আশার আলোঃ কুমিল্লার চাল শিল্পে উজ্বল সম্ভাবনা

আশার আলোঃ কুমিল্লার চাল শিল্পে উজ্বল সম্ভাবনা

মমিনুল ইসলাম মোল্লা

কুমিল্লার পারুয়ারা  বুড়িচংয়ের  প্রত্যন্ত এক গ্রাম। কিন্তু গ্রাম হলেও এর পরিচিতি বাড়ছে। কারণ ওই গ্রামটি গ্রাম নয়, চাল উৎপাদনের বৃহৎ শিল্পনগরীতে পরিনত হচ্ছে। এই গ্রামটি এখন দেশের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। একাধারে চাল উৎপাদন, উন্নত জাতে রূপান্তর ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে। সাবেক চেয়ার ম্যান আ ঃ রব বলেন-১৯৮৬ সালে আমরা প্রথম চাতাল শিল্পের সূচনা করি। এখন পুরো জেলায় অটো-রাইসমিল রয়েছেÑ১৫টি এর মধ্যে বুড়িচং ইউনিয়নের ভারেল্লাতেই রয়েছেÑ১১টি।   পাশাপাশি ধান সেদ্ধ-শুকানোসহ নানা প্রক্রিয়ার জন্য চাতালও রয়েছে দঅনেকগুলো। সেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় হাজার-হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়। হাজার টন চাল মজুদ রাখার মতো শত শত গুদামও গড়ে উঠেছে । ধান আনা,সেদ্ধ, শুকানো ,চাল তৈরি করা সব মিলিয়ে রাত-দিন চলছে নারী-পুরুষ শ্রমিকের বিশাল কর্মযজ্ঞ। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা-পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই স্থানীয় অধিবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে এখানকার চালকল আর চাতালগুলো। একেকটি মিলে প্রতিদিন ৭শ টন এবং ছোট মিলে ৫০ টন পর্যন্ত চাল উৎপাদন হয়। কুমিল্লার বুড়িচং ইউনিয়নের ভারেল্লা ইউরিনয়নে অধিকাংশ চাল কল অবস্থিত।  বিশেষ কওে পারুযার, রামপুর,গোবিন্দপুরের মিলগুলে কুমিল্লার চাল শিল্পে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করছে।এখানকার জনসাধারণের কেউ শ্রমিক, কেউ ব্যবসায়ী কেউবা মিল কিংবা চাতালের মালিক।

একটি চালকলের মালিক জানান, একেকটি অটো রাইসমিল থেকে প্রতিবার প্রায় আড়াই হাজার মন চাল উৎপাদন সম্ভব হয়। আধুনিক এসব মিলে দিনমজুর, প্যাকিংম্যান, গুদামকর্মী, সাধারণ লেবার, হেলপার, মেশিন অপারেটর, টেকনিক্যাল ম্যান-মেকার, ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ম্যানেজার, সেল্সম্যান, ক্যাশিয়ার, পরিচালক পদে জনবল নিয়োগ হয়ে থাকে। প্রতিটি কারখানায় আট ঘণ্টায় এক শিফট। প্রতি শিফটে ২০-৩০ জন নারী-পুরুষ কাজ করে থাকেন। চাহিদা অনুযায়ী রাত-দিন তিন শিফটে সচল রাখা হয় মিলগুলো। বোরো ধান কাটার মৌসুমে  পুরো এলাকা যেন কর্মযজ্ঞের আনন্দে রাত-দিন ভাসে। শিশু থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই কোনো না কোনো কাজের মধ্য দিয়ে সময় কাটান। বৃদ্ধ আঃ আলিম চোখে কম দেখলেও বড় আকারের সুই আর পাটের সুতলিতে  বস্তা মেরামতের কাজ করেন । বৃদ্ধা আছিয়া খাতুন চাল থেকে বেছে আলাদা করা তুষ-কুঁড়া বস্তায় পোরেন আয়েশি ভঙ্গিতে। ক্লান্তি এলে এখানে-সেখানে শুয়ে-বসে সময় কাটান তারা। আড্ডায় মেতে ওঠেন যখন-তখন। তবে এত আনন্দের মধ্যেও আছে সমস্যা। সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। 
বুড়িচংয়ে  উৎপাদিত চালের সুনাম রয়েছে। অথচ এ সুনামকে পুঁজি করে একশ্রেণীর ঠগ-প্রতারক এ যায়গার চাল  ব্র্যান্ড ব্যবহার করে খারাপ চালের জমজমাট ব্যবসা শুরু করেছে। এসব ব্র্যান্ডের চাল কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। সাধারণ থেকে শুরু করে মিনিকেট চাল পর্যন্ত বাজারজাত করে চলেছে অসাধু এই ব্যবসায়ী চক্র। সংশ্লিষ্ট মিল-মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলেন,  একশ্রেণীর অতি মুনাফালোভী দুষ্টচক্রের যোগসাজশে এখানকার ঠগ-প্রতারকরা ছোট-বড় ব্যাগে নানা নামে, নানা ব্র্যান্ডে সিলমোহরের মাধ্যমে দেদারছে পচা-গন্ধ নিম্নমানের চাল ছাড়ছে বাজারে। এখানকার চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, বিবাড়িয়া, সিলেট, ও ফেণীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সুনামের সাথে বিক্রি হচ্ছে। মানসম্মত চালের মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে রুবেল এগ্রে ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের বি আর ২৮, ছাতা মার্কা চাল,হাঁস মার্ক সুপার পারিজা চাল, মেসার্স ভুইয়া অটোরাইসমিলের আনারস মার্কা চাউল, মোরগ মার্কা সুপার মিনিকেট চাউল, ঞুমায়ুন কবির ভুইয়ারগোলাপফুল সুপার মিনিকেট চাউল,এছাড়া রামপুরের রিক্সা মার্কা চাউল। 
মোঃ আজাদ কামাল বলেন- এখানকার রাইসমিলগুলো সাধারনত বিবড়িয়া, সিলেট, নেত্রকোণা, ও কুমিল্লার বিন্নি উপজেলা থেকে ধান সংগ্রহ করে। কুমিল্লা জেলা অটো এবং হাস্কিং রাইসমিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ভারেল্লা ইউনের সাবেক চেয়ারম্যান আ ঃ রব ভুঞা বলেন-এ সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১১ জন। কুমিল্লা জেলায় ১৫টি অটো-রাইসমিল রয়ে।ে এর মধ্যে বুড়িচং এর ভারেল্লা ইউনিয়নেই রয়েছে ১১টি। ভবিষ্যতে অটো-রাইসমিল আরো বাড়বে। কোম্পানগিঞ্জ বাজারের র্ববসায়ী মজিবুর রহমান বলেন-আগে আমরা শুধুমাত্র আশুগঞ্জ ও দিনাজপুরের চালের উপর নির্ভরশীল ছিলাম, এখন ক্রেতারা বুড়িচংয়ের চাল বেশি পছন্দ করছে। এসব চালের গুণগত মানও ভাল। 
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক , (দৃষ্টান্ত ডট কম), কুমিল্লা, িি

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.