বিপদের বন্ধুঃ সেচ্ছায় রক্তদানকারী কুমিল্লার রনী
মমিনুল ইসলাম মোল্লাঃরনীর বর্তমান বয়স ৩৪ বছর। তার মায়ের নাম হাসনা বানু এবং পিতার নাম আলহাজ্ব মোঃ আমিন উদ্দিন, মাতা গৃহিনী, পিতা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবি। রনী এ পর্যন্ত ৫৫ বার রক্তদান করেছেন। তবে কোন আত্মীয় স্বজনকে নয়, এসব রক্তদান করা হয়েছে বন্ধু- বান্ধবের পরিচিত জন কিংবা একেবারেই অপরিচিত নর -নারীকে।
আমাদের বন্ধু বান্ধব কিংবা আত্মীয় স্বজন কোন দূঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে আমরা তাদের দেখতে যাই। সেখানে গিয়ে হয়তো শোনা গেল রোগীর রক্ত লাগবে। আত্মীয় স্বজনের রক্ত হলে ভাল হয়। এ অবস্থায় অনেকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিদায় নেন। কেউ বলেন আমার সমস্যা আছে, আমার স্বাস্থ্য ভাল না কিংবা আমি মনে হয় রোগে ভোগছি ;তাই রক্ত দিতে পারবনা। এ ভাবে অনেকেই পিছু হটে যান। এ ধরনের মরনাপন্ন রোগীদের পাশে ছুটে আসেন কেউ কেউ। তাদেরই একজন কুমিল্লার দেবীদ্বারের সাংবাদিক মোঃ সাইফ উদ্দিন (রনী)।
রনীর জন্ম হয় কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার নবিয়াবাদ গ্রামে। তবে তার বাল্যকাল কাটে চান্দিনা উপজেলার পিহর গ্রামে। বাবা একদিন হাত ধরে নিয়ে গেলেন পিহর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভর্তির পর এক সেট বই নিয়ে বাড়ীতে ফিরে এলো সে। তারপর ধীরে ধীরে দেবীদ্বারের বাতাপুকুরিয়া ও নবিয়াবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরবর্তী কালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ ও চান্দিনা রেদোয়ান আহম্মেদ ডিগ্রী কলেজ ঘুরে শিক্ষা জীবন শেষ করেন। ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকেই রক্তদান শুরু করেন।
১৯৯৩ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজে অধ্যয়নকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মেডিসিন ক্লাবের মাধ্যমে রক্তদান শুরু করেন। মেডিসিন ক্লাব ও তানিমের অনুপ্রেরণায় রনীর রক্তদান কার্যক্রম চলতে থাকে। ১৯৯৩ সালে দেয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বার দেন ১৯৯৪ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ভিক্টোরিয়া কলেজ ইন্টারমডিয়েট শাখার এক ছাত্রলীগ নেতাকে। এর পর থেকে প্রতি বছরই রক্তদান করেছেন। কোন কোন বছর ২/৩ বারও দিয়েছেন।
তিনি জানান রক্তদানের ৩ ঘন্টা পূর্বে পরিপূর্ন খাবার খেতে হয়। রক্তদানের পর হালকা নাস্তা এবং পানীয় পান করা ভালো। রক্তদানের আগের দিন ধুমপান করা যাবে না। এ ছাড়া রক্তদানের ৪৮ ঘন্টা পূর্বে মদ্য পান করা নিষেধ।
স্বেচ্ছায় রক্তদানের ব্যাপারে সকল ধর্মের লোকেরা এগিয়ে আসতে পারেন। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। পবিত্র কুরআন শরীফের সুরা মায়েদার ৩২ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ’’। এছাড়া হিন্দুদের ঋগবেদ এ বলা হয়েছে নিশঃর্ত দানের জন্য রয়েছে অসাধারণ পুরস্কার, তারা লাভ করে আর্শীবাদ, ধন্য জীবন ও অমরত্ব।
সাপ্তাহিক কুমিল্লার দেবিদ্বার প্রতিনিধি দিয়ে ২০০৮ সালে এই অকৃতদার ব্যক্তিটি সাংবাদিকতা শুরু করেন। তারপর ভোরের কাগজ ও মাই টিভি’র দেবিদ্বার প্রতিনিধি থেকে ভোরের কাগজ’র কুমিল্লা উত্তর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।বর্তমানে মাই টিভি’র কুমিল্লা উত্তর প্রতিনিধি ও কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ময়নামতি প্রত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার এবং দৃষ্টান্ত নামে একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একাই রক্ত দিচ্ছেন না, অন্যদেরও অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। গরীব ও অসহায় রোগীরা যাতে অতি সহজে নিরাপদ রক্ত পেতে পারেন সেজন্য তিনি দেবিদ্বারে ‘‘দৃষ্টান্ত’’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। ২০০৬ সালে তিনি এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।এ সংস্থার সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, আবু সায়েম, ডাঃ এনামুল হক, রিপন, মোস্তাক, ফারিয়া ,প্রমূখ নিয়মিত রক্তদান করছেন। ‘‘দৃষ্টান্ত’’ রক্তদানেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখেনি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে আসছে।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং বসধরষ ঃ
