রামায়নের কাহিনী কম বেশি
সকলেরই
জানা,
লঙ্কাদ্বীপ থেকে
সীতাকে
উদ্ধার
করে
আনার
পর
তাকে
নিয়ে
নানা
প্রশ্ন
উঠে। বাধ্য
হয়ে
রাম
সীতাকে
আবারও
বনবাসে
পাঠালেন। সীতার দ্বিতীয় বার
বনবাসের সময়ে
তিনি
নাকি
বাল্মিকী মুনির
আশ্রয়ে এক
সুন্দর
ইমারতে
বাস
করতেন। সে
জন্য
এ
স্থানের নাম
রাখা
হয়
সীতাকোট। অর্থাৎ সীতার
দুর্গ। বাংলাদেশে এ
পর্যন্ত যে
ক’টি বৌদ্ধ বিহার
মাটি
খুঁড়ে
বের
করা
হয়েছে
সেগুলোর মধ্যে
সীতাকোট বিহারকে সবচেয়ে প্রাচীন বলা
যেতে
পারে। যে
কোন
অবসরে
অথবা
ছুটির
দিনে
সপরিবারে অথবা
বন্ধু–বান্ধব নিয়ে ঘুরে
আসতে
পারেন
সীতাকোট বিহার।
দিনাজপুর জেলার
নবাবগঞ্জ উপজেলায় এটি
অবস্থিত। নবাবগঞ্জ সদর
থেকে
২
দশমিক
৫
কিলোমিটার পশ্চিমে ফতেপুর
মাড়াষ
মৌজায়
প্রায়
এক
একর
আয়তনবিশিষ্ট ভূমির
উপর
সীতাকোট বিহার
অবস্থিত। এটি
প্রায়
বর্গাকৃতির। বিহার
অঙ্গনটি চুন-সুড়কি দিয়ে পাকা
করা
ছিল।
পূর্ব
বাহুর
উত্তরাংশে পেছনের
দেয়াল
ভেদ
করে
একটি
সম্পূরক প্রবেশ
পথ
ছিল।
মূল
বিহারের প্রবেশ
পথটি
ছিল
উন্মুক্ত যায়গা
দিয়ে
মূল
প্রবেশ
কক্ষের
দিকে।
প্রবেশ
কক্ষটি
ছিল
বিহার
কক্ষের
সারিতে
একই
রেখায়। দক্ষিণ
বাহুর
বহির্মূখী অভিক্ষেপটি ছিল
একটি
হল
ঘরেরর
মতো
এবং
সেই
হল
ঘরে
ঢুকতে
হতো
ভেতর
দিক
দিয়ে।
কক্ষে
প্রবেশের পথ
৩
থেকে
৫
ফুট
প্রশস্ত। মূল
প্রবেশ
পথ
উত্তর
দিকে।
প্রত্যেক কক্ষে
প্রবেশের জন্য
একটি
মাত্র
প্রবেশ
পথ
রয়েছে।
বিহারে
প্রবেশ
করে
যা
যা
দেখবেনঃ
পরীখাঃ
এই
বিহারের চারদিকে পরীখা
ছিল।
এ
পরীখাগুলো তৈরি
করা
হয়েছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
করার
জন্য।
এগুলো
ছিল
বাইরের
দেয়াল
থেকে
১৫০
গজ
দূরে।
তবে
এখন
আর
পরীখাগুলোর কোন
চিহ্ন
আপনি
খুঁজে
পাবেন
না।
প্রাচীরঃ
সীতাকোট বিহারের চারদিকে বেষ্টনী প্রাচীর ছিল।
এটি
৮
দশমিক
৫
ফুট
উঁচু
ছিল,
এতকাল
পরও
কোন
কোন
যায়গায় ৪-৮ ফুট উচ্চতা
টিকে
আছে।
বিহারটিকে শত্রুর
আক্রমণ
থেকে
রক্ষা
করার
জন্য
প্রহরীরা সব
সময়
ব্যস্ত
থাকত।
তাদের
সংখ্যা
কত
ছিল
তা
জানতে
না
পারলেও
৬টি
প্রহরী
কক্ষ
দেখে
অপনি
অনুমান
করতে
পারবেন
এর
নিরাপত্তার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কতটা
সচেতন
ছিল?
তোরণঃ
প্রশস্ত মুখপাত
বিশিষ্ট তোরণ
কমপ্লেক্সটি উত্তর
বাহুর
মধ্যাংশে অবস্থিত।
প্রধান
দরজাঃ
এবিহারটি ছিল
দুর্গের আকারে
তৈরি।
এর
উত্তর
ব্লকের
ঠিক
মাঝখানে ছিল
বিহারে
ঢোকার
প্রধান
দরজা।
এটি
ছিল
প্রায়
৬
ফুট
চওড়া।
কেন্দ্রীয় কক্ষঃ
বিহারটিতে ৩টি
কেন্দ্রীয় কক্ষ
ছিল।
এর
পূর্ব,
পশ্চিম
ও
দক্ষিণ
বাহুর
কেন্দ্রীয় কক্ষত্রয় অন্যান্য কক্ষগুলোর তুলনায় আয়তনে
অনেক
বড়
ছিল।
প্রতিটি কেন্দ্রীয় কক্ষে
একটি
করে
ইটের
বেদী
ছিল
সেগুলোতে পুজার
মূর্তি
রাখা
হতো।
কক্ষঃ
এ
বিহারটিতে মোট
কক্ষ
ছিল
৪১
টি।
এর
উত্তর
বাহুতে
৮টি
এবং
অন্য
তিন
বাহুতে
১১টি
করে
৩৩টি
কক্ষ
ছিল।
কক্ষগুলো ছিল
প্রায়
সম-আয়তনের। এগুলোর আয়তন ৩.৬৬ মিটার*ত.৩৫ মিটার। কক্ষগুলো দেয়াল
দ্বারা
বিভক্ত
ছিল।
বিভাজক
দেয়ালের পুরত্ব
ছিল
০.৯১ মিটার থেকে
১.২২ মিটার এবং
পেছনের
দেয়ালের পুরুত্ব ছিল
২.৫৯ মিটার, কিন্তু
সম্মুখ
দেয়ালের পুরত্ব
ছিল
১.০৭ মিটার। পেছনের
দেয়ালগুলোকে অবলম্বন করে
বিহারের কামরাগুলো তৈরি
করা
হয়েছিল। কামরাগুলোর মাঝের
দেয়ালগুলো এক
মাপের
নয়।
কোনটি
প্রায়
১০
ফুট
পুরু
আবার
কোন
কোনটি
৪
থেকে
৫
ফুট
পুরু।
বিহারের কক্ষগুলোর অধিবাসীদের স্বাস্থের দিকে
নজর
রেখে
কক্ষের
ভেতর
বাতাস
চলাচলের জন্য
ভেন্টিলেটার রাখার
ব্যবস্থা করা
হয়।
এখানে
অধ্যয়নরত ছাত্রদের শোয়ার
জন্য
খাট
ও
বই
পুস্তক
রাখার
জন্য
বইয়ের
তাক
ছিল।
তবে
এগুলোর
কোনটিই
এখন
আর
আপনি
খুঁজে
পাবেন
না,
কল্পনায় দেখে
নিতে
হবে।
বারান্দাঃ
বিহারের ভেতর
দিকে
২.৫৯ মিটার প্রশস্ত একটি
টানা
বারান্দা ছিল।
১.০৭ মিটার প্রশস্ত ও
১.৬৮ মিটার লম্বা
দরজার
মাধ্যমে কক্ষগুলো ভেতরের
টানা
বারান্দার সাথে
যুক্ত
ছিল।
সমগ্র
বারান্দাকে আঙ্গিনা থেকে
আড়াল
করে
রাখতো
১.২২ মিটার পুরু
ও
০.৭৬ মিটার উচ্চতা
বিশিষ্ট একটি
দেয়াল। কামরাগুলোর সামনে
ছিল
৮
ফুট
চওড়া
টানা
বারান্দা। বারান্দার উপর
কোন
ছাদ
ছিল
না।
বারান্দার শেষ
সীমায়
ছিল
৪
ফুট
পুরু
ও
৩
ফুট
উঁচু
দেয়াল।
কুলঙ্গিঃ
কক্ষগুলোর পেছনের
দেয়ালে কুলঙ্গি ছিল।
কক্ষগুলোর মাঝে
দেয়াল
দিয়ে
পার্টিশন তৈরি
করা
হয়েছিল। বিভাজক
দেয়ালের পুরত্ব
ছিল
২.৫৯ মিটার কিন্তু
সম্মুখ
দেয়ালের পুরত্ব
ছিল
১.০৭ মিটার। খাবার
পানির
চাহিদা
পূরণের
জন্য
বিহারের ভেতরে
দক্ষিণ
পুর্বদিকে একটি
কুপ
ছিল।
এটি
শ্বেত
কুয়া
নামে
পরিচিত। বর্তমানে এটি
ভরাট
হয়ে
গেছে।
বিহার
খননের
সময়
এখানে
প্রচুর
পরিমান
হাঁড়ি
পাতিলের টুকরা
পাওয়া
যায়।
দীঘিঃ
বিহারে
বসবাসরত লোকদের
গোসল
ও
পানির
সুবিধার জন্য
একটি
দীঘি
খনন
করা
হয়েছিল তবে
এটি
বিহারের খুব
নিকটে
ছিল
না।
বিহার
থেকে
৫০০
গজ
দূরে
দিঘিটি
দেখতে
পাবেন।
খাবারঘরঃ
বিহারে
সুনির্দিষ্টভাবে রান্না
ঘর
ও
খাবার
ঘর
পাওয়া
যায়নি। তবে
পূর্ব
ব্লকের
বাইরের
উঁচু
যায়গায় হয়তো
খাবার
ঘর
আর
আর
রান্না
ঘর
ছিল
বলে
অনুমান
করা
যায়।
সেখান
থেকে
প্রচুর
ছাঁই
এবং
হাঁড়ি
–পাতিলের ভাঙ্গা
টুকরা
পাওয়া
গেছে।
শৌচাগারঃ
মূল
ভবনের
সাথে
সম্পৃক্ত কিন্তু
বিহার
ভবনের
দক্ষিণ
দিকে
আবৃত
পথ
দ্বারা
সংযুক্ত সম্মুখভাগে ৫টি
কক্ষ
পাওয়া
যায়।
এগুলোর
সামনে
ছোট
বারান্দা ছিল।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা
এটি
শৌচাগার হিসেবে
ব্যবহৃত হতো।
এখানে
কোন
কেন্দ্রিয় মন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া
যায়নি। পূর্ব
দক্ষিণ
ও
পশ্চিম
ব্লকে
ও
৩
টি
কামরা
মন্দির
রুপে
ব্যবহার করা
হতো
বলে
প্রমাণ
পাওয়া
যায়।
এগুলোর
মধ্যে
দক্ষিণ
ব্লকের
কামরাটি ছিল
বেশ
বড়।
কেউ
কেউ
একে
প্রধান
মন্দির
হিসেবেও মনে
করেন।
প্রধান
মন্দিরঃ
খুব
সম্ভবত
দক্ষিন
দিকের
কেন্দ্রীয় কক্ষটি
ছিল
প্রধান
মন্দির। এ
মন্দিরের সামনের
প্যাভেলিয়নটি মন্ডপ
হিসেবে
ব্যবহৃত হতো।
বড়
উপাসনা
কক্ষটির সামনে
ছিল
একটি
মঞ্চ
যার
ছাদ
নির্মিত হয়েছিল বারোটি
স্তম্ভের উপর।
মূল
মন্দির
ছিল
দক্ষিণ
দিকের
সামনে।
প্রাপ্ত দ্রব্যসামগ্রীঃ
খনন
করার
পর
এখানে
একটি
”বোধিসত্ব পদ্মপানি” এবং
”বোধিসত্ত মঞ্জুশ্রী” মুর্তি
সীতাকোট বিহার
থেকে
প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। এগুলো
ব্রোঞ্জনির্মিত। এগুলো
৭ম-৮ম শতকে তৈরি
বলে
অনুমান
করা
হচ্ছে।
এছাড়া
এখানে
পাওয়া
গেছে
মাটির
পাত্রের ভাঙ্গা
অংশ,
মাটির
দোয়াত,
লোহার
পেরেক
নকশা
করা
মাটির
তৈরি
মাছ,
মাটির
পুতুল,
নকশা
করা
ইট,
ও
লোহার
রিং
ও
রড
পাওয়া
গেছে।
এছাড়া
পাওয়া
গেছে
লোহার
খিল,
নানা
ধরণের
দোয়াত। এখানে
কোন
তাম্প্রলিপি বা
শীলালিপি পাওয়া
যায়নি। এটি
১৯৭২-৭৩ সালে প্রত্নতত্ত বিভাগের অধীনে
খনন
করা
হয়।
লোহার
চুরি,
বাঘের
মুর্তিসহ এখানে
পাওয়া
যায়
পশুর
পায়ের
চিহ্ন
আঁকা
৩টি
ইট,
টেরাকোটার ৪টি
গোলক,
সাধারণ
৫টি
ইট,
লোহার
তৈরি
বালা,
দন্ডচিহ্নিত আটটি
ইট,
পদ্মফুল আঁকা
আঠারোটি ইট,
ছত্রিশটি লোহার
পেরেক।
দিনাজপুর মিউজিয়ামে সীতাকোট বিহার
থেকে
প্রাপ্ত সামগ্রীগুলো রাখা
হয়।
যেভাবে
যেতে
হবে
ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর ও
মহাখালীতে দিনাজপুরগামী বাস
পাবেন।
নাবিল,
শ্যামলী, হানিফ
যে
কোন
বাসে
উঠতে
পারেন।
ভাড়া
৩২০-৩৫০ (বর্তমানে বেশী
হতে
পারে)
টাকা।
ট্রেনে
গেলে
সকাল
৯.৪৫ এ একতা
ট্রেনে
যেতে
পারেন।
ট্রেনে
গেলে
পার্বতীপুর গিয়ে
বাসে
যেতে
হবে
দিনাজপুর শহরে।
দিনাজপুর শহরে
গিয়ে
নবাবগঞ্জ উপজেলায় যাবেন।
সেখান
থেকে
রিক্সায় যেতে
পারবেন
সিতাকোট বিহারে। ঢাকা
থেকে
বাসে
গেলে
বিরামপুর বা
ঘোড়াঘাট নেমে
নবাবগঞ্জ যেতে
হবে।
থানা
সদরের
একটু
পশ্চিমে বিহারটি অবস্থিত।
কোথায়
থাকবেন
দিনাজপুরের এ যায়গায় গেলে
বিহার
দেখতে
দেখতেই
আপনার
দিন
শেষ
হয়ে
যাবে।
তাই
আগে
থেকেই
থাকার
পরিকল্পনা মাথায়
রাখুন।
এলাকায় থাকার
কোন
সুব্যবস্থা নেই
তাই
আপনাকে
দিনাজপুর শহরে
ফিরে
যেতে
হবে।
আপনি
দিনাজপুরের হোটেল
ডায়মন্ড অথবা
হোটেল
আল
রশিদে
অবস্থান করতে
পারেন।
খাবার
জন্য
নির্ভর
করতে
পারেন
সেলিম
কিংবা
তৃপ্তি
রেস্টুরেন্টের উপর।
সীতাকোট বিহার
ভ্রমণের ঘটনা
আপনার
স্মৃতিপটে দীর্ঘদিন জেগে
থাকবে।
