Staff reporter
মমিনুল ইসলাম মোল্লা : সাংবাদিকতা ও শিক্ষা জীবনের যৌক্তিক বিশ্লেষণ
মমিনুল ইসলাম মোল্লা
একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব—একই সঙ্গে তিনি শিক্ষক, সাংবাদিক, ফিচার লেখক ও কলামিস্ট। পেশাগতভাবে তিনি বর্তমানে
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার হায়দরাবাদ সামসুল হক কলেজে পৌরনীতি ও সুশাসন বিভাগের সহকারী
অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি শাহ্তলী কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা
করেছেন। শিক্ষা ও সাংবাদিকতার সমান্তরাল পথচলায় তিনি গড়ে তুলেছেন এক সমৃদ্ধ ও বহুমুখী
কর্মজীবন।
সাংবাদিকতা ও লেখালেখির
ধারা
সাংবাদিক হিসেবে মমিনুল
ইসলাম মোল্লা মূলত ফিচারধর্মী লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেছেন। ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপট তাঁর লেখার প্রধান
উপজীব্য। যেমন “৪ ডিসেম্বর দেবীদ্বার মুক্ত দিবস” শীর্ষক লেখায় তিনি স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের
সংগ্রামী অধ্যায়কে বিশ্লেষণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের গ্রামভিত্তিক প্রতিরোধ,
শহীদদের আত্মত্যাগ ও মিত্রবাহিনীর
অবদানকে তিনি তথ্যনির্ভরভাবে তুলে ধরেছেন। এতে বোঝা যায়, তাঁর সাংবাদিকতা কেবল খবর পরিবেশনেই সীমাবদ্ধ নয়;
বরং ইতিহাসকে প্রামাণ্য দলিল
আকারে সংরক্ষণের প্রচেষ্টা।
একইভাবে “পৌরনীতি
ও সুশাসন” বিষয়ক লেখা থেকে তাঁর একাডেমিক গভীরতা স্পষ্ট হয়। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের
জন্মলগ্ন পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত তিনি বিশ্লেষণধর্মী বর্ণনা দিয়েছেন।
এখানে একজন শিক্ষক ও সাংবাদিকের সংমিশ্রণ ধরা পড়ে।
সাহিত্য ও সমাজবিষয়ক
চিন্তা
ধর্মীয় ও নৈতিক আলোচনাতেও
তাঁর কলম সক্রিয়। “ফুলসেরাত এরপর কানতারা চেকপোস্ট” শীর্ষক ফিচারে তিনি ইসলামের আলোকে
মানুষের নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নটি তুলেছেন। এতে বোঝা যায়, তিনি শুধু রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক বিষয়েই সীমাবদ্ধ
নন; বরং সমাজসচেতনতা ও নৈতিকতার
ক্ষেত্রেও তাঁর মনন প্রসারিত।
শিক্ষা আন্দোলনে ভূমিকা
শিক্ষক সমাজের বঞ্চনা
ও আন্দোলন নিয়েও তিনি কলম ধরেছেন। তাঁর “বেসরকারি শিক্ষকগণ দায় না সম্পদ” ফিচারে বেসরকারি
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, পদোন্নতি বৈষম্য ও
জাতীয়করণের দাবিকে বিশ্লেষণ করেছেন। এখানে তিনি কেবল একজন শিক্ষক নন, বরং শিক্ষানীতি পর্যবেক্ষক হিসেবেও প্রতিভাত। শিক্ষকদের
ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তিনি আন্দোলনের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন।
সমন্বিত জীবনদর্শন
মমিনুল ইসলাম মোল্লার
সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা ও কলাম রচনার
মূল দর্শন হলো সমাজের সত্যকে অন্বেষণ করা এবং প্রজন্মকে শিক্ষিত করা। তাঁর লেখালেখিতে
ঐতিহাসিক গবেষণা, শিক্ষামূলক বিশ্লেষণ
ও সামাজিক দায়বদ্ধতা একসাথে মিশে গেছে। ফলে তিনি একদিকে যেমন পাঠকের কাছে নির্ভরযোগ্য
তথ্যভাণ্ডার, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের
কাছে একজন অনুপ্রেরণাদায়ী শিক্ষক।
উপসংহার
শিক্ষা ও সাংবাদিকতা—দুটি
ক্ষেত্রই সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি। মমিনুল ইসলাম মোল্লা এই দুই ধারাকে একত্রিত করে একটি
ভারসাম্যপূর্ণ কর্মজীবন গড়ে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা আন্দোলন, রাজনৈতিক ইতিহাস কিংবা নৈতিক প্রশ্ন—সবক্ষেত্রে
তাঁর লেখনী তথ্যসমৃদ্ধ ও মননশীল। বলা যায়, তিনি কেবল একজন শিক্ষক বা সাংবাদিক নন; বরং সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনাশীল একজন জনমেধা,
যিনি কলমের মাধ্যমে জাতির
পথচলার দলিল রচনা করছেন।