বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও কবি আশরাফ মাহমুদের একটি সাক্ষাৎকার
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও গবেষক মমিনুল ইসলাম মোল্লা। সাক্ষাৎকারটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।১. রিপোটিং এর শুরু কিভাবে?
উত্তরঃ তখন ইন্টারের জীবন। ১৯৯৭-৯৮খ্রিঃ। ১৯৯৫খ্রিঃ ম্যট্রিক পাশের পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিলাম। ভর্তির সুযোগ পেলাম কিন্তু ভর্তি না হয়ে, দ্বেবিদার এস.এ সরকারি কলেজে আই.এস.সি ভর্তি হলাম। কিছুদিন কলেজের হোস্টেলে রইলাম। তারপর লজিং জীবন গ্রহণ করলাম। লজিং থেকে মাঝে মাঝে বাড়ী (আমার নিজ বাড়ী চান্দিনা থানার ভার ভাঙ্গায়) আসা যাওয়া করতাম। তখন কবিতা লেখায় পাকা। ইচ্ছে হল সাংবাদিকতা করবো। তাই পত্রিকার খবরগুলো কিছুদিন দেখলাম। মনে হলো কঠিন কিছু নয়। তা আমিও পারবো। মনে সাহস হলো। অভিজ্ঞতা আমাকে পথ দেখালো। আর মনে মনে একজন ভালো সাংবাদিকের খোঁজ করতে লাগলাম। কেননা পথ প্রদর্শক ব্যতিরে অভিজ্ঞতা পূর্ণ হয় না। তাই একজনের সহচার্য্য প্রয়োজন মনে করলাম। আমার বাড়ি চান্দিনায় হলেও আমার স্কুলের সহপাঠী ছাড়া বাইরের অন্য কারো সাথে আমার পরিচয় ছিলো না। কিন্তু একদিন বাড়ি থেকে লজিং বাড়ি যাবার পথে চান্দিনায় নেমে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম কুমিল্লার পত্রিকায় সাংবাদিকতা করে এমন একজনের নাম দয়া করে বলুন। লোকটি বললেন দিদার। অর্থাৎ সাংবাদিক দিদার। তার ঠিকানাও জানলাম। পরে তার পুরো নাম জানলাম তাহমিদুর রহমান দিদার। তার সাথে পরিচয় হলো। আমার ঠিকানা নামও বললাম। কবিতা লিখি তাও বললাম। সাংবাদিকতার কাজ করতে চাই তাও বললাম। ওনার সহযোহিগতা চাই তাও বললাম। তিনি আশ্বাস দিলেন। ঐদিন কুমিল্লার দৈনিক শিরোনাম,মুক্তির লড়াই, রূপসী বাংলা, পূর্বাসা, ইত্যাদি কিছু পত্রিকার নামও জানলাম। তারপর বাড়ি আসা যাওয়ার পথে সাংবাদিক দিদারের সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করে যেতাম। এই সময়েই দৈনিক শিরোনাম পত্রিকায় একটি কবিতা পাঠিয়েছিলাম। কবিতাটি সম্পাদক পত্রিকায় ছাপালো। কিন্তু আমি জানার আগেই দিদার ভাই আমাকে জানালো যে, শিরোনামে আপনার একটি কবিতা ছাপিয়েছে। তারপর থেকে দিদার ভাইয়ের সাথে আরো ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গেল। এই দিদার ভাইয়ের সাথে উঠা বসা করে নিউজের আরো কিছু নতুন বিষয় শিখলাম যা পূর্বে জানা ছিল না। কোথায়? কখন? কিভাবে? ইত্যাদি পশ্নের উত্তর সমাপ্ত করলে সংবাদ লেখা হয়ে যায় তাও জানতে পারলাম, ঢাকা থেকে সংগ্রহকৃত সাংবাদিকতার উপরে লেখা একটি বই পড়ে । এভাবে ওয়াকেফহাল হয়ে নিজেই একটি নিউজ লেখে কুমিল্লার মুক্তির লড়াই পত্রিকায় পাঠালাম। নিউজটি তারা ছাপালো। শুরু সাংবাদিকতার যাত্রা।
২. ভালোভাবে শুরু করলেন কখন ও কোন পত্রিকায়?
উত্তরঃ খুব সম্ভব ১৯৯৭খ্রিঃ শেষে। কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত মুক্তির লড়াই, সপ্তাহিক নয়ারবি, চান্দিনা থেকে প্রকাশিত মাসিক দিপীকা সাহিত্য পত্র ইত্যাদি।
৩. আপনাকে নিয়ে আপনার মা বাবার স্বপ্ন কি ছিল?
উত্তরঃ প্রাইমারী শেষ করে সিক্সে ভর্তি হলাম। সেভেনে রোল তিন হলো। আমার সুনাম অন্য গ্রামেও গেল। কেননা আমাদের গ্রামে আমরাই ছিলাম সাধারণ মানুষ। তাছাড়া আমার পরিবারে তখন পড়া লেখার রেওয়াজই ছিলোনা। আমার আগে আরও ৭ ভাই বোন রয়েছে। তারা কেহই কখ পর্যন্ত জানে না। আর সেখানে আমার রোল তিন হওয়া মানে আকাশ কুসুম কল্পনা। যেন গোবরে পদ্ম ফুল। মা বাবা যখন জানতে পারলেন যে, তাদর কাজের ছেলেটি এখন ভালো ছাত্র, তারা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগল। আমি অনেক বড় চাকরিজীবি হবো। আর দশজন মানুষের মতো অনেক টাকা ইনকাম করে বাবা মার স্বপ্ন পূরণ করবো। গাড়ি বাড়ি করবো। গাঁয়ের মানুষ বলবে ওমুকের ছেলে অনেক বড় চাকুরিজীবি। অনেক বেতন পায়। গ্রামের মানুষের কাছে তাদের মাথা উঁচু হবে। কিন্তু কলেজে ভর্তি হবার পর যখন বাবা মা জানতে পারল আমি কবি। কবিতা লেখি। তখন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কেননা পূর্বে যারা বাবা মার কাছে আমার প্রশংসা করত এখন তারাই আমার নিন্দা করতে লাগলো। বলতে লাগলো- কবিতা লিখে ভাত পাওয়া যায় না। যারা পাগল তারাই কবিতা লিখে। ইত্যাদি খেদোক্তি যখন বাবা মা শনুতেন তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যেত। বাবা মার বিশ্বাস ছিল যারা এসব উক্তি করছে তাদের কথাই সত্য। তাই আমার কোন কথার গুরুত্বই বাব মা দিতেন না। আমি পাগল হয়ে গেছি এটাই তারা ধরে নিলেন। এ অবস্থায় ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলাম। বাবার তখন শেষ বয়স। সার জীবন কৃষি কাজ করে আমাদের আট ভাই বোনকে তিনি লালন করে আসছেন। এখন তার সাহায্যের প্রয়োজন। তাই আমি একটা চাকুরী করে বাবাকে সাহায্য করি এটা তিনি আশা করলেন। কিন্তু আমি পড়া লেখা একেবারে না ছেড়ে ডিগ্রি ভর্তি হয়ে গেলাম আর বাবার আশা পূরণ করার জন্য একটা চাকুরীও খোঁজতে লাগলাম। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে ব্যর্থ হলাম। মামা, খালু, জামানত ছাড়া কেউ আমাকে গ্রহণ করে না। বাবাকে জানালাম, চাকুরী নেই। বাবা হতাশ হলেন। আর আমিও । একদিন বাবা চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়ার কাছে আমাকে নিয়ে গেলেন একটি চাকুরী দেবার জন্য। ভূঁইয়া রাজি হলেন। কিন্তু শর্ত হলো-একটি বেকারীর ভ্যান গাড়ির বন, বিস্কুট দোকানে দোকানে সারাদিন বিক্রি করতে হবে। কোনদিন রাতের ৯/১০ ও বাজতে পারে। বেতন ১৭০০ টাকা। চাকুরীটি কমপক্ষে পাঁচ বছর করতে হবে। বেতন এক টাকাও বাড়বে না। খাওয়া দাওয়া নিজের। স্ট্যাম্পে একটি অঙ্গিকার নামা দিতে হবে। পাঁচ বছরের আগে চাকুরী ত্যাগ করে ফেরত আসলে আমাকে কয়েক লক্ষ টাকা বেকারীর খতিপূরণ বাবাদ জরিমানা দিতে হবে। আমার পাগলামি বন্ধ করার জন্যে বাবা রাজি হলেও আমি অস্বীকার করলাম। এতে বাবা পুরোপুরি হতাশ হলেন। আর আমাকে ছেড়ে দিলেন আমার ইচ্ছায়। ফের লজিং আসলাম দেবিদ্বার। সাল -২০০০। ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ার আমার সামনে। বাড়ি থেকে খবর এলো বাবা অসুস্থ। বললাম ক’দিন পর আসব। ক’দিন পর গেলাম। বাবা তখন মরণ বিছানায় শায়িত। দেখলাম- বাবার স্বপ্ন অশ্রæসিক্ত হয়ে দুই গাল ধরছে। আমিও কাঁদলাম। বাবার স্বপ্নকে কবর দিলাম।
৪. বাল্যকালে কি হওয়ার মন বাসনা ছিল?
উত্তরঃ কিশোর বয়সের পুরোটাই কেটেছে অরণ্য লীলায়। আমি যে কী হবো কী করবো এই চিন্তা মনে স্থান পায় নাই। যখন অষ্টমে উঠলাম তখন এইদিকে মন কিছুটা ছুটল। স্যারদের মুখে বড়দের মুখে শুনতে পেলাম - ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাজিষ্ট্রেট, এম.বি.বি.এস ডাক্তার এগুলো খুব বড় চাকুরী। আমি প্রথম দুটিকেই জীবনের জন্য বেছে নিয়েছিলাম। আর এর জন্য ঝপরবহপব এ পড়াশুনাও করলাম। কিন্তু কবিতা আমাকে ছাড়েনি। তাই পারলাম না। ৫। সাহিত্য ভিত্তিক কোন সংগঠন নিজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কি না? বিবরণ দিন।
উ: সাহিত্য ভিত্তিক সংগঠণ করার প্রবল ইচ্ছে ছিলো। এখনও আছে। কিন্তু সময়ে কুলাতে পারলাম না। যদি সময় পেয়ে যায় তবে সাহিত্য মোদিদের আসর জমাবো। তবে অতীতে অধ্যাপক কবি মুহম্মদ মিজানুর রহমান শেলী প্রতিষ্ঠিত ‘শেখড় সাহিত্য সংসদে’ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছি বহুবার । সাহিত্য মোদিদের ডেকে আসার জমাতে বহু শ্রম ও দিয়েছি। তাছাড়া সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সভায় নিজের লেখা কবিতা পাঠ করেছি অনেকবার। তাদের সাহিত্য সভার নিমন্ত্রিত অথিতি হয়েছি, আলোচনায় যোগ দিয়েছি, মাইক্রোফোনে সাহিত্য সভায় বক্তব্য রেখেছি।
৬। কোন পত্রিকা সম্পাদানা করেছেন? এ পত্রিকা প্রকাশের মুখ্য উদ্দেশ্য কি?
উ: হ্যাঁ। চান্দিনা থেকে প্রকাশিত দিপীকা সাহিত্য পত্রের সহযোগী সম্পাদক ছিলাম। সাল মনে নেই। আনুমানিক ১৯৯৬Ñ১৯৯৮ এর মধ্যে হবে। এটির মূখ্য উদ্দেশ্য ছিলো নতুন লেখকদের লেখা ছাপিয়ে তাদের প্রেরণা দেওয়া। তারপর ২০১৪ সালে নিজের সম্পাদনায় বের করলাম সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা কুমিল্লার সাহিত্য বার্তা এটিরও মূখ্য উদ্দেশ্য ছিলো নবীন লেখকদের কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ইত্যাদি ছাপিয়ে তাদের মনে সাহিত্যের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা।
৭। আপনার পত্রিকার মূল বৈশিষ্ট্য কি?
উ: আমার পত্রিকার মূল বৈশিষ্ট হচ্ছে নবীনদের আদর্শ সাহিত্য চর্চায় অনুপ্রাণিত করা। তাছাড়া সমাজের যে কোনো সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করে আপামর জন সাধারনের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি করা।
৮। রিপোর্টার হিসেবে কোন কোন পত্রিকায় কাজ করেছেন?
উ: কুমিল্লার সাপ্তাহিক মুক্তির লড়াই,সাপ্তাহিক নয়ারবি, মাসিক দিপীকা সাহিত্য পত্র, সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক জালালাবাদ, মাসিক খাজাষ্ণি বার্তা ইত্যাদি পত্রিকায় রির্পোটার হিসেবে কাজ করেছি।
৯। (ক) সাংবাদিকতায় কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুক্ষিন হয়েছেন?
উ: শুধু সাংবাদিকতা করে জীবন সংসার ভালভাবে চালানো যায় না। কেননা সাংবাদিকতার বিনিময়ে ভালো কোনো বেনিফিট পত্রিকা অফিস দেয়না। যদি দিতো,তাহলে সংবাদ মাধ্যম আরও ভালো হতো, যাতে সংবাদ জগতে দুর্নীতি স্পর্শ করতো না। আর আমি এই খানেই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। জীবিকার্জনে অন্য পেশার সাথে সাংবাদিকতাকে ধারণ করে কখনও ভালো সংবাদ প্রচার সম্ভব নয়। আর ক্রাইম নিউজ করতে গিয়ে সব সময় সমাজের বখাটে, গুন্ডা, কর্মহীন লোকদের থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতে হয়েছে। সত্য প্রকাশে সাংবাদিকতায় এটাও একটি বড় বাধা। সাংবাদিক যদি সত্যের বাহক হয়ে কাজ করতে না পারেন তাহলে তার জীবন কর্ম ব্যর্থ হয়ে যায়।
অতএব, সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমি উপরোল্লোখিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি।
(খ) সাংবাদিকতার এই প্রতিবন্ধকতা কি ভাবে দুর করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
উ: সাংবাদিকতার এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারে একমাত্র পত্রিকা অফিস। কেননা পত্রিকা একজন সাংবাদিক নিয়োগ করে যদি ভালো উচ্চ মানের বেতন নির্ধারণ করে দেন, তাহলে একজন সাংবাদিক কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে না। আর যারা সাংবাদিক নিয়োগ করে ভালো বেতন দিতে পারে না, তাদের প্রত্রিকা প্রকাশ করা উচিত বলে আমি মনে করিনা। আর ক্রাইম নিউজ র্নিদ্বিধায় প্রকাশের ক্ষেত্রেও পত্রিকা অফিসের একান্ত সহযোগিতা থাকা চাই। দেখা যায় ক্রাইম নিউজ করে এলাকায় কোনো সাংবাদিক বিপদের সম্মুখীন হলে পত্রিকা অফিস লাপাত্তা হয়ে যায়। এতে অপরাধীরা সাহস পেয়ে যায়। আর একজন সাংবাদিককে খুন করতেও এদের আর বাধে না। যদি পত্রিকা অফিস তা না করে সরাসরি মাঠে এসে মিটিং সভা ইত্যাদি গণসংযোগ করে অপরাধীদের সর্তক করে আইনি পরামর্শ গ্রহণ করতো, তাহলে অপরাধীরা অবশই আস্কারাা পেতো না। একজন সাংবাদিককে খুন করার মতো জঘন্য অপরাধ এতো সহসাই করতে পারতো না।
১০। সাহিত্য পত্রিকা নতুন কবি সাহিত্যকিদের প্রতিভা বিকাশে কিরুপে কার্যকর ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করুন?
উ: ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেনÑ যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না। এই কথাটি কানায় কানায় অনুভব করেই আমি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছি। বর্তমান মিডিয়া জগত একজন সাহিত্যিকের অনুকুলে নেই একথা বলতে আমার আর এতটুকু দ্বিধা নেই। সাহিত্য বিমুখ এসব মিডিয়া কখনও নতুন কবি সাহিত্যিকদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক নয়। এরা শুধু অর্থ নিউজের ধান্ধায় দিবা নিশি কাল যাপন করছে আর টাকার ফিকির করছে। অথচ এই নিউজ হওয়া দরকার ছিলো একজন নতুন সাহিত্যিকের প্রতিভা বিকাশের জন্যে। দরকার ছিলো একজন গুণী মানুষের সন্ধান করে সাধারণ মানুষকে তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত করা। এই নিউজ দরকার ছিলো দেশের স্বার্থে। জনগণের স্বার্থে। অথচ আজ এই মিডিয়া প্রচার হচ্ছে ভোগবাদী মানুষের ব্যক্তি স্বার্থে। আমি তা অনুভব করেছি আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে। যখন কবিতা লিখে পত্রিকা অফিসের দ্বারে দ্বারে লাচার হয়ে ঘুরেছি। সাহিত্য সম্পাদকের দেখা করে কথা বলেছি। দেখেছি এরা নিরান্নবই ভাগই সুবিধাবাদী, ভোগবাদী। সাহিত্যের মুখোশ পরিধান করে নতুন প্রতিভাকে নষ্ট করার প্রক্রিয়ায় এরা লিপ্ত রয়েছে। খেকশিয়ালের মতো সুযোগ সন্ধানী হয়ে বের হয়, আবার গর্তে পালিয়ে যায়।
তাই এই দুর্যোগে একমাত্র সাহিত্য পত্রিকা ব্যতিরে নতুন কবি সাহিত্যকদের প্রতিভা বিকাশে কার্যকর ভ‚মিকা রাখা সম্ভব নয় বুঝতে পারলাম। পণ করলাম। আমার মতো যারা তাদের জন্যে কিছু করবো। তাই করলামÑ কুমিল্লার সাহিত্য বার্তা পত্রিকা সম্পাদনা।
আর তখনই বুঝতে পারলাম আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে কতো প্রতিভা অবহেলা অবজ্ঞায়
তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে পড়ে রয়েছে। অথচ দেখলাম এদের লেখায় অনেক রসবোধ রয়েছে। যা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। যখন এদের খাতায় লেখা অবহেলিত গল্প, কবিতা ছাপিয়ে দিলাম এদের আনন্দ দেখে কে? এরা আবার নতুন উদ্দ্যমে নতুন নতুন গল্প কবিতা আমার সাহিত্য পত্রিকায় পাঠাতে লাগল। অতএব বুঝতে পারলাম একমাত্র সাহিত্য পত্রিকাই নতুন কবি সাহিত্যিকদের প্রতিভা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে অন্যথা নয়।
১১। আপনার সাহিত্যিক গুরু কে কে?
উ: আমার প্রথম সাহিত্যিক গুরু অধ্যাপক কবি মুহম্মদ মিজানুর রহমান শেলী। আমি যখন দেবিদ্বার সুজাত আলী সরকারী কলেজের আই,এস,সিÑর ছাত্র, তখন উনার সাথে আমার পরিচয় হয়। উনিই আমার জীবনের গতি ধারকে পাল্টিয়ে দিয়েছেন। উনার বদলৌতে আলী আশরাফ থেকে আমি আজ আশরাফ মাহমুদ। আমার সাহিত্যের দ্বিতীয় গুরু একই কলেজের অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা সাহিত্যিক অধ্যপক এ,এম,ফরহাদ উদ্দিন ভ‚ঁইয়া। যার রচিত ছন্ধ মিমাংসা পাঠ করে কবিতার অন্তর জগতে প্রবেশ করলাম। যার সন্নিকটে লাভ করলাম কবিতার মূলধন।
১২। তাদের দ্বারা আপনি কি ভাবে প্রভাবিত হয়েছেন?
উ: তাঁদের দু’জনের কাছেই আমি সময় সুযোগ মতো হাতে কলমে কবিতার কলা কৌশল রপ্ত করেছি। নিজের অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। যা সাহিত্য সাধনায় আমাকে অনুপ্রানিত করেছে। এবং সমুখে চলার সাহস দিয়েছে।
১৩। আপনি তাদেরকে কি ভাবে স্মরণ করেন?
উ: আমর সুখে দুখে তাঁদেরকে স্মরণ করি। যেমন আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান এলে সবার আগে তাঁদেরকে খবর দেই। সবার আগে তাঁদেরকে নিমন্ত্রণ করি। সবার আগে তাদের নিক পরামর্শ চাই। আবার দ ুখে যেমনÑ সাহিত্য চর্চায় কোনো জটিলতার সম্মুখীন হলে, বুঝতে পারিনা এমন কিছু সম্মখে এলে তাঁদের স্মরণ করি। তারপর সম্ধান পেয়ে যাই।
১৪। আপনি নতুন কবি সাহিত্যিকদের কিভাবে সহযোগীতা করেন?
উ: নতুন কবি সাহিত্যিকরা আমাকে সম্মর করলে আমি ও করি। অথ্যৎ তাঁদের কোন লেখা আমার পত্রিকায় পাঠালে ছাপাতে দেরি করি না। ভুল থাকলে সংশোধন করে দেই। পরে জানিয়েও দেই। শুদ্ধতম সাহিত্য চর্চা কি ভাবে হয় তার পরামর্শ দেই । সাহিত্যের ব্যপারে যখন যে বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয় তার সমাধান যত তাড়া তাড়ি সম্ভব করে দেই।
১৫। বলা হয়ে থাকে কবিরা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে। আপনি মরে গেলে কোন কোন কবিতাগুলো মানুষ স্মরণ করবে?
উ: কবিরা মৃত্যর পরও বেঁচে থাকে এ কথা চিরন্তন। কিন্তু আমি বেঁচে থাকব কিনা জানি না। কেননা বেঁচে থাকা আমার হাত নেই। দয়াময় যদি প্রেরণা দেন তাহলে বেঁচে থাকব। অর্থ্যৎ পাঠকের কাছে যদি আমার কবিতা ভালো লাগে, তাহলে তাঁদের কাছে আমি বেঁচে থাকব। আমি বিশ্বাস করি আমার সবগুলো কথা অর্থ্যৎ সকল কবিতাই বেঁচে থাকবে। কারণ অন্তর দাতার প্রেরণা ছাড়া আমি কোনো কবিতাই লিখিনি। অর্থ্যৎ যে পর্যন্ত না, আমি আমার পরমের কাছে বন্দী হয়েছি সে পর্যন্ত আমার নফস কলম ধরেনি। আরও সহজ কথা হলোÑ আমার সকল কবিতাই পরমের আজ্ঞা, নফস শুধু কলম দিয়ে লিখে রেখেছে। তবে এ পর্যন্ত যে সব কাব্য প্রকাশ হয়েছ তার মধ্যেÑপাহাড়ে বসত বাড়ী, গায়েবের চিঠি ও বাসর জ্বালা এ তিনটি গ্রন্থের কবিতা বেঁচে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।
কবি আশরাফ মাহমুদের
বিশিষ্ট সাহিত্যিক, কলামিষ্ট ও কবি আশরাফ মাহমুদের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনি নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেবিদ্বার প্রতিনিধি এম.এ হালিম। সাক্ষাৎকারটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।
হালিম : বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আপনার নাম দেখতে পাচ্ছি। আপনি অনেক কবিতা লিখেছেন। এ লেখা কখন থেকে শুরু করেছেন ? এর প্রেরণা কি ছিল ? এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
কবি : আমি তখন অষ্টম - নবম শ্রেণীর ছাত্র। মূলত এর প্রেরণা ছিল ঐশী প্রেম। কেউ অন্যায় করলে তা আমি মৌখিক প্রতিবাদ করতে পছন্দ করতাম না। তাই খাতায় লিখে এর প্রতিবাদ করতাম। অর্থাৎ তখন থেকেই দুই দুই লাইন করে ছন্দবদ্ধ লাইন বানিয়ে তার মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতাম। এটি-ই আমার কাছে ভাল লাগত। এতে মনে তৃপ্তি হতো। আর এভাবে লিখতে লিখতেই এক সময় কবিতার জগতে প্রবেশ করলাম। জানলাম কবিতার শাখা-প্রশাখা।
হালিম: আচ্ছা, কবিতার কি শাখা-প্রশাখা আছে ? তা কী রকম একটু বলুন।
কবি: অবশ্যই আছে। মুক্তক ছন্দ, অমিত্রাক্ষর ছন্দ, পয়ার, স্বরবৃত্ত ইত্যাদি।
হালিম: আপনার এই পর্যন্ত কতগুলো বই বের হয়েছে ? প্রথম কাব্যগ্রন্থ আপনার কত সালে বের হয় ? তখন আপনার ছাত্রজীবন না কর্মজীবন ? আর আপনার বই গুলোর মধ্যে জনপ্রিয় কোন গুলো ?
কবি: ৯ টি । আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ -গোমতী নদী পাড়ে। এটি বের হয়েছিল ২০০০ সালে। তখন আমি ডিগ্রীতে পড়ি মাত্র। আমার সবগুলো বই-ই সমাদৃত হয়েছে। ব্যপার হচ্ছে বয়স ! অর্থাৎ কিশোর ও যৌবন প্রারম্ভে যারা তাদের কাছে আমার কিছু বই যেমন- গোমতী নদীর পাড়ে, কেমন আছ তুমি, ভুলে গেছ তুমি, নারী মন, নারী প্রেম, ভাল লেগেছে। তারপরে যারা, তাদের কাছে আমার- পাহাড়ে বসত বাড়ি, গাঁয়েবের চিঠি, বাসর জ্বালা, ভাল লাগছে।
হালিম: স্যার, আপনি ধর্ম বিষয়ে কোনো বই লিখেছেন ?
কবি: হ্যাঁ। সম্প্রতি -দরূদ শরীফের ফযিলত নামে আমার একটি বই বের হয়েছে। এটি ঢাকা রিয়া প্রকাশনী পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছে।
হালিম: আপনাকে ধন্যবাদ।
কবি: তোমাকে ও।