রাজাকাররা বাঙ্গালী জাতির অভিশাপ
মমিনুল ইসলাম মোল্লা১৯৭১ সারের ২৫ মার্চেও গণহত্যা দিয়ে শুরু হওয়া যুদ্ধ চলে ১৬ ডিসেম্বর রেইসকোর্স ময়দানে জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পন পর্যন্ত। এতে ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী নিহত, ২ লক্ষ মা- বোন ধর্ষিত এবং ঘরবাড়ি লুটপাট ও জ্বালিয়ে দেয়াসহ দেশের বিপুল পরিমান সম্পদের ক্ষতি হয়। এ যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানী আর্মিদের সহযোগীতা করে রাজাকার বাহিনী। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে রাজাকার বা স্বেচ্ছাসেবক নামে এ প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠিত হয়। রাজাকাররা পবিত্র কুরাান ছুঁয়ে শপথ করতেন। শপথ বাক্যগুলো ছিল এরকমঃ আমরা জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানকে রক্ষা করব। পরবর্তীতে টিক্কা খানের সরকার রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে সমাজের দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করে। কুখ্যাত রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয় ১৯৭১ সালের মে মাসে। তাদের মূল কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া। আর নারী নির্যাতনে সহায়তা করা। বর্তমানে স্বাধীনতা বিরোধীদের আমরা রাজাকার বলে অখ্যায়িত করি। স্বাধীনতা বিরোধীদের মধ্যে রাজাকারদের পাশাপাশি আল বদর ও ছিল। ১৪ সেপ্টেম্বর ৭১ এ দল সম্পর্কে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় লিখা হয় “ আল বদর একটি নাম। একটি বিস্ময়, আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা। যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী আলবদর সেখানেই। ভারতের চর কিংবা দুষ্কিৃতিকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।”নিয়াজীর পৃষ্ঠপোষকতায় এপ্রিল মাসে এটি গঠন করা হয়। এ দলে ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ও জামাতে ইসলামীর শিক্ষিত সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন বদর বাহিনীর শ্লোগান ছিল“ হাতে নাও মেশিন গান, খতম কর হিন্দুস্তান।” আলবদর বাহিনীর নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী । তিনি তখন আল বদরের মোহাম্মদপুরস্থ হেডকোয়ার্টার পরিদর্শনকালে চরম উত্তেজনা ময় বক্তব্য রাখেন। দৈনিক সংগ্রাম-১৭ রস্েপ্টম্বর)।
রাজাকাররা শুধুমাত্র পাক আর্মিদের পথ প্রথর্দশনেই ব্যস্ত ছিলেন না। তরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবর্তীন হয়েছিল। ১৮ জুলাই দৈনিক পাকিস্তানের এক সংবাদে বলা হয় গতকাল সোমবার শেরপুরের কাছে দুষ্কিৃতিকারীরা (মুক্তিযোদ্ধারা) একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস করতে গেলে রাজাকাররা তা রক্ষায় এগিয়ে এলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দুষ্কৃতকারীরা ১৯টি লাশ ১৩ খন্ড টিএনটি, কয়েকটি হাতবোমা, ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন, এবং ভারতে তৈরি ১৯টি বিস্ফোরক টিউব ফেলে গেছে। রজাকার ও আলবদররা শুধু গোপনেই কাজ করতোনা তারা প্রকাশ্য সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিধনের কথা বলতেন। ৫ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদের এক রিপের্টের মাধ্যমে জানা যায় , শুক্রবার বিকেলে বায়তুল মোকারম প্রাঙ্গনের এক সম্মেলনে বক্তারা বলেন- সত্য ন্যায়ের জন্য আমরা সঙগ্রাম করতেছি জয় আমাদের অবধারিত।”পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন মতিউর রহমান নিযামী। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের সাথে পাকিস্তানী বিমানে হাতাহাতির এক পর্যায়ে মিনহাজ মারা গেলে তিনি মিনহাজকে জাতীয় বীর হিসেবে উল্লেখ করে মিনহাজের পিতার কাছে শোকবার্তা পাঠান।কেউ কেউ মনে করেন যুদ্ধকালীন সময়ে নারী নির্যতন ছিল বিচ্ছিন্ন ঘঁটনা। কিন্তু ঢাকা মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘরে রক্ষিত রাজাকারের একটি চিঠির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় পরিকল্পিতভাবে তারা আমাদের মা বোনদেও ইজ্জত নিয়ে ছিনি মিনি খেলত। ৭১ সালের ২৮ মে চিঠিটি লিখেছেন ঝালকাঠি শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছলিমুদ্দিন মিয়া। শান্তি কমিটির একজন ইউনিয়ন প্রধানকে নির্দেশ দিয়ে লিখেন, বেগ সাহেবের জন্য ভাল মাল ( যুবতী নারী) পাঠাবেন। রোজ অন্তত একটা, অন্যদের জন্য যা পারেন।” রাজাকার শব্দটি ঢালওভাবে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। ইতিহাস গবেষকদের মতে-যারা যুদ্ধকালীন সময়ে পাক আর্মির রাজাকার, আলবদর, আর আল শাম্স ইত্যাদি প্যারামিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য ছিলেন বা অন্যভাবে দালালি করে পাক আর্মিকে সহায়তা করেছেন, তারাই শুধু রাজাকার। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারীদের অথবা ৭১ সালে যাদেও বয়স ১২ বছরের নীচে ছিল তাদেও রাজাকার বলা অযৌাক্তিক। রাজাকারদের আমরা ঘৃণা করি। তাদের কৃতকর্মের উপযুক্ত বিচার চাই।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক , (দৃষ্টান্ত ডট কম), কুমিল্লা,
