প্রস্তাবনা
কুমিল্লায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হোক
মমিনুল ইসলাম মোল্লা
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকটের ব্যাপাওে নতুন করে বলার কিছু নেই। উৎপাদনের সাথে চাহিদার পার্থক্য সারা বছরই লক্ষ্য করা যায়। কী শীত, কী গ্রীষ্ম কোন সময়ই লোড শেডিং বাদ যায় না; কখনও কম কখনও বা বেশি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার কুইক রেন্টালের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু এ ব্যবস্থাও বিদ্যুৎ সংকটরোধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫৭৫ ...তাই পিডিবির উদ্যোগে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কুমিল্লায় প্রাপ্ত গ্যাস দিয়ে একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বেসরকারি খাতের ২০টি কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের জন্য চুক্তি সই করে। এগুলোর বেশির ভাগই তেলভিত্তিক। এর মধ্যে চালু হয়েছে ১৭টি। সরকার আরো ১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চুক্তি সই করেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বেরের মধ্যে ১১ টি উৎপাদনে যাওয়ার কথা। সূত্র জানায় বর্তমানে যে পরিমাণ ভর্তূকি দেয়া হচ্ছে তাতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে লোকসান দিতে হবে আরো প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। একই সময় পর্যন্ত বিপিসির লোকসান হতে পারে আরো ১৮ হাজার কোটি টাকাপর বেশি। কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরকারকে উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তাদের ভর্তূকি দিয়ে জ্বালানী তেল সরবরাহ করতে হচ্ছে। এখাতে সরকার ডিজেলে ২৫ টাকা ও ফার্নেস অয়েল লিটার প্রতি ১২ টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। এতে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। ২৯ মার্চ সন্ধ্যা সাতটায় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর শ্রীকাইলে এসে এর উদ্বোধন করেন।
আমাদের দেশের অতি মূল্যবান সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস। এ গ্যাস বর্তমানে বিভিন্ন কাজে ব্যয় হচ্ছে। এ ব্যায়কে অনেকে অপচয় বলেও আখ্যায়িত করছেন। তবে একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। যারা বাসা বাড়িতে গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় আছেন তারা বলছেন অন্য কোন খাতে নয় আবাসিক ক্ষেত্রেই গ্যাসের সংযোগ দেয়া উচিত। অন্য পক্ষ বলছে আবাসিক নয় শুধু মাত্র শিল্প খাতেই গ্যাস সংযোগ দেয়া উচিত। বর্তমানে কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চলছে কয়লার মাধ্যমে। বড়পুকুরিড়য়া থেকে উত্তোলিত কয়লা প্রতিটন ৮৪ ডলার মূল্যে কেনা হচ্ছে। গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে খরচ কম পড়বে। কয়লা ছাড়াও তৈল এবং গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। উৎসভেদে তুলনামূলক ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের কিলোওয়াট প্রতি উৎপাদনমূল্য দাঁড়ায় সৌর বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ১৮-২৫ টাকা, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৬-১৮ টাকা ,কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬-৮ টাকা,এবং গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রে ৫ টাকা। জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎবিভাগ সূত্র জানায় , ১১ টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। কুমিল্লায় প্রাপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে অনায়াসে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হতে পারে।
 কুমিল্লার গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বাখরাবাদ ক্ষেত্রটি সবচেয়ে পুরুনো। ১৯৬৯ সালে তদান্তিন পাকিস্তান সরকার শেলওয়ে কোম্পানিকে এব্যাপারে দায়িত্ব দিলে গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। এটি সরু ও লম্বাটে। এটি লম্বায় ৬৯ কিলোমিটার ও প্রস্থে ১০ কিলোমিটার। এখানে মোট মজুদ গ্যাসের পরিমাণ ১.০৪৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট,(টিসিএফ)। ১৯৮৪ সালে বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। ২০০৯ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এখান থেকে সর্বমোট ৬৯৬.৫৯৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অর্থাৎ ৬৬% গ্যাস উত্তোলন হয়ে গেছে। বাখরাবাদের কনডেনসেট ও গ্যাসের অনুপাত ০.৭০ এবং পানি ও গ্যাসের অনুপাত ১৩.গ৮৮ বিবিএল/মিলিয়ন ঘনফুট। এখানকার কন্ডেনসেটকে প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রল, ডিজেল, তৈরি করা হয়। এ তেল মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এর মাধ্যমে বাজারজাত করা হচ্ছে। বাখরাবাদের ২ টি স্থানে মোট ৮টি ক‚প খনন করা হয়েছে। ক‚পগুলো চালু হবার পর সর্বোচ্চ গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ১৯৯২ সালে। যখন দৈনিক ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হতো। বর্তমানে ৫টি ক‚প চালু আছে। যা থেকে দিনে ৩৫-৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হয়। বাকি ৩টি জলাবদ্ধতার কারণে বন্ধ রয়েছে। এখানকার গ্যাস বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড নামে সারাদেশে সরবহা করা হচ্ছে। কুমিল্লার আরেকটি বিখ্যাত গ্যাসক্ষেত্র মুরাদনগরের বাঙ্গরা গ্যাসক্ষেত্র। আর্ন্তজাতিক ঠিকাদার অপারেটর কোম্পানি “তাল্লো বাংলাদেশ লিমিটেড ”বাঙ্গরা গ্যাস ফিল্ডে কাজ করছে। এ গ্যাস ফিল্ডের ৯নং বøকে গ্যাস অনুসধানের জন্য ২০০১ সালে পেট্রোবাংলার সাথে চুক্তি হয়। ২০০৪ সালে ১ নং ক‚পটি খননকালে বাঙ্গরা ক্ষেত্রটি আবিষ্কার হয় ২০০৬ সালের মে মাসে উৎপাদন কার্যক্রম চালু করা হয়। বর্তমানে ১০০-১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। কুমিল্লার দেবিদ্ধারে একটি গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে এটি গোপালনগর গ্যাস ক্ষেত্র নামে পরিচিত। গোপালনগর গ্যাস ফিল্ডের পাবলিক রিলেসন্সের ম্যানেজার মেজর (অবঃ) বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর উল্লাহ খান এর দেয়া তথ্যে জানা যায়-খনিজ তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং আহরণ বিশ্ববিখ্যাত যুক্তরাজ্যভিত্তিক অয়েল পিএলসি এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তাল্লো বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৯৭ সালে থেকে বাংলাদেশের ৯ নং নম্বর বøক থেকে (কুমিল্লা) অঞ্চলের তেল, গ্যাস, অনুস্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গোপালনগর গ্যাসফিল্ড থেকে উত্তোলিত হয়ে প্রায় ৪০-৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বাঙ্গরা গ্যাস ফিল্ডের নামে কিছুদিন উত্তোলিত হয়ে । তবে বর্তমানে এর উত্তোলন ও সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কুমিল্লার আরেকটি বিখ্যাত গ্যাস ফিল্ড হচ্ছে শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড। ২০০৫ সালে বাপেক্স শ্রীকাইলে একটি ক‚প খনন করে। খননের পর সেখান থেকে গ্যাস উঠতে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝেই গ্যাসের সাথে পানি আসতে থাকে ফলে এ ক‚পটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১২ সালের মে মাসে উপজেলার মোখলেসপুরে শ্রীকাইল ক‚প-২ খনননের কাজ শুরু হয়। ১০ জুলাই প্রাথমিক কাজ শেষ হয়। ১৩ জুলাই প্রথমবারের মতো আগুন দেয়া হয়। এসময় দেখা যায় প্রতিদিন ২য় স্তর থেকে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উঠছে। ভুগর্ভের ৩১ শ মিটার গভীরে খননের মাধ্যমে দেখা যায় এখান থেকে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব।এ স্তর থেকে প্রতিদিন ১ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস উত্তোরন করা যাবে। শ্রীকাইলে গ্যাসানুসন্ধান করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি  লিমিটেড। পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান ড.হোসেন মনসুর আশা প্রকাশ করেন এ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে এ ক্ষেত্রের গ্যাস বাণিজ্যেকবাবে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে । এ  ক্ষেত্রের গ্যাস শিল্প ,গ্যাস, সার ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার করা যাবে।
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ কম। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখাতকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। আর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বাড়াতে হলে গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বাপেক্সের মাধ্যমে নতুন ক‚প খনন ও পুরনো কুপ সংসকারের উদ্দোগ নিলে এতদিনে আরো ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস পাওয়া যেত। এর মাধ্যমে ১০টি ক‚প থেকে উত্তোলিত গ্যাসের মাধ্যমে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কিন্তু বাপেক্সকে দায়িত্ব না দিয়ে দ্রæত গ্যাস অনুসন্ধানের অজুহাতে বিদেশিদের সুযোগ দিয়ে ফার্স্ট ট্রাক প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রোগ্রামটি ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু টেন্ডার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আড়াই বছরেও কাজ শুরু করা যায়নি। ২৬শে এপ্রিল ২০১২ সালে তাড়াহুড়ো করে ২০ মাসে কাজ সম্পন্ন করার টার্গেট দিয়ে রাশিয়ার কোম্পানি “গ্যাজপ্রেমকে”দায়িত্ব দেয়। তাদের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয় বলে জানা যায়। কুমিল্লায় প্রাপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দোগ নেয়া হলে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের সরবরাহ আগের তুলনায় বাড়ানো যেত। সরকার এব্যাপারে দ্রæত পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক , (দৃষ্টান্ত ডট কম), 





শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.