মুক্তিযুদ্ধে মুরাদনগর-প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি
মমিনুল ইসলাম মোল্লা,
কুমিল্লা জেলার সর্ববৃহৎ
উপজেলা মুরাদনগর। এটি কুমল্লা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরেঅবস্থিত। এ উপজেলার আয়তন
৩৩৯ বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তরে নবীনগর দক্ষিণে চান্দিনা ও
দেবিদ্ধার পূর্বে দেবিদ্ধার, ব্রাহ্মনপাড়া ও কসবা
পশ্চিমে দাউদকান্দি, হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর
উপজেলা। বাংলাদেশের পুরাতন থানাগুলোর মধ্যে মুরাদনগর অন্যতম । ১৮৫৮ সালে এ থানা সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ থানার
রয়েছে গৌরবজনক ভূমিকা। যুদ্ধকালীন সময়ে কুমিল্লা ২ নং সেক্টর কে ফোর্সের আওতাধীন ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিঃ
২৫ মার্চ গণহত্যার পর পরই মুরাদনগরের জনসাধারণ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত
নেয়। তারা মুরাদনগরের বিভিন্ন গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করে। কাশিমপুরের কুদ্দুস কমান্ডারের
বাড়িতে বড় ধরণের ক্যাম্প ছিল। চাপিতলা গ্রামে ক্যাম্প ছিল রহমান ডাকাতার বাড়ি,
জহিরুদ্দিন ফকির বাড়ি,
আলীমুদ্দীনের বাড়ি,
ও তছনআলী ভূইয়া বাড়ি। এছাড়া
খামারগাও মাদ্রসা, দিগলদী গ্রামের দোতলা
বাড়িতে , রামচন্দ্রপুর সরকার
বাড়িতে, কৃষ্ঞপুর খোকন ভুইয়ার
বাড়ি, বৃন্দারামপুর বড়বাড়ি,
ফোগরারচর হিন্দু বাড়ি,
জাহাপুর জমিদার বাড়ি,
চৌহদ্দী ব্যাপারী বাড়ি,
কাজিয়াতল প্রাথমিক বিদ্যালয়,
পাহাড়পুর মাদ্রাসা,
পাঁচপুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়,
দরানীপাড়া বারেক মাস্টার বাড়িতে
মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল।
হত্যা: পাক বাহিনী
হিন্দু-মুসলমন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে
সকল শ্রেণীর মানুষদের হত্যা করে। তারা জাঙ্গাল গ্রামের অজ্ঞাতনামা এক মুক্তিযোদ্ধাকে
হত্যা করে। গাঙ্গেরকোট গ্রামের পাক বাহিনীর ক্যাম্পে অবস্থানকারী সেনারা আন্দিকোট ও
ইসলামপুর থেকে ধরে আনা লোকদের বুড়ি নদীর তীরে এনে হত্যা করে। তারা সবাই ছিল সাধারণ
গ্রামবাসী। শহীদদের মধ্যে মনমোহন দেবনাথ পিতা দারীকা নাথ, মতিলাল দেবনাথ, ও ইন্দ্রজিত সাহার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০
অক্টোবর চাপিতলা থেকে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে ক্যন্টেমেন্টে হত্যা করা হয়। তাদের
কবর সেখানে রয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন শাহজাহান, বিল্লাল হোসেন ও রাজা মিয়া । কৈজুরি গ্রামে পাকিস্থানী
সেনারা একজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। ১৫ ডিসেম্বর মুরাদনগর ডিআর হাই স্কুলের ছাত্র রফিক
বিজয়োল্লাস করতে করার সময় (নবীপুরের) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। দড়ানীপাড়া গ্রামের কয়েকজন
যুবক ভোরে ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় তাদেরকে ধরে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে
মেরে ফেলে বাচ্চু মিঞা, ওহাব আলী ও সামশুল
হক সহ ৭ জনকে। তাদেরকে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে কবর দেয়া হয়। পান্তি বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা
গ্রেনেড চার্জ করলে পাক সেনারা বাজারে তল্লাশী চালিয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে
যায় ইলিয়টগঞ্জ। সেখানে তাকে হত্যা করা হয়।
গনহত্যা: মুরাদনগরের
একটি বিখ্যাত বাজার রামচন্দ্রপুর বাজার। এবাজারে পাক সেনার লুটতরাজ করে। রামচন্দ্রপুর
বাজারের পূর্ব পাশে উত্তর ও দক্ষিন বাখরাবাদ গ্রাম। এখানে ২৪ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ আর্মি
ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনী গিয়ে লুটতরাজ, হত্যা ও নারী নির্যাতন করে। ১০০টি ঘরে লুটতরাজ করে। নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে নির্বিচারে
হত্যা করে। ফিরে আসার সময় তারা ২০ জন যুবককে গাড়িতে করে দেবিদ্ধার নিয়ে আসে। দেবিদ্ধার
নিউমার্কেটে এনে তাদেরকে দিয়ে কবর খুড়ে ব্রাশ ফায়ার করে সবাইকে হত্যা করে। তবে ১ টি
ছেলে প্রাণে বেঁচে যায়।
রেফারেন্সঃ ১. বংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধ ( দ্বিতীয় খন্ড)প্রকাশক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এরিয়া সদর দপ্তর কুমিল্লা
, ২০০৮সাল ২. একাত্তরের কন্যা
জায়া-জননীরা মেজর কামরুল হাসান ভূইয়া সেন্টার ফর বাংলাদেশ লিবারেশন স্টাডিজ,
ফেব্রুয়ারি ২০১০, ঢাকা ৩. ৩৬ বছরেও মুরাদনগরে স্মৃতি সৌধ নির্মিত
হয়নি- সাপ্তাহিক আমোদ কুমিল্লা, ১৩ ডিসেম্বর ২০০৭,
৪. টোকা ডায়েরীর পাতা থেকে
, ড. জয়নাল আবেদিন ২০১৪,অ্যাডন পাবলিকেশন ৫. দি ভিশন অব ডিজিটাল বাংলাদেশ
২০০৮,ঢাকা ৬. আমার দেশ ২০০৭,বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞাণকোষ,এশিয়াটিক সোসাইটি,ঢাকা।
রেখকঃমমিনুল ইসলাম
মোল্লা,মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক
গবেষক,কবি ও কলামিস্ট,কুমিল্লা maminmollah.xyz 01711-713257