নার্সারি ব্যবসায় মডেল কুমিল্লার মুরাদনগরের আঃ মালেক
মমিনুল ইসলাম মোল্লাকুমিল্লার মুরাদনগরের বাখরনগরে নার্সারি করে জীবনের সফলতা পেয়েছেন এক কৃষক। তার নাম আঃ মালেক। তিনি এখন এই এলাকার নার্সারি ব্যবসার মডেল। মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জের ২ কিলো মিটার উত্তরে তার নার্সারিটি আবস্থিত। তিনি তার নার্সারির নাম দিয়েছেন বনফুল নার্সারি। চারার গুণগত মান ভাল হওয়ায় চাহিদা বেশি। এ নার্সারির সুনাম মুরাদনগর ছাড়িয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলা দেবিদ্বার , হোমনা ও নবীনগরে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সকাল- –বিকাল পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা এ নার্সারিতে ভীর জমায়। কথা হয় পাইকারি বিক্রেতা আঃ কাদেরের সাথে, তিনি বলেন -আমি প্রায় ১০ বছর ধরে এখান থেকে চারা নিয়ে বিক্রি করি। এ পর্যন্ত কোন ক্রেতা চারা নিয়ে কোন অভিযোগ করেননি। তাই এখান থেকে নিযমিত চারা নিয়ে নিশ্চিন্তে বিক্রি করছি। চারা তৈরি , পরিচর্যা ও বিক্রির কাজে সারা বছর ২ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। গোলাম মোস্তফা ও মোর্শেদ মিয়াকে মালেক প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা বেতন দেন। এছাড়া তার কাজে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী রাজিয়া। তিনি ছোটকালথেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি এখন ও ৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি গাছের চারা তৈরি করেন। আব্দুল মালেক বলেন তার ভায়রা ভাই ফরেস্টে চাকুরি করতেন । তার অনুপ্রেরণায় ১৯৭৩ সালে মাত্র ২৮ টাকা দিয়ে ঢাকার চক মার্কেট থেকে মেহগনি , জলপাই , আর রেন্ট্রি গাছের বীজ কিনে আনেন। সেই থেকে শুরু আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে নার্সারির পরিধি বাড়িয়েছেন। ১৯৭৭ সালে ৫০০০ চারা উৎপাদন করেন। এক বছর পর তা বৃদ্ধি করে ১০০০০ এ উন্নিত করেন। বর্তমানে ১১০ শতক জমিতে লক্ষাধিক গাছের চারা রয়েছে বলে তিনি জানান। এখন তার নার্সারিতে বারমাসি আম, আ¤্রপালি , লংড়া , ফজলী , হিমসাগর , সফেদা , লিচু , কাঁঠাল , জলপাই , আঙ্গুর , কামরাঙ্গা , ডালিম , কাগজী লেবু , মেহগনি , রেন্ট্রি , শিলকড়ই , একাশি বেলজিয়াম , অজৃুন , নিম , হরতকি , বয়রাসহ মোট ৫০ প্রজাতির গাছ রয়েছে।
তিনি জানান, নার্সারি ব্যবসায় ২৫ % লাভ হয়। যে কেউ নাসৃারি ব্যবসা করতে পারেন। এর জন্য বিশেষ কোন প্রশিক্ষণ লাগেনা। তবে জমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে সেটি হলো পানি নিষ্কাষণ সুবিধাযুক্ত জমি। যাতে সহজে পানি না জমে। চারা উৎপাদনের জন্য দোঁআশ মাটি উপযুক্ত। জমিতে প্রচুর পরিমাণে আলো বাতাস লাগতে হবে। রাস্তার পাশে হলে আরো ভালো। এতে প্রয়োজনীয় মালপত্র যেমন- মাটির পাত্র , বেড়া দেয়ার সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি ইত্যাদি পরিবহনে সুবিধা হবে। এছাড়া নার্সারির চারা বাজারজাতকররণে ও সুবিধা হবে। নার্সারির কাছে মিস্টি পানির আধার থাকা জরুরি। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও রোদ্র নার্সারির চারার জন্য ভাল নয়। তাই জমির উপরে শেড থাকলে ভাল। তবে সব সময় শেড দিয়ে রাখা যাবেনা। বিক্রির জন্য উত্তোলিত চারা শেডে রাখতে হবে। চারা উৎপাদনের জন্য তৈরি মাটিতে প্রচুর পরিমান জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। পশু পাখির হাত থেকে চারা রক্ষার জন্য পাহাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিস জানায় , মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মুরাদনগরের যে কোন বেকার যুবক নার্সারি ব্যবসা করতে পারে। এজন্য নি¤োœল্লিখিত যন্ত্রপাতি লাগবেঃ কোদাল ২টি ৪০০ টাকা , ঝরণা ২টি ২০০ টাকা , নিড়ানিণ ২টি ৬০ টাকা , চালনি ১টি ৫০ টাকা , নলকুপ ১টি ৩০০০ টাকা , ভ্যান একটি ৫০০০ টাকা , শাবল ২টি ২০০ টাকা , কাঁচি ২টি ২০০ টাকা , পাইপ ৩টি ৯০ টাকা , ছুরি /দা ২টি ১২০ টাকা , বালতি ৩টি ৩০০ টাকা , ঝুড়ি ২টি ৬০ টাকা , বদনা ২ টি ৬০ টাকা , বাঁশ ৫০ টি ৫০০০ টাকা । এছাড়া লাগবে বীজ ২০০০ টাকা , সার ২০০০ টাকা , কীটনাশক ১০০০ টাকা , গোবর ২০০ টাকা পলিথিন –প্রয়োজনমতো । তবে এপর্যন্ত ২ বার আঃ মালেক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। ১৯৮৮ সালের বন্যায় নষ্ট হয় ৮ লাখ টাকার চারা। ১৯৯৮ সালের বন্যায় মারা যায় ৫ লাখ টাকার চারা। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। জনগণের ভালবাসা নিয়ে এগিয়ে গেছেন। বিটিভির” মাটি ও মানুষ ” প্রোগ্রামে তার নার্সারি ব্যবসার সাফল্যচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি বলেন -” বর্তমানে অনেক নার্সারি কম দামে নকল বীজের চারা বিক্রি করছে। বন বিভাগ প্রতিটি নার্সারিকে নিবন্ধনের আওতায় এনে প্রতারক নার্সারি মালিকদের শাস্তির ব্যবস্থা করলে নার্সারি মালিকদের পাশাপাশি জনসাধারণ ও উপকৃত হবে।”
লেখক ঃপ্রভাষক ও সাংবাদিক , কুমিল্লা।