কীর্তিমানের কুমিল্লা ঃ ৭০ লাখ ভক্তের সীমা পেরিয়ে-আসিফ

কীর্তিমানের কুমিল্লা ঃ ৭০ লাখ ভক্তের সীমা পেরিয়ে-আসিফ

মমিনুল ইসলাম মোল্লা,
ইন্টারনেটে অডিও  শোনা এবং ভিডিও  দেখার  নির্ভর যোগ্য চ্যানেল ইউটিউব। বাংলাদেশের  দর্শকরা বিদেশী জনপ্রিয় শিল্পিদের  মিউজিক দেখতেন  এবং পছন্দ হলে তা ডাউনলোড করতেন। কারণ বাংলাদেশী মান সম্মত শিল্পীদের  আনাগোনা কম ছিল।  এখন আর  সেদিন নেই,  ইউটিউবে পৃথিবীর  অন্যান্য দেশের  মতো বাঙ্গালী গায়কদের  গানের ও  বেশ কদর  বেড়েছে। বাংলাদেশী শিল্পিীদের  মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন আসিফ আকবর ।
সূত্রমতে- আসিফ আকবরের  গানের  ভিডিও  দেখার  জন্য নয়, শুধুমাত্র অডিও শোনার  জন্য ভিজিট করা হয়েছে ৭০ লাখ বারের  মতো। অর্থাৎ ইউটিউব থেকে আসিফ আকবরের  “ ও  প্রিয়া তুমি কোথায়” গানটি কম করে  হলেও  ৭০ লাখবার  শোনা হয়েছে। ২০১৪ সালে রিজার্ভ নেশন প্রোফাইলে বাংলাদেশে নাম্বার  ওয়ান এবং বিশ্বের  মধ্যে ৮৭ নম্বরে  স্থান পায়।একটি এলবামের  মাধ্যমে ২০০১ সালে সঙ্গীতাঙ্গনে প্রবেশ করেন কুমিল্লার  ছেলে আসিফ আকবর । এ এলবামটি বাংলাদেশের  ইতিহাসে ব্যবপক ব্যবসা সফল একটি ক্যাসেট। এলবামটির  অনেক গান ভক্তরা ভুলে গেলেও  একটি গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে । এ গানের  মাধ্যমে ভক্ত শ্রেতারা যেন তাদের  মনের  মানুষের  সন্ধান করেন। সেটি হচ্ছে “ ও  প্রিয়া তুমি কোথায়। ” এটি বাংলাদেশের  ইতিহাসে অধিক ব্যবসা সফল একটি এলবাম। এ গানটি আসিফকে স্কুল কলেজের  ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে  একেবোরে  কৃষক-মজুরের  কাছে নিয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে এখানেই শিল্পির  স্বার্থকতা। এ জনপ্রিয় গানটির  গীতিকার  ও  সুরকার  ইথুন বাবু। ১৫ বছর  আগে গাওয়া এ গানটির  কলিগুলো এখনও  বিশ্বের  বিভিন্ন দেশের  ভক্ত সঙ্গীতপ্রেমিকদের  মনের  খোরাক যোগাচ্ছে। ইউটিউবে প্রচারিত গানগুলো কোন অফিসিয়াল চ্যানেল থেকে আপলোড করা হয়নি। আসিফ ভক্তদের  নিজস্বভাবে আপলোড করা চ্যানেলে । ভিডিও নয় শুধু একটি ছবি ব্যবহার  করে ই আপলোড করা হয়। গানটি প্রকাশিত হওয়ার  ৮ বছর পর ২০০৯ সালে এক ভক্ত পৃথক ইউটিউবে এক স্থান করে  দেয়। মাত্র ১৪ মাসেই আসিফের  অডিও  গানগুলো প্রায় ৫০,০০০ বার  এবং ভিডিও  গানগুলো প্রায় ৭০০০ বারের  বেশি দর্শকরা উপভোগ করেছে। আর  এ দর্শকদের  মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশের  দর্শক শ্রেতাই নন আমেরিকা , ব্রিটেন, রাশিয়াসহ হলিউড, বলিউড, এর  দর্শক শ্রেতারা এগুলো উপভোগ করেছেন। শুধু মাত্র এ গানটি ইউটিউবের  দেয়া তথ্য অনুযায়ী গানটি দেখা হয়েছে ১ লাখ বারের  বেশি। অন্য একটি সূত্র বলছে, আসিফ আকবরের  রিভার্বনেশন প্রোফাইলটি ভিউ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার বার । আর সব মিলে ইউটিউব দেখেছে প্রায় ২ কোটি বারের মতো। অন্যদিকে আসিফ আকবরের প্রেফাইল ভিউ করা হয়েছে ২ লক্ষ বার। রিভার্বনেশন সাইটে যখন আকবরের  প্রোফাইল তৈরি  করা হয় তখন বাংলাদেশের  শিল্পীদের  মধ্যে তার  স্থান ছিল ৫১ নম্বরে । আর  বিশ্বের  বিখ্যাত শিল্পীদের  মধ্যে তার  স্থান ছিল ৩২০০ নম্বরে । এ অবস্থা থেকে আসিফ একসময় বাংলাদেশি শিল্পীদের  মধ্যে চলে আসে ১ নম্বরে । আর  বিশ্বের  শিল্পীদের  মধ্যে চলে আসে ১৭৬ নম্বরে । 
ফেসবুক ভিত্তিক “রিভার্বনেশন” মিউজিক সাইটে বাংলাদেশের  শিল্পিীদের  মধ্যে আসিফের  পরেই অবস্থান করছে যথাক্রমে সেরাকণ্ঠের  ইমরান, অর্থহীনের  সুমন, ব্যান্ড আর্টসেল, পপশিল্পী তিশমা, মাইলসের  হামিম আহমেদ, পড়শি প্রমুখ। বর্তমানে সারা বিশ্বের  প্রায় ৩১ লাখ সংগীতশিল্পীর  গান রিভার্বনেশন” মিউজিক সাইটে রয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর  পর  ৬ বছর  এলবাম বিক্রির  দিক থেকে শীর্ষে ছিলেন আসিফ। তার  প্রথম এলবাম ৫.৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল। যা অডিও  ইতিহাসে বাংলাদেশের  জন্য একটি রেকর্ড। সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ” পূর্ণ দৈর্ঘ “ প্রেম কাহিনী টু” ছবির  একটি দৃশ্যে তিনি অংশগ্রহণ করেন। “ও প্রিয়া  তুমি কোথায় ” গানটি ২০০১ সালে সঙ্গীত প্রেমিক বাদেও  সাধারণ সঙ্গীত প্রেমিক মানুষকে ভাবিয়ে তোলে । তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মনের  অজান্তে তারা গুণ গুণ করে  গেয়ে থাকেন। তাই এ নামটিকে পঁজি করে একটি সফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। চলচ্চিত্রে তার  প্রথম গান “ আমার ই ভাগ্যে তোমার  নাম ” চলচ্চিত্র- র রাজা নাম্বার  ওয়ান (১৯৯৭) “ও  প্রিয়া তুমি কোথায়” একটি চ্যানেলে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ বার শোনা হয়েছে। বেশ কয়েকটি চ্যানেলে ধীরে  ধীরে  গানটি প্রচারি ত হতে থাকে। চ্যানেলগুলোর গানের  ভিউজ যোগ করলে ৭০ লাখ পেরিয়ে যায়। বাংলাদেশের  কোন একটি গানের  জন্য এটি একটি রেকর্ড। আসিফ আকবর  কাছাকাছি সময়ে প্লেব্যাক করেছেন “ লাভ  ম্যারেজ”, “ পদ্মপাতার  জল” , “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২”, “রাত্রির  যাত্রি”সহ কয়েকটি ছবিতে।  ফেসবুকের  জনপ্রিয় মিউজিক সাইট “ রিভার্বনেশন” এ ১৮ ডিসেম্বর -২০১২ আসিফ আকবরের  নামে একটি প্রোফাইল চালু করা হয়। এ প্রোফাইলের  মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক মিউজিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ওখানে ১৫টি দেশাত্মবোধক গানের  পাশাপশি একক  “ও প্রিয়া তুমি কোথায়” গানটি সেট করে  রাখা হয়। বিখ্যাত গীতিকার শিবলির  লিখা ২টি গান তিনি গেয়েছেন। একটি হচ্ছে “ আলোকিত সার দিন” অন্যটি “ শোক সমাবেশ” । “শোক সমাবেশ ” গানটির   সুর  ও  সঙ্গীত করেছেন শ্রীলংকার  জনপ্রিয় সঙ্গীত পরি চালক ইরাজ। এ গানটি ৪ টি ভাষায় আন্তর্জাতিক পরিসরে  খ্যাতি লাভ করে ।  জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পিী আসিফ আকবর ( মিঠু) জন্মগ্রহণ করেন ২৫ মার্চ ১৯৭২। তার  পিতার  নাম মরহুম এডভোকেট আলী আকবর।  মায়ের  নাম রোকেয়া আকবর । তিনি রাজনীতি বিজ্ঞান বিষয়ে ১৯৯৫-৯৬ সালে মাস্টার্স পাশ করে ছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। তার স্ত্রী সালমা আসিফ মিতু ছেলে রণ ও  রুদ্রকে নিয়ে তার ছোট্ট সুখের সংসার। তিনি ছাত্র জীবনেই  “ফিকল ব্যান্ড”  নামে একটি ব্যান্ড দল পরিচালনা করেন। একটি এলবামের  মাধ্যমে ২০০১ সালে সঙ্গীত ভূবনে প্রবেশ করলেও  কিছু সময় তিনি সঙ্গীতের  বাইরে  ছিলেন। একটানা ৩ বছর  দূরে  ছিলেন। দ্বিতীয় বারের  মত ৬ মাসের  বির তি দিয়েছেন। এ বিরতিকে তিনি সঙ্গীত জগতের  কিছু অনিয়মের  বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বলে আখ্যায়িত করেন। তার  সা¤প্রতিক প্রকাশনা “ ঈর্ষা” ও  “জানরে ” এলবামের  গানগুলো গান প্রেমিকদের  মন জয় করতে পেরেছে। তিনি জাতীয় চলচ্চ্ত্রি পুরস্কার  পেয়েছেন ২ বার। মেরিল প্রথম আলো পুর স্কার  পেয়েছেন ৬ বার । ২০১৩ সালে শ্রেষ্ঠশিল্পিী নির্বাচিত হন। এপর্যন্ত ২৯টি একক এলবাম প্রকাশিত। আসিফ বলেন, -“নতুন প্রজন্মের  মিউজিশিয়ান শিল্পীদের জন্য আমি আন্তর্জাতিক মানের  একটি প্লাটফর্ম তৈরি  করতে চাই। সে লক্ষে আমি এগিয়ে চলছি, চাই সবার  সমর্থন। ”লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক ও কলামিস্ট,কুমিল্লা।
From archives 29/07 2018





শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.