আসিফ আকবরের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ,,,,,,,, ছাদ থেকে পড়ে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে সবমিলিয়ে চার মাস।বাসা থেকে শুধু বড়ভাইয়া থাকতেন আমার সাথে।সবারই পড়াশোনার ব্যস্ততা ছিল, উনাকেও চলে যেতে হতো। আমার বয়স তখন নয়। আশেপাশের রোগী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনরা আমাকে ভীষন আদর করতেন। তরুন ডা: ফারুক স্যার আমাকে নিয়েই পড়ে থাকতেন।রোগী মারা গেলে খুব ভয় পেতাম।আবার এও দেখেছি আমার পাশের বেডে একজন ধনুষ্টংকার রোগী মারা গেলে হাসপাতালের বাইরে উনার লেপ তোশকগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে।একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতাম।মাথায় গুরুতর ইনজুরী থাকায় হাঁটাচলা ছিল অসম্ভব।বাম দিক পুরোটাই ছিল অসাড়।
প্রতিদিন চব্বিশটা ইনজেকশন ছোট শরীরে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করতো।হাসপাতালের মমতাময়ী নার্স দিদিরা খুব লক্ষ্য রাখতেন আমার দিকে।চোখ খোলা থেকে বন্ধ করা পর্যন্ত উনাদের প্রানান্ত চেষ্টা থাকতো আমার যত্নআত্তিতে।শুধু ওয়াশরুমে যেতাম না ভাইয়া ছাড়া। আমার একলা পৃথিবীটা কেন্দ্রীভূত ছিলো কুমিল্লা সদর হাসপাতালের চৌহদ্দীতে।স্কুল থেকে বন্ধুরা দেখতে আসতো। সিস্টাররা তাদের দিকেও খেয়াল রাখতেন।অসহায়ের মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কোন কাজ ছিলনা।খুব কান্না আসলেও আওয়াজ করতে পারতাম না। অচেনা পরিবেশে অসহায়ত্বে চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যেত। সিস্টাররা বেডের চারিদিকে দাঁড়িয়ে আমাকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করতেন। পরম মমতায় খাবার খাওয়াতেন। আমার পৃথিবীতে সেই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলরা ছিলেন একেকটা সাদা পরী। ডিউটি শেষে কাপড় বদলে আবার আসতেন আমার কাছে।পরম মমতায় আদর করে সাহস দিয়ে যেতেন।
একটু সুস্থ্য হওয়ার পর সবাই জানলেন আমি গান গাইতে পারি। স্কুল থেকে গানের শিক্ষিকা কল্যানী সেন গুপ্তা আপা তার শিষ্যকে দেখতে আসতেন প্রায়ই, হাসপাতালের উল্টাদিকেই ছিল উনার বাসা।তিনি হাসপাতালেই গান গাইতে আদেশ করতেন।এরপর থেকে আমার কাছে সবাই গান শুনতে চাইতেন।আস্তে আস্তে আমি সুস্থ্য হতে থাকি। একসময় বাসায় চলে আসি।সিস্টাররা আমাকে মিস করতেন, তারাও আমাকে দেখতে চলে আসতেন। উনারা বাসায় আসলে মনে হতো আমার নিজের পরম আত্মীয়রা এসেছেন, খুব আনন্দিত হতাম।আমি আজো সেই পবিত্র পোশাক দেখলে খুব ইমোশনাল হয়ে যাই। পৃথিবীতে এতো পুণ্যের পেশা আর কোনটা আছে আমার জানা নাই।আমার পৃথিবীর একটা গোলার্ধ জুড়ে আছেন মহান পেশার সিস্টার ব্রাদাররা। আজ এই করোনাকালে আমি অনুভব করতে পারছি উনারা কি ভূমিকা রাখছেন।হাসপাতালে ঢুকে তারাই হয়ে যান রোগীর সবচেয়ে আপনজন। আমরা সুস্থ্য হয়ে ফিরে এসে মনেও রাখিনা তাদের কথা।আমার একজীবনের ঋণ রয়েছে সিস্টারদের কাছে।গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক নার্সেস ডে।এই মহান পেশার সবার প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
ভালবাসা অবিরাম...
