ওসমান আলীর যুদ্ধ স্মৃতি

ওসমান আলীর যুদ্ধ স্মৃতি

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
যুদ্ধ ! শব্দটি শুনলেই আমরা আতকে উঠি আমাদের রক্ত হিম হয়ে যায়, চোখের সামনে ভাসতে থাকে শত শত আহত-নিহত মানুষের মুখচ্ছবি যুদ্ধ আশির্বাদ নয়-যুদ্ধ অভিশাপ তাই বিশ্ববাসী যুদ্ধ চায় না পৃথিবীতে পর্যন্ত যত যুদ্ধ হয়েছে এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অন্যতম
যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন দেবিদ্বারের ওসমান আলীশেষ জীবনে এলাহবাদে বসবাস করেন তিন্।  ৯৫ বছর বয়সেও স্পষ্ট মনে আছে সেই কথা
বয়সের কাছে হার না মানা এই লোকটি এখনও কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। এই বৃটিশ যোদ্ধাটি যুদ্ধ শেষে পাক সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেও বাঙ্গালীদের প্রতি নির্ম ব্যাবহারের র্র্প্রতিবাদ স্বরুপ পদত্যাগের কারণে ভাতা পাননি, মুক্তিযুদ্ধে সহযোগীতা করলেও সার্টিফিকেট না থাকায় পাননা মুক্তিযোদ্ধা ভাতাএছাড়া মেম্বার চেয়ারম্যানদের রোষানলে পড়ে বঞ্চিত হয়েছেন বয়স্ক ভাতা থেকেও | তবুও কারো বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ নেই; সব কিছুই ভাগ্যের লিখন বলে মেনে নিয়েছেন। এখন শুধু সুস্থ দেহে আর 'টি বছর কাজ করে যেতে চান, কেননা তার যে আরো অনেক কাজ পড়ে আছে। কাজ তাকে শেষ করতেই হবে
নতুন দেশ পেলেন দেশের নাম পাকিস্তান। তখন এক ঘোষণায় পশ্চিম পাকিস্তানী সৈনিকদের বেতন বাড়লো, বাড়েনি ওসমানীদের। তিনি সঙ্গীদের নিয়ে বৈষম্যের প্রতিবাদ করলেন কিছুতেই-কিছু হলোনা। শেষে রাগে ক্ষোভে ইস্তফা দিলেন

চাকুরী ছেড়ে চলে এলেন গ্রামের বাড়িতে। শুরু হলো অন্য এক জীবন। এলো ৭১ ওসমানী আবারো যেন যৌবন ফিরে ফেলেন এপ্রিল মাসেই | জাফরগঞ্জের যুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লা ক্যান্টেনম্যান্টে গমনকারী একটি দলকে সঙ্গীদের  নিয়ে আটকালেন জাফরগঞ্জে। পাক হানাদাররা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শ্রীপুকুর মসজিদে অবস্থান নিলে মরিচ প্রয়োগের বিশেষ যুদ্ধে ওসমান বাহিনী তাদের হত্যা করেন। পাক-আর্মির কমান্ডার মেজর আরমান ওসমানের হাতেই নিহত হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। ওই যুদ্ধে ৩৩ জন বাঙ্গালী শহীদ হয়েছিলেন। এখন সবই স্মৃতি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বঞ্চিত,  বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত বীর সৈনিক ওসমান। তিনি এখন দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন
দেবিদ্বারের নং জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের হোসেনপুরে এই মহানায়কের বসবাস। তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন ১৯১৩ সালে। ওসমান ধীরে ধীরে তার স্মৃতির পাতা উল্টাতে শুরু করলেন-জার্মানীর জাতীয়তাবাদী নেতা এডলফ হিটলার সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ পোলান্ড আক্রমন করে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সূচনা করেন তার সাথে যোগ দেয় জাপান ইতালী। অন্যদিকে পোলান্ডের পক্ষ সমর্থন করে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স বেলজিয়ামসহ আরো অনেকে। ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত যুদ্ধ চলে ওসমান শুরু থেকেই রণাঙ্গনে ছিলেন। তিনি ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। জাপানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক পড়ে ইয়াঙ্গুনে। | যুদ্ধের প্রায় শেষ পর্যায়ের কথা। স্থান: ইয়াঙ্গুন (রেঙ্গুন) দেশ-মায়ানমার (বার্মা) তখন জাপানী সৈনিকরা ওসমান বাহিনীর দিকে এগুচ্ছেন। ওসমানীদের কমান্ডার ছিলেন-মোছাদ্দের আলী। তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বল্লেন-যেভাবেই হোক জাপানীদের হটাতে হবে।
ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হলো। ১৭০০ সৈন্যের একটি দল নিয়ে ওসমান ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে অবস্থান নিলেন এক গহিন জঙ্গলে। মুখো-মুখি গোলা-গুলি আরম্ভ হলো। ওসমান তার বেরিনগানটি নিয়ে এগিয়ে গেলেন। হঠাৎ সহযোদ্ধা গোলাম জিলানীর কথায় সম্বিত ফিরে পেলেন-“এখনও ঠাওর পাওনা-তোমার টাঙ্কের (গোড়ালির) দিকে তাকাও।ওসমান দেখলেন প্রবল বেগে রক্ত বেরুচ্ছে। তখন বুঝতে পারলেন পায়ে গুলি লেগেছে। তখন দীর্ঘ মাস তাকে থাকতে হয়েছিল মায়ানমারের একটি সামরিক হাসপাতালে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার সহযোদ্ধা বুদ্ধদেব। | কত তারিখ তিনি আহত হয়েছিলেন বলতে পারবেন না। তবে হিরোসীমাতে আগস্ট এবং নাগাসাকিতে যে আগস্ট ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো হয়েছে তা তার সুস্পষ্ট মনে আছে। | কিছুদিন আগে এক রনক্ষেত্রে জাপানীরা ৫০ জন ভারতীয় সেনাকে মেরেছে। তাই তিনি জাপানীদের উপর বোমা হামলায় খুশী হন। কিন্তু যখন
শুনলেন মামলায় মারা গেছে নিরাপরাধ শিশু, বৃদ্ধ, মহিলাসহ প্রায় লক্ষাধিক লোক, তখন মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়েই উত্তেজিত হয়ে উঠেন-ওরা কেন মরবে ? ওদের কি দোষ ? যুদ্ধ শেষে ওসমানী দেশে ফিরে এলেন। তাদের পুরো ব্যাটেলিয়ান পাঠিয়ে দেয়া হলো নাজপুরে। কিছুদিনের মধ্যে ভারত বিভাগ হয়ে গেল।






শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.