ভাতের চাহিদা মেটাতে পারে আলু
মমিনুল ইসলাম মোল্লাএবছর মার্চ মাসের শুরু থেকেই আলুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত বছর মার্চ মাসে আলুর দাম ছিল আড়াই থেকে তিন টাকা কেজি। এবছর মার্চ মাসে হয় ১০/১২ টাকা। মার্চ মাসের প্রথম দিকে যখন আলুর দাম বাড়তে শুরু করে ব্যবসায়ীরা তখন বলেছিলেন -এখন আলু সংরক্ষণের মৌসুম । বাজারে সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম কিছুটা বাড়ছে। মার্চ গেল - এপ্রিল গেল - আলুর দাম আর কমছে না। বরং বেড়েই চলেছে। কারণ আলু এখন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এর হিসেবায়ানুযায়ী আলুর মাসিক মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশের বেশি। মধ্যসত্বভোগী মৌসুমি ব্যাবসায়ী, ও হিমাগার ব্যবসায়ীরা আলুর লাভ নিচ্ছে। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভের পুরোটাই যাচ্ছে তাদের পকেটে।উৎপাদন মৌসুমে কারসাজির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে নেয় এখন ওরা নিজেদের ইচ্ছে মত চড়া দামে আলু বিক্রি করছে।কৃষকের হাতে এখন আলু নেই। কোল্ড স্টোরেজ চার্জ বেশি হওয়ায় এবং বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে পঁচে যাওয়ার ভয়ে ক্ষুদ্র ব্রবসায়ী ও কৃষকরা এবছর তেমন একটা আলু সংরক্ষণ করেননি। এছাড়া গত বছর আলু সংরক্ষণ করে লোকসান হওয়ায় তারা আলু সংরক্ষণে মনযোগী হন নি। ফলে বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট লাখ লাখ বস্তা আলু গুদামজাত করে পরিকল্পিতভাবে আলুর দাম বাড়াচ্ছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ও উৎপাদন অধিক মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, বগুড়া, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ,ও ময়মনসিংহে। এসব অঞ্চলে দেশী, মূলটা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, আরিন্ডা, গ্রেনেলা, হীরা, ক্লিওপেট্রা, বিনেলা, ধীরা, ও চমক জাতের আলু উৎপাদিত হয়। এসব আলুর গড় উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ টন। তবে ২০১০ সালে হেক্টর প্রতি উৎপাদিত হয়েছে ১৮ মেট্রিক টন। ২০১১ সালে হয়েছিল ১৪ মেট্রিক টন। এক একর জমিতে আলু উৎপাদনে গোবর সার ১৩৪০ কেজি , ইউরিয়া ৩৮ কেজি, টিএসপি ২৫ কেজি ,এমপি ৩৮ কেজি জিংক সালফেট ২ কেজি জিপসাম ১১ কেজি বোরাক্স ১.৫ কেজি এবং ম্যাগনেশিয়াম সালফেট লাগে ১৪ কেজি। এবছর সুলভে সার ও পানি পাওয়ায় আলুর ফলন ভাল হয়েছে। কৃষকদের বক্তব্য হচ্ছে-তাদের নিকট থেকে কম দামে আলু কিনে এখন ব্যবসায়ীরা মজুত করে এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন।ভরা মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে আলু বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০০-২৫০ টাকা মন। এখন সে আলু ২/৩গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সূত্র মতে ২০১০ সালে আলুর উৎপাদন ছিল ৮৪ লক্ষ মেট্রিক টন, কোল্ড স্টোরগুলোতে মজুদ করা হয়েছিল ২৬ লাখ টন, ২০১১ সালে মজুদ করা হয় ৩৬ লাখ টন। গত বছর আলুতে উৎপাদন খরচ না উঠায় এবছর কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহী হয় নি। রংপুরের ৮ জেলায় গত বছর ৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও এবছর আবাদ হয় ৫ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে। গোল আলুর পুষ্টি উপাদানের দিকে খেয়াল রেখেও বর্তমানে জনসাধারণ আলুর ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই বাজারে আলুর চাহিদা বাড়ছে আর চাহিদা বাড়লে দাম বাড়া স্বাভাবিক।পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে আলুতে শতকরা ৭৮ ভাগ পানি, ১৮ ভাগ শ্বেতসার, ২ ভাগ প্রোটিন, ০.১ ভাগ চর্বি, এবং শতকরা ১ভাগ আঁশ, ও এক ভাগ আকরিক বস্তু আছে। এছাড়া ক্ষারজ লবন, ফসফরাস, গন্ধক, তামা, লোহা ,ভিটামিন সি ও স্বল্প পরিমাণে ভিটামিন এ আছে।
বাংলাদেশের আলুর গুনগত মান ভাল হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে জানা গেছে-ইতালি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্য, শ্রীলঙ্কা, কুয়েত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, বাহরাইন, মায়ানমার, ও রাশিয়ায় বাংলাদেমের আলুর চাহিদা রয়েছে।আলু রপ্তানীর মাধ্যমে ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ১৬ লাখ ডলার, ০৮-০৯ অর্থ বছরে ৭০ হাজার ডলার, ০৯=১০ অর্থ বছরে ৩৪ লাখ ডলার, এবং ১০-১১ অর্থ বছরে আলু রপ্তানী করে আয় করা হয ১৬ লাখ মার্কিন ডলার।