আলোকিত জনপদ দেবিদ্বারের এলাহাবাদ ।।
ছায়া ঘেরা পাখি উড়া এ গ্রামের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। দেবিদ্বারের ২০৯টি গ্রামের মধ্যে আর্থ, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এলাহাবাদের কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এক কথায় আদর্শ গ্রাম হওয়ার জন্য যে সকল বৈশিষ্ট্য দরকার এলাহাবাদে প্রায় সবই রয়েছে। বর্তমানে নারী আসনের এম পি আমেনা আহমদ, ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের স্ত্রী, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি আব্দুল
হান্নান ও উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান নাজমা বেগমের বাড়ি এলাহাবাদ গ্রামে।
নামকরন- “পূর্ব বঙ্গের আউলিয়া কাহিনী “ পুস্তক অনুযায়ী প্রথমে এ যায়গার নাম হয় উটখাড়া। পরবর্তীতে এলাহী আবেদ ,আল্লাহাবাদ ও ইলাহাবাদ থেকে এলাহাবাদ নামে রুপান্তৱিত হয়।
আয়তন ও সীমানা –বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর হিসেব প (২০০১) অনুযায়ী এলাহাবাদের আয়তন ১২৭০ একর। খানা ১৩০৭টি, জনসংখ্যা ৭৪৪৩ জন, | এর মধ্যে পুরুষ ৩৭৬৫ জন এবং নারী ৩৬৭৮ জন। দেবিদ্বাএলাহাবাদের অবস্থান ২য়। |
স্বাক্ষরতাঃ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী দেবিদ্বারের স্বাক্ষরতার হার ৫১% এর মধ্যে পুরুষ ৪৩,৬৫% এবং মহিলা ২৬,৫%। অন্যদিকে এলাহাবাদে স্বাক্ষরতার হার ৬০%। এতে দেখা যায় স্বাক্ষরতার দিক দিয়ে এলাহাবাদ ভাল অবস্থানে রয়েছে।
ধর্মীয় ঐতিহ্যঃ মোহাম্মদ রুহুল আমিন রচিত “পূর্ব বঙ্গের আউলিয়া কাহিনী “এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে প্রকাশিত কুমিল্লা জেলার ইতিহাস শীর্ষক পুস্তক “হয়রত শাহজালারের (১৩০৩) সফর সঙ্গীদের এলাহাবাদ “ সূত্রানুযায়ী ৩ জন সফরসঙ্গী ধর্ম প্রচারের জন্য প্রেরিত হন। তারা উটে আরোহন করে এসেছিলেন। কোথায় বসতি স্তাপন করব ? এ ব্যাপারে হযরত শাহ জালালকে (রহঃ) জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যেখানে গিয়ে উট “খাড়া“ হয়ে যাবে সেখানে ধর্ম প্রচার করবে। এলাহাবাদে এসে উট থেমে গেলে মজনুশাহ, শাহ কামাল ও শাহ জামাল এলাহাবাদে ইসলাম প্রচার ও বসতি স্থাপন করেন। বর্তমানে এলাহাবাদের উট খাড়ায় খান বাহাদুর আফজালুর রহমান ওয়াকফ স্টেটের আওতাধীন তাদের মাজার রয়েছে। পরবর্তীতে ইসলামের প্রসার ও ইসলামের ভিত্তিকে মজবুত করায় অবদান রাখেন ছবি হাজী, আলী আক্কাছ মুন্সী, হামিদ আলী মুন্সী ও মোজাফফর মোল্লা প্রমুখ ।
মুক্তিযুদ্ধে এলাহাবাদঃ এলাহাবাদে জন্মেছেন মুজিব নগর সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ন্যাপ নতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। তার উদ্যোগে এলাহাবাদ মুক্তিযোদ্ধাদের হেড কায়ার্টার স্থাপিত হয় (সূত্রঃ যুদ্ধ দিনের কথা ,মোতাহার হোসেন ) ।ন্যাপের ১৯০০ মুক্তিযোদ্ধার অধিকাংশই এখান থেকে রিক্রুট হয়।সুত্রানুযায়ী ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১ মাস পর্যন্ত এলাহাবাদের অস্ত্র ভান্ডার পাহাড়া দেন
মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল । । পরে কুমিল্লা ক্যান্টেনমেন্টে এগুলো জমা দেন।এলাহাবাদের সুজাত
আলী নায়েবের বাড়ি ,আক্কাস মোল্লার বাড়িসহকয়েকটি বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাগণ অবস্থান ও
খাওয়া দাওয়া করেছেন বলে মুক্তিযোদ্ধারা জানান।
শিক্ষায় অগ্রপথিকঃ শত বছর পূর্বে কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রী (ডাবল) লাভ করেন ললিত পাল এলাহাবাদ ছিল তার মামার বাড়ি।
তিনি বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাই তিনি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকুরী নেননি। এলাহবাদে বর্তমানে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬টি ব্র্যাক স্কুল, ১টি হাই স্কুল, ১টি বালিকা বিদ্যালয় (অধুনালুপ্ত)১টি মাদ্রাসা ও ১টি কলেজ রয়েছে। এলাহাবাদের বিশিষ্ট শিক্ষা সেবকগণ হচ্ছেন- ইসমাইল হোসেন, কেয়ামউদ্দীন ভূইয়া, হাছান আলী, বাবরী ভূইয়া, আবদুল জলিল, জুনাব আলী, মজিদ মিয়া, ভুষণ, রমেশ শীল ও চান মিয়া মাষ্টার প্রমুখ ।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বঃ বিশ্বব্যাপী আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তি হচ্ছেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। তিনি ১৯৫৪ ও ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য হন। চল্লিশ বছর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টছিলেন
নবী নেওয়াজ ভুইয়া,পাকিস্তান অঅমলে চেয়ারম্যান ছিলেন আজগর আলী।দীর্ঘদিনি ইউপি
চেয়ারম্যান ও ২ বার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন আবুল বাশার ভূইয়া। তিনি এলজিইডি
গোডাউন, ইউপি ভবন ইউনিয়ন স্বাসথ্য উপকেন্দ্র,তহসিল অফিস ৭৬ নং দক্ষিণ জাফরগঞ্জ
ইউনিয়নকে এলাহাবাদ নামকরন করেন।
সমাজ সেবায় স্মরণীয়ঃ জমিদারদের অত্যাচার থেকে জনসাধারণকে মুক্ত করার জন্য আনিস খান প্রজাকল্যাণ সমিতি গঠন করেন। জমিদারদের সাথে। বিরোধের সূত্র ধরে তিনি জেলও খেটেছেন। অভাবী লোকদের সহায়তায় 'ধর্মগোলা সমিতি গড়ে তোলেন ছাদির বক্স ভূইয়া ও আসাদুল্লাহ। এছাড়া বিশিষ্ট সমাজ সেবকদের মধ্যে রয়েছেন আরমান। গাজী, ছায়েদ আলী সরকার, কাজী মাজহারুল হক, জাফর চেয়ারম্যান, সানাউল্লাহ ডিলার, | গণি খলিফা, ছাত্তার ভূইয়া, রজনী। ঠাকুর, ওহাব মুহুরী, ঝারু কাজী।
খেলাধুলাঃ ১৯৫৪-৬৫ সাল পর্যন্ত এলাহাবাদ বয়েজ ক্লাব জেলায় আলোচিত ক্রীড়া সংগঠন ছিল । এতে বাবরী ভূইয়া ও দুধমিয়া ভূইয়া বিশেষ অবদান রাখেন। এছাড়া রমিজ সরকার ও দেবেন্দ্র দত্তের ফুটবল টীম বিখ্যাত ছিল ।মনির মোল্লার উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল “নবজাগরণ সংঘ “ চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে এলাহাবাদ জনকল্যাণ সংঘ গড়ে তুলেন আবুল হাশেম।
নিউজ আর্কাইভস থেকে “সাপ্তাহিক আমোদ“20/09/2009মমিনুল ইসলাম মোল্লা
