মুক্তিযুদ্ধ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মুক্তিযুদ্ধ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
৪ ডিসেম্বর দেবীদ্বার পাক হানাদার মুক্তদিবস

৪ ডিসেম্বর দেবীদ্বার পাক হানাদার মুক্তদিবস


 

৪ ডিসেম্বর দেবীদ্বার মুক্তদিবস

 


৪ ডিসেম্বর দেবীদ্বার পাক হানাদার মুক্তদিবস।  ১৯৭১সালের এই দিনে দেবীদ্বার পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করার লক্ষ্যে দেবীদ্বার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। সকাল ১০টায় সর্বস্তরের জনতার উপস্থিতিতে উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে একটি বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের স্মরনে দেবীদ্বার নিউমার্কেট মুক্তিযোদ্ধা চত্তর ও গণকবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, উপজেলা পরিষদ চত্তরে ‘হল রোমে’ আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধে দেবীদ্বার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা করা হয়েছে। 

১৯৭১ সলের রক্তে ঝরা দিনগুলোতে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমনে হানাদার মুক্ত হয়েছিল কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল। তারই ধারাবাহিকতায় দেবীদ্বার এলাকা হানাদার মুক্ত হয়েছিল ৪ ডিসেম্বর। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে ওইদিন হানাদারদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা করে। ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী ‘কুমিল্লা-সিলেট’ মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ সেতুটি মাইন বিষ্ফোরনে উড়িয়ে দেয়। মিত্রবাহিনীর ২৩ মাউন্ড ডিভিশনের মেজর জেনারেল আর.ডি হিরার নেতৃত্বে বৃহত্তর কুমিল্লায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংক বহর বুড়িচং ব্রাক্ষনপাড়া হয়ে দেবীদ্বারে আসে। হানাদাররা ওই রাতেই দেবীদ্বার ছেড়ে কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসে পালিয়ে যায়। ধীরে ধীরে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপ দেবীদ্বার সদরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরই মধ্যে মিত্রবাহিনীর ট্যাংক বহরটি দেবীদ্বার থেকে চান্দিনা রোডে ঢাকা অভিমুখে যাওয়ার সময় মোহনপুর এলাকায় ভুল বোঝাবুঝির কারনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গুলি বিনীময় হলে মিত্রবাহিনীর ৬ সেনা সদস্য নিহত হয়। এই দিনে দেবীদ্বারের উল্লাসিত জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে বিজয় উল্লাসে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে মেতে উঠে। দুপুর পর্যন্ত ওইদিন হাজার হাজার জনতা বিজয় উল্লাসে উপজেলা সদর প্রকম্পিত করে তোলে।

তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্ট সন্নিকটে থাকায় এঅঞ্চলের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। স্বাধীনতা ঘোষনার মাত্র ৩ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ ২৯মার্চ রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের বাইরে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত ১৪জনের একটি দল ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে পায়ে হেটে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্টে যাওয়ার পথে দেবীদ্বার এলাকায় স্থানীয় জনতার সাথে সন্মূখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। ওই যুদ্ধে নিরস্ত্র বাংগালীরা পুরো দলটিকে পরাস্ত করে বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরব অর্জণ করে। স্বাধীনতা ঘোষনার মাত্র ৩ দিনের মধ্যে রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহরের বাইরে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত ১৪সদস্যের পাক সেনার একটি দলকে পরাস্ত করে নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরব সম্ভবতঃ এটাই বাংলাদেশে প্রথম।

যে যুদ্ধটি ‘ভিংলাবাড়ি-জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে সমজিদ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত এবং কাক ডাকা ভোর রাত থেকে সন্ধ্যা নাগাদ এ যুদ্ধে ১৪ পাক সেনাকে হত্যা করতে আবুল কাসেম, সৈয়দ আলী, আব্দুল মজিদ, তব্দল ড্রাইভার, মমতাজ বেগম, সফর আলী, নায়েব আলী, সাদত আলী, লালমিয়া, ঝারু মিয়া, আব্দুল ড্রাইভার, ফরিদমিয়া, আব্দুর রহিমসহ ৩৩বাঙ্গালী শহীদ ও অর্ধশতাধিক বাঙ্গালী আহত হয়েছিলেন। যে যুদ্ধে দেবীদ্বার থানার অস্ত্রাগার লুন্ঠন করে ওই লুন্ঠিত অস্ত্র এবং বঙ্গজ হাতিয়ার লাঠি, দা, সাবল এমনকি মরিচের গুড়া নামক অস্ত্রটিও শত্রæ নিধনে ব্যবহার হয়েছিল সেদিন।

১৪এপ্রিল সমতট রাজ্যের রাজধানী খ্যাত এবং হিন্দু অধ্যুসিত বরকামতা গ্রামে পাক হানাদাররা হামলা চালানোর সংবাদে কমিউনিস্ট নেতা আব্দুল হাফেজের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ হাজার বাঙ্গালী মাত্র দুটি থ্রী-নট থ্রী রাইফেল ও লাঠি নিয়ে শত্রুেসেনাদের উপরঝাপিয়ে পড়ে। রাইফেলের গুলিতে এক প্লাটুন সৈন্যেও পাঁচজন লুটিয়ে পড়লে কিংকর্তব্য বিমূঢ় পাক সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ওই রাতে ফিরে এসে হিংস্র হায়ানারা লুটপাট, নির্যাতনসহ অগ্নীসংযোগে পুরো গ্রামটি জ¦ালিয়ে ছারখার করে দেয়।

২৪জুন মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার বাখরাবাদ গ্রামে পাক হায়ানাদের এক নারকীয় হত্যাজজ্ঞে অগ্নীসংযোগ লুটপাট, নারী নির্যাতনসহ ২৪০ নিরীহ বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ওই দিন ২১যুবককে ধরে দেবীদ্বার ক্যাম্পে আনার পথে একজন পালিয়ে গেলেও অপর ২০জনকে দেবীদ্বার সদরে পোষ্ট অফিস সংলগ্নে ধৃতদের কর্তৃক গর্ত খুড়ে চোখ বেঁধে ব্রাস ফায়ারে হত্যা করে একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলে বাকী ১৯জনকে ওই গর্তে চাপা দেয়া হয়। দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক দীর্ঘ আন্দোলনের পর গত আগষ্ট মাসে ওই বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মান করা হয়।   

৬সেপ্টেম্বর রাজাকারদের সহযোগীতায় পাক হায়ানারা বারুর গ্রামে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিলে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল সম্মূখ সমরে জয়নাল আবেদীন, বাচ্চুমিয়া, শহিদুল ইসলাম,আলী মিয়া, আব্দুস সালাম, সফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেনসহ ছয় মুক্তিযোদ্ধা শাদাত বরণ করেন ভাগ্যক্রমে অপর একজন বেঁেচ যান।

১৪ সেপ্টেম্বর দেবীদ্বার উপজেলার মহেশপুর গ্রামে পাক হায়েনাদের বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ ১৪ নিরীহ বাঙ্গালী ।

২নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নির্দেশে নারায়নগঞ্জ নৌবন্দর ধ্বংস করতে যাওয়া ১৭ সেপ্টেম্বর নৌ-কমান্ডো’র ল্যাপ্টেন্যান্ট মোঃ ফজলুল হকের নেতৃত্বে নৌকমান্ডের ৫সদস্যের একটি দল বাগিরতি নদীর তীরে ট্রেনিং শেষে দেবীদ্বার পোনরা হয়ে যাওয়ার পথে পাক সেনাদের সাথে মুখমুখী যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এ যুদ্ধে নারায়নগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা আবুবকরসহ ২জন যোদ্ধা শহীদ হন।

ওই সময় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের রাজামেহার এলাকায় মাইন বিস্ফোরনে সাত পাকসেনা নিহত হলে ওই এলাকার দু’পাশের প্রায় তিন কিলো মিটার এলাকা জ¦ালিয়ে দেয় শত্রæসেনারা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেবীদ্বার উপজেলার নলআরায় (ফতেহাবাদ গ্রামের একটি গভীর জঙ্গল) এবং ন্যাপ প্রধান এলাহাবাদ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে দু’টি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ওখান থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে চলে যেত। ওই দু’টি অস্থায়ী ক্যাম্পের মধ্যে নলআরায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। 

২৯নভেম্বর ভূষণা ও ধামতী গ্রামকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ ঘাটি হিসাবে চিহ্নীত করে পাক হায়ানাদের একটি বিশাল বাহিনী হামলা চালায়। ধামতী গ্রামের বিখ্যাত চৌধূরী বাড়িসহ নব্বইটি বাড়ি, ভূষণা গ্রামের ষোলটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পাক হায়ানারা ভূষণা গ্রামের ছয় নিরিহ বাঙ্গালী ও ধামতী আলীয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় পীর আজিমউদ্দিন সাহেবের নাতি শরিফুল্লাহ, অধ্যক্ষ হালিম হুজুরের দু’ভাগ্নে জহুর আলী ও আব্দুল বারি, সহোদর তাজুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে তাদের স্বজনদের সামনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও পোনরা গ্রামে (নরসিংদী জেলার) মুক্তিযোদ্ধা আবুবকর, ভিড়াল্লা গ্রামের শহীদ মজিবুর রহমানের কবর পথিকের হৃদয় এখনো আলোড়িত করে। 

এছাড়াও মুক্তি যুদ্ধে দেবীদ্বার বাসীর অবদান ছিল প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামন্ডুলীর সদস্য ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক গঠিত ‘বিশেষ গেরিলাবাহিনী’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কমরেড আব্দুল হাফেজ, পালাটোনা ক্যাম্প প্রধান কিংবদন্তী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন সুজাত আলী, মুক্তি যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আজগর হোসেন মাষ্টার, সাবেক এমএনএ আব্দুল আজিজ খান, শহীদ নুরুল ইসলাম, শহীদ শাহজাহানসহ অসংখ্য কিংবদন্তী মুক্তিযোদ্ধার অবদান ছিল স্মরনীয়।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট দেবীদ্বারের খুব কাছে থাকার কারনে এ এলাকার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা যেমন বেশী ছিল, তেমনি রাজাকারদের সহযোগীতায় এ অঞ্চলে নারকীয় হত্যাজজ্ঞ, লুন্ঠন, নারী নির্যাতন, অগ্নীসংযোগসহ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে এ এলাকার মানুষ।

এক হাজার ৩৭৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নতুন করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার

এক হাজার ৩৭৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নতুন করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার

 সারা দেশের এক হাজার ৩৭৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নতুন করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪৫১, চট্টগ্রামে ৩২৪, রাজশাহীতে ১৯৯, ময়মনসিংহে ৫৬, সিলেটে ১৭৯ ও রংপুর বিভাগে ১০৬ জন। এরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও এতদিন তাদের নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। তাদের নামে ইস্যু করা হয়নি সনদ। ফলে তারা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি।উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের পর এবার তাদের নাম গেজেটভুক্তির সুপারিশ করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। ১০ ডিসেম্বর জামুকার ৬৬তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।


কুমিল্লা : লাকসাম উপজেলার হাজী আবুল কাসেম। বুড়িচং উপজেলার মো. আবু জাহের, মো. হাজী আতাউল হক, মো. মোবারক আলী, মৃত আবদুছ সামাদ, মৃত আবুল হান্নান, মো. আবদুল রশিদ, মৃত সুলতান আহাম্মদ, আখলাক হায়দার, মো. বসারত আলী ভূঞা, মো. ছিদ্দিকুর রহমান। দেবিদ্বার উপজেলার মৃত মো. মজিবুর রহমান, মো. আবুল কাশেম, মৃত মাজেদুল ইসলাম মোল্লা, মৃত সাখাওয়াত হোসেন, মৃত নাছির উদ্দিন সরকার, মো. রহিম সরকার, মো. শাহ আলম, মৃত মো. সামসুল হক, কাজী আব্দুল ছামাদ, মো. রেজাউল করিম, মো. আব্দুল মান্নান, মৃত মো. আ. কাদের, মো. আবদুল হালিম, শহীদ আ. রহিম, মৃত সফিকুল ইসলাম লিল মিয়া, মো. অহিদুর রহমান সরকার, মো. শহীদুল ইসলাম, মৃত মো. ওয়ারিশ মিয়া, আ. বারী ভূইয়া, ময়নাল হোসেন ভুইয়া, মো. আ. বারী, মো. ফুল মিয়া, মো. আলফু মিয়া (আলফু ফকির), মো. জায়েদ আলী, মৃত মো. মোখলেছুর রহমান, মো. রমিজ উদ্দিন, মো. আ. রশিদ, মো. আবুল হোসেন, মৃত আকামত আলী, মৃত মো. দুধ মিয়া, মো. আবদুল হাই, মো. ফজলুল হক সরকার, মো. রফিকুল ইসলাম সহিদুল্লাহ, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, মো. মর্তুজ আলী, মো. আবদুল লতিফ ভুইয়া, মো. এরশাদুল আলম, মো. ফজুলুর রহমান, মো. আবদুল হালিম ভুইয়া, মো. আবদুর রশিদ ভুইয়া। হোমনা উপজেলার মো. হোসেন, সফিউদ্দিন আহাম্মেদ, গোলাম মোস্তফা, মো. আবদুল খালেক, মো. মনিরুল হক খন্দকার, আবুল কাশেম, মো. জালাল দেওয়ান, জাহাঙ্গীর সেলিম। মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৃত এবিএম ফয়েজুর রহমান।

নিজ হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর পরিষ্কার করছেন- মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব সাংবাদিক এন এ মুরাদ

নিজ হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর পরিষ্কার করছেন- মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব সাংবাদিক এন এ মুরাদ


 মুরাদনগরের বধ্যভূমি ও গন কবর: উপজেলায় সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড ঘটে চাপিতলা ও রামচন্দ্রপুরের নিকটবর্তী বাখরাবাদ গ্রামে। তবে তাদেরকে একত্রে কবর দেয়া হয়নি। অধিকাংশ শহীদদেরকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

নিজ হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর পরিষ্কার করছেন- মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব সাংবাদিক এন এ মুরাদ

 তবে খামারগ্রামে ৩জন মুক্তিযোদ্ধার কবর একসাথে রয়েছে। এর মধ্যে ২ টি পাকা কবর। এরা হচ্ছেন বলিঘরের আবুল বাশার ও পুস্কুনীরপাড়ের রমিজ উদ্দিন।

     খামারগাঁও ইসলামিয়া মাদ্রাসার দক্ষিণে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর রোডের পশ্চিম পাশে আবুল বাশারের কবর অবস্থিত।মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক কবরটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। ” বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি ” শিরোনামে লিখা হয়েছে- পিতার নাম-পরচাঁন মিঞা, মাতার নাম-রাবেয়া খাতুন, সেক্টর-০২, গ্রাম-বলিঘর, মুরাদনগর, কুমিল্লা।  

" বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ " বই-এ দেবিদ্বারের রণাঙ্গন ও কিছু কথা

" বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ " বই-এ দেবিদ্বারের রণাঙ্গন ও কিছু কথা

 " বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ " বই-এ দেবিদ্বারের রণাঙ্গন ও কিছু কথা












মুক্তিযুদ্ধে দেবিদ্বারের  রণ চিত্র  তুলে ধরেছেন  কুমিল্লার দেবিদ্বার প্রেসক্লাবের সভাপতি, প্রথিতযশা সাংবাদিক এ বি এম আতিকুর রহমান বাশার

৭১এর রনাঙ্গণঃ1971.09.24 | বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ | বাংলাদেশ   1971.09.24, Newspaper (  1104-1), U Thant

৭১এর রনাঙ্গণঃ1971.09.24 | বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ | বাংলাদেশ 1971.09.24, Newspaper ( 1104-1), U Thant

 

শিরোনামঃ বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ

সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশভলিউম ১: নং ৪

তারিখঃ ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।জাতিসংঘের মহাসচিব  ইউ থান্ট, সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি নিকোলাই পডগোর্নি ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভিবিগিরি এবং অঅফগান রাজা মুহাম্মদ জহির শাহ এশিয়ার শান্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশে দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা আহবান করেছেন।

ইউ থান্টঃ গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব, ইউ থান্ট, পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া তার ২০ জুলাই এর স্বারকলিপির প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদ কোনো পদক্ষেপ গ্রহন না করায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আরও মনে করেন, স্থিতিশীল অবস্থা পুনরুদ্ধার না হলে, ভারত থেকে অধিকাংশ  শরণার্থীদের ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

একাত্তরের রনাঙ্গণঃ২৩আগস্ট NEWSWEEK, AUGUST 23,1971 THE VERY BEST OF FRIENDS

একাত্তরের রনাঙ্গণঃ২৩আগস্ট NEWSWEEK, AUGUST 23,1971 THE VERY BEST OF FRIENDS

 

1971.08.23, Country (India), Country (Russia), Newspaper (Newsweek) When Soviet Foreign Minister Andrei Gromyko flew into New Delhi last week, the local diplomatic corps hardly took notice. Some of the foreign envoys had been assured by Indian officials that nothing very exciting would come from the Gromyko visit, and many of them repaired to the northern hill stations to escape the sweltering summer heat and rain. But only a day after his arrival Russia's No. I diplomatic troubleshooter made it plain that he had come to India's capital on urgent and momentous business. Seated at flag-bedecked table in New Delhi's Foreign Ministry; Gromyko triumphantly set his signature to a precedent-shattering, twenty-year treaty of peace, friendship and co-operation between the Soviet Union and India.


  ৭১ এর রণাঙ্গণঃসুন্দরবনে পাক সেনাবাহিনীর হাতে ৫১ জন চর নিহত

৭১ এর রণাঙ্গণঃসুন্দরবনে পাক সেনাবাহিনীর হাতে ৫১ জন চর নিহত

 ইত্তেফাক ২২ আগস্ট ১৯৭১


শিরােনাম সুন্দরবনে পাক সেনাবাহিনীর হাতে ৫১ জন চর নিহত , রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি, মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সির ডেপুটি পরিচালক মরিস জে উইলিয়ামস এর সাথে টিক্কা খানের সাক্ষাৎ, ইরানে আফ্রিকা ও পাক মিশন প্রধানদের সম্মেলন গুপ্তচর সন্দেহেশরনার্থীদের তল্লাশি, নভেম্বরে ইন্দিরার যুক্তরাষ্ট্র সফর। ২৬ আগস্ট নিক্সন-হিরােহিতাের সাক্ষাৎকার, পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর পদে এন্থনি ডায়াস , ৩০ আগস্ট ইন্দিরার পশ্চিমবঙ্গ সফর, তিন লীগ একত্রীকরণ সমাচার।

 কুমিল্লার মুরাদনগরে মুক্তিযুদ্ধাকে হয়রানি

কুমিল্লার মুরাদনগরে মুক্তিযুদ্ধাকে হয়রানি

 

কুমিল্লার মুরাদনগরে মুক্তিযুদ্ধাকে হয়রানি

 বিভাগ : সংবাদ  প্রকাশের সময় :১০ জানুয়ারি, ২০২১ ৫:২২ : অপরাহ্ণ

মমিন মোল্লা মুরাদনগর, কুমিল্লা :



কুমিল্লার মুরাদনগরে জমি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দ্বারা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ মাস্টারকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হয়রানি থেকে রেহাই পেতে তিনি সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা করেছেন। এতে ওই চক্রটি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওই মুক্তিযোদ্ধার কেনা জায়গার ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করলে তিনি কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারার আরেকটি মামলা করেন। আদালত মুরাদনগর থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।



এ ঘটনায় চক্রটি মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে বাউন্ডারির দেওয়াল ভেঙে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসেন। পরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি পুনরায় সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ দিকে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আদালত, অপর দিকে তিনটি মামলা করেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন আলী আহাম্মদ মাস্টার।



ভূক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ মাস্টার (৬৮) নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের নিমাইকান্দি গ্রামের মৃত আলী আকবর মুন্সীর ছেলে। অভিযুক্তরা হলেন- একই গ্রামের মৃত রোশন আলী ভুইয়ার ছেলে ফজলুর রহমান, মৃত লুৎফুর রহমান ভুইয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন ভুইয়া, আবদুস ছালাম, রফিকুল ইসলাম, মৃত আলী আজগরের ছেলে লুৎফুর রহমান, মৃত মঙ্গল মিয়ার ছেলে আব্দুল গনি ও গণি মিয়ার ছেলে সাগর মিয়া।

আলী আহাম্মদ মাস্টার বলেন, ‘রহিমপুর মৌজার ৫০০ নম্বর বিএস খতিয়ানের ৭৬৬ ও ৭৬৭ দাগের সাড়ে ১৯ শতক জমির আমি ক্রয় সূত্রে মালিক। স্থানীয় জমি ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান আমার জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নিতে চাইলে, আমি কুমিল্লার সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। মামলার পরও প্রভাব খাটিয়ে রাস্তা করতে গেলে পুনরায় আমি কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা করি। আদালত স্থানীয় থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।থ



তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রতিবেদন দিতে সময়ক্ষেপণ করছেন। এ সুযোগে ফজলুর রহমান গংরা আমার জায়গায় প্রবেশ করে বাউন্ডারির দেয়াল ভেঙে ফেলে আমাকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে গেছেন। নিরূপায় হয়ে আমি আবার সাতজনের নাম উল্লেখ করে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি অভিযোগ দেই। এখন শেষ বয়সে আমি আতংক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনযাপন করছি।থ

অভিযুক্ত জমি ব্যবসায়ীর মূল হোতা ফজলুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমি জায়গা কেনা-বেচা করেছি। যারা এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করবে বিষয়টি তাদের ব্যাপার।থ

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যদিও জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন, রাস্তার জন্য একটু জায়গা ছেড়ে দিলে মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হতো। আমি জনস্বার্থের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
দেবিদ্ধারের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলিম

দেবিদ্ধারের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলিম


স্মরণঃ দেবিদ্ধারের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলিম

দেবিদ্ধারের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলিমখানের  বাড়ি দেবিদ্বারের বারুর  বামে। তার পিতা  মৃত সুন্দর আলী খাঁন। ৪০ বছর বয়সে তিনি জীবন ৰাজী রেখে দেশকে হানাদারমুক্ত করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তিনি আখাউড়ার মনতলী ক্যাম্পে ২১ দিন প্রশিক্ষণ নেন। শহিদ আবদুল হালিমের নিকট সশস্ত্র | প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন
এপ্রিল ১৯৭১ প্রশিক্ষণ শেষে প্রথমে

আখাউড়া চেকপোস্টে এবং পরে মনতলীতে যুদ্ধ করেন। মনতলী থেকে দেবগ্রাম আখাউড়া পর্যন্ত তিনি ২নং সেক্টরে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফের অধীনে যুদ্ধ করেন। শহীদ হাবিলদার আবদুল হালিম ছিলেন স্থানীয় কমান্ডার শহীদ হালিমের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলীম বল্লেন। সে দিনের কথা। যুদ্ধ প্রায় শেষ, তারিখটা ডিসেম্বরের ১৪/১৫ এর দিকে। হাবিলদার আবদুল হালিমের নেতৃত্বে সন্ধ্যার পর দেবগ্রাম থেকে আখাউড়ার দিকে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য আখাউড়াকে দখলমুক্ত করা। হঠাৎ করেই ইপিআর ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ শুরু হলো। /৩শ মুক্তিযোদ্ধা সহস্রাধিক পাকিস্তানী সৈন্যকে সাহসের সাথে মোকাবেলা করলেন।
মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তি যাচাই বাছাই তালিকায় তার আবেদন নং ১৪ তারিখ জানুয়ারী২০০৪ ।। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এখনও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলীম খান মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার নিশ্চয়তা পাননি। এব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বল্লেন এক জন মুক্তিযোদ্ধার নামও যদি নতুন করে তালিকাভূক্ত হয় তাহলে তিনি হবে আলিম খান
| কিন্তু কবে হবে সেই গেজেট ? মৃত্যুর পূর্বে কি তিনি ভাতা পাবেন ? প্রশ্ন আবদুল আলীমের জীবিত থাকাকালীন সময়ে ভাত না দিয়ে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনকে তিনি প্রহসন মনে করেন তিনি চোখে কম দেখেন, জীর্ণ শীর্ণ দেহে কোন কাজ করতে পারেন না। ৮টি ছেলে মেয়ে নিয়ে | বিপদে আছেন, তাই অতি সত্ত্বর ভাতার ব্যবস্থা করার জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট আবেদন জানাচ্ছেন।
মমিনুল ইলাম মোল্লা প্রকাশিত সাপ্তাহিক অঅমোদ 22/02/2007 ( নিউজ আর্কাইভ থেকে )




মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপের  (মোজাফ্ফর) গেরিলাবাহিনীর অবদান  মমিনুল ইসলাম মোল্লা

মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপের (মোজাফ্ফর) গেরিলাবাহিনীর অবদান মমিনুল ইসলাম মোল্লা


মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপের  (মোজাফ্ফর) গেরিলাবাহিনীর অবদান
মমিনুল ইসলাম মোল্লা 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্তদানকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি যা সংক্ষেপে ন্যাপ নামে পরিচিত। বর্তমানে এদলটির নেতৃত্ত দিচ্ছেন বর্ষিয়ান নেতা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। তিনি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্ধার থানার এলাহাবাদে ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ পাশ করার পর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও ঢাকা কলেজে ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু শিক্ষকতা পেশা তাকে বেশি দিন আটকে রাখতে পারে নি। তিনি শোষিত, নিপিড়িত, নির্যাতি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়েে চলে আসেন জনগণের কাতারে। ১৯৩৭ সালে তার রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি; যদিও সক্রিয়ভাবে (চাকুরি ছেড়ে দিয়ে) রাজনীতিতে আসেন ১৯৫৪ সালে। তখন তিনি দেবিদ্ধার আসন থেকে খান বাহাদুর কায়দে আযম মাওলানা মফিজ উদ্দিন আহমদকে পরাজিত করে প্রথম বারের মত এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে তিনি পূনরায় জাতীয় সংসদের সদস্য পদ লাভ করেন। আশির দশকে তিনি একবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।


১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। এ সরকারে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ স্থান পেলেও সেপ্টেম্বর মাসে গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটিতে অন্যান্য দলের নেতাদের স্থান দেয়া হয়। ৮ সেপ্টেম্বর গঠিত এ কমিটির আহবায়ক ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, মাওলানা আঃ হামিদ খান ভাসানী, মনোরঞ্জন ধর ও কমরেড মনিসিং। তিনি বাঙ্গালীদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন আদায়ের লক্ষে বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে যোগদান করা করেন। এছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করেন। ৪ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব করা হলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো প্রদান করে। ৫ ডিসেম্বর একই প্রস্তাব আনা হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২য় বার ভেটো দেয়। এসময় “তাস ” মারফত এক বিবৃতিতে সোভিয়েট সরকার “পূর্ব বাংলার জনগণের আইন সঙ্গত অধিকার ও স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের দাবী জানানো হয়। আমেরিকা যখন দেখল যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেছে তখন পাকিস্তানের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ৯ ডিসেম্বর নির্দেশ দেয়া হলে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে ৭ম নৌবহর প্রবেশ করলে সোভিয়েট ইউনিয়ন একটি অত্যাধুনিক নৌযান পাঠায়। এসংবাদ পেয়ে ৭ম নৌবহর পিছু হটে যায়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল  আওয়ামী পার্টি মুক্তিযুদ্ধকালীন সংবাদ জনগণের মধ্যে পৌছেঁ দেয়ার লক্ষে “নতুন বাংলা” নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করে। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের সম্পাদনায় মুজিবনগর থেকে পত্রিকাটি প্রকাশ পেত। ১৯ টি সংখ্যা প্রকাশিত হয় । এতে মুক্তিযুদ্ধের খবর ছাড়াও সরকারের পরামর্শদাতা কমিটির কার্যক্রমের উপরগুরুত্ব দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপের আলাদা গেরিলা বাহিনী ছিল। ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলার সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আহুত রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। মূলত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ৬৬ সালের ৬ দফা এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথ্বানে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। বিশিষ্ট কলামিস্ট , লেখক, ও গবেষক আঃ গাফ্ফার চৌধুরি লিখেছেন-(ন্যাপের ৫৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকিতে) “১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের সাথে রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকে আপোস প্রস্তাবে অসম্মত শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে এলে বিমান বন্দর থেকে কাকরাইল পর্যন্ত জনতার সংবর্ধনা ও মিছিলে খোলা ট্রাকে জনতার অভিভাবদনের জবাব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন বঙ্গব›ধুর পেছনে খালা ট্রাকেই জনতার অভিভাদন গ্রহণরত এই নেতাকেও আমি দেবদারু বৃক্ষের মত শির উচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।”

লেখক: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক, সাংবাদিক ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের জন্য ক্যাম্পেনার, কুমিল্লা।

রাজাকাররা বাঙ্গালী জাতির অভিশাপ

রাজাকাররা বাঙ্গালী জাতির অভিশাপ

রাজাকাররা বাঙ্গালী জাতির অভিশাপ

 মমিনুল ইসলাম মোল্লা

১৯৭১ সারের ২৫ মার্চেও গণহত্যা দিয়ে শুরু হওয়া যুদ্ধ চলে ১৬ ডিসেম্বর  রেইসকোর্স ময়দানে জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পন পর্যন্ত। এতে ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী নিহত, ২ লক্ষ মা- বোন ধর্ষিত এবং  ঘরবাড়ি লুটপাট ও জ্বালিয়ে দেয়াসহ দেশের বিপুল পরিমান সম্পদের ক্ষতি হয়। এ যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানী আর্মিদের সহযোগীতা করে রাজাকার বাহিনী।  ১৯৭১ সালে  পূর্ব পাকিস্তানে রাজাকার বা স্বেচ্ছাসেবক নামে এ প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠিত হয়। রাজাকাররা পবিত্র কুরাান ছুঁয়ে শপথ করতেন। শপথ বাক্যগুলো ছিল এরকমঃ আমরা জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানকে রক্ষা করব। পরবর্তীতে টিক্কা খানের সরকার  রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে সমাজের দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করে। কুখ্যাত রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয় ১৯৭১ সালের মে মাসে। তাদের মূল কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া। আর নারী নির্যাতনে সহায়তা করা।  বর্তমানে স্বাধীনতা বিরোধীদের আমরা রাজাকার বলে অখ্যায়িত করি। স্বাধীনতা বিরোধীদের মধ্যে রাজাকারদের পাশাপাশি আল বদর ও ছিল। ১৪ সেপ্টেম্বর ৭১ এ দল সম্পর্কে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় লিখা হয় “ আল বদর একটি নাম। একটি বিস্ময়, আলবদর  একটি প্রতিজ্ঞা। যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী আলবদর সেখানেই। ভারতের চর কিংবা দুষ্কিৃতিকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।”নিয়াজীর পৃষ্ঠপোষকতায় এপ্রিল মাসে এটি গঠন করা হয়। এ দলে ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ও জামাতে ইসলামীর শিক্ষিত সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন বদর  বাহিনীর শ্লোগান ছিল“ হাতে নাও মেশিন গান, খতম কর হিন্দুস্তান।” আলবদর বাহিনীর নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী । তিনি তখন আল বদরের মোহাম্মদপুরস্থ হেডকোয়ার্টার পরিদর্শনকালে চরম উত্তেজনা ময় বক্তব্য রাখেন।  দৈনিক সংগ্রাম-১৭ রস্েপ্টম্বর)।

রাজাকাররা শুধুমাত্র পাক আর্মিদের পথ প্রথর্দশনেই ব্যস্ত ছিলেন না। তরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবর্তীন হয়েছিল। ১৮ জুলাই দৈনিক পাকিস্তানের এক সংবাদে বলা হয় গতকাল সোমবার শেরপুরের কাছে দুষ্কিৃতিকারীরা (মুক্তিযোদ্ধারা) একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস করতে গেলে রাজাকাররা তা  রক্ষায় এগিয়ে এলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দুষ্কৃতকারীরা ১৯টি লাশ ১৩ খন্ড টিএনটি, কয়েকটি হাতবোমা, ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন, এবং ভারতে তৈরি ১৯টি বিস্ফোরক টিউব ফেলে গেছে। রজাকার ও আলবদররা শুধু গোপনেই কাজ করতোনা তারা প্রকাশ্য সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিধনের কথা বলতেন। ৫ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদের এক রিপের্টের মাধ্যমে জানা যায় , শুক্রবার বিকেলে বায়তুল মোকারম প্রাঙ্গনের এক সম্মেলনে বক্তারা বলেন- সত্য ন্যায়ের জন্য আমরা সঙগ্রাম করতেছি জয় আমাদের অবধারিত।”পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন মতিউর রহমান নিযামী। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের সাথে পাকিস্তানী বিমানে হাতাহাতির এক পর্যায়ে মিনহাজ মারা গেলে তিনি মিনহাজকে জাতীয় বীর হিসেবে উল্লেখ করে মিনহাজের পিতার কাছে শোকবার্তা পাঠান। 
কেউ কেউ মনে করেন যুদ্ধকালীন সময়ে নারী নির্যতন ছিল বিচ্ছিন্ন ঘঁটনা। কিন্তু ঢাকা মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘরে রক্ষিত  রাজাকারের একটি  চিঠির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় পরিকল্পিতভাবে তারা আমাদের মা বোনদেও ইজ্জত নিয়ে ছিনি মিনি খেলত। ৭১ সালের ২৮ মে চিঠিটি লিখেছেন ঝালকাঠি শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছলিমুদ্দিন মিয়া। শান্তি কমিটির একজন ইউনিয়ন প্রধানকে নির্দেশ দিয়ে লিখেন, বেগ সাহেবের জন্য ভাল মাল ( যুবতী নারী) পাঠাবেন। রোজ অন্তত একটা, অন্যদের জন্য যা পারেন।”  রাজাকার শব্দটি ঢালওভাবে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। ইতিহাস গবেষকদের মতে-যারা যুদ্ধকালীন সময়ে পাক আর্মির রাজাকার, আলবদর, আর আল শাম্স ইত্যাদি প্যারামিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য ছিলেন বা অন্যভাবে দালালি করে পাক আর্মিকে সহায়তা করেছেন, তারাই শুধু রাজাকার। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারীদের অথবা ৭১ সালে যাদেও বয়স ১২ বছরের নীচে ছিল তাদেও রাজাকার বলা অযৌাক্তিক। রাজাকারদের আমরা ঘৃণা করি। তাদের কৃতকর্মের উপযুক্ত বিচার চাই। 
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক , (দৃষ্টান্ত ডট কম), কুমিল্লা,



কুমিল্লার মুরাদনগরের আবদুল মতিন চৌধুরী

কুমিল্লার মুরাদনগরের আবদুল মতিন চৌধুরী

কুমিল্লার মুরাদনগরের আবদুল মতিন চৌধুরী 

মমিনুল ইসলাম মোল্লা ঃ
যুদ্ধাহত এক বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনৈতিক কারণে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীর চাকুরী থেকে অবসরে আসা সহ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন কুমিল্লার মুরাদনগরে (অবঃ) সেনাদসদস্য কর্পোরেল আবদুল মতিন চৌধুরী। মহান মুক্তিযোদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার কারণে মাত্র ৯ বছর কর্মজীবন শেষ না করতেই সেনাবাহিনীর চাকুরী হতে অবসর দেওয়া হয় তাকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একজন  প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম স্বাক্ষী ছিলেন। 

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখাতে না পারা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যামামলার অন্যতম স্বাক্ষী কর্পোরেল অবসরপ্রাপ্ত আবদুল মতিন চৌধুরী জানান, কী কারণে এবং কার অবহেলায় যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নাম নেই তার সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা জানা নেই, তবে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন বলে তিনি অভিমত পোষণ করেন। 


যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা চান তিনি। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ১৯নং দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের মৃত- আম্বর আলীর ৩য় ছেলে আবদুল মতিন চৌধুরী মহান স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনে অনুপ্রাণীত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে শতঃস্ফুর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২০ বছর বয়সে আবদুল মতিন চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ভারতের অম্বিনগর, মতিনগর, মেলাঘর, আগরতলার, শালবন ও লাটিটিলায় দীর্ঘ্য ১ মাস ১৮ দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর ১৯৭১ সনের ২৫শে এপ্রিল তৎকালীন  কুষ্টিয়ার মেহেরপুর ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২ ফিল্ড আর্টিলারী (২য় গুলন্দাজ বাহিনী) তে ২৯৩৮৪০৪ নং সৈনিক হিসাবে যোগ দেন। 


সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর তিনি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সৈনিক হিসাবে পারদর্শিতার সহিত তিনি গার্ণার, নায়েক, কর্পোরাল পদে উন্নিত হন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধে ২নং সেক্টরের অধীনে ভারতের লাটিটিলা নামক স্থানে মেজর রাশেদ এবং লেঃ সাজ্জাদ জহির এর সাথে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি  মেরিন টি গার্ডেন সমসেরনগর, মঙ্গলাবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। এছাড়া কোকিতলা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে তার বাম পায়ের হাটুতে মারাতœক আঘান পান এবং আহন হন। তবুও তিনি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে এগিয়ে যান। ফলে কোকিতলা যুদ্ধে জয়লাভ করেন। 

বিরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কারণে তিনি বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত হন। তার মধ্যে মেডেল, সামরিক খেতাব, ইমতিয়াজ খেতাব, ভিক্টোরিয়া মেডেল, কন্সটিটিশান মেডেল, ক্যাপ্টেন স্টার, ওয়ার মেডেল, লিভ্রারেশন স্টার উল্লেখযোগ্য। যুদ্ধাহত হওয়ার কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ডাক্তারি মতে ও.এ.আর (আই)’র ১৭২ নং নির্দেশ অনুযায়ী চরিত্র সম্পর্কিত মন্তব্য ভাল ঘোষনা নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১ডিসেম্বর দীর্ঘ ৮ বৎসর ৬ মাস ৬দিন চাকুরী করার পর সেনাবাহিনীর চাকুরীতে হতে তাকে অবসর দেওয়া হয়। 

স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী এ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার  ১৯ নং স্বাক্ষী। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক কর্পোরেল অবঃ প্রাপ্ত আবদুল মতিন চৌধুরী জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে পারেননি। 
বর্তমানে তিনি মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামে দুচালা একটি টিনের ঘরে স্ত্রী, দুই ছেলে চার মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। 
প্রধানমন্ত্রীর সাতে সরাসরী  স্বাক্ষাত করে তার সাথে খোলামেলা আলাপ করতে চান কি না  এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মনে উদার ও মহানুভবতা থাকলে তথা সত্যিকার অর্থ তাঁর বাবার সমর্থকদের খোঁজ খবর নিতে চাইলে তিনিই ভাল বুঝেন কী করতে হবে। তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন প্রধানমন্ত্রী মহানভবতা কিংবা কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইলে তিনিই তো আমার বাড়ী আসতে পারেন। লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক, কুমিল্লা।


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রের ভূমিকা মমিনুল ইসলাম মোল্লা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রের ভূমিকা মমিনুল ইসলাম মোল্লা


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রের ভূমিকা
মমিনুল ইসলাম মোল্লা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে গনমাধ্যম। বিশেষত প্রিন্ট মিডিয়া তখন পাশে ছিল। এছাড়া বিদেশী সাংবাদিকগণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুদ্ধের লেলিহান শিখা ও কাহিনী ছড়িয়ে দেয়, ফলে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপপ্রচারে কেউ বিশ্বাস করেনি। দেশীয় সংবাদপত্রগুলো পাক বাহিনীর রোষানলে পতিত হলেও হাতে লিখে পত্রিকা বের করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্যচিত্র তুলে ধরে দেশবাসীকে উজ্জিবীত করে। ২৫ মার্চে গনহত্যার চিত্র যাতে বিশ্ববাসী জানতে না পারে সেজন্য পাক বাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং এর জন্য তাদের পরিকল্পনা সাফল্য লাভ করেনি। তিনিই সর্ব প্রথম বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেন পাকিস্তানে গনহত্যা হয়েছে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সরকার সকল বিদেশী সাংবাদিককে কৌশলে হোটেল শেরাটনে (বর্তমান রুপসী বাংলা হোটেল) আটক কওে ফেলে। পরদিন তাদেরকে উড়োজাহাজে করে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়। ফলে বিদেশী সাংবাদিক শূণ্য হয়ে পড়ে ঢাকা। এরই মধ্যে একজন পালিয়ে থাকতে সক্ষম হন। তার নাম সাইমন ড্রিং। সামরিক শাসকের নির্দেশ অমান্য করে তিনি লুকিয়েছিলেন হোটেলে। ২৭ মার্চ সকালে কারফিউ উঠে গেলে হোটেলের কর্মচারীদের সহযোগীতায়এক এক ঘুওে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক, ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। এসব স্থানে শুধু লাশ আর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এসব দেখে তিনি লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লিখেন- “ ট্যাংকস ক্রাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান”এ সংবাদ ৩০ মার্চ ছাপা হওয়ার পর বিশ্ববাসী জানতে পারে পাকিস্তানে কী হচ্ছে। 

এর আগে পাকিস্তান সরকার রেডিও -টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছিল ঃ ভারতীয় কিছু অনুচর পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করে নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। সাইমন ড্রিং এর সংবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারল বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন চলছে। ৭১ সালের প্রথম দিকে পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদপত্রে আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, শেখ মুজিবকে ইয়াহিয়া কর্তৃক পাস্তিানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী সম্বোধনও ভূট্টোর অগণতআন্ত্রিক দাবী নিয়ে সংবাদ ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। এতে শাসকগোষ্ঠীর ও পিপিপি”র আসল চেহারা উন্মোচিত হলে সরকার প্রেস সেন্সরশীপ এবং প্রেস এডভাইজ আরোপ করে। 
মুক্তিযুদ্ধের সময় উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ছিল- দৈনিক জয় বাংলা, ও দৈনিক বাংলাদেশ। সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকার মধ্যে ছিল -দেশ বাংলা, দুর্জয় বাংলা, শ্বাশ্বত বাংলা, সংগ্রামী বাংলা, মুক্ত বাংলা, নতুন বাংলা, স্বাধীন বাংলা, জাগ্রত বাংলা, সোনার বাংলা, সাপ্তাহিক বাংলা, বিপ্লবী বাংলাদেশ, এছাড়া আরো ছিল প্রতিনিধি, স্বদেশ, বঙ্গবাণী, বাংলার মুখ, স্বরাজ, হাতিয়ার, অভিযান, একতা, দাবানল, অগ্রদূত, রনাঙ্গণ। আমার দেশ, জন্মভূমি, বাংলার বাণী, বিপ্লবী, আন্দোলন, রাষ্ট্রদূত, সপ্তাহ, দি পিপল, দি নেশন, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, কালান্তর, মায়ের ডাক। তৎকালীন সময়ে প্রকাশিত একটি পত্রিকার সম্পাদক জানান, তখন পত্রিকা বের করা খুব কঠিন ছিল। বিশেষ করে পাক হানাদারদেও নজরে আসলে সর্বনাশ হতো। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে পত্রিকা বের করতে হতো। তখন সাপ্তাহিক পত্রিকার পাশাপাশি কিছু পাক্ষিক পত্রিকাও বের হতো। এগুলোর মধ্যে অক্ষৌহোনী, চাবুক, স্বদেশ, প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আমোদ ( কুমিল্লা) রুদ্রবীণা, ও দর্পন বেশ জনপ্রিয় ছিল। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কুড়িগ্রাম  থেকে প্রকাশিত হতো “অগ্রদূত”  নামে একটি পত্রিকা। এর সম্পাদক ছিলেন আজিজুল হক মাস্টার। জেনারেল এমএ জি ওসমানী ২ নভেম্বর এ পত্রিকার সম্পাদককে একটি প্রশংসাপত্র পাঠিয়ে অভিনন্দন জানান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে সর্ব প্রথম দৈনিক জয়বাংলা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এটি ছিল মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক। ৭১ এর ৩০ মার্চ প্রকাশনা শুরু করেএবং ১১ এপ্রিল এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। “নতুন বাংলা” নামে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একটি সাপ্তাহিক মুখপাত্র ছিল। এটি ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের তত্বাবধানে প্রকাশিত হতো। মুজিবনগর থেকে এটি ১৯ সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। ১৯ জুলাই এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। যুদ্ধকালীন সময়ে বন্ধ হয়ে গেলেও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এটি নিয়মিত প্রকাশিত হতো। এ পত্রিকায়      স্বাধীনতা সংগ্রামের সাফল্যের অনূকূলে মুজিবনগর সরকারের পরামর্শদাতাদের কমিটির কার্যক্রমের উপর গুরুত্ব দেয়া হতো।
আমাদেও মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে ত্রিপুরার পত্রিকাগুলোর বিশেষ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোর করূণ অবস্থা তাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। তাই তারা ত্রাণ শিবিরে , গভীরঅরণ্যে, কিংবা অনিশ্চিত আর্শ্যয়স্থলে বসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাফওল্যের খবরাখবর প্রচার ও জনমত গঠনে ও মাধ্যমে দেশবাসীর মনোবল বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।  যেসব দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত যুদ্ধের খবর ছাপতো সেগুলোর মধ্যে সংবাদ জাগরণ, গনরাজ, রূদ্রবীনা, নাগরিক জনপদ ছিল অন্যতম। এছাড়া সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল সমাচার, দেশের কথা, সীমান্ত প্রকাশ, ও ত্রিপুরার কথা। প্রথম দিকে এসব পত্রিকা বাংলাদেশে থেকে পালিয়ে আসা লোকদের স্মৃতি নির্ভর রিপোর্ট করতো। পরবর্তীতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রিপোর্টার পাঠিয়ে যুদ্ধের চলমান সংবাদ পরিবেশন করতো। ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত সমাচার পত্রিকাটির কথা এখনও মুক্তিযোদ্ধারা ভুলতে পারেন না। এ সম্পাদক ছিলেন শ্রী অনীল ভট্টাচার্য । তিনি দৈনিক যুগান্তরের ত্রিপুরা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি শুধু সাংবাদিক ই নন বাংলাদেশ থেকে আসা স্মরণার্থীদের  থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিমা সাংবাদিকদের একটি বিশেষ ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে বিবিসি বাংলা এ এক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিদেশী সাংবাদকগণ আসা শুরু করেন ৭০ এর ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ও জলোচ্ছাসকে কেন্দ্র করে। তারপর তারা ৭০ এর নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্কংুশ বিজয়  প্রত্যক্ষ করেন।পাকিস্তান সরকারের সাথে যাদের মদদ ছিল তারা বাঙ্গালীর স্বাধীনতার চেতনাকে মূল্যায়ণ না করলেও অধিকাংশ মিডিয়া বাঙ্গালীর পক্ষে ছিল। তারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গনহত্যা সাপের্টি করেনি। যুগোশ্লাভিয়ার সংবাদপত্র লিখেছে, “ ইয়াহিয়া বেয়নেট দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। ঘানার পত্রিকা লিখেছে, বিশ্ব বিবেক এখনও জাগেনি। আমেরিকার পত্রিকাগুলো লিখেছে, মার্কিন অস্ত্রে পূর্ব পাস্তিানি মারা যাচ্ছে। সুতরাং দায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারেরও। এসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো মুক্তিযুদ্ধের উপর গুরুত্বারোপ করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচেছ ঃ“ চীন চায়না ভারতীয় উপমহাদেশে যুদ্ধ বেধে যাক, ” এ এফপি, পিকিং, নভেম্বর ১৫, “মুজিবের রাষ্ট্র্রদ্রোহের প্রকৃতি, দ্য সানডে টাইমস, জাম্বিয়া, ২২ আগস্ট, ১৯৭১, ভারত –পাকিস্তান উপমহাদেশ পরিস্থিতি, সানডে পোস্ট, নাইরোবি, ৩ অক্টোবর ১৯৭১, শরনার্থী সমস্যার সমাধান, মানিচি, ডেইলি নিউজ , টোকিও । যুদ্ধের সময় চলমান সংবাদের পাশাপাশি কিছু প্রবন্ধ- নিবন্ধ ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হতো। এগুলো জনগনকে উদ্ধিপ্ত করতো। ৩১ মার্চ ৭১ দৈনিক জয় বাংলার সমম্পাদকীয়তে বলা হয়-“ বাংলার মুক্তিবাহিনী , পুলিশ, আনসার, ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহিত সর্বপ্রকার সহযোগীতা করবেন। মনে রাখিবেন হয় আমরা জয়ী হইব নতুবা ধ্বংস হইব। মাঝামাঝি আর কোন পথ নাই।” জয় বাংলার ১৬ ডিসেম্বরের শিরোনাম ছিল -ভেঙ্গেছে দুয়ার, এসেছে জোতির্ময়। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরি বাংলার বাণী পত্রিকায় “ঢাকা আমায় ঢাকে” শিরোনামে লিখতেন। সাপ্তাহিক বাংলাদেশ ২১ নভেম্বর সংখ্যার শিরোনাম ছিল রক্ত-সত্ত , ঈদের চাঁদ রক্তের সমুদ্রে। এবারের ঈদ রক্ত তিলকে শপথের দিন। রনাঙ্গনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়-আমরা শান্তি চাই। কিন্তু কবরের শান্তি চাই না। এবার আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করব। আঘাতের পর আঘাত হেনে দস্যু-হানাদারদের খতম করব, জয় বাংলা।”মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার পত্রিকাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে মুজিবনগর ও মুক্তাঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে নিয়মিত/অনিয়মিতভাবে পত্র-পত্রিকা ও সংবাদ সাময়িকীগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হতো। এগুলো মুক্তিকামী জনতার মুখপত্র হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পত্র-পত্রিকার অবদান অপরিসীম। 
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি , কুমিল্লা, 

মুরাদনগরের চাপিতলা শহিদদের ভুলিনি,ভুলবনা মমিনুল ইসলাম মোল্লা

মুরাদনগরের চাপিতলা শহিদদের ভুলিনি,ভুলবনা মমিনুল ইসলাম মোল্লা


মুরাদনগরের চাপিতলা শহিদদের ভুলিনি,ভুলবনা
মমিনুল ইসলাম মোল্লা 

১৯৭১ সালে মুরাদনগরের বহু যায়গায় সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এ স্মৃতি অঅজ সবাই ভূলে যাচোছ। প্রশাসনের উদ্যোগে বাখরাবাদ, কােম্পানীগঞ্জ , দরানীপাড়ায় গড়ে উঠেনি কোন স্মৃতি স্তম্ভ। তেমনি এটি বিদনাবিদুর স্থান মুরাদনগর উপজেলার চাপিতলা। ামেনকি ঘঁনার দিনটি নিয়েও ধোয়াশা দূও হয়নি। কেউ কেউ বলছেন ঘঁনা ঘটেছে ৩১ অক্টোবর। কিন্তু স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদেও মতে সেই ভয়াভহ দিনটি ছিল ৭ নভেম্বও রবিবার। 
যুদ্ধের ঘটনাঃ যুদ্ধ শুরু হয় ৭ নভে¤বর রবিবার। যুদ্ধের বা আক্রমণের আশংকা  থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা হাতিয়ার নিয়ে তৈরি থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ, জেলেটিন, এক্সপ্লোসিভ, গোলা বারুদ, এনারগা-৯৪ রাইফেল,  ৩৬ হ্যান্ড গ্রেনেড, এসএমজি, এসএমসি, এ্লএমজি এন্টিপারসোনাল মাইন, এন্টি ট্যাংক মাইন, ২ ইঞ্চি মর্টার ইত্যাদি। 

প্রথম প্রতিরোধঃ একটি ছেলে দৌড়ে এসে কমান্ডার কামরুল হাসান ভুইয়াকে খবর দিলে শত্রæরা রঘুরামপুরের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে হানা দিয়েছে। সেখান থেকে দ্রæত পূর্বদিকে এগিয়ে আসছে। শীতকাল হওয়ায় তখন জমিতে সামান্য পানি ছিল। পাকিস্তানি সৈনিকেরা ধানী জমির মধ্য দিয়ে দ্রæত বেগে হেঁটে রওয়ানা দেয়। শত্রæকে বাধা দেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দল চাপিতলা নিমাইঝুড়ি খালের উপর অবস্থিত বর্তমান চাপিতলা বাস স্টেশন ব্রিজের পাশে প্রতিরক্ষা বুহ্য গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকেই ব্রিজের দুই পাশের মাটি কেটে খালের মধ্যে ফেলে দেয়। এছাড়া চাপিতলা গ্রামের দক্ষিণাংশে রুক্কু শাহ এর মাজারের পাশে অবস্তিত গাঙ্গেঝুড়ি ব্রিজ , বাস স্টেশন ব্রিজ ও খাপুড়া ব্রিজসহ টনকী থেকে খামারগাঁও মাদ্রাসা পর্যন্ত যতগুলো  ব্রিজ রয়েছে সবগুলোতে মাইন পোতা হয়েছিল। আর এ কাজটি স্বল্পপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সহজ কাজ ছিল না। এ কাজে কেউ সহজে যেতে চাইত না। এগুলো ছিল বুবি টেপ লাগানো মাইন। এগুলো সাধারণভাবে মাইন বা বিস্ফোরক হিসেবে প্রতীয়মান হয় না। কিন্তু যখনই এতে চাপ পড়ে বা টান পড়ে বা ঢিল দেয়া হয় তখনই তা বিস্ফোরিত হয়। মাইন লাগানোর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে গনি নামের এক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা , এম-১৪ এন্টি পারসোনাল মাইন গণি একাই ১৮টি নির্ধারিত স্থানে ফিট করে খুঁটি পুঁতে তাতে তা আটকে রাখে। বিষ্ঞুপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে আসা পাকিস্তানি সৈনিকদের দলটিকে আটকানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধারা কমান্ডার কামরুল হাসান ভূইয়ার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়। কমান্ডোরের পাশে ছিল হাবিলদার রমিজের প্লাটুন। শত্রæরা এফইউপি ছেড়ে এসাল্ট ফরমেশনে প্রচন্ড ফায়ার করতে করতে এগিয়ে আসে। কমান্ডার চিৎকার করে প্লাটুন কমান্ডার ইপিআরের হাবিলদারকে বার বার ফায়ার করতে বলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি তা করলেন না। পরিস্থিতি খারাপ দেখে কমান্ডার তখন সবইকে দ্রæত পেছনে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এসময় পাকিস্তানী সৈনিকেরা চাপিতলা গ্রামের ৩৪ জন নারী- পুরুষকে  নির্বিচারে হত্যা করে , ২১ জন নারীর শ্লীলতাহানী করে এবং ৩০টি বাড়ির দেড় শতাধিক ঘর জ্বালিয়ে দেয়। 

দ্বিতীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংঙ্গরা, খাপুড়া ও খামারগাঁও এলাকায় অবস্থান নেন। সেদিন জোৎস্না রাত থাকলেও এলাকা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এবং গ্রামের রাস্তাঘাট না চেনার কারণে সৈনিকরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে আঁচ করতে পারে নি। এছাড়া শত্রæর সম্ভাব্য আগমন পথে মাইন দ্বারা বুবি ট্যাপ লাগানোর কারণে শত্রæরা সুবিধে করতে পারে নি। 
মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান থেকে ৮০ স্মোক গ্রেনেড ফাটিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি করে। এসময় তারা নিরাপদ অবস্থানে চলে যায়। রাত ৩ টার দিকে সৈনিকদের অগ্রবর্তী দলটি মুক্তিযোদ্ধাদের  খুজতে খুঁজতে ব্যাংকারের নিকট চলে আসে। প্রতিরক্ষার সুবিধার্থে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর রোডের পূর্ব পার্শ্বে  খামারগাঁও মাদ্রাসা ও পশ্চিম পাশে কবস্থানের নিকট ট্রান্স ( গর্ত) করেছিল। শত্রæ এফইউপি ছেড়ে ২০০ গজের মত দূরে এসছিল। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড গুলির আঘাতে টিকতে না পেরে ধান ক্ষেতের দিকে পালিয়ে যায়। নিহত ও আহতদের ফেলে তারা চাপিতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থিত তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে ফিরে আসে। এসময় নৌকাযোগে আহত ও নিহতদের লাশগুলো সিএন্ডবি ব্রিজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে গাড়ি দিয়ে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। 
চুড়ান্ত আক্রমণঃ তৃতীয় বা চুড়ান্ত আক্রমণ করা হয়  পরদিন  সোমবার সকাল ৯টায়। খামারগাঁও গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল তার পশ্চিম দিক থেকে শত্রæ আক্রমন করে। মুক্তিযোদ্ধারা পূর্ণভাবে প্রস্তুত ও সতর্ক অবস্থানে থাকায় শত্রæরা সুবিধা করতে পারেনি। এখানে দুপক্ষের মধ্যে প্রচন্ড গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশ ছিলস্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত , তারা গুলির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। ফলে প্রচুর পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্ষয় হয়। তা না হলে দিনের বেলা পরিচালিত এ যুদ্ধে রাতের যুদ্ধের মতই সাফল্য আসতো। গোলা বারুদ নতুন করে সংগ্রহ করতে হলে ভারতের মেলাঘরে যেতে হবে। স্বল্প সময়ে তা সম্ভব ছিল না। ফলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু হটার নির্দেশ দেন। 
গোলা-বারুদের ঘাটতি বাদেও পিছু হটার আরেকটি কারণ ছিল। সেটি হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্লান্তি। দীর্ঘ সময় ধরে  যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা যুবক ছেলেদের ছিলনা রোববার দিনে ও রাতে যুদ্ধ করে অনেকেই আহত ও ক্লান্ত ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বেশিরভাগ ছিল ভারতীয় ৭-৬২ মি.মি বোল্ট একশন রাইফেল। এ রাইফেল দিয়ে ফায়ার করে দুদিনেই ছেলেদের হাতে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল। খামারগাাঁও থেকে পিছিযে আসার আগেই বিকল্প প্রতিরক্ষা তৈরি করা হয়েছিল দৌলতপুরে। এটি মোটামুটিভাবে মজবুত প্রতিরক্ষা ছিল। এখানে একটি এলএমজি সহ ৭জনের একটি সশস্ত্র দল প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে সমস্ত প্রতিরক্ষা গুটিয়ে বাঙ্গরার ( নবীনগর থানা) দিকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। 
কিন্তু এ অবস্থায়ও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন সাহসী যোদ্ধা হাবিলদার রমিজ উদ্দিন। কিন্তু এক সময় রমিজ উদ্দিনের গুলি ফুরিয়ে যায়। রমিজ উদ্দিনের পাশে ছিল আবুল বাশার ( বলিঘর) , বাচ্চু মিয়া ( দেলবাড়ি) । রমিজ উদ্দিন তার এক সহযোদ্ধার মাধ্যমে কমান্ডারের কাছে আরো গোলা-বারুদ চায়। এমুনিশন থেকে প্রায় ৪০০ রাউন্ড এমুনিশন পাঠানো হয়। আবারো খবর পাঠানো হয় রমিজ উদ্দিনের প্লাটুন অপসারন করতে। কিন্তু রমিজ তাতে কান না দিয়ে প্রাণপনে যুদ্ধ করতে থাকে। গুলি করতে করতে তারা ট্র্যান্সের উপর উঠে গিয়ে কবরস্থানের এক পাশে অবস্থান নেন। কিন্তু শত্রæুর সংঘবদ্ধ আক্রমনের মুখে একসময় তিন জনকেই শাহাদাত বরণ করতে হয়। দেশের জন্য শহীদ হলেন রমিজ বাহিনী। দেশপ্রেমিকতার  পরিচয় দিতে গিয়ে রমিজের গায়ে ৩৬টি গুলি লাগে। পাকিস্তানী সৈনিকগণ খামারগাঁও  গ্রামে প্রবশ করে কয়েকজনকে হত্যা করে এবং ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।  তারপর পাকিস্তানি সৈনিকগণ তান্ডব সৃষ্টি করতে করতে কাশিমপুরের পীর সাহেব ( গফুর চিশতি) বাড়ি পর্যন্ত  যাওয়ার সময় দৌলতপুরের ৩জনকে হত্যা করে।  তারপর আর সামনের দিকে এগুইনি। তারা পেছন ফিরে চলে আসে কোম্পানীগঞ্জ। তারপর ময়নামতি সেনানিবাসে ফিরে যায়। 
যে সব এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেয় ঃ চাপিতলা -খামারগাঁও যুদ্ধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের পাশাপাশি এলাকাবাসী স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধারা আসেন ভারতের মেলাঘর ক্যাম্প থেকে। সেখান থেকে কমান্ডার কামরুল হাসান ভূইয়া ( পরবর্তীতে মেজর) ২১ বছরের অভিজ্ঞ হাবিলদার রমিজ উদ্দিন, হাবিলদার কুদ্দুস, নায়েক নুরুল হকসহ একটি সুসজ্জিত বাহিনী যুদ্ধের ২দিন আগে চাপিতলার অদূরবর্তী কাশিমপুর গ্রামে পৌঁছলে এলাকাবাসী তাদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসে। এলাকাবাসীর মধ্যে অহিদ কেরানী এককভাবে পাকিস্তানী সৈনিকদের পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করে। পাকিস্তানী সৈনিকেরা সম্মুখ যুদ্ধ বাদেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান করে এবং নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এসময় অহিদ কেরানী রাইফেল দিয়ে গুলি করে ৬ জন সেনিককে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে স্ত্রীপুত্র সহ সৈনিকদের হাতে শহীদ হয়। এসময় পাকিস্তানী সৈনিকগণ চাপিতলার ৩৪ জন , খামারগ্রামের ৬জন এবং  দৌলতপুরের ৩ জনকে হত্যা করে । চাপিতলার যুদ্ধ ছিল একটি পরিকল্পিত যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা গোপনসূত্রে খবর পেয়ে মুরাদনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাপিতলায় এর জমায়েত হয়। বিশেষ করে চাপিতলা , পু®কুনীরপাড় , খাপুরা , খামারগাাঁও , বাঙ্গরা ,দৌলতপুর , শ্রীরামপুর ও টনকী গ্রামের সাধারণ লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা  এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি যুদ্ধে যারা  শহীদ হনঃ ১.  রমিজ উদ্দিন পিতা-মোছলেহ উদ্দিন (ইপিআর এ কর্মরত ছিল) পুষ্কুনীরপাড় , মুরাদনগর,কুমিল্লা ২. আবুল বাশার পিতা-মৃত পরচান মিয়া, ( ছাত্র) বলিঘর,মুরাদনগর, কুমিল্লা। এ দুজনের কবর সংরক্ষিত অবস্থায় খামারগাঁও  (কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর রোডের পাশে)রাস্তার পাশে অবস্থিত। ৩. বাচ্চু মিঞা পিতা- মৃত চেরাগ আলী , দেলবাড়ি,মুরাদনগর, কুমিল্লা। 

যুদ্ধের ফলাফলঃ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী সৈনিকদের সফলভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলেও একসময় তারা পশ্চাদপসারন করতে বাধ্য হন। ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধরত অবস্থায় মারা যান। উত্তেজিত সৈনিকেরা চাপিতলা গ্রামের ৩৪জন নারী পুরষকে নির্বচারে হত্যা করে। এছাড়া ৩০টি বাড়ির প্রায় দেড় শতাধিক ঘর-বাড়ি পাকিস্তানী সৈনিকগণ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরক্ষা বেস্টনি উঠিয়ে মালাই বাঙ্গরা চলে যায়। পকিস্তানী সৈনিকদের ২ জন অফিসারসহ ৫৫ জন সৈনিক মারা যায়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী সেদিনের যুদ্ধে ৯৭ জন আর্মি এবং ৯জন রাজাকার মিলে মোট ১০৬ জন মারা যায়। পাকিস্তানী সৈনিকেরা পীরকাশিমপুরের পীর সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করে ময়নামতি সেনানিবাসে ফিরে গেলে চাপিতলা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। 

মমিনুল ইসলাম মোল্লা, প্রভাষক, সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, কুমিল্লা