স্বপ্নের থ্রিজি কতটুকু আশা মেটাবে!
মমিনুল ইসলাম মোল্লাবাংলাদেশের শহর-গ্রাম সব যায়গায় বর্তমানে থ্রিজি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। সেপ্টম্বরে তৃতীয় প্রজন্মের ( থিজি) মোবাইল নেটওয়ার্ক সর্ভিস চালুু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। জিপি ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে ও ঢাকায় থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করেছে। এপ্রিল ১৪ এর মধ্যে সারা দেশে তারা এ নেটওয়ার্ক চালু করবে। বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া , ফেসবুকের মাধ্যমে থ্রিজি সম্পর্কে সবাই অবগত হচ্ছেন এবং কবে থেকে সেসব সুবিধা পাওয়া যাবে সেসব খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। মোবাইল ও ইনটারনেট ব্যবহারকারীরা আর দেরি করতে চাচ্ছেন না। থ্রিজি বলতে থার্ড জেনারেশনকে বুঝায। এটি তারবিহীন যোগাযোগের ব্যবস্থা। বাংলাদেশে বর্তমানে টুজি সিস্টেম চালু আছে। টুজি এর সাধারণ রপ হলো জিএসএম ও সিডিএম। অন্যদিকে থ্রিজি এর রুপ হলো ইউএমটিএস, ডবিøউ সিডিএমএ, ইভিডো। প্রথমে জাপানে থ্রিজি সার্ভিস চালু করা হয়। ২০০৬ সালে তা চালু হয় শ্রীলংকায়। ১৯৮০ সালের গোড়ার দিে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের গবেষণার মাধ্যমে থ্রিিিজ প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটে। প্রায় ১৫ বছর গবেষণার মাধ্যমে এর উন্নয়ন ঘটে। ১৯৯৮ সালে প্রথম প্রাক-বাণিিিজ্যক থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে জাপানের কোম্পানি এনটিটি ডোকোমো। এর বাণিজ্যিকিীকরণ করা হয় ফোমা নামে।
থ্রিজির সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে হলে গ্রাহককে অবশ্যই থ্রিজি সাপোর্টেড সেট কিনতে হবে। মোবাইল সাপ্লইয়ার্স এসোসিয়েশনের মতে, ২০০৭ সালের ডিসেম্বর অনুযায়ী বিশ্বের ৪০ টি দেশে ৯০টি থ্রিজি নেটওয়ার্ক এবং ৭১টি দেশে ১৫৪ টি এইচএসডিপিএ নেটওয়ার্ক চালু আছে। এশিয়া, ইউরোপ, কানাডা, ও যুক্তরাষ্ট্রে টেেিযাগাযোগ কোম্পানিগুলো থ্রিজি সেবা প্রদানের জন্য ডাবøু-সিডিএমএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।থ্রিজির জন্য খরচ হতে পারেঃ গ্রমাীণ ১ গিগাবাইট-৪৫০ টাকা- ৩০ দিন। রবি ১ এমবিপিএস ৫০ টাকা- ৩০ দিন, বাংলা লিংক ১.২৪ গিগাবাইট ৫০০ টাকা -৩০ দিন। থ্রিজি নিয়ে আমাদের উচ্চাশা থাকলেও এখন যেমন নেটওয়ার্ক বিজি থাকে তখনও সমস্যা হতে পারে। তবে নন্যুতম গতি ০.০২ এমবিপিএস এর কম হবে না। তাই গ্রাহকদের সুবিধার্থে নেটওয়ার্ক নিয়ে এখনই অপারেটরগুলোর চিন্তা করা উচিত। রবির এজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন তাদেন একজন সাধারণ গ্রাহক ৭.২ এমবিপিএস স্পিড পাবেন। আমাদের দেশে থ্রিজি চালুর আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ডিভাইস। এদেশের মাত্র ১০ শতাংশ ডিভাইস থ্রিজি নেটওয়ার্কের উপযুক্ত। থ্রিজিতে ভিডিও কলিং এর রেটও বাড়বে । বর্তমানের চেয়ে তখন গ্রাহককে এজন্য ৪/৫ গূণ বেশি বিল রিশোধ করতে হতে পারে। এশীয় দেশগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে অনুমান করা যায় থ্রিজি সার্ভিসে ১ জিবি ডাটার মূল্য ২৫০-৩৫০ টাকার মধ্যে হবে।
থ্রিজি সাধারণত ৩টি প্রযুক্তিতে গঠিতঃ সিডিএমএ ২০০০, টিডি-এসসিডিএমএ, ডাবøু সিডিএমএ (ইউএমটিসি)। প্রথম ইউরোপীয় প্রাক-বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ছিল ইউএমটিএস নেটওয়ার্ক। আইল অফ ম্যানে এটি চালু করে ম্যাংক্স টেলিকম এবং প্রথম ২০০১ সালের ডিসেম্বেরে প্রথম বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক চালু করে টেলিনর। ২০০২ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়া এসকে টেলিকম প্রথম বাণিজ্যিভা বে সিডিএমএ ভিত্তিক ১ গূণ ইভিডিও প্রযুক্তি চালু করে। মে মাসের মধ্যে টেলিযোাগাযোগ কোম্পানি কেটি দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে। ফলে কোরিয়ার জনসাধারণই প্রথম এর নেটওয়ার্কিং সুবিধা লাভ করে। আইটিইউর নীতিমালা অনুসারে থ্রিজিতেকমপক্ষে ২ এমবিপিএস স্পিড স্থায়ীভাবে থাকতে হবে। আর চলন্ত গাড়ীর জন্য এই সীমা সর্বনি¤œ ৩৮৪ কেবিপিএস হতে হবে। থ্রিজি থেকে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ’ শব্ধটির উৎপত্তি ঘটেছে। কারণ এর গতি এবং ক্ষমতা এটিকে ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর টেকসই বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলেেেছ। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম সিডিএমএ ২০০০*১ ইভিডিও ভিত্তিক থ্রিজি নেওয়ার্ক চালু করে মোনেট মোবাইল নেটওয়ার্ক কিন্তু তারা পরবর্তীতে তাদের সেবা বন্ধ করে দেয়। ২০০২সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে ভেরিজন ওয়ারল্যাস। জাপানী কোম্পানী এনটিটি ডোকমো ২০০১ সালের মে মাসে ডাবøু সিডিএমএ এর জন্য পরীক্ষামূলকভাবে থ্রিজি চালু করে। এটি চালু করে ২০১১ সালের ১ অক্টোবর। থ্রিজি চালুর ব্যাপারে বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম থিজি চালু করে টেলিটক কোম্পানি। ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশে থ্রিজির যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তারা ৩.৭৫ জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকা , গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, ফরিদপুর, ফেণী, কুমিল্লা, বগুড়া, বরিশাল, রাজশাহী, যশোর, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, দিন্জপুর, ও গোপালগঞ্জে এ কোম্পানির গ্রাহকগণ থ্রিজি নেটওয়ার্ক সুবিধা পাচ্ছেন।
থ্রিজি প্রযুক্তি আমাদের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। শিক্ষা , গবেষণা, শিল্প, কৃষি, ও সেবাখাতসহ সব ক্ষেত্রেই এর ব্যাপক ব্যাবহার নিশ্চিত করবে। ব্যাংকিং খাতে থ্রিজির সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশে ও বিদেশে উভয় যায়গায় গ্রাহকদের সাথে কনফারেন্স কলগুলো সহজ ও দ্রæততর হবে। মোবাইল কল সেন্টারগুলো আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। কুমিল্লার ডিম বিক্রেতা আলিম বলেন, মাত্র কয়েক টাকা খরচ করে আমি সকাল বেলা কোন্ যায়গায় ডিমের দাম কম তা জেনে সেখান থেকে ডিম কিনে এনে তা বিক্রি করে প্রতিদিন কয়েকশ টাকা বেশি রোজগার করতে পারি। যে সব পরিবারের বিদেশে আত্মীয় স্বজন আছে তাদের জন্য এটা বিশেষভাবে উপকারী হবে। এখন যারা স্কাইপি ব্যবহার করছেন তাদের কলরেট উল্লখযোগ্য হারে কমে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ সুব্রত কুমার আদিত্য বলেন, একদিন এমন সময় আসবে প্রযুক্তির বিকাশের ফলে আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা পিঠে ভারি ব্যাগ নিয়ে স্কুলে না গিয়ে ট্যাব নিয়ে যাবে। থ্রিজি প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি ইন্টারনেটে বন্ধুর সাথে ভিডিও গেমস খেলতে পারবেন। আইপি টিভি দেখতে পারবেন। স্মার্ট ফোন থেকে ভিডিও কল করতে পারবেন। এর কারণ হলো থ্রিজি স্পেক্টাম দ্রæত গতির ব্যান্ডউইথ সেবা দিবে। এছাড়া ইমেজ এডিটিং, খেলা দেখা, মুভি ট্রান্সফার, ভিডিও ক্লিপস, আদান- প্রদান সম্ভব। টুজি ও থিজি নেটওয়ার্কের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই অপারেটরদের সম্পূর্ণ নতুন লাইসেন্স, নেটওয়ার্ক এবং কম্পাংক স্থাপন করতে হয়। এছাড়া প্রেরক হার্ডওয়ারের উন্নয়ন ও ব্যায়বহুল বিশেষ করে ইউএমটিএস এর জন্য অধিকাংশ সম্প্রচার টাওয়ার এর প্রতিস্থাপন প্রয়োজন । ২০০৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশ যখন ৩০০ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রথমবারের মতো সিমিউই-৪ সাবমেরিন ক্যাবলে ৮ জিবিপিএস সংযোগে যুক্ত হয় তখনই থ্রিজির জন্য ম্যাচুরিটি লাভ করে। আমাদেরে দেশে যে সিস্টমে থ্রিজি চালু করা হচ্ছে তা অন্যদেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশে প্রথম থ্রিজি চালু করেছে টেলিটক। স্পিড ও ডাটার উপর নির্ভও করে টেলিটক বিভিন্ন প্যাকেজ বের করেছে। ২৫৬ কেবিপিএস এথকে শুরু কওে ৪ এমবিপিএস পর্যন্ত নানা প্যাকেজে ছেড়েছে। পৃথীবীর অধিকাংশ মোবাইল অপারেটর এমন স্পিড নির্ভর প্যাকেজ বের করেনা। গ্রাহক কতটুকু স্পিড পেতে পারেন তার কোন সীমা বেঁধে দেয়া থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে তাই করা হচ্ছে। বর্তমানে ৪টি কোম্পানি থ্রিজি নিয়ে কাজ করছে। আগামী ৯ মাসের মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলো থ্রিজির আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিটিঅরসির বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
যোগাযোগ খাতে থিজির অবদান অনন্য। একজন গ্রাহক কতগুলো নতুন সুবিধা পাবেন, যা কিছুদিন আগেও তার কাছে অকল্পনীয় ছিল। এ প্রযুক্তি শুধু মাত্র অর্থনীতিতেই নয় শিক্ষা, গবেষণা, কৃষি ও সেবা খাতসহ সর্বত্র ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গ্রামের একজন অর্ধ শিক্ষিত মানুষ নিজের কুড়েঘড়ে বসে থেকেই যে কোন দেশে থাকা তার পরিচিতজনের খোজ-খবর সহজে নিতে পারবেন। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষিত যুবকগণ টিভি দেখা, ইমেজ এডিটিং, মুভি ট্রান্সফার, খেলা দেখা, ভিডিও ক্লিপ বন্ধু- বান্ধবের সাথে সহজেই আদান-প্রদান করতে পারবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশে এখন ফোরজি চলছে তাই আমরা যদি থিজি চালু করতেই হিমশিম খাই; তাহলে তথ্য প্রযুক্তিতে আমরা অনেক পিছিয়ে যাব। তাই এ ব্যপারে কালবিলম্ব করা যাবে না।
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের ক্যাম্পেনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক,সহকারী সম্পাদক,দৃষ্টান্ত ডট কম কুমিল্লা।
