স্ত্রীর মোহরানা আদায় করেছেন কী


স্ত্রীর মোহরানা আদায় করেছেন কী
স্ত্রীর মোহরানা আদায় করেছেন কী
স্ত্রীর মোহরানা আদায় করেছেন কী
ইসলামী বিধান অনুযায়ী বিশ্বের মুসলমান নারী-পুরুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ মজলিসে স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা ধার্য করা হয়। কেউ কেউ নগদ পরিশোধ করেন। অন্যরা স্ত্রীকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসলেও স্ত্রীর ন্যায্য দাবির প্রতি উদাসীন। তারা হয়তো জানেন না উদাসীনতার কারণে তাদের জন্য হয়তো জাহান্নামের আগুন অপেক্ষা করছে। বরের আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে। বেশি কমও নয়, আবার মাত্রাতিরিক্তও নয়। অর্থাৎ মধ্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। (তাফসির- কুরতবি; নিসা, ২০ ২১ আয়াত) স্ত্রীকে তালাক দিলেও তার ন্যায্য দাবি পূরণ করতে হবে। স্বামী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে প্রথম স্ত্রীর মোহরানা আগেই পরিশোধ করতে হবে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, মোহরানার পরিবর্তে হিবা বিল এওয়াজ তখনই বৈধ হবে যখন স্ত্রী কোনও প্রতিদান ছাড়াই স্বামীকে মোহরানা দান করে এবং পরে স্বামী স্ত্রীর দানের এওয়াজস্বরূপ কোনও সম্পত্তি আলাদাভাবে দান করেন। কারণ এটা মুসলিম অইনে একটি বিশুদ্ধ হিবা বিল। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে- পাঁচ ব্যক্তির ওপর আল্লাহর ক্রোধ অবশ্যম্ভাবী। তাদের মধ্যে মোহরানা অনাদায়ী ব্যক্তি রয়েছে। এছাড়া স্ত্রীর ওপর অত্যাচারী ব্যক্তিও রয়েছে। আমাদের দেশে বিবাহের সময় স্ত্রীকে দেয়া শাড়ি-চুড়ি, গয়নাগাঁটির মূল্য বাবদ দেনমোহর থেকে উসুল হিসেবে কেটে রাখা হয়। প্রকৃতপক্ষে এগুলো বিয়েতে দেয়া উপহার বা উপঢৌকন, দেনমোহর নয়। সুতরাং এগুলোর মূল্য দেনমোহরের মোট টাকা থেকে বাদ দেয়া যাবে না।১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০নং ধারা অনুযায়ী মুসলিম বিবাহের ফলস্বরূপ যে অর্থ বা সম্পত্তি স্বামী তার স্ত্রীকে প্রদান করেন বা দিতে স্বীকার করেন সে অর্থ দেনমোহর নামে পরিচিত। আপনি যদি কোনও আত্মীয়-স্বজন কিংবা আপন ভাইয়ের কাছ থেকেও ঋণ গ্রহণ করেন তাহলে তা পরিশোধ করতে হবে। মোহরানাও একটি আইনগত দায়। এটি পরিশোধ না করলে আপনাকে ঋণী থাকতে হবে। দেনমোহরের সঙ্গে ভরণপোষণের কোনও সম্পর্ক নেই সুতরাং কেউ যদি বলে দেনমোহর হয়তো দেইনি এতদিন কত টাকা ভরণপোষণ বাবদ খরচ করেছি তার কি কোনও হিসাব আছে? তাহলে সেটি ভুল হবে।মোহরানার পরিমাণ নামমাত্র হলে চলবে না। মোহরানা কমপক্ষে ১০ দিরহাম হতে হবে। (বর্তমানে সৌদি আরবের মুদ্রা দিরহাম নয়) ১০ দিরহামকে ৫২ তোলা রুপার সমান হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ কত টাকা হবে তা নির্দিষ্ট নেই। রাসূল (সা.) জনৈক ব্যক্তিকে মোহরানা বাবদ লোহার আংটি হলেও আনতে বলেন, তাতে অক্ষম হলে শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা দেয়ার কথা বলেন। (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত-৩২০২) রাসূল (সা.) বলেছেন, বিবাহের সবচেয়ে বড় শর্ত হল মোহর। (মিশকাত শরিফ, হা-৩১৪৩) রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনও মেয়েকে মোহরানা দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে কিন্তু মোহরানা আদায় করার তার ইচ্ছা নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জিনাকারী-ব্যভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে। (মুসনাদে আহমদ)পবিত্র কোরআন শরিফে আল্লাহ বলেছেন, হে নবী (সা.) আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি। যাদের আপনি মোহরানা প্রদান করেছেন। ( আল আহযাব-৫০) সূরা আন নিসাতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারী বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসদের বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। মালিকের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে কর এবং তাদের মোহরানা দান কর। অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে, যখন তোমরা তাদের মোহরানা প্রদান কর তাদের স্ত্রী করার জন্য, কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার জন্য কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয়ে অবিশ্বাস করে তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে আলেম-ওলামারা ব্যাপারে সোচ্চার হতে পারেন। তারা ওয়াজ মাহফিল, জুমার খুতবা কিংবা অন্য কোনও দাওয়াতি প্রোগ্রামে পুরুষদের মোহরানা আদায়ের ব্যাপারে তাদের কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিতে পারেন। এতে স্ত্রীর পাশাপাশি স্বামীরাই বেশি লাভবান হবেন। কেননা দুনিয়ায় অর্থিকভাব কেউ বিপদে পড়লে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু হাসরের কঠিন দিনে আমাদের সাহায্য করার কেউ থাকবে না। আর স্ত্রী যদি স্বামীকে স্বেচ্ছায় মাফ করে দেন তাহলে স্বামী বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তবে জোর করে বা কৌশলে মাফ নেয়া যাবে না।মোহরানা আদায় করা ফরজ। আমাদের সমাজে অনেক সময় বরের সামর্থ্যরে বাইরে দেনমোহর ধার্য করা হয়। তাই সবার পক্ষে নগদ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ফলে স্বামীকে বাসর রাতেই স্ত্রীর কাছে নতি স্বীকার করে সময় নিতে হয় বা মাফ চেয়ে নিতে হয়। বাসর রাতে মোহরানা আদায় করাটা ভালো হলেও আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী সাবালিকা হলেই মেয়েকে বিয়ে দেয়া যায়। ক্ষেত্রে ১৫-১৬ বছরের মেয়েও বিয়ের যোগ্য। ধরা যাক, ১৬ বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর বাসর রাতেই স্বামী তাকে মোহরানা বাবদ লাখ টাকা দিলেন। মেয়েটি টাকা কোথায় রাখবেহয়তো বাবা বা ভাইয়ের কাছে; ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় টাকা ব্যাংকেও রাখতে পারবে না। জমিও কিনতে পারবে না। ভাই বা বাবার কাছে রাখা সম্পত্তি ভবিষ্যতে কতটুকু পাবেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার। যদি বছর পর স্বামী তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট করে দেনমোহরের টাকাটা ফিক্সড করে রাখেন বা তার নামে কোনও সম্পত্তি রেখে দেন তাহলে সেটি আরও কল্যাণকর হবে। এছাড়া দেনমোহরের টাকা আগে পরিশোধ করলে সামান্য কোনও কারণে ঝগড়া-বিবাদ হলে স্বামী যে কোনও সময় স্ত্রীকে বিদায় করে দিতে পারে। আর দেনমোহর বাকি থাকলে স্বামী বাসর রাতে দেনমোহর সম্পূর্ণভাবে আদায় করতে না পারলে স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে তার সঙ্গে দৈহিক যোগাযাগ রক্ষা করতে হবে। বিয়ের সময় দেনমোহর নির্দিষ্ট করা না গেলে অথবা কাবিন ছাড়া বিয়ে হলে এছাড়া স্ত্রী পরে দেনমোহর দাবি করতে পারবে না এমন শর্ত থাকলেও দেনমোহর নির্দিষ্ট করে তা আদায় করতে হবে। স্ত্রী মারা গেলেও স্বামীকে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে ক্ষেত্রে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা দেনমোহরের অর্থ পাবে। স্ত্রীর দেনমোহরের জন্য উত্তরাধিকারীরা মামলাও করতে পারেন। স্বামী মারা গেলেও স্বামীর সম্পত্তি থেকে তা তার উত্তরাধিকারীদের দিতে হবে।বাংলাদেশের নারী অধিকারবাদীরা নারীদের সমঅধিকার এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার আদায়ে সচেতন। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু ধর্মীয় সেহেতু তারা ব্যাপারে মাথা ঘামান না। তাদের কথা বাদ দিলেও আল্লাহ পরকালে বিশ্বাসী নেতাদেরও রহস্যময় নীরবতা আমাদের অবাক করে।আমরা যেন সবাই স্ত্রীর মোহরানা সংক্রান্ত দাবি মিটিয়ে পরকালীন বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারি, আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন, আমিন 
মমিনুল ইসলাম মোল্লা :


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.