আম্মুর মৃত্যুর তিন বছর পুর্ণ হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট পৃথিবীকে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে হারাই। অাম্মুকে ছাড়া তিন বছর কীভাবে পার হলো ভেবে অবাক হই। অাম্মুকে ছাড়া আস্তে আস্তে বড় হওয়ার এই শুন্যতা কোনদিন পূরণ হবে কি না জানি না।
অামি বড় হলেও, চেহারার পরিবর্তন হলেও অাম্মুর ছবিটা অাগের মতোই অাছে। সেই সুন্দর হাসি, সুন্দর মুখ ছবির ফ্রেমে স্থির হয়ে গেছে। কোনোদিন ভাবতেও পারিনি জীবনের মাত্র ১৪ বছর অাম্মুর সাথে কাটাতে পারবো। অাম্মুকে না বলা কথা অনেক জমে অাছে মনে, হয়ত ভবিষ্যতে অারও জমবে। অাগের মতো বন্ধুদের সঙ্গে করে অাম্মুর কাছে নিয়ে অাসতে চাই, অাম্মুর হাতে খেতে চাই, অাম্মুর গলা জড়িয়ে ঘুমোতে চাই। নিজের হাতে খেতে ভালো না লাগলে অাবারও অাম্মুর হাতে খেতে চাই। দৈবাৎ দুর্ঘটনা প্রতি মানুষের জীবনে কম বেশি অাসে। কিন্তু কিছু কিছু দুর্ঘটনা এলাকার মানুষের মনে গভীর দাগ কেটে যায়। সেদিনকার ঘটনা তেমনি একটি ঘটনা। অাম্মুকে হঠাৎ করে হারানো অামার জীবনেও তেমনি বেদনাদায়ক ঘটনা। অাম্মু চলে যাওয়ার পর অনেক কিছুই বদলে গেছে। অাম্মুর সাজানো সংসার অাগের মতো নেই। অাগের মতো তার হাত ধরে নানা বাড়িতে যাওয়া হয় না। নানা বাড়িতে গেলেই নানা-নানি অামাদের দেখে কেঁদে উঠেন, তাকে নিয়ে বহু স্মৃতিচারণ করেন। তাদের বাড়িতে অাম্মুর বেড়ে উঠার গল্প, স্কুলে যাওয়ার গল্প, অার কত কি! এসব শুনে মনটা ভারী হয়ে ওঠে, চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। বার বার মনে পড়ে অাম্মু তো কোথাও বেড়াতে যান না, সেদিন যদি না যেতেন, তাহলে এভাবে পানিতে ডুবে মারা যেতেন না। সেদিন অামরা হারাই স্বপন অাংকেল ও তার প্রিয় একমাত্র কন্যা সওদা মনিকে। অারও হারাই বিল্লাল গনি ও তার স্ত্রী শিউলি অান্টিকে। তাদের স্বজনেরাও অামার মতো ব্যথাতুর মন নিয়ে বেচে অাছেন। তাদের দিকে তাকালে মনে হয়, অামিই ভাগ্যবান। অামার তো অাব্বু বেঁচে অাছেন। স্বপন অাংকলের স্ত্রীর তো স্বামী কন্যা কেউ বেঁচে নেই। বিল্লাল গনি অাংকেলের একমাত্র মেয়ে শর্মী অাপু কীভাবে বেঁচে অাছেন! তার তো পিতা মাতা কেউ নেই। প্রতি বছর বর্ষা অাসলে নৌকা ডুবির বহু ঘটনা ঘটে, অনেকে মারা যান। সকলে সামান্য সচেতন হোন তাহলে অনেকের প্রাণ রক্ষা হয়। পর্যটকবাহী নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা থাকা দরকার। অারও দরকার অতিরিক্ত যাত্রী তোলা বন্ধ করা। এসব বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া উচিত। সেসঙ্গে প্রতিটি স্কুলে সাঁতার শেখার জন্য সুইমিং পুল স্থাপন করা জরুরি।
আনিকা তাবাসসুম অর্পা
লেখকঃ পুর্বটেংরি গার্লস হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।
