মমিনুল ইসলাম মোল্লা
বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭৫.৬ শতাংশ হয়েছে ।‘পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ। আমি আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।মানবকেন্দ্রিক পুনরুদ্ধারের জন্য সাক্ষরতা : ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাবিশ্বে উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। আজ বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দেশের বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে যথাযথ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সাক্ষরতা ও জীবনমুখী দক্ষতা বৃদ্ধিতে বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথভাবে পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, দিবস উপলক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দিবসটির উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো মহাপরিচালকের বক্তব্য পেশ করা হবে। এছাড়াও দিবস উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, গোলটেবিল বৈঠক, বাংলাদেশ টেলিভিশনে টক-শো অনুষ্ঠান করা হবে। পাশাপাশি দেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসক স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলোচনা সভা করবেন। এ কারণে উপানুষ্ঠনিক প্রাথমিক ব্যুরো বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়া দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও দিবসটি পালন করবে। এর আগে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালের হিসাবে দেশে গড় সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ আর ২০২০ সালের তথ্যানুযায়ী দেশে এখন সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে করোনার মধ্যেও গত এক বছরে কোনো কার্যক্রম না থাকলেও সাক্ষরতার হার বেড়েছে দশমিক ৯০ শতাংশ।
করোনা মহামারির কারণে ১৭ মাস বন্ধ শিক্ষাব্যবস্থা। শ্রেণি কার্যক্রম ছিল না। এ কারণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কাও করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকারি তথ্য বলছে, করোনায় সাক্ষরতার হার বেড়েছে। গত এক বছরে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাঠ পর্যায়ে কোনো কার্যক্রম না থাকলেও বেড়েছে সাক্ষরতার হার। তবে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে সরকারি-বেসরকারিভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে মিরপুরের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দিনটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। বিশ্বব্যাপী সাক্ষরতার হার বাড়াতে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সাক্ষরতা ও জীবনমুখী দক্ষতা বৃদ্ধিতে বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭৫.৬ শতাংশ হয়েছে; যা ২০১০ সালে ৫৬.৮ শতাংশ ছিল।
মুজিববর্ষে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ২১ লাখ নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা প্রদানের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন আছে। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ বছর দিবসটির আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত প্রতিপাদ্য ‘লিটারেসি ফর হিউম্যান-সেন্টার্ড রিকভারি: ন্যারোয়িং দ্য ডিজিটাল ডিভাইড’। তিনি বলেন, জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন জরুরি। বিশেষভাবে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনশীল কাজে সম্পৃক্ত করে ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হয়। স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকার কর্তৃক প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে গণমানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাদের ভূমিকা সম্বন্ধে সচেতন করার লক্ষ্যে কার্যকরী সাক্ষরতা কর্মসূচি গ্রহণের সুপারিশ করা হয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য বয়স্ক ও গণশিক্ষাসহ উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী জানান, স্কুল থেকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী ও যারা কখনো স্কুলে পড়াশোনা করেনি এমন আট থেকে ১৪ বছর বয়সী ১০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে পাঠদান সম্প্রচার করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পৃক্ত রাখা হচ্ছে। সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান সরকার উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন ২০১৪ প্রণয়ন করেছে। এ আইনের আওতায় জীবন ও জীবিকায়ন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, উপ-আনুষ্ঠানিক ধারায় বৃত্তিমূলক, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২১-২০২৫) জীবনব্যাপী শিক্ষার বৈশ্বিক ধারণার দিকে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে সব নিরক্ষরকে মৌলিক সাক্ষরতা জ্ঞান দেওয়ার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইসিটি বেইজড জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট ৪-এ জীবনব্যাপী শিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
উত্তরফরওয়ার্ড |