মন্দির। সময়ের ব্যবধানে আজ এটি একটি পুরাকীর্তি।
এ এলাকাটির অতি প্রাচীন নাম শ্রী কালীকাপুর।
শ্রী কালীকাপুর থেকেই ক্রমে এই গ্রামের নামকরণ হয় শ্রীকাইল।
ঢাকার নবাব স্বপ্নযোগে নির্দেশ পেয়ে এই মন্দিরটি স্থাপন করেছিলেন
বলে জনশ্র“তি রয়েছে।
শ্রীকাইল বরদেশ্বরী কালীমন্দির এবং ইনসেটে
মন্দিরের সেবায়েত কমলা চক্রবর্তী
ধারনা করা হচ্ছে শ্রী কালীকাপুরের শ্রী কালী
এবং বরাদাখাত ও ঈশ্বর থেকে বরদেশ্বর শব্দ যোগে এই মন্দিরটির নামকরণ হয়েছিলো শ্রী শ্রী
বরদেশ্বরী কালী মন্দির। প্রাচীন এই মন্দিরটি কত সালে স্থাপিত হয়েছিল
এর কোন সঠিক তথ্য কেউ জানেন না। তবে, বংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত তথ্য এবং এর
নির্মাণ শৈলী ও কারুকাজ থেকে ধারণা করা হচ্ছে এই মন্দিরটি কমপক্ষে পাঁচ শত বছরের প্রাচীন।
সম্প্রতি, কথা হলো, মন্দিরের সেবায়েত শ্রীকাইলের বিখ্যাত ঠাকুর বংশের
প্রয়াত হরিপদ চক্রবর্তী স্ত্রী শ্রীমতি কমলা চক্রবর্তী (৮৫) এর সাথে।
তিনি জানান, শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা ভারতবর্ষের হিন্দু সম্প্রদায়
এই মন্দিরটির নাম জানেন। প্রতি বছর মাঘ মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই
মন্দির প্রাঙ্গণে মেলা বসে। বাংলা পঞ্জিকায়ও শ্রীকাইল মেলার কথা উল্লেখ
রয়েছে। দূর দূরান্ত হতে মেলায় লোক সমাগম ঘটে।
সেবায়েত কমলা চক্রবর্তী জানালেন, তাঁর বিবাহের পর থেকে প্রায় ৬৫
বছর যাবৎ তিনি এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। এই
দীর্ঘ ৬৫ বছরে মন্দিরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকবার মন্দিরের মূল্যবান কষ্টিপাথরের
মূর্তি চুরি হয়েছে। ভারতের বাবরি মসজিদ নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষের
সময়ও স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে এই মন্দিরের ক্ষতিসাধন করে।
একসময় এই মন্দিরে স্বর্ণ মূর্তিও ছিল বলে জানা যায়।
দীর্ঘদিন আগে মন্দিরের কিছু সংস্কার করা হয়।
এসময় সামনের দিকে একটি পাকা বারান্দা নির্মাণ, গ্রীল লাগানো হলেও
বর্তমানে এর মূল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভেতরে
ছোট একটি পাথরের মূর্তি শোভা পাচ্ছে। অতি সাম্প্রতিক কালেও মন্দির থেকে একটি মূর্তি
চুরি হয়েছে। মন্দিরটি একটি পুরাকীর্তির নিদর্শন।
শ্রীকাইল কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শ্যামপ্রাসাদ ভট্টাচার্য্য,
ভূতাইলের কবি আবদুস সাত্তার সরকার, সাহেদা গোপের শাহজাহান সওদাগরের মতো অনেকেই মনে
করেন এই পুরাকীর্তির মন্দিরটির নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব
বিভাগের এগিয়ে আসা উচিৎ।আর্কাইভ থেকে 11/09 /2017