সময়ের কথা ঃ পর্যাপ্ত শাক-সব্জি সংরক্ষনাগার স্থাপন আবশ্যক

সময়ের কথা ঃ পর্যাপ্ত  শাক-সব্জি সংরক্ষনাগার স্থাপন আবশ্যক

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
শীত ঋতুর মাধ্যমে আমাদের প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে। গরীব ও অসহায় জনসাধারণের জন্য শীতকালটা ভীষণ  কষ্টদায়ক হলেও ধনীদের জন্য খুবই আরামদায়ক। এসময় গ্রামীণ লোকেরা শহরের চেয়ে ভিন্ন আমেজে শীতকালের সুফল ভোগ করে এ সময় পিঠা, পায়েস এবং শীতকালীন বোনাস খেজুর রসের সাথে যোগ হয় শীতকালীন টাটকা শাক সব্জি। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন উভয় মৌসুমেই শাক সব্জি পাওয়া যায়। বে শীতকালই সব্জি চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। আমাদের দেশে শীতকালীন সব্জিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, লেটুস, পালং শাক, সিম, ইত্যাদি। তাছাড়া টমেটো এবং বেগুনও শীত কালে ভালভাবে উৎপাদন করা যায়। দেশে সবজি চাষ উৎপাদনে  জমির পরিমান বৃদ্ধি পেলেও যথাযথ সংরক্ষণের বিশেষ কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার সবজি বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্বেও সরকারী বা বেসরকারী ভাবে কৃষি ভিত্তিক শিল্প স্থাপনের কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে না।এদশে পর্যাপ্ত পরিমানে গড়ে উঠেনি সবজি ও ফলমুল সংরক্ষণের আধুনিক প্রযুক্তির হিমাগার।

উদাহরণস্বরূপ জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামেগঞ্জে শীত ও গ্রীস্ম কালীন সব রকমের সবজি চাষ হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। চাষ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল দেশী সবজি ও বিদেশী হাইব্রীড জাতের সবজি। চাষ হচ্চে টমেটো, আলু, মুলা, সীম, ফুলকপি, বাধাকপি, কড়লা, লাউ, কুমড়া, মরিচ, কলা, পটল, বেগুন, মিষ্টি আলু, শসা, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙ্গা  সহ পাতা জাতীয় আরো অনেক সবজি। এ সমস্ত সবজি ছাড়াও হচ্ছে মসলার চাষ। আদা, রসুন, পিয়াজ, ধন্যা ও নানা জাতের মরিচ চাষ হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমানে জামালগঞ্জের জনপদে। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যোন্ড, শ্রীলংকাসহ উন্নত দেশ থেকে আনা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের বীজ। উচ্চ ফলন ও হাইব্রীড সবজি চাষ উপযোগী করে তুলতে উপজেলা কৃষি স¤প্রাসারণ অধিদপ্তর ও ব্যাপক ভাবে প্রচেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছে। সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের অভাবে প্রতি বছর কোটি  টাকার সবজি ও ফলমূল নষ্ট হচ্ছে। ফলে কৃষকের প্রতি বছরই মোটা অংকের লোকশানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
শাক সব্জি মূলত আমাদেও দেহে ভিটামিনের চাহিদা যোগায় যেমন লাল শাকে ভিটামিন এ রয়েছে ১২২৬৭ আই,ইউ ভিটামিন বি-১ আছে ০.১০মিলি গ্রাম, ভিটামিন সি রয়েছে ৪২.৯০ মিলিগ্রাম। মুলা শাকে ভিটামিন বি-এর পরিমাণ ০.০৮ মিলিগ্রাম। ভিটামিন বি-২ আছে ০.০৯ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে ২২.৪০ মিলি গ্রাম। কালো কচু শাকে আছে ১৯৯৯২ আই, ইউ ভিটামিন ‘এ’ ভিটামিন বি-২ আছে ০.০৬ মিলিগ্রাম, এবং ভিটামিন সি আছে ১২৩.০০ মিলিগ্রাম। ফুলের মাথা যখন সুডৌল ও মসৃণ হয় এবং বেশ শক্ত থাকে তখনই ফুলকপি তুলতে হয়। প্রতি একওে সাধারণত ১২৫-২০০ মণ ফুলকপি উৎপান্ন হয়। বরবটি বেলে দো-আঁম, দো আঁশ ও এঁটেল দো আঁশ মাটিতে ভাল হয়। আশ্বিন-পৌষ মাষ পর্যন্ত বপন করা যায়। সারি ১০-১২ ফুট। মাদা ১০-১২ ফুট দূরত্বে বপন করা যায়। পৌষ -চৌত্রমাস পর্যন্ত ফসল উঠানো যায়।পালংশাক উঁচু ও মাঝারি ও উর্বও দো-আঁশ মাটিতে ভাল হয়। একর প্রতি ১০ সের বীজ হলেই যথেষ্ট। পালং শাকের উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে বিগ আমেরিকান, লায়ালপুর, লোকাল- ১ নাগেশ্বরী, নলভোগা ইত্যাদি। পুইশাক একটি অতি পরিচিত শাক, এটি সাধারণত বৈশাখ-আষার মাসে অধিক পরিমাণ উৎপন্ন হলেও প্রায় সারা বৎসরই উৎপাদন করা যায়।
  নড়াইলের নারগুন গ্রামের ফুলকপিচাষি মানিক মিয়া  বলেন, ‘বাজারে ফুলকপির দাম ২০ টাকা হলেও আমরা আট-দশ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হই। এর কারণ হলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা।’একই উপজেলার শিবগঞ্জের শাদের আলী বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের সময় বাজারে সবজির চাহিদা না থাকায় আমার খেতের এক-তৃতীয়াংশ করলা নষ্ট হয়ে গেছে। হিমাগার থাকলে সবজি সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করতে পারতাম।’কুমিল্লা সদর উপজেলার কহরপাড়া গ্রামের চাষি মহির উদ্দিন জানান, মৌসুমের শেষ দিকে জমি থেকে সবজি তুলে বাজারে নিতে যে পরিবহন খরচ হয়, তা সবজি বিক্রি করেও তোলা যায় না। তাই খেতের সবজি খেতেই নষ্ট করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে অতিরিক্ত আরও দুই মাস বাজারে সবজি সরবরাহ করা যায়।তাই দেশের সব্জি অঞ্চলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে সংরক্ষণাগার তৈরি করা আবশ্যক। লেখকঃ গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের ক্যাম্পেনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক, কুমিল্লা।




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.