কুমিল্লার মুরাদনগরের গর্ব রহিমপুর অযাচক আশ্রম

কুমিল্লার মুরাদনগরের গর্ব রহিমপুর অযাচক আশ্রম

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার মুরাদনগরের রহিমপুর অযাচক আশ্রম। বাংলা ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ, ইংরেজী ১৯৩১ খৃষ্টাব্দে কুমিল­া শহর থেকে প্রায় ৬০ কিঃ মিঃ দূরে মুরাদ নগর থানার রহিমপুর গ্রামে এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অখন্ড মন্ডলেশ্বর শ্রী শ্রী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন সমাজ সংস্কারক মানবতাবাদী এক মহান গুরু। তার মূল জন্মস্থান চাঁদপুরে। জ্ঞান অন্বেষা ও মানুষের কল্যাণে তিনি পরিব্রাজক হয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তখন ঘুরতে ঘুরতেই এই গ্রামে মানুষের কল্যাণে কিছুদিন কাটিয়েছেন। তখন তিনি ছোট আকারে এখানে আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। আশ্রম গড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ সাধন।কুমিল্লা অঞ্চলে এ প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় এবং সমাজসেবামূলক কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী শ্রীমৎ স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব। হিন্দু ধর্মের নির্দিষ্ট কোন প্রবর্তক নেই, তাই পশু-পাখি, গাছ-পালা ও গুরুদেবের পূজা করা হয়। কেউ কেউ বলেন, ত্রেত্রিশ কোটি দেবতার পূজা করা হয়। আবার হিন্দুদের মধ্যে কেউ কউ বলেন, মনূষ্য সৃষ্ট কোন কিছু মানুষের উপাস্য হতে পারে না। স্বামী স্বরূপানন্দ বলেছেন, ‘‘জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে এক ঈশ্বরকে ডাকার আরাধনাই উত্তম। এছাড়া শুধুমাত্র পুরোহিতের মাধ্যমে নয় ব্যক্তিগতভাবে সবাই সমবেত উপাসনা করবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। সত্তরের দশকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এই আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে অভিক্ষার মন্ত্র শিক্ষা দেয়া হয়। দেশের অধিকাংশ সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানই জনগণের বা ভক্তবৃন্দের দান-দক্ষিণায় পরিচালিত হয়। শ্রী শ্রীমৎ স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব এটি পছন্দ করেনি। তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করলে নতুন ধরণের সমবেত উপসানালয় ও সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান। তিনি ঘোষণা করলেন-‘‘অভিক্ষার মন্ত্র’’,  নাম দিলেন ‘অযাচক আশ্রম’। আশ্রম আঙ্গিনায় ১৯৩১ সালে একটি গর্ব মন্দির প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এ মন্দিরে ওঙ্কার (ওঁ) বিগ্রহ রয়েছে। এখানে প্রতিদিন দুবার উপাসনা করা হয়। এ আশ্রমে কর্মী কমল দেবনাথ এসেছেন বরিশাল থেকে। বরিশাল বি.এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স করে গুরুজীর সেবার জন্য এসেছেন। তিনি আশ্রমের প্রকাশনা ও লাইব্রেরীর দায়িত্বে রয়েছেন। আশ্রমের কম্পিউটারের কাজ তিনি করে থাকেন। তবে তার বয়স কম, সোম্য চেহারা। বলে­ন এখনো ঠিক করেনি ব্রহ্মচারী হবেন না সংসারী হবেন। আশ্রমের পাশেই নিজের বাড়ি রয়েছে কর্মী সুজিত সাহার। মধ্যম বয়সী এই কর্মী জানালেন ক্লিনিকে ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারীকে তিনি সাবর্ক্ষণিক সহযোগিতা করছেন। সেচ্ছাসেবক হিসাবে তিনি এখানে কাজ করেন। এর জন্য তিনি কোন পারিশ্রমিক নেন না। তিনি জানান, আমাদের সংসার আছে, বৌ বাচ্চা আছে, অন্য কাজ কর্মও আছে, আমি ব্রহ্মচারী নই। 
অযাচক আশ্রমটি চলছে মূলত তার নিজস্ব আয়, বই প্রকাশনা ও বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায়। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী জানালেন অযাচক শব্দের অর্থ কারো কাছে কোন কিছু যাচা বা চাওয়া নয়। নিজের যে সম্পদ আছে এবং নিজস্ব সম্পদ বাড়িয়ে তা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা। এ লক্ষে তারা বিভিন্ন মাছ চাষ, গবাদী পালন বিভিন্ন প্রকার কৃষি করে আয়ের ব্যবস্থা করছেন। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী বলে­ন, 'আমাদের আশ্রমে আরেকটি প্রজেক্ট আছে তা হলো চরিত্র গঠন। আধ্যাত্মিক বা সামাজিক বিশ্বাস তার যাই হোক সে যদি ভাল মানুষ হয়, তাহলে সমাজের জন্য জাতীর জন্য সে তার কিছু সময় ব্যয় করবে'।প্রতি বছর ৬ ও ৭ মাঘ এখানে আগমনী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি শুক্রবার সমবেত প্রার্থনা ও নামজপ করা হয়। সমবেত উপাসনার দীক্ষা দান ছাড়াও এখান থেকে সুলভ মূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। আশ্রমের অধ্যক্ষ নিজেই রোগীদের চিকিৎসা দেন। তিনি এমবিবিএস পাস করে ১৯৮৫ সালে থেকে বর্তমানে মাত্র ১০ টাকা ভিজিটে ব্যবস্থা দিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন ৩/৪ হাজার টাকার ঔষধ বিনামূল্যে গরীব রোগীদের দেয়া হয়। ঔষধ বিক্রির সাথে জড়িত কয়েকজন বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিদিন আশ্রমে সেবা দিচ্ছেন। আশ্রমের মাধ্যমে মেধাবী ও গরীব ছাত্রদের সাহায্য করা হয়। কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে সাহায্য দেয়া হয়। আশ্রমের ভেতরেই রয়েছে কৃষি, মৎস এবং মোমবাতি ও আগরবাতি তৈরীর কারখানা। এগুলো থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে আশ্রমের যাবতীয় ব্যয় সরবারহ করা হয়। মাষ্টারদা সূর্যসেন ত্রিশের দশকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করেন। এ আন্দোলন ছিল ক্যাডারভিত্তিক। আন্দোলনের কর্মীদের স্বামী স্বরূপানন্দের ‘কর্মের পথে’ বইটি পড়া বাধ্যতামূলক ছিল। আন্দোলনকারীরা এ বইয়ের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা পান। এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায়। বৃটিশ সরকার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মন্ত্রণাদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। জেল থেকে বের হয়েও তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। য়লেখকঃগণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের ক্যাম্পেনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক, 



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.